পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
টানা চার দিন উখিয়া ও টেকনাফের রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্প ঘুরে অবহেলিত ও অধিকার থেকে বঞ্চিত শিশুদের আপন করে নিয়েছিলেন বলিউডের নায়িকা প্রিয়াংকা চোপড়া। তাদের কাছ থেকে চোখের পানিতেই বিদায় নিয়ে কক্সবাজার ত্যাগ করেন প্রিয়াংকা। রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে ফেসবুক লাইভে রোহিঙ্গা শিশুদের সহায়তায় সবাইকে এগিয়ে আসার আহŸান জানিয়ে ভারতীয় এই অভিনেত্রী বলেছেন, আশ্রয় কেন্দ্রে মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত এই শিশুদের যতœ নেওয়া এখন বিশ্বের দায়িত্ব।
এটা আন্তর্জাতিক স¤প্রদায়ের দায়িত্ব। বিশ্ব সেই দায়িত্ব পালনে এগিয়ে না এলে রোহিঙ্গাদের একটি প্রজন্ম পুরোপুরি হারিয়ে যেতে পারে বলে আন্তর্জাতিক স¤প্রদায়কে সতর্ক করেন তিনি। জাতিসংঘ সংস্থা ইউনিসেফের শুভেচ্ছা দূত হিসেবে গত সোমবার বাংলাদেশে আসেন প্রিয়াঙ্কা। গত চার দিনে তিনি উখিয়া ও টেকনাফের ১০টি শরণার্থী ক্যাম্প এবং সীমান্তের কাছের রোহিঙ্গা আগমনের ট্রানজিট পয়েন্ট ঘুরে দেখেন। রোহিঙ্গা শিশুদের সঙ্গে সময় কাটিয়ে বোঝার চেষ্টা করেন তাদের বাস্তবতা, তাদের সঙ্কট। গতকাল বেলা সাড়ে ১১টায় ঢাকার উদ্দেশে রওনা হওয়ার আগে উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে প্রিয়াঙ্কা ফেইসবুক লাইভে আসেন। তিনি বলেন, এই রোহিঙ্গা ক্যাম্প এখন বিশ্বের অন্যতম বড় শরণার্থী শিবির। যতদূর চোখ যায় কেবল শরণার্থীদের ঝুপড়ি ঘর। প্রায় সাত লাখ লোক মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এসে এখানে আশ্রয় নিয়েছে। তাদের ৬০ শতাংশই, অর্থাৎ প্রায় ৪ লাখই শিশু। যাদের দুর্বিষহ অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে যেতে হচ্ছে। রোহিঙ্গাদের পাশে সকলকে দাঁড়ানোর আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, তারা কোন দেশ থেকে এসেছে, কোন পরিস্থিতিতে এসেছে, তাদের ধর্ম কী, গোত্র কী- এসব আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয়। আমার কাছে একটি শিশু হল শিশু। আর প্রত্যোক শিশুরই বেড়ে ওঠার অধিকার আছে।
রোহিঙ্গা কীভাবে আসন্ন বর্ষা মৌসুমে এই পলিথিনের ছাউনিতে টিকে থাকবে, পাহাড়ের গাছ কেটে বানানো এই ক্যাম্প ভূমিধসের কবরে পড়লে কী অবস্থা হবে সেই শঙ্কায় উৎকণ্ঠিত প্রিয়াঙ্কা বিশ্বকে উদ্যোগী হওয়ার তাগিদ দেন। তিনি বলেন, এই শিশুরা মিয়ানমারে যে সহিংসতা দেখে এসেছে, তাতে তাদের স্বাভাবিক শৈশব হারিয়ে গেছে। তারপরও ইউনিসেফের ‘চাইল্ড ফ্রেন্ডলি স্পেস’গুলোতে তারা হাসছে, খেলছে, ছবি আঁকছে। কিন্তু এই সুযোগ তারা পাচ্ছে দিনে দুই ঘণ্টা। বাকি সময় তারা থাকছে ঝুপড়ি ঘরে, নইলে বাইরে বাইরে ঘুরছে। শরণার্থী শিবিরে এটাই তাদের জীবন। এই শিশুরা জানে না- কখন তারা আবার খাবার পাবে। নিরাপদ পানি, আশ্রয়, পয়নিষ্কাশনের মত মৌলিক চাহিদাগুলোও পূরণের উপায় নেই। তিনি বলেন, বিশ্ব স¤প্রদায়ের অংশ হিসেবে এই শিশুদেরও আর সবার মত বেড়ে ওঠার অধিকার আছে, স্বপ্ন দেখার অধিকার আছে।
