নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
যেভাবে একের পর এক কীর্তি গড়ে দাঁড়িয়েছেন ব্যাটিংয়ের চূড়ায়, নেই কোন ক্লান্তির ছাপ। ফিল্ডিংয়ে যে সকল ক্যাচ আর রান আউটের নজির ক্রিকেট বিশ্ব দেখেছে, তার মাঝে স্বদেশি কিংবদন্তি জন্টি রোডসকে খুঁজে পান অনেকেই। সেই এবি ডি ভিলিয়ার্সই অবসরের ঘোষনা দিলেন ‘ক্লান্তি’র দোহাই দিয়ে! হ্যাঁ, ঠিকই শুনছেন, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে চীরতরে বিদায় বলে দিয়েছেন দক্ষিন আফ্রিকান এই ব্যাটসম্যান। গতকাল নিজের টুইটার অ্যাকাউন্টে ১ মিনিট ৩৩ সেকেন্ডর একটি ভিডিও বার্তা শেয়ার দিয়েছেন এবি। সেখানেই আগ্রাসী এই প্রোটিয়া নিজের বিদায়ের কারণটা জানিয়েছে, ‘ক্লান্তি’।
চার দিন আগেই ভারত থেকে খেলে গেছেন ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ। এবারের আইপিএলে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর হয়ে শেষ ম্যাচ খেলার চার দিন পর এমন ভিডিও বার্তায় অবসরের ঘোষণায় বিস্ময়ের ঘোর কাটছে না অনেকের। সব সংস্করণ মিলিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার সর্বকালের অন্যতম সেরা এই ব্যাটসম্যান বার্তায় বলেন, ‘অনেক হয়েছে এখন অন্যদের দায়িত্ব নেওয়ার পালা। ১১৪ টেস্ট, ২২৮ ওয়ানডে ও ৭৮টি টি-টোয়েন্টি খেলেছি। এখন ছেড়ে দেওয়ার পালা, অন্যরা দায়িত্ব নিক। আমি আমার কাজ সেরেছি, বিশ্বাস করুন আমি ক্লান্ত।’ এত বড় একটি সিদ্ধান্ত হুট করে নেয়াটা যে কঠিন ছিল সেটি লুকাতে পারেন নি এবি, ‘এটা কঠিন সিদ্ধান্ত। আমি অনেক চিন্তা করেছি এবং বুঝতে পেরেছি ছন্দে থাকার সময়েই সরে যাওয়া উচিত। ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দারুণ দুই সিরিজ জয় পর মনে হচ্ছে, সরে যাওয়ার এটাই সেরা সময়।’
বিদায় বেলায় কোচিং স্টাফ, সতীর্থ, ভক্তদের ধন্যবাদ দিয়ে সরে যাওয়ার ব্যাখ্যা দিয়েছেন এই ব্যাটসম্যান, ‘প্রোটিয়া জার্সিতে কখন কোথায় এবং কোন ফরম্যাটে খেলব এটা বেছে নেওয়া আমার জন্য কঠিন। আমার জন্য ব্যাপারটা হয়ত সবকিছু নয়তো কিছুই না। এতবছর খেলার সময় যত কোচ, সাপোর্ট স্টাফ আমাকে সহায়তা করেছেন সবাইকে কৃতজ্ঞতা। সবচেয়ে বড় করে ধন্যবাদ দিতে চাই আমার সতীর্থদের। তাদের সহয়তা না পেলে আমি অর্ধেক খেলোয়াড়ও হতে পারতাম না।’
ভিলিয়ার্স পরিষ্কার করেছেন ফ্রেঞ্চাইজি ক্রিকেটের যুগে টাকা কামানোর লোভে তার এই সিদ্ধান্ত নয়, ‘অন্য কোথাও থেকে বাড়তি আয়ের জন্য এই সিদ্ধান্ত না। এটা হচ্ছে চলতি পথে গ্যাস ফুরিয়ে যাওয়ার মতো ব্যাপার। সব কিছুর শেষ আছে। দক্ষিণ আফ্রিকা ও বাকি বিশ্বের ক্রিকেট সমর্থকদের আমি ধন্যবাদ জানাই আমাকে সমর্থনের জন্য এবং আজ আমাকে বুঝতে পারার জন্য। দেশের বাইরে খেলার কোন পরিকল্পনা আমার নেই। আমি আশা করি টাইটান্সের হয়ে আমি ঘরোয়া ক্রিকেট খেলব। ফাফ ডু প্লেসি ও প্রোটিয়া দলের বড় সমর্থক হয়ে থাকব।’
