Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ২৯ কার্তিক ১৪৩১, ১১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বিদায় বেলায় দিগন্ত দেখিয়ে গেলেন গ্রিনিজ

| প্রকাশের সময় : ১৭ মে, ২০১৮, ১২:০০ এএম

ইমরান মাহমুদ : মাশরাফি, মুশফিক, মাহমুদউল্লাহদের কারোরই সুযোগ মেলেনি তার অধীনে খেলবার। তাসকিন, সৈকত, শান্ত, মিরাজ, সাইফদের অনেকের হয়ত জন্মই হয়নি তখন। আর যাদেরকে হাতে ধরে ক্রিকেট শিখিয়েছিলেন সেই আকরাম, দূর্জয়, নান্নু, সুজনরা এখন ক্রিকেট বোর্ডের কর্তাব্যক্তি। সময়ের ফের এই তিন প্রজন্মকে নিয়ে এলো এক কাতারে। কারো কাছ থেকে পেলেন সাক্ষরিত টেস্ট ক্যাপ, তো কারো সৌভাগ্য হল তাকে স্যুভেনির হিসেবে গর্বের সুবজ জার্সিটি উপহার দেবার। আর সাবেক শিষ্যদের কল্যাণে বোর্ডের তরফ থেকে পেলেন একটি টাই, একটি ঘড়ি আর বার্বাডোজে নিজের স্কুল ও লাইব্রেরির জন্য ৫ লক্ষ্য টাকার সহায়তা। তাতেই কি শোধ হবে একজন গর্ডন গ্রিনিজের ঋণ!
নব্বই দশকে প্রথম তার পায়ের ধুলো পড়ে বাংলাদেশের মাটিতে। প্রথম বিদেশি কোচদের মধ্যে গ্রিনিজের নামটি উচ্চারিত হবে সর্বাগ্রে। ১৯৯৬ সালে কোচ হিসেবে দায়িত্ব নেবার পর তার হাত ধরেই যে বন্দুর পথ পাড়ি দিয়ে প্রথমবারের মত বিশ্বকাপের মঞ্চে খেলেছিল বাংলাদেশ। শুধু খেলাই নয়, ১৯৯৯ বিশ্বকাপে পাকিস্তানকে হারিয়ে হৈ চৈ ফেলে দিয়েছিলেন আকরাম-দুর্জয়-নান্নুরা। তারপর হঠাৎই অনাকাক্সিক্ষত বিদায় নিতে হয় তার। সেই মানুষটি আবারও আপন ভুবনে। গর্ডন গ্রিনিজ যখন বাংলাদেশের কোচ ছিলেন তখন এখনকার মিরপুর স্টেডিয়ামে ক্রিকেট হতো না। তৈরি ছিল না এমন অবকাঠামো। বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে ফুটবলের সঙ্গে মাঠ ভাগাভাগি করতে হত ক্রিকেটকে। এখন ক্রিকেটের আছে নিজস্ব মাঠ। যে মাঠেই বিসিবির অফিস। এই ‘হোম অব ক্রিকেট’ ঘিরেই বাংলাদেশের ক্রিকেটের সব কার্যক্রম।
ব্যক্তিগত কাজে হঠাৎই পাঁচ দিনের সফরে বাংলাদেশে এসেছিলেন ক্যারিবিয়ান কিংবদন্তি। সেই সুযোগে সাবেক গুরুকে অভ্যার্থনা জানাতে কার্পণ্য করেনি বিসিবি। আগের রাতে ঢাকার এক পাঁচ তারকা হোটেলে গ্রিনিজের সম্মানে রাখা হয়েছিল নৈশভোজ। বাংলাদেশ ক্রিকেটে তার অবদান স্মরণ করে তাকে দেয়া হয় সন্মাননা। মাঠেই যার সঙ্গ পরিচয়, সফরের শেষ দিন গতকাল এলেন মিরপুরে। যেখানে চলছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের ক্যাম্প। আগামী মাসে ভারতের দেহরাদুনে তিন টি-টোয়েন্টির সিরিজকে সামনে রেখে চলছে জোর প্রস্তুতি। পরের মাসে তার দেশ ওয়েস্ট ইন্ডিজেও যাবে মাশরাফি-সাকিবরা। একাডেমি মাঠে বৃষ্টিতে ঝিমিয়ে পড়া মুশফিক-মাশরাফিরা তার আগমনে যেন ফিরে পেল প্রাণ।
