পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টাফ রিপোর্টার : অবশেষে গ্রেফতার হয়েছে রাজধানীর কদমতলীর চিহ্নিত সন্ত্রাসী সেরা উদ্দিন রিপন (৩৮)। গতকাল সোমবার ভোর রাতে যাত্রাবাড়ী থানা পুলিশ দনিয়া এলাকার নূরপুরের বাসা থেকে তাকে গ্রেফতার করে। পরে তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। গত ১৯ মে যাত্রাবাড়ী থানায় সেরা উদ্দিন রিপনের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি ও ৫৭ ধারার মামলা (নং ৭২) করেন দৈনিক ইনকিলাবের বিশেষ সংবাদদাতা নূরুল ইসলাম।
মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, গত ১২/০৩/১৮ ইং তারিখে সেরা উদ্দিন রিপন সাংবাদিক নূরুল ইসলামের কাছে চাঁদা দাবি করে তার মোবাইলে মেসেজ পাঠায়। মেসেজে সে ওই সাংবাদিককে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকী দেয়। এ বিষয়ে তিনি ১৩/০৩/১৮ ইং তারিখে যাত্রাবাড়ী থানায় একটি জিডি (নং ১০০৬) করেন। পুলিশ সেই ঘটনা তদন্ত করে প্রাণনাশের হুমকী প্রদানের প্রমাণ পায় এবং আদালতে সেরা উদ্দিন রিপনের বিরুদ্ধে ৫০৬ ধারায় প্রসিকিউশন( যাত্রাবাড়ী থানায় নন-এফআইআর নং ৩৫/২০১৮) দাখিল করে। থানায় জিডি করার পর থেকে রিপন ক্ষীপ্ত হয়ে ওঠে। সে বিভিন্নজনকে দিয়ে সাংবাদিকের মোবাইলে ফোন করে তাকে ভয়ভীতি দেখিয়ে চাঁদা দাবি করতে থাকে। এমনকি সে তার ফেসবুক ওয়ালে ওই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে নানারকম কুৎসা রটনা ও চাঁদা দাবি করে পোস্ট দেয়।
এ ছাড়া সেরা উদ্দিন রিপন সাংবাদিক নূরুল ইসলামের স্ত্রীকে বর্ণমালা স্কুলে চাকরি করতে দিবে না বলে হুমকী দেয়। গত ১৮/০৫/১৮ ইং তারিখ দিবাগত রাতে রিপন তার লোকজন নিয়ে দনিয়াসহ আশপাশের পাটেরবাগ, নূরপুর, দক্ষিণ দনিয়া, কুদারবাজার, মুরাদপুর এলাকায় নূরুল ইসলামের ছবি সম্বলিত পোস্টার লাগায়।
মামলার আরজিতে নূরুল ইসলাম বলেন, সন্ত্রাসী সেরা উদ্দিন রিপন গত দুই মাস ধরে আমার কাছে চাঁদা দাবি করে না পেয়ে এভাবে একটার পর একটা নোংরা পন্থা অবলম্বন করে চলেছে। ফেসবুকে আমার বিরুদ্ধে কুৎসা রটানোসহ এলাকায় আমার ছবিসহ পোস্টার লাগিয়ে সে আমার কাছে চাঁদার টাকাই দাবি করে আসছে। চাঁদার টাকা না দিলে কিছুতেই থামবো না-এমন হুমকীও দিয়েছে সে। মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে, সেরা উদ্দিন রিপন বিভিন্ন কৌশলে মানুষের মানসন্মানের হানি করে মোটা অংকের চাঁদা আদায় করে থাকে। জাল-জালিয়াতি ও মোবাইলের কথা রেকর্ড করে, ভিডিও করে সে মানুষকে বøাকমেইল করে থাকে।
