পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
দিনাজপুরের মধ্যপাড়া পাথর খনি থেকে পাথর উত্তোলন বন্ধ রয়েছে আট মাস যাবত। প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির অভাবেই পাথর উত্তোলন বন্ধ রয়েছে বলে জানা গেছে। এত দীর্ঘ সময়েও যন্ত্রপাতি আমদানি না হওয়ায় একদিকে প্রায় ৮শ’ খনি শ্রমিক এবং আনুষঙ্গিক কাজে নিয়োজিত হাজার হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছে অন্যদিকে সরকারের কোটি কোটি টাকা লোকসান হয়েছে। কোনো কর্মতৎপরতা না থাকায় খনি এলাকা কার্যত পরিত্যক্ত এলাকার রূপ ধারণ করেছে। স্মরণ করা যেতে পারে, ২০০৭ সালের ২৫ মে এ খনিতে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে পাথর উত্তোলন শুরু হয়। প্রথম দিকে পাথর উত্তোলনের পরিমাণ প্রতিদিন দু’হাজার থেকে আড়াই হাজার টন হলেও ২০১২ সাল নাগাদ উত্তোলন নেমে আসে মাত্র আটশ’ টনে। এ পর্যায়ে মধ্যপাড়া গ্রানাইট মাইনিং কোম্পানি লিমিটেডের সঙ্গে বেলারুশ ভিত্তিক কোম্পানি জার্মানিয়া ট্রেস্ট কনসোর্টিয়ামের চুক্তি হয় ২০১৩ সালে। এ কোম্পানির তৎপরতায় পাথর উত্তোলন বৃদ্ধি পায় এবং প্রতিদিন সাড়ে চার হাজার টনে গিয়ে দাঁড়ায়। এ ধারা অব্যাহত থাকেনি। যন্ত্রপাতির অভাবে ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে খনি থেকে পাথর উত্তোলন সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। এতদিন খনির কাজ বন্ধ থাকায় খনি শ্রমিকরা সবচেয়ে বেকায়দায় পড়েছে। মধ্যপাড়া গ্রানাইট মাইনিং কোম্পানি লিমিটেডের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষরের পর জার্মানিয়া ট্রেস্ট কনসোর্টিয়াম তাদের দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে নিয়োগ দিয়েছিল। আট মাস তারা বেকার। পরিবার-পরিজন নিয়ে তাদের দুর্বিষহ জীবন যাপন করতে হচ্ছে। অনেকে বাধ্য হয়ে ভিন্ন কাজ জুটিয়ে নিয়েছে। পাথর উত্তোলন বন্ধ থাকায় সরকারকে বড় অংকের রাজস্ব থেকেই বঞ্চিত হতে হচ্ছে না মধ্যপাড়া গ্রানাইট মাইনিং কোম্পানি লিমিটেডের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বসিয়ে বসিয়ে বেতনাদিও দিতে হচ্ছে।
যন্ত্রপাতির অভাবে হঠাৎ করে খনি বন্ধ হয়ে যাবে, এটা বিশ্বাস করতে আমাদের ঘোর আপত্তি রয়েছে। চালু খনি এভাবে বন্ধ হয়ে যেতে পারে না। অস্বীকার করা যাবে না, খনির যন্ত্রপাতি পুরোন হয়ে যেতে পারে, ক্ষমতা কমে যেতে পারে, এমন কি নষ্ট বা অকেজোও হয়ে যেতে পারে। কিন্তু একদিনে এর কোনোটিই হওয়ার কথা নয়। পাথর খনিতে বহু ধরনের যন্ত্রপাতির প্রয়োজন হয়। এসব যন্ত্রপাতির কোনোটি নষ্ট বা অকেজো হয়ে গেলে সঙ্গে সঙ্গে তা মেরামত কিংবা প্রতিস্থাপন করাই স্বাভাবিক। সেটা যে করা হয়নি খনি বন্ধের ঘটনাই তার সাক্ষ্য দেয়। পাথর উৎপাদন ও বিক্রির