রামগতিতে আ.লীগ নেতাকে বহিষ্কার
লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চরআলগী ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় ইউনিয়ন আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক সাহেদ আলী মনুকে দলীয় পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। গত
খালে বিলে আসছে ভরা জোয়ারের নতুন পানি। কোথাও মিলছে না চিংড়ি, বাইলা কিংবা কোন দেশিয় মাছ। তাইতো এবার পিরোজপুরের নেছারাবাদের বিখ্যাত চাঁইর হাট ক্রেতা শূণ্য।
নেছারাবাদের পাশের নাজিরপুর উপজেলা থেকে চাঁই নিয়ে আসা মো. করিম বেপারি বলেন, এক সময় তিনি এখানে সপ্তাহে শুক্র ও সোম ৭০০-৮০০ চাঁই নিয়ে আসতেন। চাঁই বিক্রি করে সাথে থাকা সহকর্মির মজুরি মিটিয়ে মনের আনন্দে বাড়ি ফিরতেন। একটি চাঁই বুননসহ যাবতীয় মজুরি খরচ মিলিয়ে সত্তর থেকে আশি টাকা দাম পড়ে। আর সে চাঁইটি বাজারে খুচরা মূল্য একশ থেকে একশ বিশ টাকা। প্রায় দ্বিগুন লাভজনক হওয়ায় তাদের গ্রামের অনেক অস্বচ্ছল পরিবার এ পেশায় ঝুকে পড়েছিল। হাটে এখন ক্রেতাশূন্যে চাঁই বেঁচা-বিক্রি বন্ধ হওয়ার উপক্রম। গ্রামের বিভিন্ন সমিতি ও এনজিও-এর কাছ থেকে টাকা তুলে যশোর থেকে বাঁশ কিনে এনে ৩ হাজার চাঁই বুনছেন। বেঁচা বিক্রির এই অবস্থায় ঋনের বোঝায় তার চোখে এখন কেবল হতাশার ছাপ। তিনি আরো বলেন কি করব? বাপ দাদার পেশা। বংশ পরম্পরায় বছরে ৬ মাস এ কাজ করে জীবিকা সংগ্রহ করে আসছি।
সরেজমিনে নেছারাবাদের আটঘর কুড়িয়ানার ডাঙায় জলে এই চাঁই সাম্রজ্যকে ঘিরে অত্র উপজেলাসহ পাশবর্তী নাজিরপুর উপজেলার ১২-১৩টি গ্রামে জুটে থাকে মৌসুম ভিত্তিক কর্মসংস্থান। প্রতি বছর উপজেলার এ দৃষ্টিনন্দিত চাঁই হাট দেখে যে কারো মন কাড়ত। এবছর গত সোম ও শুক্রবার ক্রেতা শূণ্য চাঁই হাট ঘুরে দেখা গেল ব্যবসায়ীর মলিন মুখ। চাঁইহাটের বেচা বিক্রির করুন দশা জানতে চাইলে, চাঁই কারিগর কবির, বিনয় মজুমদার, আন্দারকুল গ্রামের রঞ্জন বলেন, একসময় এখানে প্রতিহাটে ২ লক্ষাধিক টাকার চাঁই বিক্রি হত। বর্তমানে এলাকার খাল, বিল ডোবা নালা ভরে বসতি গড়ে উঠছে। তাই জোয়ারের পানি সব জায়গায় প্রবেশ করতে না পারায় একমাত্র চাষ করা মাছ ছাড়া, দেশিয় মাছের বড়ই আকাল।
চাঁই কারিগররা বলেন, এক সময় চাঁই বুনন কাজে নিয়োজিত থেকে চাঁই বিক্রিতে দ্বিগুন লাভবান হওয়া যেত। তাই নাজিরপুরের কলারদোয়ানিয়া গ্রামের পুরো এলাকা এছাড়া উপজেলার আটঘর, দলহার, আন্দারকুল গ্রামের গৃহস্তি পরিবারের অধিকাংশ লোক চাই বুনন পেশায় ঝুঁকে পড়েছে। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে বেঁচা বিক্রির মন্দা দশায় এখন অনেক মানুষ পেশা বদল করছেন।
হাটে কলারদোয়ানিয়া থেকে চাঁই নিয়ে আসা ইদ্রিস (৪২), মিজান (৫০) বলেন, একটি তিনশত টাকার বাঁশে ১৫/১৬টি চাঁই হয়। ১০ চাঁই তৈরিতে ৩ জনের সময় লাগে ১দিন। গড় চাঁই মজুরিরসহ বর্তমানে পন্যমূল্যর উর্দ্ধগতিতে সব মিলিয়ে খরচ পড়ে ৭০ থেকে ৮০ টাকা। তাতে এক কুড়ি চাঁইয়ের মূল্য দাড়ায় পনের শত টাকা। হাটে চাঁই প্রতি চার টাকা খাজনা, যাবতীয় খরচ মিলিয়ে এককুড়ি চাঁই বিক্রি করতে খরচ মূল্যে ১৬০০ টাকায় বিক্রি করতেও কষ্টকর হয়ে দাড়াচ্ছে। গাওখালি থেকে আসা চাঁই বিক্রেতা কলেজ ছাত্র রিপন জানান, সে পিতার সাথে প্রতি বছর হাটে ৭০০-৮০০ চাঁই নিয়ে আসত। আর এসব চাঁই পিরোজপুর, ঝালকাঠি, ভোলা জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে লোক আসত কিনতে। তারা এসে একসাথে শতে শতে চাঁই কিনত। ক্রয়কৃত চাঁই তারা বড় বড় নৌকা, ট্রলার কেউবা অটোগাড়ী করে নিয়ে যেত ওইসব দূর-দূরান্তে। এ হাটে দেড়শ চাঁই নিয়ে এসেছেন এখন তাও বিক্রি করতে পারছেনা না। এবছর বেচা ক্রেতা শূণ্যতায় বেঁচা-বিক্রি মন্দায় বিক্রেতারাও কম আসছে। তারা আরো বলেন এ বছর সব জায়গাতেই প্রায় একই অবস্থা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।