Inqilab Logo

শনিবার ০২ নভেম্বর ২০২৪, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ২৯ রবিউস সানী ১৪৪৬ হিজরি

বাস্তবতা ভিন্ন

সওজের এইচডিএম প্রতিবেদন : দেশের ২১.২৫% জাতীয় মহাসড়ক ভাঙাচোরা

| প্রকাশের সময় : ২২ মে, ২০১৮, ১২:০০ এএম

বিশেষ সংবাদদাতা : দেশের ২১ দশমিক ২৫ শতাংশ জাতীয় মহাসড়ক ভাঙাচোরা দশায় রয়েছে। এক বছর আগের তুলনায় দেশের জাতীয় মহাসড়কগুলোর ভগ্নদশা বেড়েছে। সড়ক ও জনপথ বিভাগের এইচডিএম প্রতিবেদনের সর্বশেষ জরিপের তথ্য এটি। যদিও বাস্তবে এর চেয়েও বেহাল দশা দেশের জাতীয় মহাসড়কের। বিশেষজ্ঞদের মতে, সড়ক-মহাসড়ক নির্মাণে অনেক ক্ষেত্রে নিম্নমানের বিটুমিন ব্যবহার হচ্ছে। তার ওপর সড়ক-মহাসড়কে চলছে সক্ষমতার অতিরিক্ত ভারী যানবাহন। এ কারনে কোনো সড়ক-মহাসড়কই ঠিকমতো টিকছে না। নির্মাণের এক বছরের মাথায় তা নষ্ট হয়ে যান চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেনের মহাসড়কই তার উৎকৃস্ট উদাহরণ। ভুক্তভোগিদের ভাষ্য, দেশের ২১ শতাংশ সড়ক-মহাসড়ক ভাঙাচোরা বলা হলেও বাস্তবতা এর উল্টোটা। গত বছর বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত অধিকাংশ সড়ক-মহাসড়ক এখনও আগের মতোই যান চলাচলের অনুপযোগী রয়েছে এতে করে দেশের গুরুত্বপূর্ণ সবগুলো মহাসড়কে যানজট লেগেই আছে।
সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের আওতাধীন প্রায় ১৮ হাজার কিলোমিটার সড়কে জরিপ চালিয়ে ‘মেইনটেন্যান্স অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন নিডস রিপোর্ট ২০১৮-১৯ তৈরি করেছে এইচডিএম। ২০১৭ সালের নভেম্বর থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত সময়ে জরিপটি চালানো হয়েছে। সড়কগুলোর বর্তমান অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে ভালো, চলনসই, দুর্বল, খারাপ ও খুব খারাপ তালিকায় ভাগ করা হয়েছে। ২০১৬ সালের আগস্টে প্রকাশিত এইচডিএমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, দেশের ২০ দশমিক ৩৯ শতাংশ জাতীয় মহাসড়ক ভাঙাচোরা। সর্বশেষ প্রতিবেদনে তা ২১ দশমিক ২৫ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। এর মধ্যেও সবচেয়ে ভালো অবস্থায় রয়েছে রংপুর জোন। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রংপুর জোনের ৯০ শতাংশ সড়কই ভালো ও চলনসই অবস্থায় রয়েছে। অথচ বাস্তবতা অনুযায়ী রংপুর জোনে বহু সড়ক গত বছরের বন্যার পর এখনও মেরামত করা হয়নি। প্রতিবেদন অনুযায়ী সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় রয়েছে বরিশাল জোন। এ জোনের ১১৮ কিলোমিটার জাতীয় মহাসড়কে জরিপ চালিয়ে ২৭ কিলোমিটারের বেশি ‘খুব খারাপ’ অবস্থায় পেয়েছে এইচডিএম। দুর্বল ও খারাপ অবস্থায় রয়েছে