রামগতিতে আ.লীগ নেতাকে বহিষ্কার
লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চরআলগী ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় ইউনিয়ন আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক সাহেদ আলী মনুকে দলীয় পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। গত
যৌতুকের জন্য চার মাসের অন্তঃসত্তা স্ত্রীকে পাশবিক নির্যাতন করার অভিযোগ পাওয়া গেছে এক স্বামীর বিরুদ্ধে। এতে ওই গৃহবধূর চার মাসের গর্ভের সন্তান নষ্ট হয়ে গেছে। বর্তমানে ওই গৃহবধূ নীলফামারীর সৈয়দপুর ১০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। গতকাল বুধবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় স্বামীর শারীরিক নির্যাতনে শিকার হয়ে গর্ভের সন্তান হারিয়ে মারাত্মক অসুস্থ অবস্থায় ওই হাসপাতালে ২৬ নম্বর বেডে শুয়ে আছেন গৃহবধূ আয়শা বেগম।
এ সময় তাঁর সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, তাদের বাড়ি নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার কামারপুকুর ইউনিয়নের ধলাগাছ গ্রামের দেওয়ানীপাড়ায়। তাঁর বাবা রহিদুল ইসলাম ও মা ফাতেমা বেগম হতদরিদ্র মানুষ। বাবা একজন রাজমিস্ত্রির যোগালী আর মা অন্যের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করেন। বাবা-মা দিন রাত চব্বিশ ঘন্টা হাঁড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করে তাকেসহ ৫ ভাই বোনদের বড় করেন। তাঁর বিয়ের জন্য খেয়ে না খেয়ে অনেক কষ্ট করে ৫০ হাজার টাকা যোগাড়ও করেন। এরপর নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার পূর্ব কাঠালী গ্রামের মাষ্টারপাড়ায় মৃত. মজরতুল্ল্যাহ’র ছেলে মো. শফিকুল ইসলামে সঙ্গে বিয়ে দেন গত ২০১৭ সালের ২৪ নভেম্বর। সে সময় যৌতুক ছাড়াও বাবা-মা আমার সুখের জন্য তৈজসপত্রসহ সংসারের অনেক কিছুই দেয় আমাকে।
আয়শা জানায়, বিয়ের সময় তাঁর স্বামী শফিকুল প্রতারণার আশ্রয় নেয়। এর আগেও সে একাধিক বিয়ে করেছিল। আগের স্ত্রীদের পরিবারের কাছ থেকে মোটা অংকের যৌতুক নিয়ে তাদের ওপর নির্মম অত্যাচার নির্যাতন চালিয়ে তাদের তাড়িয়ে দেয়। নববধূ আয়শা স্বামীর বাড়িতে যাওয়ার পর স্বামীর একাধিক বিয়ের ঘটনা জানতে পারেন। তারপরও স্বামীর ঘর সংসারে মনোনিবেশ করেন। কিন্তু বিয়ের অল্প কিছু দিনের মধ্যে যৌতুকলোভী শফিকুল ইসলমের আসল চেহারা বেরিয়ে আসে। সে যৌতুকের জন্য নববধূর ওপর শারীরিক অত্যাচার- নির্যাতন শুরু করেন। স্বামীর শত অত্যাচার নির্যাতন মুখ বুজে সহ্য করে স্বামীর বাড়িতে পড়ে থাকে আয়শা। কারণ তিনি জানেন তাঁর হতদরিদ্র বাবা-মায়ের সামর্থ্য নেই জামাইকে আরো যৌতুকের টাকা দেওয়ার। এর অবস্থায় চার মাসের অন্তঃসত্ত¡া হয়ে পড়ে আয়শা। যৌতুকলোভী শফিকুল আগের স্ত্রীদের মতো আয়শাকেও তাড়াতে কারণে অকারণে তাঁর ওপর নির্মম শারীরিক নির্যাতন চালাতে থাকে। গত ১২ মে সকালে যৌতুকের টাকার জন্য স্ত্রী আয়শা বেগমকে বেদম মারপিট করে। এ সময় তার তলপেটেও সজোরে আঘাত করে স্বামী শফিকুল। এতে কিছুটা অসুস্থ হয়ে পড়ে আয়শা। তারপরও তাকে এক কাপড়ে স্বামীর বাড়ি থেকে গলাধাক্কা দিয়ে বের করে দেওয়া হয়। এ সময় স্বামীর হাতে পায়ে ধরে অনেক কান্নাকাটি করে আয়শা। কিন্তু গৃহবধূ আয়শার আকুতি মিনতি কোন কিছুই পাষন্ড স্বামী শফিকুলের মন গলাতে পারেনি। অনেকটা নিরুপায় হয়ে স্বামীর বাড়িতে আশ্রয় না পেয়ে অসহায় আয়শা বেগম বাবার বাড়িতে ফিরে আসে। এখানে আসার পর তাঁর পেটে অসহ্য ব্যথা শুরু হয়। ক্রমে তাঁর পেটের ব্যাথা বাড়তে থাকে। এর এক পর্যায়ে তাঁর প্রচুর রক্তক্ষরণ শুরু হলে গত ২১ মে তাকে সৈয়দপুর ১০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
সৈয়দপুর ১০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের জুনিয়র কনসালটেন্ট (গাইনি) ডা. মোছা. মুনমুন বেগম জানান, গৃহবধূ আয়শা বেগমের অসম্পূর্ণ গর্ভপাতের ঘটনা ঘটেছে। পরে তার আলট্রাসনোগ্রামে করেও একই ফলাফল মিলেছে।
গতকাল বুধবার বিকেলে মুঠোফোনে কথা হয় আয়শা বেগমের মা ফাতেমার বেগমের সঙ্গে। তিনি কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন চার মাসের গর্ভের সন্তানহারা আয়শাকে নিয়ে কি করবেন ভেবেচিন্তে কোন কুলকিনারা পাচ্ছেন না। তিনি জানান, তাঁর স্বামীরও বয়স হয়েছে। আগের মতো আর কাজকর্ম করতে পারেন না। তাদের অভাবী সংসারে অনেক ধারদেনা করে মেয়েটিকে বিয়ে দিয়েছেন। মেয়ে সুখের জন্য জামাইকে অনেক নগদ অর্থসহ অনেক উপঢৌকন দিয়েছি। তারপরও জামাইয়ের মন ভরাতে পারিনি। এখন আবারও জামাই যৌতুক দাবি করে মারপিট করে মেয়েকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে। এখন কোথা থেকে টাকা সংগ্রহ করে জামাইকে দিব ? মেয়েকে বাড়িতে রাখব এমন সামর্থ্য নেই। তিনি যৌতুকলোভী প্রতারক জামাইয়ের বিরুদ্ধে আইনের আশ্রয় নেবেন বলে জানান।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।