পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
পবিত্র রমজান মাসে স্বাস্থ্যপ্রদ খাবার হিসেবে দেশের কোটি কোটি মানুষ ইফতারি ও সেহেরীতে দেশি-বিদেশি ফল খেয়ে থাকে। প্রতিটি মওসুমী ফলের আবাদ এবং পরিপক্ক ফল সংগ্রহের নির্দ্দিষ্ট সময়সূচি আছে। কৃষি বিভাগের আম ক্যালেন্ডার অনুসারে ২০ মে থেকে দেশীয় গুটি আম, ২৫ মে থেকে গোপালভোগ, হিমসাগর ও খিরসাপাতি আম ২৮মে, জুনের প্রথম সপ্তাহ থেকে লক্ষণভোগ, ল্যাঙড়া ও বোম্বায়, ১৫ জুন থেকে আ¤্রপালি, ফজলি সুরমা এবং সবশেষে ১ লা জুলাই থেকে আশ্বিনা আম বাজার আসার কথা। কিন্তু প্রতি বছরই দেখা যায়, বেশীমূল্যে আগাম পাকা আম বিক্রির জন্য হাজার হাজার মন অপরিপক্ক আম কার্বাইড ও ইথোফেন দিয়ে পাকিয়ে বাজারে ছাড়ে একশ্রেণির অসাধু, মুনাফালোভি ব্যবসায়ী। শুধু আমই নয়, কলা, কাঁঠাল, লিচু, আনারসসহ সব ধরনের মওসুমী ফলেই এমন বিপজ্জনক কারসাজি পরিলক্ষিত হয়। কেমিকেল মিশ্রিত এসব ফল ও আমের দাম স্বাভাবিক মূল্যের চেয়ে বেশী হলেও প্রাকৃতিক গুণ, স্বাদ ও মিষ্টতায় অপূর্ণ এবং স্বাস্থ্যের জন্য নানামাত্রিক ঝুঁকিপূর্ণ। স্বাস্থ্য সচেতন মানুষ এসব সন্দেহযুক্ত ফল কেনা থেকে বিরত থাকলেও বেশীরভাগ মানুষই কিনতে বাধ্য হচ্ছে কেমিকেল মিশ্রিত আম। জনস্বাস্থ্য রক্ষায় ভেজাল বিরোধি অভিযানের পাশাপাশি ক্ষতিকর কেমিকেল দিয়ে পাকানো ফল উচ্ছেদ করতেও স্বাস্থ্য অধিদফতর ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে প্রতিবছর অভিযান পরিচালিত হয়। এসব অভিযানে হাজার হাজার মন ফলমূল ও ভেজাল খাদ্য সামগ্রী ধ্বংস করা হলেও অপকর্মে জড়িতদের কঠোর শাস্তি না হওয়ায় বিষাক্ত খাদ্যের আগ্রাসন কমছেনা।
ইতিমধ্যেই বাজারে এবং শহরের অলিগলিতে নানা ধরনের টসটসে পাকা আমে ছেয়ে গেছে। চমৎকার রঙের পাকা আমে অপরিনত কাঁচা আঁটির খবরও পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। গত সপ্তাহে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে অভিযান চালিয়ে এ ধরনের শত শত মন আম ধ্বংস করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এর ফলে কেমিকেল মিশ্রিত আমের ব্যবসা থেমে যায়নি। এরপরও হাজার হাজার মন এমন আম বাজারে এসেছে এবং দেদারছে বিক্রী হচ্ছে বলে প্রকাশিত খবরে জানা যায়। গত বৃহষ্পতিবার রাজধানীর যাত্রাবাড়ির আড়তে অভিযান চালিয়ে কেমিকেল দিয়ে পাকানো এক হাজার মন আম বুলডোজার দিয়ে ধ্বংস এবং ৪০মন মানহীন খেজুর জব্দ করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। র্যাব ও পুলিশের সহায়তা নিয়ে সিটি কর্পোরেশন, বিএসটিআই,স্বাস্থ্য অধিদফতর এসব অভিযান পরিচালনা করছে। দেশীয় ফল বাজারে আসার আগে থেকেই ভারত এবং অন্যান্য দেশ থেকে আম, কমলা, মাল্টা, আপেল, আঙুরসহ বিভিন্ন প্রকার ফল আমদানী হচ্ছে।