পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
হাজারীবাগ থেকে ট্যানারি শিল্প স্থানান্তর নিয়ে সরকার ও ট্যানারি মালিকদের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে একধরনের টানাহ্যাঁচড়া চলছে। স্থানান্তর নিয়ে পারস্পরিক দোষারোপ যেমন চলছে, তেমনি স্থানান্তরের সময়সীমা বেঁধে দেয়া এবং মালিকদের দাবীর মুখে তা বারংবার বর্ধিত করা নিয়েও চলছে ইঁদুর-বেড়াল খেলা। সরকার সাভারে ট্যানারি স্থানান্তরের কথা বললেও সেখানে স্থানান্তর উপযোগী পরিবেশ এখনও সৃষ্টি করতে পারেনি। বরাদ্দকৃত প্লটের দুই তৃতীয়াংশ কাজ অসম্পূর্ণ রয়েছে। হাজারীবাগে কাঁচা চামড়া প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারির পর ১৫৫টি কারখানার মধ্যে ২০টির মতো কারখানার নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। ১৫টির মতো কারখানার নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হওয়ার পথে। ভবন নির্মাণের পর চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণ মেশিন, গ্যাস ও পানি সংযোগ স্থাপন না হওয়া এবং ড্রেনেজ ব্যবস্থা সম্পন্ন না হওয়ায় এসব প্রতিষ্ঠান উৎপাদনে যেতে পারছে না। ফলে চামড়ায় পচন ধরেছে। বলা যায়, সাভারের চামড়া শিল্প নগরী পুরোপুরি প্রস্তুত না করেই স্থানান্তর প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। এতে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্তদের যেমন গাফিলতি রয়েছে, তেমনি ট্যানারি মালিকদেরও গড়িমসি রয়েছে। আবার স্থানান্তরিত করা হলেও ট্যানারি বর্জ্যে পরিবেশ দূষণের আশঙ্কার বিষয়টি নিয়েই পরিবেশবাদীরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। তারা মনে করছেন, কেন্দ্রীয় বর্জ্য পরিশোধনাগার নির্মাণ হলেও বুড়িগঙ্গা, তুরাগ ও শীতলক্ষ্যার মতোই বংশী নদী দূষিত হবে।
রাজধানীর মধ্যে অবস্থিত হাজারীবাগ ট্যানারি শিল্প সাভারে স্থানান্তরের উদ্যোগ নেয়ার মূল কারণই হচ্ছে পরিবেশ দূষণ রোধ এবং ঢাকার লাইফ লাইন হিসেবে পরিচিত নদীগুলোকে দূষণের হাত থেকে রক্ষা করা। আমরা দেখছি, বুড়িগঙ্গা কিভাবে বিষাক্ত শিল্পবর্জ্য দ্বারা দূষিত হয়েছে। এই দূষণের অন্যতম কারণ ট্যানারির বিষাক্ত বর্জ্য। বুড়িগঙ্গাসহ ঢাকার অন্যান্য নদীকে দূষণের হাত থেকে বাঁচাতেই ২০০৩ সালের ১৬ আগস্ট অনুষ্ঠিত একনেকের বৈঠকে সাভারের হেমায়েতপুরে ট্যানারি শিল্প স্থানান্তরের উদ্যোগ নেয়া হয়। ২০০ একর জায়গায় ২০৫টি প্লটে ১৫৫টি কারখানা স্থাপন করার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। পরিবেশ দূষণের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য ২০০৯ সালের ২৩ জুন উচ্চ আদালত ট্যানারি মালিকদের নির্দেশ দেয় ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১০ সালের মধ্যে