২০০৪ সালে টেস্ট দিয়ে আন্তর্জাতিক অভিষেক হয় ভিলিয়ার্সের। করেছেন ভুরি ভুরি রান। আগ্রাসী ব্যাটিংয়ের অন্য নামও ছিল ভিলিয়ার্স। ১১৪ টেস্টে ৫০.৬৬ গড়ে আছে ৮ হাজার ৭৬৫ রান। করেছেন ২২ সেঞ্চুরি আর ৪৬ ফিফটি। ওয়ানডেতে দ্রæততম সেঞ্চুরির রেকর্ডধারী ভিলিয়ার্স ২২৮ ম্যাচে করেছেন ৯ হাজার ৫৭৭ রান। ৫৩.৫০ গড়ে ২৫ সেঞ্চুরির সঙ্গে আছে ৫৩ ফিফটি। ৭৮ টি-টোয়েন্টিতে ১৬৭২ রান করা ভিলিয়ার্স ছিলেন এই ফরম্যাটেও বোলারদের আতঙ্ক।
আর এক বছর পরই বিশ্বকাপ। দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে বিশ্বকাপ জেতার স্বপ্নটা পূরণ করার কথা অনেকবারই বলেছেন। তবে কদিন আগে আবার এটাও বলেছেন, বিশ্বকাপ না জিতলেই যে সব শেষ হয়ে গেছে, এমন কিছু তার ভাবনায় নেই। সেটা যে এবি ডি ভিলিয়ার্সের অবসর চিন্তার আগমনী বার্তা ছিল, সেটা কে জানত? ৩৪ বছর বয়সে বিশ্বকাপের এক বছর আগেই হুট করেই বিদায় বলে দিয়েছেন এবি। ওয়ানডে ক্রিকেটে দ্রæততম সেঞ্চুরির মালিকের নিউ ওয়ান্ডারার্স স্টেডিয়ামে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের শেষ টেস্টে ৬৯ ও ৬ রানের ইনিংস দুটিই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সর্বশেষ অবদান হয়ে থাকল।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে
ব্যাটিং টেস্ট ওয়ানডে টি-টোয়েন্টি
ম্যাচ ১১৪ ২২৮ ৭৮
ইনিংস ১৯১ ২১৮ ৭৫
রান ৮৭৬৫ ৯৫৭৭ ১৬৭২
সর্বোচ্চ ২৭৮* ১৭৬ ৭৯*
গড় ৫০.৬৬ ৫৩.৫০ ২৬.১২
স্ট্রাইক ৫৪.৫১ ১০১.০৯ ১৩৬.১৬
সেঞ্চুরি ২২ ২৫ ০
ফিফটি ৪৬ ৫৩ ১০
চার ১০২৪ ৮৪০ ১৪০
ছক্কা ৬৪ ২০৪ ৬০
তার বিদায়ে তারা...
হঠাৎই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় বলে দিয়েছেন এবি ডি ভিলিয়ার্স! বিস্ময়ের ঘোর কাটছে না অনেকের। সব সংস্করণ মিলিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার সর্বকালের অন্যতম সেরা এই ব্যাটসম্যান কারণ হিসেবে বলছেন ক্লান্তির কথা। ৩৪ বছর বয়সে ক্লান্তির কাছে হার মানা ডি ভিলিয়ার্সের হঠাৎ এই বিদায় পোড়াচ্ছে তাদেরও-
‘আমি বিস্মিত! আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় বলে দিয়েছে এবি (ডি ভিলিয়ার্স)! কিন্তু এটাই জীবন এবং সে যেটা ভালো মনে করেছে সেটা করেই এগিয়ে যেতে চায়। ধন্যবাদ তোমাকে, তোমার দারুন ম্যাচ জেতানো ইনিংসের জন্য, দুরদর্শী অধিনায়কত্বের জন্য, সর্বোপরি ন¤্র আচরণের জন্য।’
-অ্যালান ডোনাল্ড, দক্ষিণ আফ্রিকান কিংবদন্তি পেসার
‘সেরাদের একজন! তোমাকে অভিনন্দন এবি, দারুন ক্রিকেটার, তার চাইতেও বড় কথা বড় মনের মানুষ।’
-মাহেলা জয়াবর্ধনে, সাবেক লঙ্কান ব্যাটসম্যান
‘ময়দানী তোমাকে দারুন পছন্দ। মাঠের বাইরেও তোমার ৩৬০ ডিগ্রী সাফল্য কামনা করছি। তুমি সত্যিকারভাবেই ক্রিকেট মাঠে শূণ্যতা তৈরী করবে এবি!’
- শচীন টেন্ডুলকার, ভারতীয় ব্যাটিং কিংবদন্তি
‘আমার পাওয়া সবচেয়ে আরাধ্য উইকেট! সবসময়ই তোমাকে পরাস্ত করা বিশাল এক চ্যালেঞ্জ। অভিনন্দন দুর্দান্ত এক ক্যারিয়ারের জন্য।’
-শহিদ আফ্রিদি, পাকিস্তানের তারকা অলরাউন্ডার
‘আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের লজ্জা...। কিন্তু সে এমনই একজন ক্রিকেটার যে ঠিক আমার মতই তিন ফরম্যাটে ক্লান্তিহীন খেলে গেছে। গ্রেট গ্রেট..। আমার দেখা সেরা তিনজনের একজন সে।’
-মাইকেল ভন, ইংল্যান্ড কিংবদন্তি ব্যাটসম্যান
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।