পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
ইংরেজী বর্ষপুঞ্জি অনুসারে এখন বছরের পঞ্চম মাস চলছে। চলতি বছরের শেষে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা অনুসরণ করে এটি নিছক একটি জাতীয় নির্বাচন নয়। এই নির্বাচনে জাতির প্রত্যাশা হচ্ছে, লাইনচ্যুত হয়ে পড়া বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে তার সঠিক ট্র্যাকে ফিরিয়ে আনা। এবং গণতন্ত্রের গতিপথকে স্থায়ীভাবে মসৃণ ও কণ্টকমুক্ত করে তোলা। গণতন্ত্র ও শান্তিকামী মানুষের সেই প্রত্যাশার আলো এখনো অধরাই রয়ে যাচ্ছে। নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে অক্টোবরে জাতীয় নির্বাচনের তফশিল ঘোষনার একটি সম্ভাব্য টাইমফ্রেম তুলে ধরা হলেও দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের অভিজ্ঞতায় ক্রেডিবল ও অংশগ্রহণমূলক জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য প্রয়োজনীয় রাজনৈতিক সমঝোতার কোন সম্ভাবনা এখনো দেখা যাচ্ছেনা। দীর্ঘদিন ধরে দেশের মানুষ নানামাত্রিক ভীতি ও আশঙ্কার মধ্যে দিনাতিপাত করছে। এরমধ্যে সবচে গুরুত্বপূর্ণ ভীতি ও আশঙ্কাটি কাজ করছে আরেকটি এরকতরফা নির্বাচনের পারিপার্শ্বিক বাস্তবতাকে ঘিরে। ইতিমধ্যেই দেশের গণতন্ত্রের অনেক বড় ক্ষতি হয়ে গেছে। বিরোধিদলের অবাধে রাজনৈতিক কর্মকান্ডের অধিকার রুদ্ধ করার মাধ্যমে, মিথ্যা মামলায় রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার ও হয়রানি করে, তিনবারের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধিদলের শীর্ষনেতা বেগম খালেদা জিয়াকে এক-এগারো সরকারের দেয়া দুর্নীতি মামলায় সাজা দেয়ার পর তার জামিন নিয়ে যে রাজনৈতিক হঠকারিতা চলছে তাতে একই সাথে বাংলাদেশের গণতন্ত্র, বিচারব্যবস্থার স্বাধীনতা ও দলনিরপেক্ষতা, মানবাধিকার এবং আইনের শাসন প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। স্বাধীনতাত্তোর ৪৭ বছরের রাজনৈতিক ইতিহাসে জাতির জন্য কলঙ্কজনক অনেক ঘটনাই ঘটেছে। এসব ঘটনার বেশীরভাগেরই দায় তৎকালীন ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক সরকারগুলোর। যে গণতন্ত্রের জন্য, রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক বৈষম্যের জন্য এ দেশের মানুষ একাত্তুরে পাক সেনাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছিল, সেই গণতন্ত্র, সেই বৈষম্যমুক্ত সমাজব্যবস্থা, মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি ও কাঙ্খিত সুশাসন এখন ইতিহাসের যে কোন সময়ের চেয়ে অনেক বেশী দুরূহ হয়ে পড়েছে। এহেন বাস্তবতায় ক্ষমতাসীন সরকার ক্রমাগত, পুন:প্রৌনিক তথাকথিত উন্নয়নের লাউডস্পিকার বাজিয়ে চলেছেন। অন্যদিকে গণতন্ত্রকামী, সমৃদ্ধিকামী, শান্তিকামী, সুশাসনকামী কোটি মানুষের মধ্যে জমা হচ্ছে সরকার ও রাষ্ট্রযন্ত্রের প্রতি তীব্র ক্ষোভ, অবিশ্বাস ও অনাস্থা। সরকার ও রাজনৈতিক ব্যবস্থার উপর জনগনের এমন অনাস্থা ও ক্ষোভ এক সময়ে সুতীব্র গণবিস্ফোরণের জন্ম দেয়। এমন পরিস্থিতিতো রাষ্ট্রের প্রতিপক্ষ শক্তি অথবা রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে ঘাপটি মেরে থাকা তৃতীয় শক্তি কিংবা পঞ্চম বাহিনী তার সুযোগ গ্রহণ করে থাকে। বিশ্বের অন্যত্র যাই ঘটুক, আমাদের সাম্প্রতিক ইতিহাসের অর্ধশত বছরে এমন অনেকগুল্ োঘটনা আমাদের সামনে এমন আশঙ্কাজনক পরিস্থিতির জাজ্জ্বল্যমান উদাহরণ রয়েছে।