হাজারিবাগ থেকে ট্যানারি সরিয়ে নিতে। এরপর থেকে সাভারের চামড়া শিল্প নগরীর উন্নয়ন কাজ পুরোপুরি সম্পন্ন না করে সরকারের পক্ষ থেকে দফায় দফায় টাইম বেঁধে দেয়া হয়, আর ট্যানারি মালিকরাও নানা অজুহাতে সময় বৃদ্ধির আহ্বান জানায়। সর্বশেষ বেঁধে দেয়া টাইম আজ শেষ হচ্ছে। দেখা যাচ্ছে, এ সময়ের মধ্যে ট্যানারি স্থানান্তর হয়নি। পরিবেশবিদরা মনে করছেন, ট্যানারি স্থানান্তর প্রক্রিয়া দেরি হলেও, এ প্রক্রিয়া যে শুরু হয়েছে-এটা আশার কথা। এতে পরিবেশ দূষণ ও বুড়িগঙ্গাসহ অন্যান্য নদী দূষণের মাত্রা কিছুটা হলেও কমবে। তবে তারা এটাও মনে করছেন, সাভারে স্থানান্তরিত হলেও সেখানে পরিবেশ দূষণ এবং বংশী নদী দূষণের আশঙ্কা রয়েছে। ইতোমধ্যে সেখানে পরিদর্শনে গিয়ে তারা এ আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তাদের এ আশঙ্কা যে একেবারে অমূলক, তা বলা যাবে না। কারণ শিল্প নগরীটি এখনও পুরোপুরি সম্পন্ন হয়নি এবং এর দূষণের মাত্রা নিয়েও কোনো গবেষণা হয়নি। ফলে এক এলাকার নদী ও পরিবেশ দূষণ রোধ করতে গিয়ে নতুন এলাকার নদী ও পরিবেশ দূষণ হলে এই স্থানান্তর পুরোপুরি বৃথা হয়ে যাবে। পরিবেশবাদীরা বলছেন, রাজধানী থেকে চামড়া কারখানা সরিয়ে নেয়ার উদ্দেশ্যই হচ্ছে পরিবেশ ও বুড়িগঙ্গাকে বাঁচানো। এখন এই শিল্পের জন্য যদি আবার আরেকটি নদী ও পরিবেশ দূষিত হয়, তবে আমরা কঠোর আন্দোলন করতে বাধ্য হবো।
অনেক আগেই রাজধানী থেকে চামড়া শিল্প সরিয়ে নেয়া উচিত ছিল। যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে যথাসময়ে স্থানান্তর করা হলে, নিশ্চয়ই বুড়িগঙ্গাসহ অন্য নদীগুলোর দূষণও অনেক কমত। দেরিতে হলেও ট্যানারি শিল্প যে স্থানান্তরিত হচ্ছে, এটা ইতিবাচক। ট্যানারি শিল্পের মতো বিষাক্ত বর্জ্য নিগর্মনকারী শিল্পের জন্য আলাদা বিশেষায়িত অঞ্চল প্রয়োজন। আমাদের দেশ এটা এড়িয়ে যেতে পারে না। আমাদের রাজধানীর প্রায় মধ্যখানে এমন শিল্প থাকা কোনোভাবেই উচিত না হলেও বছরের পর বছর তা থেকেছে। আমরা মনে করি, ট্যানারি শিল্পের মতো অন্যান্য যেসব শিল্পকারখানার বিষাক্ত বর্জ্য বুড়িগঙ্গায় পড়ছে, সে সবের ব্যাপারেও সরকারের করণীয় রয়েছে। এসব শিল্পকারখানার বর্জ্য যাতে বুড়িগঙ্গায় না পড়ে, এ ব্যবস্থা করতে হবে। এ কথাও মনে রাখতে হবে, ট্যানারি শিল্প যেখানে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে, সেখানের পরিবেশ ও নদীর যাতে কোনো ধরনের ক্ষতি না হয়, সেটাও খেয়াল রাখতে হবে। প্রয়োজনে রুটিন মাফিক সেখানের নদীর পানি ও আশপাশের পরিবেশের দূষণ মাত্রা পরীক্ষা করার ব্যবস্থা করতে হবে। বলা বাহুল্য, স্থানান্তরই বড় কথা নয়, এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার দিকেও দৃষ্টি রাখতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।