দায়িত্বপ্রাপ্ত জার্মানিয়া ট্রেস্ট কনসোর্টিয়াম ও মধ্যপাড়া গ্রানাইট মাইনিং কোম্পানি লিমিটেডের কর্মকর্তারা ক্ষেত্রে অমার্জনীয় অবহেলার পরিচয় দিয়েছেন। চুক্তি অনুযায়ী প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি আমদানির দায়িত্ব জার্মানিয়া ট্রেস্ট কনসোর্টিয়ামের। আর এর মূল্য পরিশোধের দায়িত্ব মধ্যপাড়া গ্রানাইট মাইনিং কোম্পানি লিমিটেডের। যন্ত্রপাতি আমদানি ও তার মূল্য পরিশোধের ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা ছিল,এমন কথা প্রকাশিত খবরগুলো থেকে জানা যায়নি। কাজেই খনির এই অচলাবস্থার যুক্তিসঙ্গত কোনো কারণ নেই। দায়িত্ব অবহেলাই এর একমাত্র কারণ বলে সাব্যস্ত হতে পারে। এ আট মাসে বেকার শ্রমিকদের যে কষ্ট-দুর্ভোগ হলো, সরকারের যে ক্ষতি হলো, জাতীয় কোম্পানির যে ব্যয় হলো তার খেসারত কে দেবে ? জানা গেছে, মধ্যপাড়া পাথর খনি থেকে আহরিত পাথরের ক্রেতা প্রধানত সরকারের বিভিন্ন বিভাগ। বেসরকারী পর্যায়েও কিছু পাথর বিক্রি হয়। পাথর না পাওয়ায় ক্রেতারা এই সময়ে ভারত থেকে প্রায় ২০ হাজার টন পাথর আমদানি করেছে। সঙ্গতকারণেই প্রশ্ন উঠতে পারে, ভারত থেকে পাথর আমদানির জন্যই কি পরিকল্পিত প্রক্রিয়ায় খনি বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে ? যদি প্রকৃত সত্য এটাই হয় তাহলে বলতে হবে, এর চেয়ে দুঃখজনক ও দেশবিরোধী কাজ আর হতে পারে না। বিষয়টি গভীরভাবে খতিয়ে দেখা দরকার। আশা করবো, খতিয়ে দেখা হবে এবং সে রকম কিছু হয়ে থাকলে দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মধ্যপাড়া গ্রানাইট মাইনিং কোম্পানি লিমিটেডের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ১২৯ রকমের খুচরা ও ভারী যন্ত্রপাতি আমদানির জন্য ২৪০ কোটি টাকার ৩৬টি এলসি খোলা হয়েছে ২০১৫ সালের মে মাসে। এসব যন্ত্রপাতি ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম বন্দরে এসে পৌঁছেছে। খনি এলাকায় পৌঁছাতে মাসাধিক কাল লেগে যেতে পারে। যন্ত্রপাতি এসে পৌঁছালেই পাথর উত্তোলন শুরু হবে। বলা বাহুল্য, যন্ত্রপাতি আমদানিতে দীর্ঘ সময় ব্যয় হয়ে গেছে। জরুরি যন্ত্রপাতি আমদানি এত বিলম্বিত হতে পারে কিনা সেটাও এড়িয়ে যাওয়ার মতো নয়। যাহোক, শেষ পর্যন্ত যন্ত্রপাতি আমদানি হয়েছে, দেশে এসে পৌঁছেছে, এটা আশার খবর বটে। আমাদের প্রত্যাশা, যতদ্রুত সম্ভব আমদানিকৃত যন্ত্রপাতি খনি এলাকায় আনা হবে এবং উৎপাদন পূর্ণমাত্রায় চালু করা হবে। এ ধরনের ঘটনা ভবিষ্যতে যাতে আর না ঘটে সেদিকে দায়িত্বপ্রাপ্ত কোম্পানি ও কর্তৃপক্ষ সজাগ দৃষ্টি রাখবে, এটাই আমরা কামনা করি। অনুরূপ ঘটনা সেখানে কেন, অন্য কোথাও যাতে না ঘটে সে জন্য এই ঘটনার অনুপুংখ তদন্ত জরুরি বলেই আমরা মনে করি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।