Inqilab Logo

মঙ্গলবার ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯ আশ্বিন ১৪৩১, ২০ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

কার্বন দূষণে মহাবিপর্যয়ের দ্বারপ্রান্তে পৃথিবী

| প্রকাশের সময় : ১৪ মে, ২০১৮, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : মুনাফাবাজ শিল্পোন্নত দুনিয়ার কার্বনের ফলে পৃথিবীকে দিনকে দিন নিয়ে যাচ্ছে মহাবিপর্যয়ের দ্বারপ্রান্তে। সা¤প্রতিক গবেষণায় মেরু অঞ্চলের বরফ গলনের যে সম্ভাব্যতা হাজির করেছে, তাতে উষ্ণ থেকে উষ্ণতর হয়ে ওঠা আমাদের এই আবাসে মানুষ কতদিন অস্তিত্বশীল থাকবে, তা নিয়ে শঙ্কা বেড়েছে অতীতের যেকোনও সময়ের চেয়ে বেশি করে। তবু থামছে না মুনাফার আকাক্ষা। লোভের বিষাক্ত কার্বন ছড়িয়ে পড়ছে বায়ুমÐলের ওজন স্তরে। ফল হিসেবে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধিজনিত আবহাওয়া পরিবর্তন ত্বরান্বিত হচ্ছে। ত্বরান্বিত হচ্ছে পৃথিবী ধ্বংসের আশঙ্কাও। মেরু অঞ্চলের বিপন্ন পরিস্থিতি, জাতিসংঘের আন্তঃরাষ্ট্রীয় আবহাওয়া প্যানেলের ধারাবাহিক সতর্কতা, বিজ্ঞানীদের হুমকি কোনো কিছুই থামাতে পারছে না শিল্পোন্নত বিশ্বকে। অন্য পরাশক্তিগুলো এ নিয়ে কিছুটা ভাবতে রাজি হলেও বিশ্বক্ষমতার শীর্ষ ব্যক্তি ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার আগে-পরে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, এসব নিয়ে ভাবতেই রাজি নন তিনি। আবহাওয়া পরিবর্তনের বাস্তবতা স্বীকার করতেই নারাজ ট্রাম্প। বিজ্ঞানীরা তার ভয়ে মুখ খুলছে না বলেও খবর বেরিয়েছি বহু আগেই। ভীত হওয়ার মতো নতুন আশঙ্কার কথা জানা গেছে সা¤প্রতিক এক গবেষণা থেকে। জাতিসংঘের উদ্যোগে গঠিত আন্তঃরাষ্ট্রীয় আবহাওয়া প্যানেলের (আইপিসিসি) সবশেষ মূল্যায়নে ২১ শতকের শেষ নাগাদ সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির যে আভাস দেওয়া আছে, নতুন গবেষণা অনুযায়ী তার চেয়েও অতিরিক্ত ৫ ফুট বাড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এতে ঢাকার মতো শহরগুলোর ঝুঁকি আরও দ্রæতগামী হবে। ত্বরান্তিত হবে বন্যায় আবহাওয়া উদ্বাস্তুশংকরণের ঝুঁকি। নিজস্ব বিশ্লেষকদের উদ্ধৃত করে দ্য ইন্ডিপেনডেন্ট বলছে, হিমবাহের দ্রæতগতির এই গলনে শতকের শেষ নাগাদ সরাসরি আবহাওয়া পরিবর্তনের শিকার হওয়া মানুষের সংখ্যা দাঁড়াবে একশ’ কোটিরও বেশি। বৈশ্বিক উষ্ণতার কারণে মেরু প্রান্তের বরফগুলো দ্রæত গলছে বলে বারবারই সতর্ক করে আসছেন বিজ্ঞানীরা। যুক্তরাষ্ট্রের আবহাওয়া বিষয়ক দফতর, মার্কিন মহাকাশ সংস্থা এবং যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ওশেনিক ও অ্যাটমোসফেরিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের সা¤প্রতিক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০১৭ সাল ছিল এযাবৎকালের উষ্ণতম বছরগুলোর একটি। নাসা ও ন্যাশনাল ওশেনিক অ্যান্ড অ্যাটমোস্ফেরিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এনওএএ)-এর রেকর্ডকৃত ১৩৫ বছরের তাপমাত্রা বিশ্লেষণ করে মার্কিন বার্তা সংস্থা এপি জানিয়েছে, ১৯৭৬ সালের পরবর্তী কোনও বছরই শীতলতম বলে স্বীকৃতি পায়নি। তাপমাত্রা পর্যবেক্ষণ কর্মসূচি বার্কেলি আর্থ-এর বিশেষজ্ঞ জেকে হাউসফাদার এপিকে বলেন, ‘গত ৫০ বছরে বিশ্ব ধীরে ধীরে উষ্ণ হচ্ছে। ১৮৫০-এর দশকের পর থেকে রাখা রেকর্ড অনুযায়ী, গত ১৮ বছরের মধ্যে ১৭টি বছরই উষ্ণতম আখ্যা পেয়েছে।’ সমুদ্রপৃষ্ঠের উপরিভাগের পানির উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে এমনটা হচ্ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে তা সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির দিক দিয়ে গ্রিনল্যান্ডের মাত্রাকেও ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ফেব্রæয়ারিতে ব্রিটিশ আইটিভি নিউজের পিয়েরস মরগানকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প দাবি করেন, পৃথিবী একইসঙ্গে উষ্ণ ও শীতল। মেরু অঞ্চলের বরফ গলার খবর সত্য নয় বলেও দাবি করেন তিনি। ট্রাম্পের বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করে কাছাকাছি সময়ে বক্তব্য হাজির করেন দশজন আবহাওয়া বিজ্ঞানী। চলতি বছরের এপ্রিলে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের খবরে অ্যান্টার্কটিকায় বরফ গলা নিয়ে নতুন একটি গবেষণা প্রতিবেদনের ফল হাজির করা হয়। ইউকে সেন্টার ফর পোলার অবজারভেশন অ্যান্ড মডেলিং ওই গবেষণা কর্ম সম্পন্ন করেছে। নেচার জিওসায়েন্সে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, পানির উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে ২০১০-২০১৬ সাল পর্যন্ত দক্ষিণ মেরুর কাছাকাছি সাগরের তলদেশে থাকা বরফগুলো ১ হাজার ৪৬৩ বর্গ কিলোমিটার সংকুচিত হয়েছে; যার আয়তনের দিক দিয়ে গ্রেটার লন্ডনের সমান। সবচেয়ে বাজে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে পশ্চিম অ্যান্টার্কটিকায়। ৬৫টি হিমবাহের মধ্যে ৮টির অপসৃত হওয়ার গতি সর্বশেষ বরফ যুগের হিমবাহ অপসৃত হওয়ার হারের তুলনায় ৫ গুণেরও বেশি। নতুন প্রতিবেদনটির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট গবেষক অ্যান্ড্রু শেপার্ড শেপা মনে করেন, ‘এতে লোকজনের উদ্বিগ্ন কারণ রয়েছে।’ সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে গেলে সম্ভাব্য পরিণতি কী হতে পারে, তা নিয়ে পূর্ববর্তী গবেষণাগুলোতেই সতর্ক করা হয়েছিল। আবহাওয়া পরিবর্তনের বিষয়টিকে অস্বীকারকারীরা যুক্তি দেখিয়ে থাকেন, ক্রমবর্ধমান বৈশ্বিক উষ্ণতা থেমে আছে কিংবা ধীরগতিতে হচ্ছে। কিন্তু ২০১৫ সালে জার্নাল সায়েন্সে প্রকাশিত প্রতিবেদনসহ গত কয়েক বছরে হওয়া বিভিন্ন গবেষণার ফলে তাদের দাবি ধোপে টেকেনি। ওইসব প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি ঠেকানো না গেলে আগামী শতকে যুক্তরাষ্ট্রের তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি ফারেনহাইট বৃদ্ধি পেতে পারে। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির প্রভাব নিয়ে ২০১৭ সালে করা এক গবেষণায় দেখা গেছে হাজারো ঐতিহাসিক এলাকা তলিয়ে যেতে পারে। এরমধ্যে রয়েছে, সমাধিক্ষেত্র, মহাকাশ যান উৎক্ষেপণ কেন্দ্র ও প্রাচীন বসতিগুলো। সমদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে গাছপালা ও প্রাণির আবাসস্থলগুলো ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। হিমবাহের দ্রæতগতির গলনে সমুদ্রপৃষ্ঠের ধারণাতীত উচ্চতা বৃদ্ধির আশঙ্কায় হুমকি বেড়েছে উপকূলীয় শহর ও দ্বীপ রাষ্ট্রগুলোর। নেচার জিওসায়েন্সে প্রকাশিত গবেষণার প্রধান হানেস কনরাড বলেন, বিজ্ঞানীরা সাগরকে শীতল রাখতে পারলেও হিমবাহকে স্থিতিশীল করা সম্ভব হবে না। বেশ কিছু দ্বীপ হারিয়ে যাবে পৃথিবী থেকে। বড় বড় শহরগুলোর ঝুঁকি বৃদ্ধির কথা জানিয়েছেন কনরাড। তিনি বলেন, ‘পশ্চিম অ্যান্টার্কটিকার কারণে বিশ্বের সমুদ্রগুলোর পানির উচ্চতা আরও সাড়ে চার মিটার বেড়ে যেতে পারে। তাহলে ভেবে দেখুন তো, লন্ডনের মতো সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এ উচ্চতায় থাকা শহরগুলোর পরিণতি কী হবে।’ ইউএস ডেইলি নিউজ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস কনরাডের বক্তব্যের সূত্রে বলছে, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে নিউ অরলিন্স, জাকার্তা, ঢাকা, ব্যাংকক ও হো চি মিন সিটির মতো বড় উপকূলীয় শহরগুলোও পানিতে তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ওয়েবসাইট।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পৃথিবী


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