আমাদের সামাজিক-রাজনৈতিক ইতিহাস এখন এক গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে উপনীত হয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তির সুবাদে দেশের নতুন প্রজন্ম দেশ-বিদেশের গুরুত্বপূর্ণ সব ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শি হয়ে উঠার পাশাপাশি নিজেদের এবং আন্তর্জাতিক বিশ্বের অবস্থাকে নিজের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার আলোকে ঝালিয়ে নিচ্ছে। আমাদের সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলো তাদের সামনে তেমন কোন অনুকরণীয় এবং প্রতিপালনীয় উদাহরণ সৃষ্টি করতে না পারলেও তাদের আগামীর সম্ভাবনা ও এগিয়ে চলার পথকে আরো পঙ্কিল ও কণ্টকাকীর্ণ করে তোলার নানাবিধ প্রয়াস রাষ্ট্রীয়ভাবেই সংঘটিত হয়েছে। তবে যুব সমাজের পুঞ্জিভুত ক্ষোভ থেকে সৃষ্ট দাবানল এরই মধ্যে কিছু সামাজিক-রাজনৈতিক বৈষম্যের মূলে মোক্ষম আঘাত হানতে শুরু করেছে। সাম্প্রতিক সময়ে দেশের ব্শ্বিবিদ্যালয়গুলোতে সংঘটিত কোটা সংস্কারের আন্দোলনের গতি প্রকৃতি তেমন একটি বিষ্ফোরণেরই বিহ:প্রকাশ ঘটিয়ে চলেছে। যুব সমাজের প্রত্যাশা ও আন্দোলনের চাপের মুখে সরকারী চাকুরীতে কোটা প্রথা বাতিলের ঘোষনা দিয়েছেন। জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী কোটা বাতিলের ঘোষনা দেয়ার পর একমাসেও এ বিষয়ে কোন প্রজ্ঞাপন জারি না হওয়ায় এ সপ্তাহে আবারো রাজপথে নেমে আসে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। আইন-শৃঙঙ্খলা বাহিনী বছরের পর বছর ধরে দেশের প্রধান বিরোধি রাজনৈতিক দল ও জোটের সব রাজনৈতিক চাওয়া-পাওয়াকে কঠোরভাবে দমন ও নিয়ন্ত্রণে সফল হলেও কোটাবিরোধি আন্দোলন দমাতে বাহিনীগুলোর শক্তি প্রয়োগের প্রয়াস সর্বাত্মকভাবেই ব্যর্থ হয়েছে। কোটা বিরোধি আন্দোলনের সাফল্য এবং রাজনৈতিক দলগুলোর শান্তিপূর্ণ ও নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের অধিকার আদায়ের ব্যর্থতার মধ্যে একই সাথে জনগন ও যুব সমাজের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের কাছে সরকারী বাহিনীর সীমাবদ্ধতা এবং বিরোধি রাজনৈতিক দলগুলোর সাংগঠনিক দুর্বলতার বহি:প্রকাশ ঘটেছে। মৌলিক মানবাধিকার এবং জনগনের রাজনৈতিক অধিকারের প্রশ্নে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় সাংবিধানিক অঙ্গিকারের বিষয়টিকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করলে যে কোন সমাজে ও রাষ্ট্রে অধিকার আদায়ে জনগনের শান্তিপূর্ণ অবস্থান রাষ্ট্রশক্তির চেয়ে অনেক বেশী শক্তি ধারণ করতে পারে। পুলিশসহ রাষ্ট্রীয় বাহিনীগুলো জনগনের অধিকার রক্ষার প্রশ্নে মানবাধিকার ও সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা মেনে চলতে বাধ্য। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের এটা অত্যাবশ্যকীয় বৈশিষ্ট্য। এ ক্ষেত্রে সাম্প্রতিক আর্মেনিয়ান গণবিক্ষোভের উদাহরণ দেয়া যায়। নব্বইয়ের দশকের শুরুতে সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে স্বাধীনতাপ্রাপ্ত আর্মেনিয়ায় একটি সীমিত ও নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থার অধীনে বহুদলীয় গণতন্ত্র অনুসৃত হচ্ছে আর্মেনিয়ায়। গৃহযুদ্ধ ও রাজনৈতিক সংকটের মুখে ২০০৮ সালে ইউরোপীয় নিরাপত্তা ও সহযোগিতা সংস্থার মধ্যস্থা এবং পশ্চিমা নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ক্ষমতাসীন সার্জ সার্গসিয়ান ১০ বছর ধরে ক্ষমতায় টিকে থাকার পর ক্ষমতার মেয়াদ বর্ধিত করার রাজনৈতিক প্রয়াস চালানোর বিরুদ্ধে বিরোধিদল রাজপথে নেমে আসে। এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে শুরু হওয়া সার্গসিয়ান বিরোধি বিক্ষোভে বিরোধিদলের হাজার হাজার নেতাকর্মী রাস্তায় নেমে আসার পর প্রথমে সার্গসিয়ান প্রেসিডেন্টের পদ ছেড়ে দিয়ে দেশকে প্রধানমস্ত্রী শাসিত হিসেবে ঘোষনা দিয়ে নিজে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এরপর বিরোধি নেতাকর্মীরা আরো বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠলে ১৪ দিনের মাথায় পদত্যাগ করেন সার্গসিয়ান। আর্মেনিয়ার সংসদে সার্গসিয়ানের রিপাবলিকান দলের সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকলেও বিরোধিদলের তরফ থেকে তাদের নেতা পাশিনিয়ানকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মনোনয়নের জন্য বিরোধিদলের নেতাকর্মীরা রাজপথ প্রকম্পিত করে তোলে। এক পর্যায়ে পাশিনিয়ানকে গ্রেফতার করা হলে আন্দোলনের মাত্রা আরো তীব্রতর আকার ধারণ করে। অবশেষে বিরোধিদলীয় নেতা পাশিনিয়ানকে কারাগার থেকে মুক্তি দিয়ে তাকে অন্তবর্তিকালীন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করান দেশটির সংসদের স্পীকার। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, আর্মেনিয়ায় কি পুলিশ বাহিনী নেই? র্যাবের মত এলিটফোর্স, বিজিবি’র মত সীমান্তরক্ষি বাহিনী বা সেনাবাহিনী নেই। শাপলাচত্বর থেকে হেফাজতে ইসলামের অবস্থান কর্মসূচি ছত্রভঙ্গ করে দেয়ার মত শক্তি কি এসব বাহিনীর নেই? সবই আছে। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে স্বাধীনতা প্রাপ্ত আর্মেনিয়া আয়তনে তুলনামূলক ছোট হলেও সামাজিক বাস্তবতা ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের মানদন্ডে বাংলাদেশের চেয়ে অনেক অগ্রসর। তবে তাদের পুলিশ, এলিটফোর্স বা সেনাবাহিনী জনগনের রাজনৈতিক আন্দোলন দমনের চেয়ে শান্তি ও অধিকার রক্ষার কাজেই নিয়োজিত থাকে। প্রতিটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের এটাই হচ্ছে প্রধান রাজনৈতিক বৈশিষ্ট।
রাষ্ট্রীয় বাহিনী তথা পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, সেনাবাহিনীর মত বাহিনীগুলো জননিরাপত্তা, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা, আইনের শাসন ও রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্ব রক্ষায় জনগনের রাজস্বে পরিচালিত হয়ে থাকে। যে রাষ্ট্রশক্তি জনগনের প্রতিনিধিত্ব করে তা কখনো অধিকারের দাবীতে রাস্তায় নামা জনগণের উপর চড়াও হতে পারেনা। ডোনাল্ড ট্রাম্প জনগনের ভোটে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর হাজার হাজার মানুষ তাকে প্রত্যাক্ষান করে রাজপথে নেমে এসেছিল। পুঁজিবাদের স্বর্গভ’মি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অর্থনৈতিক