Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

এগিয়ে চলছে ২য় কাঁচপুর মেঘনা গোমতী সেতুর কাজ

ঢাকা-চট্টগ্রাম ৪ লেন মহাসড়কের সুফল মিলবে

| প্রকাশের সময় : ২৩ মে, ২০১৮, ১২:০০ এএম

চলতি বছরেই ২ সেতুর কাজ শেষ হবে : ব্যয় কমবে ৭শ’ কোটি টাকা
বিশেষ সংবাদদাতা : ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেন মহাসড়কে গুরুত্বপূর্ণ তিনটি সেতুর নির্মাণকাজ এগিয়ে চলছে। নির্ধারিত সময়ের আগেই অন্তত দুটি সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হবে। মেঘনা সেতুর কাজ শেষ হতে আরও সময় লাগবে। সেতু তিনটি হচ্ছে শীতলক্ষ্যা নদীর ওপর দ্বিতীয় কাঁচপুর, দ্বিতীয় মেঘনা এবং দ্বিতীয় মেঘনা-গোমতী সেতু। মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, চলতি বছরের ডিসেম্বরেই খুলে দেয়া হবে দ্বিতীয় কাঁচপুর সেতু। দ্রæত কাজ চলায় এই তিন সেতু নির্মাণে ব্যয়ও কমবে অন্তত ৭শ’ কোটি টাকা। তিনটি সেতু নির্মাণে প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ৫ হাজার ৯৬৬ দশমিক ৮৬৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে জাইকা দিচ্ছে ৫ হাজার ৩৯৯ দশমিক ৮৮০ কোটি টাকা এবং বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব অর্থায়নের পরিমাণ ৫৬৬ দশমিক ৯৮৮ কোটি টাকা। সেতু তিনটি যৌথভাবে নির্মাণ করছে জাপানি প্রতিষ্ঠান ওবায়শি করপোরেশন, সিমিজু করপোরেশন এবং জেএফই ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন।
অর্থনীতির লাইফলাইনখ্যাত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যান চলাচল সুগম করতে একে চার লেনে উন্নীত করার প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। অনেক চড়াই উৎরাই পেরিয়ে তিনটি ফ্লাইওভারের কাজ বাকী রেখেই ২০১৬ সালে এই চার লেনের মহাসড়কটি উদ্বোধন করা হয়। কিন্তু চার লেনের সুফল পাওয়ার আগেই যানজটের যন্ত্রণায় সব ¤øান হয়ে যায়। অর্থনীতিতে পড়তে থাকে বিরুপ প্রভাব। গত এক সপ্তাহ আগেও মহাসড়কে ফেনীর ওভারপাস নির্মাণের জটিলতায় যানজটে একেবারে স্থবির হয়ে গিয়েছিল দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই মহাসড়কটি।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কটি চার লেনে উন্নীত হওয়ার পর থেকেই কাঁচপুর, মেঘনা এবং মেঘনা-গোমতী সেতু দিয়ে এক লেনে যানবাহন চলাচল করতে গিয়ে যানজট লেগেই আছে। তার উপর সেতুগুলো ঝুঁকিপূর্ণ। এই তিনটি সেতুর কারনে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কটি যানবাহন চলাচল ও মালামাল পরিবহণের জন্য মোটেও উপযোগী নয়। সড়ক বিভাগ সূত্র জানায়, ঝুঁকির মুখে থাকা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বিদ্যমান এ তিনটি গুরুত্বপূর্ণ সেতুর পাশেই আরও তিনটি সেতু নির্মাণের লক্ষ্যে ২০১৩ সাল থেকে কাজ শুরু করে সরকার। একসঙ্গে তিনটি সেতু নির্মাণ এবং পুরনো তিনটি সেতু পুনর্বাসন করার লক্ষ্যে ২০১৩ সালের এপ্রিল মাস থেকে ধরে ২০১৯ সালের অক্টোবরের মধ্যে সেতুগুলো নির্মাণের সময়কাল ধরা হয়। এ লক্ষ্যে ২০১৫ সালের নভেম্বর মাসে ঠিকাদারি সংস্থার সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করে সড়ক বিভাগ। ২০১৬ সালে তিন সেতু নির্মাণের দৃশ্যমান কাজ শুরু হয়।