Inqilab Logo

সোমবার, ০৮ জুলাই ২০২৪, ২৪ আষাঢ় ১৪৩১, ০১ মুহাররম ১৪৪৬ হিজরী

গত অর্থবছরের তুলনায় চলতি হিসাবের ঘাটতি পাঁচগুণ বেড়েছে আমদানির আড়ালে অর্থ পাচারের শঙ্কা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৪ মে, ২০১৮, ১২:০০ এএম

দ্রুতগতিতে বাড়ছে আমদানি। সে তুলনায় রফতানি প্রবৃদ্ধি বাড়ছে না। ফলে বাড়ছে বাণিজ্য ঘাটতি। আর আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় তা মেটাতে চাপ পড়ছে চলতি হিসাবে। ফলে দ্রুত বাড়ছে চলতি হিসাবে ঘাটতি। চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে মার্চ পর্যন্ত ৯ মাসে চলতি হিসাবে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৭০৮ কোটি ৩০ লাখ ডলার। যা এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ। আর গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় তা পাঁচগুণ বেশি। এ ঘাটতি দীর্ঘায়িত হলে বিনিময় হারে চাপ পড়ার পাশাপাশি টাকার অবমূল্যায়ন আরও বেড়ে যেতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। বাংলাদেশ ব্যাংকের মুদ্রানীতি বিভাগের প্রতিবেদনমতে, আলোচ্য সময়ে পণ্য ও সেবা আমদানি-উভয়ই বেড়েছে ব্যাপক হারে। কিন্তু সে তুলনায় বাড়েনি রফতানি। যা এ ঘাটতির প্রধান কারণ। গত অর্থবছরের একই সময় চলতি হিসাবে ঘাটতি ছিল ১৩৭ কোটি ২০ লাখ ডলার। এদিকে ঘাটতির ফলে ডলারের বিপরীতে টাকার বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখতে খোলাবাজারে ডলার ছাড়তে হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংককে। কিন্তু দীর্ঘ মেয়াদে এটি চলতে থাকলে তা নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে পুরো বাজার ব্যবস্থার ওপর। বেড়ে যেতে পারে আমদানি পণ্যের দাম। তাছাড়া চলতি অর্থবছরে ব্যাপক হারে আমদানি ব্যয় বৃদ্ধির আড়ালে অর্থ পাচার হচ্ছে কি না, সে বিষয়েও শঙ্কা তৈরি হয়েছে। দুর্বার গতিতে আমদানি বাড়ায় গত মার্চ পর্যন্ত বাণিজ্য ঘাটতি ১ হাজার ৩২০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে গেছে। সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, সরকারের বেশ কিছু বড় প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি বেড়েছে। যা আমদানি ব্যয় বৃদ্ধির একটা বড় কারণ। তবে গত কয়েক মাসে যে হারে এ ব্যয় বেড়েছে, তাতে আমদানির আড়ালে অর্থ পাচারের সন্দেহ তৈরি হয়েছে। চলতি হিসাবে ঘাটতি দীর্ঘায়িত হলে টাকার বিনিময় হার ঠিক রাখা কঠিন হবে বলে মনে করেন তিনি।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান বু্যুরোর (বিবিএস) হিসাব পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ২০০৯-১০ অর্থবছর থেকে বেশিরভাগ সময়েই চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত ছিল। ২০০৯-১০ অর্থবছরে চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত ছিল ২২ হাজার ২৯৫ টাকা। এর পরের অর্থবছরে তা দাঁড়ায় ছয় হাজার ২২৫ কোটি টাকা। ২০১১-১২ অর্থবছরে তা ছিল আট হাজার ৯১৬ কোটি টাকা। ২০১২-১৩ ও ২০১৩-১৪ অর্থবছরে উদ্বৃত্তের হার ছিল যথাক্রমে ১৫ হাজার ২৩৩ ও আট হাজার ৭৭ কোটি টাকা। ২০০৯-১০ অর্থবছরের পরপ্রথমবারের মতো চলতি হিসাবে ঘাটতি দেখা দেয় ২০১৪-১৫ অর্থবছরে। অর্থবছরটিতে ঘাটতি দাঁড়ায় আট হাজার ৩৫৮ কোটি টাকা। এর পরের অর্থবছর তা আবারও উদ্বৃত্ত হয় ১৯ হাজার ৭৩১ কোটি টাকা। এরপর ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ফের ১৮ হাজার ১১৬ কোটি টাকার ঘাটতি হয়। চলতি অর্থবছর এ ঘাটতি ৭৮ হাজার ৮৩১ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে বিবিএসের প্রাথমিক হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে যে হারে আমদানি ব্যয় বাড়ছে, তাতে অর্থবছর শেষে চলতি হিসাবে ঘাটতি বিবিএসের প্রাথমিক হিসাবের চেয়েও বেশি হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এদিকে চলতি হিসাবে ঘাটতির ফলে এরই মধ্যে টাকার বিনিময় হার কমতে শুরু করেছে। গত বছরের জুনের তুলনায় চলতি বছরের মার্চে ডলারের বিপরীতে টাকার বিনিময় মূল্য প্রায় তিন শতাংশ কমে গেছে। দীর্ঘ মেয়াদে এটি চলতে থাকলে এক সময় বাংলাদেশ ব্যাংককে আইএমএফের দ্বারস্থ হওয়া লাগতে পারে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আমদানি

২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