বুলবুল-আকরামদের অনুজরা একে একে এগিয়ে এসে করলেন কুশল বিনিময়। সকলের চোখে-মুখোই তখন শ্রদ্ধা। এই মানুষটির ছোঁয়াতেই তো আজ বিশ্বদরবারে সম্মানিত বাংলাদেশের ক্রিকেট। ভবিষ্যতের কাÐারীদের কাঁধে ¯েœহের হাত রেখে দিলেন অভয়, জোগালেন সামনে এগিয়ে যাবার প্রেরণা। তিক্ত অভিজ্ঞতা নিয়ে বাংলাদেশ ছাড়লেও ঠিকই খোঁজ খবর রাখেন এদেশের ক্রিকেটের। জানালেন, যেভাবে এগুচ্ছে সামনে আরো উঁচুতে উঠবে যাবে বাংলাদেশ, ‘আমি বিশ্বাস করি বাংলাদেশের ক্রিকেট এখন পরিণত। যাদের সবসময়ই সুযোগ ছিল উত্তরণের। একটা সময় ছিল, যখন বাংলাদেশের ক্রিকেটকে মাপা কঠিন ছিল। তখন আমরা কেবল ওয়ানডে খেলতাম। এখন দেখতে সত্যিই ভালো লাগে, দলে অনেক প্রতিভাবান, বিশ্বমানের ক্রিকেটার আছে। আমি সত্যিই খুশি তারা প্রতিনিয়তই দুর্দান্ত সব ক্রিকেট উপহার দিয়ে চলেছে। আমি দেখতে পাচ্ছি, এদেশের ক্রিকেট দিগন্ত ছুঁতে যাচ্ছে।’
বাংলাদেশের সর্বোচ্চ পর্যায়ে উঠা আসার পেছনে গ্রিনিজকে মানা হয় মূল কারিগর হিসেবে। ক্যারিবিয়ান এই ব্যাটিং লিজেন্ড খেলোয়াড়ি জীবনে ছিলেন দাপুটে। তখনকার প্রতাপশালী ওয়েস্ট ইন্ডিজের টপ অর্ডারে করেছেন ভুরি ভুরি রান। তার পরামর্শ ক্রিকেটারদের করতে হবে কঠোর পরিশ্রম, থাকতে হবে ফোকাসড। তবে সেই পরিশ্রম হতে হবে ঠিকঠাক, ‘অনুশীলন করে যেতে হবে। কিন্তু উদ্দেশ্য ঠিক না করে অনুশীলন করলে হবে না। ঠিক জিনিসের পেছনে শ্রম দিতে হবে। আমি ব্যাটসম্যানদের বলব নিজের উইকেট সামলে দীর্ঘ সময় কীভাবে খেলা যায় সেই চিন্তা করতে। বোলারদের ঠিক জায়গায় বল ফেলার উপর নজর দিতে হবে। থাকবে হবে একাগ্র, খেলাটায় দিতে হবে নিবিড় মনঃসংযোগ।’
১৯৯৭ থেকে ১৯৯৯ সালে বাংলাদেশ দলের দায়িত্ব ছিল গ্রিনিজের হাতে। সেসময় আইসিসি ট্রফি চ্যাম্পিয়ন হয়ে প্রথমবার বিশ্বকাপ খেলে টাইগাররা। বিশ্বকাপে দেখায় চমকজাগানিয়া পারফরম্যান্স। যার রেশেই পরের বছর ক্রিকেটের কুলীন স্তরে প্রবেশ করে বাংলাদেশের ক্রিকেট। আবারও সেই গ্রিনিজের সান্যিধ্য পেল অন্য এক ‘নতুন বাংলাদেশ’। তার ছোঁয়ায় মাশরাফি, মুশফিক, সাকিব, তামিমরা কি পারবে সাম্প্রতীক ভঙ্গুর বাংলাদেশকে আবার মাথা উঁচু করে দাঁড় করাতে! সামনেই যে তার দেশের বিরুদ্ধেই (জুলাইয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর) বাংলাদেশের মিশন।



 

Show all comments
  • প্রিতম ১৭ মে, ২০১৮, ৫:৪৪ এএম says : 0
    গ্রিনিজ বাংলাদেশ ক্রিকেট ইতিহাসের একটা অংশ
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: কোচ

৮ সেপ্টেম্বর, ২০২২
৪ সেপ্টেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