এসব ফল পাকাতে এবং সংরক্ষনে জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর কেমিকল ব্যবহার করা হচ্ছে কিনা তা জানারও কোনো উপায় নেই। আমদানী নীতিমালা অনুসারে যথাযথ পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে ফল এবং খাদ্য সামগ্রী আমদানী ও বাজারজাত করার কথা। কিন্তু ফলের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা হচ্ছে না বলে জানা যায়। উপযুক্ত পরীক্ষা নিরীক্ষার ব্যবস্থা থাকলে জনস্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ ফল ও খাদ্য সামগ্রী বিপণনের কোন আশংকাই থাকতনা।
দেশের কোটি কোটি মানুষ কিডনি, হৃদরোগ, ক্যানসারসহ নানা ধরনের জটিল স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছে। দূষিত, অনিরাপদ খাদ্য ও পানীয় থেকেই মানুষ বেশী স্বাস্থ্য সমস্যায় আক্রান্ত হচ্ছে। শহরের বেশীরভাগ মানুষ নিরাপদ পানি সরবরাহ থেকে বঞ্চিত। এমনকি জারে সরবরাহকৃত বোতলজাত পানির শতকরা ৯০ ভাগই নানামাত্রিক বায়োকেমিকেল দ্বারা দূষিত বলে জানা গেছে। কয়েকদিন আগে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, দেশের বাজারে বিক্রিত পাস্তুরিত দুধের শতকরা ৭৫ ভাগই ভেজাল বা স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। অবস্থা দৃষ্টে দেখা যাচ্ছে, স্বাস্থ্যকর পথ্য হিসেবে ব্যবহৃত খাদ্য সামগ্রীতেই বেশী দূষণ, ভেজাল ও স্বাস্থ্যঝুঁকি রয়েছে । রোগীর পথ্য হিসেবে, শিশুখাদ্য হিসেবে, রমজানে সেহেরী ও ইফতারিতে যে সব খাদ্য সামগ্রী রোজাদারদের কাছে রুচিকর ও স্বাস্থ্যসম্মত বলে বিবেচিত সে সব খাদ্যই বেশী অনিরাপদ ভেজাল ও দূষণযুক্ত। নিরাপদ খাদ্য খাদ্য নিরাপত্তার সবচেয়ে বড় শর্ত। দেশে কোটি কোটি টন খাদ্য উৎপন্ন হচ্ছে, বিদেশ থেকেও বছরে হাজার হাজার কোটি টাকার খাদ্য আমদানী করে খাদ্য নিরাপত্তার কথা বলা হচ্ছে। অথচ অনৈতিক মুনাফাবাজির কারণে খাদ্যে দূষণ ও ভেজাল রোধে তেমন কোন কার্যকর স্থায়ী উদ্যোগ নেই। ভেজাল বিরোধি অভিযান ও গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানোর পাশাপাশি ভেজাল ও দূষিত খাদ্য সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। মওসুমের আগেই বাজারে আসা ফল কেনার আগে এর মান সম্পর্কে নিশ্চিত হতে হবে। ভেজাল বিরোধি অভিযান পরিচালনার সাথে জড়িত একজন মেজিস্ট্রেট নগরবাসিকে আগামী ১৫ দিন পাকা আম না কেনার পরামর্শ দিয়েছেন। কেমিকেল দিয়ে পাকানো ফল এবং খাদ্যের সম্ভাব্য মান ও নিরাপত্তা সম্পর্কে ভোক্তারা সচেতন হলে ভেজাল ও অনিরাপদ খাদ্যের ব্যবসা এমনিতেই কমে যেতে বাধ্য। সেই সাথে এসব বেপরোয়া অর্থললুপ ব্যবসায়ীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।