আরো প্রায় ১১ কিলোমিটার সড়ক। এই জোনের ২২ শতাংশ মহাসড়ক খুব খারাপ অবস্থায় চলে গেছে। এর খারাপের তালিকায় বরিশালের পরেই রাজশাহী জোনের অবস্থান। এ জোনের ২০ শতাংশ জাতীয় মহাসড়ক খুব খারাপ অবস্থায় রয়েছে বলে এইচডিএমের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। এই জোনের ৫০৯ কিলোমিটার সড়কে জরিপ চালিয়ে ১০৫ কিলোমিটার খুব খারাপ অবস্থায় পেয়েছে এইচডিএম। দুর্বল ও খারাপ অবস্থায় রয়েছে আরো ৬৫ কিলোমিটার সড়ক। এর বাইরে চট্টগ্রাম জোনের ৫১ কিলোমিটার, কুমিল্লার ৮৬, ঢাকার ৮৮, গোপালগঞ্জের ৫১, খুলনার ১২৩, ময়মনসিংহের ৭৭ ও সিলেট জোনের ৫৯ কিলোমিটার জাতীয় মহাসড়ক ভাঙাচোরা দশায় রয়েছে।
সওজ সূত্র জানায়, জাতীয় মহাসড়কের পেভমেন্টের আয়ুষ্কাল ধরা হয় ২০ বছর। যান চলাচলে বার্ষিক ১০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরে ‘রোড পেভমেন্ট ডিজাইন গাইড-২০০৫’- অনুযায়ী এ আয়ুষ্কাল নির্ধারণ করেছে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর। আর আঞ্চলিক মহাসড়কের পেভমেন্টের এ আয়ুষ্কাল (২০ বছর) নির্ধারণ করা হয়েছে যান চলাচলের ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধির হিসাবে। যদিও এক বছরেই আয়ুষ্কাল হারিয়ে ভেঙ্গেচুরে একাকার হচ্ছে নতুন নির্মিত জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়ক। বিশেষজ্ঞদের মতে, সড়ক-মহাসড়ক নির্মাণে অনেক ক্ষেত্রে নিম্নমানের বিটুমিন ব্যবহার হচ্ছে। সড়ক নির্মাণের যে ‘কিউরিং পিরিয়ড’ থাকে, তাও মানা হচ্ছে না। তার ওপর সড়ক-মহাসড়কে চলছে সক্ষমতার অতিরিক্ত ভারী যানবাহন। যান চলাচলের অস্বাভাবিক প্রবৃদ্ধিও সড়ক-মহাসড়কের পেভমেন্টের আয়ুষ্কাল কমিয়ে দিচ্ছে।
সওজের একজন কর্মকর্তা বলেন, দেশে জাতীয় মহাসড়কে ভাঙাচোরা দশা সামান্য বেড়েছে। আঞ্চলিক ও জেলা সড়কের তুলনায় জাতীয় মহাসড়কে অতিরিক্ত পণ্যবোঝাই যানবাহন বেশি চলাচল করে। এ কারণে জাতীয় মহাসড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয় বেশি। জাতীয় সড়কগুলোকে ভালো অবস্থায় রাখতে হলে অতিরিক্ত পণ্যবোঝাই যান চলাচল নিয়ন্ত্রণের কোনো বিকল্প নেই। ওই কর্মকর্তা বলেন, সড়ক-মহাসড়ক টিকিয়ে বা যান চলাচলের উপযোগী রাখার জন্য এর রক্ষনাবেক্ষণ জরুরী। বৃষ্টিপাত, বন্যা, জনবল সংকট, সঠিক সময়ে বরাদ্দ না পাওয়ায় সঠিক সময়ে রক্ষনাবেক্ষণ করা যায় না। আরেক কর্মকর্তা মনে করেন, ঠিকাদার ও নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর দক্ষতা, দায়িত্বশীলতা ও আন্তরিকতার ঘাটতি বিভিন্ন প্রকল্পের উন্নয়নকাজের গুণগত মান ও স্থায়িত্বের প্রত্যাশিত মান বজায় রাখতে ব্যর্থ হচ্ছে। বিষয়টি সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তিতেও উঠে এসেছে বলে জানান ওই কর্মকর্তা।