প্রিয়াঙ্কা বলেন, এই শিশুদের বাবা-মা কে, এদের পরিচয় কী এগুলো বড় বিষয় নয়। এখন এদের দরকার আপনার সহানুভূতি। আম্মান ও ইসলাইলের শরণার্থী শিবিরে শরণার্থী শিশুদের দেখার অভিজ্ঞতা বর্ননা করে এই চলচ্চিত্র তারকা বলেন, ইউনিসেফের সঙ্গে কাজ করে শরণার্থী শিশুদের সঙ্গে কথা বলে আমি সব জায়গায় দেখেছি এই শিশুরা লেখপড়া করতে চায়, শিখতে চায়। পাঁচ বছরের একটি শিশু আমাকে বলেছে, সে বড় হয়ে সাংবাদিক হতে চায়, নিজের দেশের মানুষের লড়াইয়ের কথা সবাইকে জানাতে চায়।
প্রিয়াঙ্কা বলেন, এই রোহিঙ্গা শিশুদের সামনে অনিশ্চিত ভবিষ্যত। ক্যাম্পে তাদের জন্য এখন মৌলিক শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাদের বার্মিজ, ইংরেজি ও গণিত শেখানো হচ্ছে। কিন্তু তাদের শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত করতে হলে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। রোহিঙ্গা শিশুদের ভবিষ্যত কি? এই প্রশ্নে প্রিয়াঙ্কা বলেন, এখানে পানির উৎস আর শৌচাগার কাছাকাছি হওয়ায় যে কোনো সময় ছড়িয়ে পড়তে পারে ডায়ারিয়ার মত রোগ। বর্ষায় এসব ঝুপড়ি কীভাবে টিকবে, এই রোহিঙ্গা শিশুরা কীভাবে আশ্রয় পাবে- তারও নিশ্চয়তা নেই। তাদের খাবারের নিশ্চয়তা নেই, তাদের কোনো কাজ নাই, কোনো কিছুর সুযোগ নেই। বড় হওয়ার জন্য যা যা প্রয়োজন, তার সবই দরকার এই শিশুদের জন্য। এক শিশুর প্রশ্নের জবাবে প্রিয়াঙ্কা বলেন, এই রোহিঙ্গা শিশুরা যে ভয়াবহ অভিজ্ঞতা পেরিয়ে এসেছে, বেশিরভাগ মানুষ তা কল্পনাও করতে পারবে না।
এর আগে মঙ্গলবার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ১৬ বছরের একটি মেয়ের কাছে প্রিয়াঙ্কা শুনেছেন- কীভাবে তার বোনকে মিয়ানমার সেনাবাহিনী ধর্ষক করার পর ছুরির মুখে তাকেও ঘর থেকে তুলে নেওয়া হয়েছিল। তারপরও সে কীভাবে বাঁচার চেষ্টা করেছে, বাধা দিয়েছে। ‘সে লড়াই করেছে, লড়াই করেছে, বার বার লড়তে চেয়েছে। জানতে চেয়েছিলাম- এই শক্তি কোথায় পেলে। ও বলেছে, জন্ম নিলে মরতে তো হবেই। তাই বলে নিজের সম্মান তো কাউকে কেড়ে নিতে দিতে পারি না। তার কাছ থেকে আমি লড়াই করার অনুপ্রেরণা পেয়েছি।’
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে প্রিয়াঙ্কার সাক্ষাৎ
বাংলাদেশ সফররত জাতিসংঘ শিশু তহবিলের (ইউনিসেফ) শুভেচ্ছা দূত ও বলিউড অভিনেত্রী প্রিয়াঙ্কা চোপড়া গতকাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে গিয়ে এ সাক্ষাৎ করেন তিনি। এসময় শেখ হাসিনার সঙ্গে ছিলেন তার ছোট বোন শেখ রেহানা।
ইউনিসেফের শুভেচ্ছা দূত প্রিয়াঙ্কা কক্সবাজারে আশ্রিত মিয়ানমারের রোহিঙ্গা শরণার্থীদের দুঃখ-দুর্দশা দেখতে গত ২১ মে বাংলাদেশ সফরে আসেন। ঢাকা থেকে সরাসরি তিনি প্লেনযোগে তিনি কক্সবাজারে চলে যান। তারপর থেকে চার দিন বিভিন্ন ক্যাম্প ঘুরে ঘুরে রোহিঙ্গাদের খোঁজখবর নেন ইউনিসেফের এ দূত। তিনি রোহিঙ্গা শিশুদের একেবারে ঘনিষ্ঠ হয়ে তাদের ওপর জুলুম নির্যাতনের কাহিনী ও দূর্বিসহ কষ্টের কথা শুনছিলেন। সবশেষ গতকাল তিনি নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে লাইভে এসে রোহিঙ্গা শিশুদের করুণ অবস্থার বিবরণ দেন। এই অবস্থা নিরসনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বিশ্ব স¤প্রদায়ের প্রতি আহŸানও জানান তিনি। ঢাকা ত্যাগের আগে তিনি সংবাদ সম্মেলন করে রোহিঙ্গা শিশুদের দুর্দশার চিত্র তুলে ধরেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।