পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বিশেষ সংবাদদাতা : সড়ক-মহাসড়কের বেহাল দশার কারণে এবারের ঈদযাত্রায় ভোগান্তির আশঙ্কা রয়েছে। দুর্যোগপূর্ণ বর্ষা মৌসুম ও উত্তাল নৌ-পথে যাতায়াতের ঝুঁকি, রেলপথে মেয়াদোত্তীর্ণ ইঞ্জিন, কোচ ও ঝুঁকিপূর্ণ রেলপথে অতিরিক্ত যাত্রীর চাপে শিডিউল বিপর্যয় ঘটতে পারে। এসবের মধ্যে দিয়ে ঈদ যাত্রা শুরু হতে যাচ্ছে। ঈদ যাত্রার বহরে ৫ কোটি যাত্রীর ১৫ কোটি ট্রিপ সামাল দিতে সড়ক রেল ও নৌ-পথ প্রস্তুত নয় বলে দাবী করেছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। গতকাল বুধবার নগরীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির মিলোনায়তনে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি আয়োজিত ‘ঈদ যাত্রায় দূর্ভোগ : নাগরিক ভাবনা’-শীর্ষক আলোচনা সভায় সংগঠনের মহাসচিব মোঃ মোজাম্মেল হক চৌধুরী এসব কথা বলেন।
সংগঠনের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, ভাঙাচোরা সড়ক, দীর্ঘ যানজট, দুর্ঘটনা, বাসের ট্রিপ সংখ্যা ঠিক রাখতে বেপরোয়া গতি প্রতিবছরের ন্যায় এবারও ঈদে মহাসড়কে দূর্ভোগে পড়তে হবে ঘরমুখো লাখো যাত্রীকে। নির্মাণে সঠিক মাত্রায় উপকরণ ব্যবহার না করা, সময় মতো সংস্কার না করা, নিয়মিত রক্ষনাবেক্ষণের অভাবে দেশের ৪০ শতাংশ সড়ক-মহাসড়কের বেহাল দশা। আসন্ন ঈদে ঢাকা থেকে ১ কোটি ১৫ লাখ, দেশব্যাপী এক জেলা থেকে অপর জেলায় যাতায়াত করবে আরো প্রায় ৩ কোটি ৮৫ লাখ যাত্রী। সব মিলিয়ে ৬ দিনে প্রায় ১৫ কোটি ট্রিপ ঈদযাত্রার বহরে থাকবে। এই বিশাল যাত্রীর চাপ সামাল দেয়ার মতো গণপরিবহন ব্যবস্থা অথবা রাস্তা আমাদের নেই।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, এবারের ঈদযাত্রায় যাত্রী পরিবহনে সড়ক পথে ৪৪ হাজার ৩৭৪ টি বাস, ২৭ হাজার ৯৬২ টি মিনিবাস, ৩ লাখ ৩৫ হাজার ৬৬০ টি প্রাইভেট কার, ২ লাখ ৪৯ হাজার ৯১ টি সিএনজি অটোরিক্সা , ৯৮ হাজার ১৭৫ টি মাইক্রোবাস, ২১ লাখ ৪৫ হাজার ৬৫৯ টি মোটরসাইকেল, ৫৪ হাজার ৪৩৭টি জীপ, ১৭ হাজার ৫১৬ টি হিউম্যান হলার, ২০ হাজার ৪২২ টি অটো টেম্পু , ৭৩ লক্ষ প্যাডেল চালিত রিক্সা, ১৫ লক্ষ ব্যাটারি চালিত রিক্সা রয়েছে। নৌ-পথে ৪ হাজার ২২১ টি ছোট-বড় লঞ্চ, ৪২৮টি ট্রলার, ৮২ হাজার নৌকা, ১২ শত স্পিডবোড। রেলপথে পূর্বাঞ্চলে ৪৮ টি ও পশ্চিমাঞ্চলে ৪৪ টি আন্তঃনগর ট্রেনের পাশাপাশি ৭ জোড়া ঈদ স্পেশাল ট্রেন, ৭৩ টি লোকাল ও কমিউনিটার ট্রেন আমাদের যাতায়াতের বহরে রয়েছে। যা স্বাভাবিক সময়ে প্রয়োজনের তুলনায় প্রায় ৩৩ শতাংশ কম। এইসব সংকটের মধ্যদিয়ে এই বিশাল যাতায়াত বহর সামাল দিতে বাড়তি যা যোগান দেয়া হয় তা হলো সড়কে ফিটনেসবিহীন লক্কড় ঝক্কড় কিছু বাস-মিনিবাস মেরামত