সাধারণ মানুষ ও ভুক্তভোগিরা অবশ্য সরকারি এসব তথ্য বিশ্বাস করেন না। তারা মনে করেন, খাতা কলমের হিসাব আর বাস্তবতার হিসাব পুরোটাই আলাদা। রংপুর থেকে কয়েকদিন আগে সড়কপথে ঢাকায় এসেছেন এমন একজন চাকরিজীবী বলেন, রংপুর-ঢাকার মহাসড়কের অবস্থা আগের মতোই খারাপ। গত বছরের তুলনায় তেমন উন্নতি হয়নি। গত বছর বন্যার পর জোড়াতালি দিয়ে কিছু অংশ মেরামত করা হয়েছে মাত্র। সেগুলোও এবারের বৃষ্টিতে ভাঙতে শুরু করেছে। ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কটি ঢাকার সাথে দেশের উত্তরাঞ্চলের যোগাযোগের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। গুরুত্বপূর্ণ এই মহাসড়কটির বেহাল দশা বছরজুড়ে লেগেই আছে। বঙ্গবন্ধু সেতু হয়ে উত্তরাঞ্চলের সঙ্গে ময়মনসিংহের সরাসরি যোগাযোগের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ময়মনসিংহ-টাঙ্গাইল জাতীয় মহাসড়ক। দুই বছর আগেও ভালো অবস্থায় ছিল মহাসড়কটি। বর্তমানে মহাসড়কটির মধুপুর-ময়মনসিংহ অংশের অনেকটাই খারাপ অবস্থায় রয়েছে।
এদিকে, দেড় বছর যেতে না যেতেই ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেনের মহাসড়ক নষ্ট হতে শুরু করেছে। চার লেনের সাথে যাত্রাবাড়ী থেকে কাঁচপুর সেতু পর্যন্ত ৮ লেনের মহাসড়কও ভেঙ্গে একাকার হতে চলেছে। ৮ লেনের মহাসড়কে কুতুবখালী ও রায়েরবাগের অংশে ছোট-বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া যাত্রাবাড়ী থেকে রায়েরবাগ পর্যন্ত ২ লেনই বেদখল হয়ে আছে বহুদিন যাবত। অন্যদিকে, সিলেটের আঞ্চলিক সড়কের বেহাল দশা বহুদিন ধরে। সিলেটের গোলাপগঞ্জ-চারখাই-জকিগঞ্জ ও সিলেট-জাফলং সড়ক দুটি আগে থেকেই ভগ্নদশায় ছিল, এখন তা বহাল আছে।
অপরদিকে, দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সড়ক চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক। পর্যটন শহর কক্সবাজার, বান্দরবান ও দক্ষিণ চট্টগ্রামকে দেশের সঙ্গে সংযুক্ত করেছে মহাসড়কটি। কিন্তু বছরের পর বছর অবহেলিত থেকে গেছে এটি। স্থানীয়দের মতে, মহাসড়কের চন্দনাইশ উপজেলার বিজিসি ট্রাস্ট, বাগিচার হাট, দোহাজারী, সাতকানিয়া উপজেলার নয়াখাল, কেরানীহাট, চারা বটতল, মিঠাদীঘি, রাজঘাটা ও লোহাগাড়া উপজেলার নোয়াপাড়া, চুনতি ফরেস্ট অফিসসহ ২০ স্পটে প্রায় ১০ কিলোমিটারজুড়ে ছোট-বড় গর্ত। দেশজুড়ে খানাখন্দের এসব সড়ক-মহাসড়ক ভোগান্তি বাড়াচ্ছে যান চালক ও যাত্রীদের। সময় নষ্ট হচ্ছে, বাড়ছে ঝুঁকি। প্রতিদিনই ঘটছে দুর্ঘটনা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মহাসড়ক

২৮ ডিসেম্বর, ২০২২
২১ ডিসেম্বর, ২০২২
২০ সেপ্টেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