২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত মোটা হবেন ৪০০ কোটি মানুষ
২০৩৫ সালের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত ওজন বা মোটা হবেন বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ। সংখ্যার বিচারে যা
মুখ ও দেহের বিভিন্ন ধরণের রোগের কারণে মুখের অভ্যন্তরে আলসার বা ক্ষত দেখা দিতে পারে। আবার বিভিন্ন ধরণের উপাদানের অভাবজণিত কারণেও একই ধরণের সমস্যা দেখা দিতে পারে। মুখের আলসার বা ক্ষতের কারণে যদি আপনি কোনো মলম বা জেল ব্যবহার করেন তবে মনে রাখবেন সেহরী খাবার পর মুখের অভ্যন্তরে কোনো মলম বা জেল ব্যবহার করা যাবে না। যদি একান্তই বাধ্যতামূলক হয়ে থাকে তাহলে সেহরীর শেষ সময়ের অন্ততঃ ১০ মিনিট আগে ভালভাবে কুলকুচি করে নিতে হবে। মুখের বিশেষ কিছু আলসারের চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধের কারণে পাকস্থলীতে এসিড নিঃসরণ হয়ে থাকে। তাই সেহরীর সময় খাবার পর এ ধরণের ওষুধ সেবন করবেন না। এক্ষেত্রে ইফতারীর পর অথবা রাতের খাবারের পর ওষুধ সেবন করতে হবে।
মুখের আলসারের রোগীদের অতিরিক্ত ঠান্ডা বা গরম খাবার গ্রহণ করা যেহেতু নিষেধ তাই ইফতারীর পর অতিরিক্ত ঠান্ডা কোনো শরবত বা পানীয় পান করবেন না। টুথপেষ্ট ব্যবহারের ক্ষেত্রে মুখের আলসার রোগীদের জেল জাতীয় টুথপেষ্ট ব্যবহার না করে সাধারণ সাদা রঙের টুথপেষ্ট ব্যবহার করা উচিত। দিনের বেলায় শুধুমাত্র রোগী নয় বরং সবার জন্যই টুথপেষ্ট ব্যবহার করা ঠিক নয়। কারণ টুথপেষ্ট অসাবধানতাবশতঃ গলার অভ্যন্তরে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে রোজা ভেঙ্গে যাবে। সবচেয়ে বড় কথা ব্রাশ করার সময় টুথপেষ্টের স্বাদ গৃহীত হয়ে থাকে। টুথপেষ্টের স্বাদ গৃহীত হলে রোজা ভাঙবে না কিন্তু মাকরুহ হবে। ত্রুটিযুক্ত আমলকে মাকরুহ বলা হয়। তাই রমযান মাসে কোনো ত্রুটিযুক্ত আমল করার প্রয়োজন নেই। সম্ভব হলে মুখের আলসার রোগীদের এস.এল.এস. মুক্ত টুথপেষ্ট ব্যবহার করা উচিত। এস.এল.এস. বা সোডিয়াম লরিল সালফেট নিজেই মুখের অভ্যন্তরে আলসার বা ঘাঁ সৃষ্টি করতে পারে। রমযান মাসে দিনের বেলায় কোনো অবস্থাতেই টুথপাউডার বা কোনো দাঁতের মাজন ব্যবহার করা যাবে না। আপনি যতই সাবধানতা অবলম্বন করেন না কেন টুথপাউডার দিয়ে দাঁত মাজার সময় টুথপাউডারের কনা আপনার গলার ভিতরে প্রবেশ করতে পারে। আর গলার ভিতরে কোনো কিছু প্রবেশ করার অর্থই হলো রোযা ভেঙ্গে যাওয়া। অতএব রমযান মাসে টুথপাউডার দিয়ে দিনের বেলায় দাঁত ব্রাশ করবেন না। প্রয়োজন হলে নিমের ডাল বা জয়তুনের ডাল দিয়ে দাঁত মেছওয়াক করবেন যা নবীর সুন্নত। তবে খেয়াল রাখবেন রমযান মাসে কথা ও কাজে সংযমী না হয়ে নিমের ডাল দিয়ে দাঁত মেছওয়াক করা তত গুরুত্বপূর্ণ নয়। কারণ নবীর মূল আদর্শ আমাদের সবার নিকট অনেক বড়।
