পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
উপগ্রহের এলিট ক্লাবে যুক্ত হচ্ছে বাংলাদেশ : বাঁচবে অর্থ আনবে অর্থ
মহাকাশ জয়ের অপেক্ষায় গোটা বাংলাদেশ। দেশের প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণের সাথে সাথেই পূরণ হবে এই অপেক্ষা। গৌরবের আরেকটি পালক যুক্ত হবে বাঙালি জাতির অৃর্জনে। যুক্তরাষ্ট্রের বেসরকারি মহাকাশ অনুসন্ধান ও প্রযুক্তি কোম্পানি ‘স্পেসএক্স’ ফ্লোরিডার কেনেডি স্পেস সেন্টারের লঞ্চ প্যাড থেকে স্যাটেলাইটটি উৎক্ষেপণের পর বাংলাদেশ যুক্ত হতে যাচ্ছে উপগ্রহধারী এলিট ক্লাবের ৫৭তম সদস্য। গত রাত ২টা ১৪ মিনিটে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের সময় নির্ধারণ করা হয়। এর আগে গত বৃহস্পতিবার রাতেও স্যাটেলাইটটি উৎক্ষেপণের চেষ্টা হয়েছিল। শুরু হয়ে গিয়েছিল চূড়ান্ত ক্ষণগণনা। প্রথম দুই মিনিট কাউন্টডাউনও হলো। কিন্তু শেষ মিনিটে এসেই থমকে গেল সেকেন্ডের কাঁটা। রকেটের যাত্রা (স্টার্টআপ মোড) শুরু হওয়ার সময়েই তা বন্ধ হয়ে যায়। জানানো হলো, সেদিন আর উড়ছে না বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট। তবে শুক্রবার রাতে ফের নতুন করে কাউন্টডাউন চলে। স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের বিশেষ এই মুহূর্ত দেখতে এবং ইতিহাসের স্বাক্ষী হয়ে থাকতে আগের দিনের মত গত রাতেও অনেকেই চোখ রেখেছিলেন টেলিভিশন ও অনলাইনের পর্দায়। সাধারণত স্যাটেলাইট মহাকাশে পাঠানোর ক্ষেত্রে সব সময়ই একটি অতিরিক্ত দিন হাতে রাখা হয়। কারণ, প্রথম দিন কোনো সমস্যা হলে যাতে দ্বিতীয় দিনটি কাজে লাগানো যায়। আগে থেকেই স্পেসএক্স জানিয়ে রেখেছিল, দ্বিতীয় দিনটি (ব্যাকআপ ডে) শুক্রবার। স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ স্থগিত হওয়ার পর স্পেসএক্স এক টুইট বার্তায় জানিয়েছে, শেষ মিনিটে কিছু কারিগরি সমস্যার কারণে উৎক্ষেপণ স্থগিত রাখা হয়। রকেট ও স্যাটেলাইট ভালো অবস্থায় আছে। আজ (গত রাতে) নির্ধারিত সময়ে উৎক্ষেপণের প্রস্তুতি ফের শুরু হবে।
বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের মধ্য দিয়ে ৫৭তম দেশ হিসেবে স্যাটেলাইটের এলিট ক্লাবের দেশগুলোর অভিজাত ক্লাবে যুক্ত হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। ঐতিহাসিক এই মুহূর্তের সাক্ষী হতে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার কেনেডি স্পেস সেন্টারে হাজির ছিলেন পাঁচ শতাধিক বাংলাদেশি। তাঁদের কেউ যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী, আবার কেউ বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে গেছেন। উপস্থিত ছিল প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়, তথ্য প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম, তথ্য ও যোগাযোগ-প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য-প্রযুক্তি সচিব শ্যাম সুন্দর শিকদার, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থার (বিটিআরসি) চেয়ারম্যান শাহজাহান মাহমুদসহ সরকারের একটি ৩০ সদস্যের প্রতিনিধিদল। কেনেডি স্পেস সেন্টারের দুটি স্থান থেকে দর্শনার্থীদের জন্য স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ সরাসরি দেখার ব্যবস্থা ছিল। একটি স্থান অ্যাপোলো বা স্যাটার্ন-৫ সেন্টার, উৎক্ষেপণস্থল থেকে যার দূরত্ব ৬ দশমিক ২৭ কিলোমিটার। এ ছাড়া কেনেডি স্পেস সেন্টারের মূল দর্শনার্থী ভবন (মেইন ভিসিটর কমপ্লেক্স) থেকেও স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ দেখার ব্যবস্থা ছিল। উৎক্ষেপণস্থল থেকে এটির দূরত্ব ১২ কিলোমিটার। দেশের প্রথম স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ নিয়ে সারা দেশের মানুষের মধ্যেও ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা গেছে। বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ বিভিন্ন বেসরকারি টেলিভিশন উৎক্ষেপণ অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচার করেছে। স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের দৃশ্য দেখতে গভীর রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও জেলা প্রশাসক জায়ান্ট স্ক্রিনের ব্যবস্থা করে।