বৈষম্য ও পুঁজির একচ্ছত্র পুঞ্জিভবনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে ওডাবিøওএস (অক্যুপাই ওয়ালস্ট্রীট) আন্দোলনে ২০১১ সালে মাসের পর মাস ধরে নিউ ইয়র্কের রাজপথ প্রকম্পিত করতেও আমরা দেখেছি। বৈষম্যমূলক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা অবসানের দাবীতে কয়েকশত মানুষ নিউ ইয়র্কে জকোটি পার্কে তাবু গেড়েছিল। তারা ওয়ালস্ট্রীটসহ নিউ ইয়র্ক বাণিজ্যিক এলাকার গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা দখল করে রেখেছিল। ছয়মাসের বেশী সময় ধরে জকোটি পার্কসহ সন্নিহিত এলাকা দখলে রাখার এক পর্যায়ে বিশেষ পুলিশি অভিযানে জকোটি পার্ক থেকে আন্দোলনকারিদের সরিয়ে দিতে যথেষ্ট প্রতিরোধের সম্মুখীন হওয়ার পরও পুলিশ কোন লাইভ অ্যামুনিশন ব্যবহার করেনি। জকোটি পার্ক থেকে অক্যুপাই ওয়ালস্ট্রীট আন্দোলনের কর্মীদের ২০১১ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর সরিয়ে দেয়ার প্রথম বর্ষপূর্তিতে ২০১২ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর আন্দোলনকারীরা আবারো কয়েকদিনের জন্য জকোট্টি পার্কসহ নিউ ইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জের রাস্তা ও স্কোয়ার দখল করে রাখে। অন্যদিকে আন্দোলনের সময় পুলিশের হাতে আটক হওয়া নাগরিকদের বিরুদ্ধে নাগরিক শৃঙ্খলা ও আইন ভঙ্গের যে সব মামলা দেয়া হয়েছিল আদালত তার বেশীরভাগই খারিজ করে দিয়েছিল। লন্ডনের গার্ডিয়ান পত্রিকায় গত বছর প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে দেখা যায় হংকং হচ্ছে বিশ্বের অন্যতম গণসমাবেশ ও গণমিছিলের শহর। সেখানে প্রতিদিন গড়ে ২২টি গণজমায়েত অনুষ্ঠিত হয়। ২০১৬ সালে হংকংয়ে ১৩ হাজারের বেশী গণজমায়েত অনুষ্ঠিত হয়। মেক্সিকো, মাদ্রিদ, এথেন্সসহ ইউরোপীয় শহরগুলোতে বছরে হাজার হাজার গণসমাবেশ ও গণমিছিল অনুষ্ঠিত হয়। ছাত্রসহ ৪৩জন নাগরিক নিখোঁজ হওয়ার প্রতিবাদে ২০১৪ সালে মেক্সিকো সিটিতে অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ শোভাযাত্রা আন্তর্জাতিকভাবে আলোড়ন তুলেছিল। গত ৫ বছরে বাংলাদেশে ৫ শতাধিক মানুষ গুমের শিকার হয়েছে। এর প্রতিবাদে ঢাকার রাজপথে ৫শ মানুষের একটি প্রতিবাদ সমাবেশ দেখা যায়নি। তেলগ্যাস বন্দর রক্ষা কমিটির কয়েকশ মানুষের বিক্ষোভ মিছিলেও পুলিশকে বেপরোয়া লাঠিপেটা করতে দেখা গেছে। গণতন্ত্রের পথকে রুদ্ধ করে, গুম-খুন, ধর্ষনের মহামারী এবং সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক সংস্কৃতিকে নির্বাসিত করে বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের মহাসড়কে যাত্রা করেছে। যেখানে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট করে ব্যাংকগুলোকে দেউলিয়া করে দেয়ার সন্দেহভাজন অভিযুক্তরা দিব্যি বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়ায়। আবার মাত্র ২ কোটি টাকা টাকার লেনদেনে কথিত অনিয়মের অভিযোগে সাজাপ্রাপ্ত হয়ে তিনবারের প্রধানমন্ত্রী এবং কোটি মানুষের সমর্থনপুষ্ট প্রবীণ বিরোধিদলীয় নেত্রীকে অসুস্থ্য অবস্থায় জেলখানায় পড়ে থাকতে হয়। নাগরিকের মৌলিক অধিকার, নিরাপত্তা নিয়ে বেঁচে থাকার অধিকারবে খর্ব করার মত এমন বৈষম্য ও বৈপরীত্য নিয়ে কোন রাষ্ট্র সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারেনা।
