Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

গভীররাতে ভীতিকর পটকাবাজি বন্ধ হোক

প্রকাশের সময় : ২৫ জানুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

দৈনিক ইনকিলাবে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, বিয়ে বা অন্য কোন অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে গভীর রাতের পটকা ফাটানো অথবা অনুরূপ বোমা বহু মানুষের কষ্টের কারণে পরিণত হয়েছে। পুরনো ঢাকার শাঁখারিবাজার ও ঠাটারিবাজারে টাকা দিলেই পাওয়া যায় বিকট শব্দকারী পটকা বা বোমা। এছাড়া বোমা তৈরির সরঞ্জামও মেলে অনায়াসে। সংশ্লিষ্ট সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, শাঁখারিবাজারে হিন্দু সম্প্রদায়ের বিয়ের অনুষ্ঠানের সরঞ্জামাদি বিক্রির আড়ালে একশ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী ভারত থেকে আনা শক্তিশালী পটকা বা বোমার জমজমাট ব্যবসা করে আসছে। ক্রেতা ভেদে এসব বিক্রি করা হয়। বলা হচ্ছে ক্রেতার পরিচয় নিশ্চিত না হয়ে বিক্রেতারা পটকা বা বোমা আছে বলে মুখ খোলে না। শক্তিশালী পটকা বা বোমার পরিভাষা হলো রাঙ। অন্যদিকে ঠাটারিবাজারের হার্ডওয়ারের কয়েকটি দোকানে শক্তিশালী পটকা এবং পটকা তৈরির সরঞ্জাম বিক্রি হয়। ভারত থেকে আনা রকেট বোমা এখন উচ্চ শব্দের জন্য বেশি বিক্রি হচ্ছে। দৈনিক ইনকিলাবের সাথে প্রাসঙ্গিক আলোচনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক প্রফেসর ড. আজিজুর রহমান বলেছেন, মধ্যরাতে হঠাৎ করে বিকট শব্দ হলে মানুষ আতঙ্কিত হবে এটাই স্বাভাবিক। এতে মানুষ ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে নিজেকে অনিরাপদ মনে করে। মানুষের মনে তখন নানা উদ্বেগ ও আশংকা ভর করে। এভাবে কয়েকদিন চললে যে কোন মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে। এ ব্যাপারে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ডিএমপির প্রতিটি থানায় রাত ১১টার পর উচ্চস্বরে গান-বাজনা, মাইক বাজানো, পটকা ফোটানো আইনত নিষিদ্ধ।

রাজধানীতে পটকা ফাটানো কার্যত নতুন কিছু নয়। বিভিন্ন উৎসবের পটকা ফাটানো হয়। বিয়ের মৌসুম বলে পরিচিত শীতের সময়ে রাজধানীর কোন কোন এলাকায় মাইকে উচ্চস্বরে গান-বাজানো যেন এক ধরনের রীতিতে পরিণত হয়েছে। এর মধ্যে নতুন উপকরণ হিসেবে যুক্ত হয়েছে ভয়ঙ্কর শব্দের পটকা। বিয়ে বা গায়ে-হলুদের নামে সাধারণত এসব হয়ে আসছে। ইতোপূর্বে এধরনের একটি অনুষ্ঠানকে কেন্দ্রকরে মৃত্যুর মত অনাকাক্সিক্ষত ঘটনাও ঘটেছে। উচ্চতর আদালত পর্যন্তও গড়িয়েছে। দৈনিক ইনকিলাবের সাথে সাক্ষাৎকারে কোন কোন পুলিশ কর্মকর্তা বলেছেন অভিযোগ পেলেই তারা ব্যবস্থা নেন। অবশ্যই সঙ্গত বিবেচ্য বিষয় হচ্ছে, রাত ১১টার পর যদি উচ্চশব্দে গান-বাজনা ও পটকা ফাটানো নিষিদ্ধই থাকে তাহলে অভিযোগ করতে হবে কেন? এধরনের অপসংস্কৃতির অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আক্রান্ত হন রোগী বৃদ্ধ এবং শিক্ষার্থীরা। বিয়ের মৌসুম বলে পরিচিত সময়টা কার্যত মাধ্যমিক উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার সময়। যে সময়টা পরীক্ষার্থীদের জন্য অতিব গুরুত্বপূর্ণ। সে সময়ে যদি গভীর রাতের ভয়ঙ্কর আওয়াজে আতঙ্কিত হতে হয় তাহলে তাদের মানসিক অবস্থা কি দাঁড়াতে পারে বোধকরি তা লিখে বা বলে বোঝাবার কোন প্রয়োজন হয় না। পটকা বা বোমার আওয়াজ এতটাই মানুষকে আতঙ্কিত করে যা তার হৃদয়ে মনে গভীর নেতিবাচক প্রভাব বিস্তার করে। অনেক ক্ষেত্রে তা রোগীর জন্য মৃত্যুর কারণও হতে পারে। বিয়ে ও উৎসবের বাইরেও পবিত্র শবে-বরাতকে কেন্দ্র করে পটকা ফাটানোর খেলা সারারাতই চলতে থাকে। এনিয়েও নানা অপ্রীতিকর ঘটনা ইতোপূর্বে ঘটেছে। যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য ও কাক্সিক্ষত নয়।
আল্লাহ্ রাতকে দিয়েছেন ঘুমের জন্য। আল্লার রাসুল (সাঃ) রাতকে তিনভাগ করে দিয়েছেন। সঙ্গত বিবেচনাতেই মধ্যরাত হচ্ছে ঘুমের জন্য। সাধারণ বিবেচনাতেও রাত ১০টার পর থেকেই গভীর রাত হিসেবে গণ্য করা হয়। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরাও মনে করেন, মধ্য রাতের অনিদ্রার কারণে অনেক জটিল রোগের উৎপত্তি হয়। যারা ঘুমের এই সময়কে নানা উপদ্রবে অতিবাহিত করে এবং অন্যদের জন্য উপদ্রপের কারণে পরিণত হয় তাদের অপরাধ ক্ষমার অযোগ্য। আইন থাকা সত্ত্বেও তা না মানার প্রবণতার মধ্যে কার্যত যে ধরনের অনিয়মের প্রসঙ্গ রয়েছে তার সাথে ক্ষমতার প্রভাব বলয়ের সম্পর্ককে এড়িয়ে যাওয়া যাবে না। কিভাবে আতঙ্ক সৃষ্টিকারী এসব পণ্য আমদানি হচ্ছে বা হতে পারছে তাও খতিয়ে দেখা জরুরি। সংশ্লিষ্টরা এ ব্যাপারে সতর্ক হলে এবং আইন মান্যকরণে স্বাভাবিক প্রক্রিয়া অনুসরিত হলে এসব বন্ধ করা কোন কঠিন কাজ নয়। বিশেষ করে অবৈধ পথে এসব পণ্য যাতে দেশে প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য সীমান্তরক্ষীদের অধিকতর সচেতন থাকা জরুরি। সকলের সচেতনতাই পরিস্থিতির কার্যকর উন্নতি সাধনের জন্য যথেষ্ট। আনন্দ করা দোষের কিছু নয়। তবে একের আনন্দ অন্যের বিপদের কারণ হওয়া কাম্য হতে পারে না।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: গভীররাতে ভীতিকর পটকাবাজি বন্ধ হোক
আরও পড়ুন