Inqilab Logo

রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

প্লাস্টিকে বিলুপ্তির পথে গোদাগাড়ীর ঐতিহ্য মৃৎ শিল্প

পৃষ্ঠপোষকতা নেই বলে অন্য পেশায় যাচ্ছেন শিল্পীরা

মো. হায়দার আলী, গোদাগাড়ী (রাজশাহী) থেকে | প্রকাশের সময় : ৮ জুলাই, ২০২২, ১২:০২ এএম

কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে রাজশাহী গোদাগাড়ীর ঐতিহ্যবাহী মৃৎ শিল্প। বহুমুখী সমস্যা আর পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে সঙ্কটের মুখে পড়েছে এই শিল্প। তারপরও পূর্ব পুরুষদের ঐতিহ্য এখনও ধরে রেখেছে অনেকেই। উপজেলার মাটিকাটা, গোগ্রাম, বাসুদেবপুর ইউনিয়নের কুমারপাড়া যেন শিল্পীর তুলিতে আঁকা একটি ছবি।

ফেলে আসা দিনগুলোর মত এখন আর কুমারপাড়া দিয়ে যাওয়ার সময় কাঁচা মাটির সোঁদা গন্ধ পাওয়া যায় না। প্লাস্টিকের তৈরি আসবাবপত্রের বদৌলতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে বাংলার প্রাচীন এই শিল্প। বেকার হয়ে পড়ছে প্রায় সকল মৃত শিল্পী। মাটির আসবাবপত্রের চাহিদা না থাকা ও মাটি সঙ্কটের কারণেই বর্তমানে মাথা তুলতে পারছেনা এই শিল্প।
উপজেলার কুমারপাড়া, প্রেমতলী, কুমুরপুর, বাসুদেবপুরসহ আশেপাশের এলাকায় শতাধিক কুমার পরিবার বসবাস করছে। তারা রাত-দিন মাটি দিয়ে তৈরি করছে বিভিন্ন মৃৎ-পণ্য। তাদের তৈরি বিভিন্ন জিনিসের মধ্যে কুয়ার পাত, হাঁড়ি পাতিল, ভাঁড়, টালি, খেলনা, পুতুল, ফুলদানি, ছাঁইদানি, নাইন, টব, কলস ইত্যাদি প্রাচীন বাংলার ঐতিহ্য বহন করে।
কুমারদের পূর্বপুরুষরাও এ শিল্পের সাথে জড়িত ছিলেন। কিন্তু বর্তমানে এই পেশায় সংসার চালানো যায় না বলে অনেকেই অন্য পেশার দিকে ঝুঁঁকছেন। তাছাড়া মৃৎ শিল্পের সব জিনিস এখন আর তেমন একটা ব্যাবহার করা হয় না। হিন্দুদের পূজা কিংবা বিয়েতে এখনো মাটির তৈরি কলস, বাটি ইত্যাদির ব্যবহার হলেও সেটা অতি নগণ্য। বর্তমানে পহেলা বৈশাখসহ গ্রামীণ মেলায় মাটির তৈরি বিভিন্ন খেলনা পুতুলসহ কিছু জিনিস বিক্রি হয়। অনেকেই মাঝে মধ্যে শখের বসে দুই একটি জিনিস কিনেন।
অতীতে মাটির তৈরি থালা আকৃতির বাসনের ব্যবহার ছিল বিভিন্ন আচার অনুষ্ঠানে। কিন্তু মূল্য বেড়ে যাওয়ায় বর্তমানে আর তেমন একটা ব্যবহার হচ্ছে না। এসব কারণে প্রায় সারাবছরই কুমারদের বসে থাকতে হয়। প্লাস্টিকের পণ্যের জন্যই মূলত এই শিল্প বিলুপ্তির পথে।
কুমারদের সাথে অনেকেই মনে করছেন, মৃৎ শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখার স্বার্থে মাটির তৈরি জিনিসপত্র ব্যবহারে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। যদি সরকারি সহযোগিতা ও পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়া হয় তাহলে হয়তো আবার এ শিল্পে প্রাণ ফিরতে পারে।
মাটিকাটা ইউনিয়নের কুমারপাড়ার হরিশচন্দ্র পাল, নৃপেন্দ্র পাল ও জিতেন্দ্র পাল বলেন, করোনাকালীন সময়ে সরকারিভাবে কোনো সহযোগিতা পাওয়া যায়নি। চেয়ারম্যান মেম্বাররাও কোনো খোঁজ-খবর নেন না। বাপ-দাদার কাছে শেখা আমাদের এই জাত ব্যবসা আজও আমরা ধরে রেখেছি।
পাল বা কুমাররা মাটি দিয়ে শৈল্পিক হাতে তৈরী করেন বিভিন্ন রকম হাড়ি-পাতিল, মাছ ধোয়ার ঢোলা, কলস, পনুয়া, কসুরি, দইয়ের বাটি, ছোট বাচ্চাদের বিভিন্ন প্রকার খেলনা যেমন- পুতুল, হাতি, বাঘ, ঘোড়া, গাভী, পাখি, নৌকা, বালতি, গামলা, জগ, কড়াই, চুলা, টাকা জমানোর ব্যাংক ইত্যাদি। এগুলো বাড়িতে বাড়িতে ফেরি ও বিভিন্ন হাটে নিয়ে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করত কুমাররা। এখন আর তেমনটি খুব একটা দেখা যায় না।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্লাস্টিকে বিলুপ্তির পথে গোদাগাড়ীর ঐতিহ্য মৃৎ শিল্প
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