সারাদেশে চলছে মাদকের সন্ত্রাস। ধর্ষণের মত গুরুতর সামাজিক অপরাধ বেড়েই চলেছে। সরকারী অফিসে ঘুষবাণিজ্য এবং সরকারী দলের স্থানীয় নেতাকর্মীদের চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসের ঘটনাগুলো মাঝেমধ্যেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে সমাজে তোলপাড় সৃষ্টি করতে দেখা যায়। শিল্প বিনিয়োগে চলছে দীর্ঘ মেয়াদি স্থবিরতা, বৈদেশিক কর্মসংস্থানেও কোনো সুখবর নেই, দেশের ব্যাংকিং সেক্টর ইতিমধ্যেই লুটপাটের শিকার হয়ে আশঙ্কাজনক অবস্থায় উপনীত হয়েছে। দেশ থেকে প্রতিমাসে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচারের ধারা এখনো অব্যাহত আছে। নির্বাচনের বছরে টাকা পাচারের হার কয়েকগুন বেড়ে যাওয়ার অভিজ্ঞতার আলোকে টাকা পাচার রোধে কার্যকর কোন সরকারী উদ্যোগ দৃশ্যমান নয়। পাচার লুটপাট, পণ্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি, মুনাফাবাজির কারণে সমাজে অর্থনৈতিক বৈষম্য বেড়ে চলেছে। দেশের মানুষ একদিকে তিন হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে বাংলাদেশের প্রথম ইন্টারস্পেস সেটেলাইট উৎক্ষেপনের রোমাঞ্চকর দৃশ্য দেখছে, অন্যদিকে এক ঘন্টার বৃষ্টিতে ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ সব রাস্তা হাঁটুপানিতে তলিয়ে যেতে দেখছে। বাড়ি থেকে কর্মস্থলে যাতায়াত ১০ মিনিটের পথে ২ ঘন্টা সময় লাগছে। এরপরও সরকারের মন্ত্রী-এমপিরা তথাকথিত উন্নয়ন ও ডিজিটালাইজেশনের রেকর্ড বাজাচ্ছেন। দেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থা, সামাজিক-অর্থনৈতিক ব্যবস্থা, ধর্মীয় ও নৈতিক মূল্যবোধের প্রতিপক্ষে চলছে বিজাতীয় সংস্কৃতির আস্ফালন। সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের জীবনাচার ও মূল্যবোধের সাথে সর্ম্পকহীন কারিকুলাম, শিক্ষাবাণিজ্য ও প্রশ্নপত্র ফাঁসের মধ্য দিয়ে দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে অত্যন্ত পরিকল্পিত উপায়ে ব্যর্থ ও অকার্যকর করে তোলা হচ্ছে। মরুপ্রায় পদ্মা-তিস্তা পাড়ের কোটি কোটি মানুষের নিরব কান্না ও হাহাকার ছাপিয়ে শুনতে হচ্ছে ভারতের সাথে বন্ধুত্বের অনন্য উচ্চতার পরিমাপ। নির্বাচনকে সামনে রেখে বন্ধুদেশের সমর্থন পেতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের একশ্রেনীর নেতা প্রতিযোগিতায় নেমে পড়েছেন। এসব অশুভ বাস্তবতা থেকে জাতি মুক্তি চায়। বহুদলীয় গণতন্ত্রের মূল সৌন্দর্য হচ্ছে নানা মত ও পথের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান। যে জাতি লাখো মানুষের রক্তের বিনিময়ে স্বাধীন রাষ্ট্রের মানচিত্র এবং লালসবুজ পতাকার গৌরব অর্জন করেছিল। সে দেশের মানুষ এখন গণতান্ত্রিক পরিবেশ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের দাবীতে রাজপথে নামতে পারছেনা। রক্তক্ষয়ী আন্দোলন ও গণবিস্ফোরণের পথ পরিহার করে একদলীয় রাজনীতি এবং একপাক্ষিক নির্বাচনের কলঙ্ক মোচনের জন্য রাজনৈতিক সমঝোতা ও শান্তিপূর্ন গণতান্ত্রিক পন্থাকেই বেছে নিতে হবে।
[email protected]
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।