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, তিনটি সেতুর কাজের মেয়াদকাল ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত হলেও মেঘনা সেতু বাদে বাকি দুটি সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হবে চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই। এর পরপরই সেতু দুিিট খুলে দেওয়া হবে যানবাহন চলাচলের জন্য। একই সঙ্গে বিদ্যমান সেতু তিনটির পুনর্বাসন কাজ শুরু হবে। সেতু বিভাগ সূত্র জানায়, তিনটি সেতুর মধ্যে কাঁচপুর সেতুর কাজ অনেকটাই এগিয়েছে। ইতিমধ্যে মূল অ্যাবাটমেন্ট এবং সব পিলারের ফাউন্ডেশন নির্মাণ শেষ হয়েছে। অ্যাবাটমেন্ট এবং পিলারের হেড নির্মাণের কাজও শেষ হয়েছে। ভিয়েতনাম থেকে আনা ৬৪টি বক্স গার্ডার সেট ও ডেক ¯ø্যাব প্যানেল বসানোর কাজ প্রায় শেষ। সুপারস্ট্রাকচার বসানোর কাজ চলছে। ইতিমধ্যে এ সেতুর চট্টগ্রাম অংশের সংযোগ সড়ক, ডাইভারশন সড়কসহ অন্যান্য কাজ শেষ হয়েছে। চট্টগ্রাম ও সিলেটের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনকারী ওভারপাসের কাজ চলছে। চার লেনবিশিষ্ট এ সেতুটি নির্মাণ হচ্ছে বিদ্যমান সেতুর ভাটিতে। ৩৯৭ দশমিক ৩ মিটার দীর্ঘ এ সেতুর সংযোগ সড়ক হবে আট লেনবিশিষ্ট। আর বিদ্যমান সেতু ও নতুন সেতু মিলিয়ে লেনও হবে আটটি।
অন্যদিকে, চার লেনবিশিষ্ট দ্বিতীয় মেঘনা সেতুটি নির্মাণ হচ্ছে বিদ্যমান সেতুর উজানে। ৯৩০ মিটার দীর্ঘ এ সেতুটির উভয় পাশে থাকে ছয় লেনবিশিষ্ট সংযোগ সড়ক। আর বিদ্যমান ও নতুন সেতু মিলিয়ে সেতু হবে ছয় লেনের। ইতিমধ্যে এ সেতুর মূল অ্যাবাটমেন্ট ১ ও ২ এবং ১ থেকে ৪ ও ৮ থেকে ১১ নম্বর পিলারের ফাউন্ডেশনের নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। কয়েকটি পিলারের হেড নির্মাণের কাজও শেষ। এ সেতুর জন্য ভিয়েতনাম থেকে ১০৮টি বক্স গার্ডার, ৭২টি ক্রস গার্ডার এবং ২১৬টি ডেক ¯ø্যাব আনা হয়েছে।
অপরদিকে, দ্বিতীয় মেঘনা- গোমতী সেতুটি নির্মাণ হচ্ছে বিদ্যমান সেতুর ভাটিতে। এ সেতুটিও হবে চার লেনের। আর পুরনো ও নতুন সেতু মিলিয়ে হবে ছয় লেন। এক হাজার ৪১০ মিটার দীর্ঘ এ সেতুর মূল অ্যাবাটমেন্ট ১ ও ২ এবং ১ থকে ৪ ও ১১ থেকে ১৬ নম্বর পিলারের নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। এ ছাড়া ১৫ ও ১৬ নম্বর পিলারসহ কয়েকটি পিলারের হেড নির্মাণের কাজও শেষ হয়েছে। এ সেতুর জন্য মিয়ানমার থেকে ১৪৪টি বক্স গার্ডার ও ২৩৬টি ডেক ¯ø্যাব প্যানেল আনা হয়েছে।
সেতু বিভাগ সূত্র জানায়, দ্বিতীয় কাঁচপুর, মেঘনা এবং মেঘনা-গোমতী সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে জাপান আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থার (জাইকা) আর্থিক সহযোগিতা এবং বাংলাদেশ সরকারের যৌথ অর্থায়নে। সেতু বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানান, তিনটি সেতুই নির্ধারিত সময়ের অন্তত ৬ মাস আগেই শেষ হবে। সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে দ্রæতগতিতে কাজ করার ফলে তিনটি সেতু নির্মাণে প্রায় ৭০০ কোটি টাকা ব্যয় কমবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। এদিকে, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানজটের ভোগান্তি থেকে বাঁচতে ভুক্তভোগিরাও তাকিয়ে আছেন এই তিনটি সেতুর দিকে। শুধু তাই নয়, ব্যবসায়ীরাও আশায় আছেন কবে খুলবে এই তিন সেতু। কবে সছল হবে অর্থনীতির চাকা।

 



 

Show all comments
  • তানিয়া ২৩ মে, ২০১৮, ২:৪৪ এএম says : 0
    যথা সময় যেন কাজ শেষ করা হয়
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চট্টগ্রাম

৩০ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