করে বহরে সংযুক্ত করা, সিটি সার্ভিসের বাস-মিনিবাস দূরপাল্লার বহরে সংযুক্ত করা, প্রাইভেট কার ও মাইক্রোবাসের পাশাপাশি পণ্যবাহী ট্রাক পিকআপে যাত্রী বহন করা। তবে রেলপথে কিছু মেয়াদোত্তীর্ণ বগী মেরামত করে বহরে সংযুক্ত করা পাশাপাশি বেশ কয়েক জোড়া ট্রেন বাড়তি সার্ভিস হিসেবে যুক্ত করা হয়। নৌপথে গত কয়েক বছরে বেশ কটি নতুন যাত্রীবাহী লঞ্চ বহরে সংযুক্ত হলেও তা চাহিদার তুলনায় নগণ্য বলে প্রতিবেদনে দাবী করে সংগঠনটি।।
সংগঠনের পর্যবেক্ষণ মতে, ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কের চার লেনে উন্নীতর কাজ চলমান থাকায় প্রায়ই যানজট হচ্ছে। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে প্রায় সারাবছরই দুর্ভোগ থাকে। বিভিন্ন উৎসব-অনুষ্ঠানে তা অসহনীয় মাত্রায় রূপ নেয়। এই ঈদেও এ ঘাট দিয়ে চলাচলকারীরা যাত্রী সাধারণ দুর্ভোগে পড়বে। বাড়তি মানুষের চাপের কথা মাথায় রেখে কর্তৃপক্ষ প্রতি ঈদেই দুর্ভোগ লাঘবে নানা উদ্যোগ নিলেও তা কাজে আসে না। এবারও নৌপরিবহনমন্ত্রী সরেজমিন ঘাট পরিদর্শন করে ঈদের সময় অতিরিক্ত যাত্রী সামাল দিতে নানা উদ্যোগের কথা জানিয়েছেন। তবে যাত্রীদের দুর্ভোগ কমাতে দৌলতদিয়া ফেরিঘাটের জিরো পয়েন্ট থেকে ফোরলেন মহাসড়কের দুই কিলোমিটার খানাখন্দ সংস্কার, দৌলতদিয়ার চারটি ফেরিঘাট সর্বক্ষণ সচল রাখা ও ঘাটের সংখ্যা আরও বাড়ানো এবং দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে অন্তত ২০-২২টি ফেরি দিয়ে যানবাহন পারাপারের ব্যবস্থা করা জরুরী।
সবচেয়ে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের যাত্রীরা। মহাসড়কের প্রবেশপথ যানজটমুক্ত করতে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে চার লেনের ফ্লাইওভার নির্মাণের কাজ চলছে। এখন ঢাকা থেকে রূপগঞ্জ পার হতে সময় লাগছে তিন থেকে চার ঘণ্টা। ফ্লাইওভারের নির্মাণকাজের কারণে গাউছিয়া মার্কেট থেকে ভুলতা মোড় পর্যন্ত মহাসড়ক সরু হয়ে গেছে। নির্মাণ এলাকার পর সড়ক যতটুকু অবশিষ্ট রয়েছে, তাতে স্বাভাবিক গতিতে যান চলাচল দুষ্কর হয়ে পড়েছে। গত ঈদেও এখানে দূর্ভোগে পড়েছে যাত্রীরা। এবারের ঈদেও একই আশঙ্কা রয়েছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত হলেও এই মহাসড়কের সুফল আটকে গেছে কাঁচপুর, মেঘনা, গোমতী সেতু টোলঘরে ও ফেনী ফতেহপুরের নির্মানাধীন ফ্লাইওভারে । সড়ক চার লেনে উন্নীত হলেও সেতুগুলো আগের মতোই দুই লেনের। গত ঈদে এই সেতুগুলোতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানবাহন আটকে ছিল।