ক্রনিক কিডনী রোগীদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ধীরে ধীরে কমে যাওয়ার কারণেও মুখের আলসার সৃষ্টি হতে পারে। কিডনী রোগীদের মুখের আলসার বা সংক্রমণের চিকিৎসায় যথাসম্ভব এন্টিবায়োটিক পরিহার করা উচিত। মুখের কোনো তীব্র সংক্রমণের কারণে এন্টিবায়োটিক প্রয়োজন হলে ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া তা কোনোভাবেই গ্রহণ করা ঠিক নয়। কারণ কিডনী রোগীদের সব ধরণের এন্টিবায়োটিক প্রদান করা যায় না। মুখের আলসার বা মুখের ব্যথা অথবা দাঁতের ব্যথার ক্ষেত্রে প্রয়োজন হলে ট্রামাডল জাতীয় ব্যাথানাশক ওষুধ খাবার পর সেবন করা যেতে পারে।
মুখের আলসার রোগীদের অতিরিক্ত তেল দিয়ে ভাজা পোড়া জাতীয় ইফতার পরিহার করা উচিত। এসব ক্ষেত্রে সমস্যা থাকলে মিষ্টি জাতীয় খাবারও খেতে হবে রয়েসয়ে। ক্ষুদ্রান্ত্রের রোগের কারণে অনেকেরই মুখে আলসার বা ঘাঁ দেখা দিতে পারে। অনেকেরই মাত্রার অধিক প্রোটিন জাতীয় খাবার খেলে মুখের আলসারের তীব্রতা বেড়ে যায়। যাদের গ্লুটেন ইনটলারেন্স রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে গ্লুটেন ফ্রি খাবার বা ইফতার গ্রহণ করা জরুরী। গ্লুটেন ফ্রি খাবার মানে ডিম, মাংস বা গুরুত্বপূর্ণ প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার বন্ধ করে দেওয়া নয়। গ্লুটেন মুক্ত খাবার বলতে বুঝায় গম, রাই এবং বার্লিমুক্ত খাবার।
এলার্জির কারণে মুখের অভ্যন্তরে আলসার এবং জিহ্বার ফোলাভাব হতে পারে। এলার্জিণিত মুখের আলসার রোগীদেরও রোজায় সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। ওষুধের পাশাপাশি যে সব খাবার এলার্জি সৃষ্টি করে থাকে তা বর্জন করতে হবে। এছাড়া যে সব খাবার এসিডিক, অতিরিক্ত মসলাযুক্ত অথবা লবণাক্ত সে সব খাবার বর্জণ করতে হবে। এসব খাবার জিহ্বায় টেষ্ট বাডগুলোর প্রদাহ সৃষ্টি করে জিহ্বায় ফুলাভাব এনে দিতে পারে। এছাড়াও মুখের আলসারের প্রদাহের তীব্রতা বৃদ্ধি করে।
ডায়াবেটিস রোগীদের নিয়ম পালন করে চলতে হবে। যদি কারো অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস থাকে তাহলে লালাতে চিনির পরিমাণ বেশি থাকে। ধারণা করা হয় যে, ক্যানডিডা অ্যালবিকানস্ তখন এ অতিরিক্ত চিনি মুখের অভ্যন্তরে তার নিজস্ব বৃদ্ধির জন্য ব্যবহার করতে পারে। ক্যানডিডা অ্যালবিকানস্ ফাংগাস দ্বারা ওরাল থ্রাসের সৃষ্টি হয়ে থাকে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না থাকলে এ অবস্থায় খাবার গ্রহণের সময় জিহ্বায় এবং মুখে জ্বালাপোড়া হতে পারে।
সার্বিকভাবে রোজা মুখের আলসার রোগীদের জন্য খুবই ভাল। সবার জন্য তো বটেই। নামাজ মেডিটেশনের মতো কাজ করে। দুশ্চিন্তা ও অস্থিরতার কারণে অনেকেরই মুখের অভ্যন্তরে আলসারের সৃষ্টি হয়। আবার অনেকের ক্ষেত্রে এর তীব্রতা বেড়ে যায়। রোজার মাসে নামাজ ও রোজা মানব দেহে বিশেষভাবে মনে স্থিরতা সৃষ্টি করে। মানসিক প্রশান্তির কারণে মুখের আলসারের তীব্রতা অবশ্যই কমে আসবে, বিশেষ করে যে সব মুখের আলসারের কারণ সহজে নির্ণয় করা যায় না।
-ডাঃ মোঃ ফারুক হোসেন
মুখ ও দন্তরোগ বিশেষজ্ঞ
মোবাইল : ০১৮১৭৫২১৮৯৭
ই-মেইল : [email protected]
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।