দনিয়া নূরপুর এলাকার ভুক্তভোগিরা জানান, রিপনের অত্যাচারে অতিষ্ঠ অনেকেই ভয়ে মুখ খোলার সাহস পায় না। রিপনের ৮২২ নং নূরপুরের বাসায় রয়েছে নকল স্যানেটারি মালামাল তৈরীর কারখানা। অনেক দূর পর্যন্ত সিসি ক্যামেরা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত সেই কারখানায় তৈরী হয় ম্যাটাডোর, আরএফএল ও বসুন্ধরার সামগ্রী। নকল মালামাল বিক্রি করে রাতারাতি সে কোটিপতি হয়েছে। তার বাড়ির বিদ্যুত, গ্যাস ও পানির লাইন সবই অবৈধ। পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়াই চলছে সেই কারখানা। রাতদিন কারখানার বিকট শব্দে আশেপাশের বাসিন্দারা অতিষ্ঠ। স্থানীয় ভুক্তভোগি রুবেল বলেন, রিপন জোর করে আমার জমি দখল করে রেজিস্ট্রি বায়নানামা হয়েছে বলে বিশাল সাইনবোর্ড ঝুলিয়েছে। অথচ প্রকৃতপক্ষে বায়নানামা রেজিস্ট্রি হয়নি। তিনি বলেন, প্রায় আড়াই বছর ধরে রিপনের অত্যাচারে আমি ও আমার পরিবার অতিষ্ঠ। এ নিয়ে কিছু বললেই রিপনের হুমকী শুনতে হয়। কথায় কথায় সে প্যাকেট করে লাশ পাঠিয়ে দেয়ার হুমকী দেয়। রিপনের প্রতিবেশি স্থানীয় এক বাসিন্দা জানান, রিপন ওই কারখানায় বসুন্ধরা, আরএফএল ও ম্যাটাডারের বিভিন্ন সামগ্রী তৈরী করে বাজারে আসল বলে বিক্রি করে। রিপনের বাবা মৃত আয়নাল হক এক সময় রিকশা চালাতো। আর মা এলাকায় ঘুরে ঘুরে বাসাবাড়িতে কাপড় বিক্রি করতো। এখন নকল সামগ্রী বিক্রি করে সে কাঁচা টাকার মালিক হয়েছে। টাকার গরমে সে মানুষকে মানুষ মনে করে না। কথায় কথায় মানুষকে হুমকী দেয়। মোবাইলে কথা রেকর্ডিং করে বø্যাকমেইল করে। পুলিশের এক তদন্ত প্রতিবেদনেও রিপনের বøাকমেইলের বিষয়টি উঠে এসেছে। ওয়ারী জোনের পুলিশের একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, রিপন আসলে একজন ভূমিদস্যু। জাল-জালিয়াতি ও সরকারি দলের নাম ভাঙ্গিয়ে জোর করে জায়গা জমি, ফ্ল্যাট-এ্যাপার্টমেন্ট দখল করাই তার। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ড. আওলাদ হোসেন বলেন, আমি এলাকার আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের নেতাদের সাথে কথা বলে জেনেছি রিপন আমাদের দলের কেউ না। এক সময় সে জামায়াতের সাথে ছিল। এখন সে নিজেকে আওয়ামী লীগের সদস্য বলে দাবি করে। যাত্রাবাড়ী থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ্ব কাজী মনিরুল ইসলাম মনু বলেন, রিপন আমাদের দলের কেউ না। সে হলো হাইব্রিড। দলের নাম ভাঙ্গিয়ে সে অপকর্ম করছে বলে শুনেছি।
রিপনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগের মধ্যে রয়েছেÑ কদমতলী থানায় জিডি নং ২৪০, তাং ০৪/০৭/ ১৭, জিডি নং ১৮৫২, তাং ২৯/১২/১৬, জিডি নং ১২৭৬, তাং ২২/০৭/১৬, জিডি নং ১৩৮৭, তাং ২৪/০৭/ ১৭, ডিসি ওয়ারী বরাবর আবেদন স্মারক নং ২৩০৫/ডিসি ওয়ারী, তাং ১৮/০৬/১৭, যাত্রাবাড়ী থানায় জিডি নং ১০০৬, তাং ১৩/৩/১৮, কদমতলী থানায় জিডি নং ৫৩৯ তাং ১২/০৫/১৮ ইং। উল্লেখযোগ্য মামলা নং ৭৫, তাং ২৮/০৫/১৭ ধারা ৩৮৫, সিআর মামলা নং ৮৬, তাং ২৮/০৫/১৭, ২০ লাখ টাকার চেক ডিজঅনারের মামলা, সিএম মামলা নং ২৫/ সিআর মো: নং ৭০/২০১৮, তাং ১৪/০১/১৮।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।