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বরিশাল-কুয়াকাটা জাতীয় মহাসড়কের শেখ জামাল সেতু থেকে কলাপাড়ার পাখিমারা বাজার পর্যন্ত প্রায় ১১ কিলোমিটার অত্যান্ত নাজুক। বরিশাল জোনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় মহাসড়কটির এ দশা সীমাহীন ভোগান্তিতে পড়বে কুয়াকাটা মুখী পর্যটকসহ স্থানীয়রা। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে পটিয়া, শান্তিরহাট, দোহাজারী, কেরানীহাট, চকরিয়া মেইনরোড এলাকায় সরু রাস্তায় তীব্র যানজটের পাশাপাশি চকরিয়া থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রাস্তার অবস্থা অত্যান্ত নাজুক এই সড়কে পর্যটকদের যাতায়াতে ভোগান্তি পোহাতে হবে।।
প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রতি ঈদে ঢাকার প্রবেশপথগুলোতে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। এই কারনে দূরপাল্লার বাস ঢাকা ছাড়তেই এক ঘণ্টার বেশি সময় লাগে। যাত্রাবাড়ীতে প্রবেশপথ কাঁচপুর মহাসড়ক আট লেনে উন্নীত করা হলেও সুফল মেলেনি। দু›পাশের দুই লেন চলে গেছে পার্কিংয়ে। আর দুই লেনে গাড়ি চলে উল্টো পথে। গাবতলী এলাকায় অবৈধ পার্কিং উচ্ছেদ করা হলেও তা আবার ফিরে এসেছে। টার্মিনালের সামনের রাস্তায় বাস থামিয়ে যত্রতত্র যাত্রী তোলা হচ্ছে। এছাড়াও গাবতলী, মাজাররোড, আশুলিয়া, ইপিজেড, চন্দ্রা, হেমায়েতপুর চৌরাস্তা,বলিয়াপুর, আমিনবাজার, নবীনগর ২০ মাইল, টঙ্গী স্টেশন রোড, গাজীপুর চৌরাস্তা, শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার উড়াল সেতু, মীরের বাজার, উলুখোলা, কাঞ্চনব্রীজ, ভুলতা, যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা, সাইনবোর্ড, চিটাগাং রোড, মদনপুর, কাজলা, ডেমরা স্টাফ কোয়াটার চৌরাস্তা, সুলতানা কামাল সেতু, কাঁচপুর সেতু, মধাবদী, ভৈরব, দুর্জয়মোড়, পাঁচদোনা, কদমতলী চৌরাস্তা, ইকুরিয়া পোস্তগোলা ব্রিজ, বাবুবাজার, তাঁতী বাজার, সদরঘাট গুলিস্তান সার্জেন্ট আহাদ পুলিশ বক্স প্রভৃতি এলাকায় নিয়মিত যানজট হচ্ছে। ঈদে যানজট আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য রাখেন পিএসসির সাবেক চেয়ারম্যান ইকরাম আহম্মেদ, ডিটিসিএর সাবেক নিবার্হী পরিচালক ড. সালেহ উদ্দীন আহমেদ, বিআরটিএর সাবেক চেয়ারম্যান আইয়ুবুর রহমান, সিনিয়র সাংবাদিক অজয় দাস গুপ্ত, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, বুয়েটের অধ্যাপক ড. মাহবুব আলম তালুকদার, বাংলাদেশ ট্রাক কাভার্ডভ্যান, ট্যাংকলরী, মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের সমন্বয়ক হোসেন আহমেদ মজুমদার, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক লীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক হানিফ খোকন, নাগরিক সংহতির সাধারণ সম্পাদক শরীফুজ্জামান শরীফ প্রমুখ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।