তিন হাজার ৫০০ কেজি ওজনের জিওস্টেশনারি কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে ফ্যালকন-৯ কক্ষপথের দিকে ছুটবে কেনেডি স্পেস সেন্টারের ঐতিহাসিক লঞ্চ কমপ্লেক্স ৩৯-এ থেকে, যেখান থেকে ১৯৬৯ সালে চন্দ্রাভিযানে রওনা হয়েছিল অ্যাপোলো-১১। স্পেসএক্স এবারই প্রথম উপগ্রহ উৎক্ষেপণে তাদের ফ্যালকন-৯ রকেটের বøক ৫ সংস্করণ ব্যবহার করেছে। গত ৪ মে ফ্লোরিডার কেনেডি স্পেস সেন্টারে নতুন এই রকেটের স্ট্যাটিক ফায়ার টেস্ট সম্পন্ন হয়।বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট নির্মিত হয়েছে ফ্রান্সের থেলাস এলিনিয়া স্পেস ফ্যাসিলিটিতে। নির্মাণ, পরীক্ষা, পর্যালোচনা ও হস্তান্তর শেষে বিশেষ কার্গো বিমানে করে সেটি কেইপ কেনাভেরালের লঞ্চ সাইটে পাঠানো হয়। স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের জন্য প্রথমে ১৬ ডিসেম্বর তারিখ ঠিক করা হলেও হারিকেন আরমায় ফ্লোরিডায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হওয়ায় তা পিছিয়ে যায়। এরপর ৪ মে উৎক্ষেপণের সম্ভাব্য তারিখ রাখা হয়। পরে আবার তা পরিবর্তন হয়ে ৭ নির্ধারণ করা হয়। আবহওয়া অনুকূলে না থাকায় সেই তারিখ আবার পিছিয়ে ১০ মে চূড়ান্ত তারিখ নির্ধারণ করা হয়। ১০ মে’তেও যান্ত্রিক ত্রæটির কারণে একদিন পিছিয়ে গত রাতে নির্ধারণ করা হয়।
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ স্থগিত হওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেইসবুকে একটি পোস্ট দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি-বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় জানান, উৎক্ষেপণের মোক্ষম সময়ের জন্য অপেক্ষা করা খুবই সাধারণ বিষয় এবং এ নিয়ে চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই। সজীব ওয়াজেদ জয় লিখেছেন, উৎক্ষেপণের শেষ মুহূর্তগুলো কম্পিউটার দ্বারা সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিয়ন্ত্রিত হয়। হিসেবে যদি একটুও এদিক সেদিক পাওয়া যায়, তাহলে কম্পিউটার উৎক্ষেপণ থেকে বিরত থাকে। আজ (বৃহস্পতিবার রাতে) যেমন নির্ধারিত সময়ের ঠিক ৪২ সেকেন্ড আগে নিয়ন্ত্রণকারী কম্পিউটার উৎক্ষেপণের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে। স্পেসএক্স সবকিছু পরীক্ষা নিরীক্ষা করে আগামীকাল (শুক্রবার রাতে) একই সময়ে আবারও আমাদের প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ বহনকারী রকেটটি উৎক্ষেপণের চেষ্টা চালাবে। যেহেতু এই ধরনের বিষয়ে কোনো ঝুঁকি নেয়া যায় না, সেহেতু উৎক্ষেপণের মোক্ষম সময়ের জন্য অপেক্ষা করা খুবই সাধারণ বিষয়, চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই।
বদলে যাবে দেশের তথ্য-প্রযুক্তি: বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের মাধ্যমে স্যাটেলাইট সদস্য দেশের তালিকায় ৫৭তম দেশ হিসেবে নাম লেখালো বাংলাদেশ। আর এর মাধ্যমে দেশের তথ্য-প্রযুক্তিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের ফলে একদিকে যেমন বাংলাদেশ নিরবিচ্ছিন্ন টেলিযোগাযোগ সেবা প্রদান করতে পারবে, তেমনি সম্প্রচার সেবা, টেলিমেডিসিন, ই-লার্নিং, ই-এডুকেশন, ডিটিএইচ সেবা প্রদান করতে পারবে। এছাড়া ট্রান্সপন্ডার লীজের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব হবে।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় এবং বিটিআরসি সূত্রে জানা যায়, স্যাটেলাইটটি উৎক্ষেপণের পর কিছুদিন পরীক্ষামূলকভাবে পর্যবেক্ষণ করা হবে। তিন মাস পর বাণিজ্যিকভাবে কার্যক্রম শুরু হবে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের। স্যাটেলাইটে থাকা ৪০টি ট্রান্সপন্ডারের মধ্যে ২০টি বাংলাদেশে নিজেদের ব্যাবহারের জন্য রাখা হবে। বাকী ২০টি ট্রান্সপন্ডার ভাড়া কিংবা বিক্রি করা হবে বিদেশের কাছে। বিটিআরসির এক কর্মকর্তা জানান, দেশের জন্য রাখা ২০টি ট্রান্সপন্ডার থেকেই দেশের টেলিভিশন চ্যানেল থেকে শুরু করে ডিরেক্ট টু হোম (ডিটিএইচ) পরিচালনাকরী প্রতিষ্ঠানগুলো ভাড়া নিতে পারবেন। ইতোমধ্যে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান আবেদনও করেছে। তবে উৎক্ষেপণের পর এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিবে মন্ত্রণালয়।
‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট’ স্থাপনের লক্ষ্যে ১১৯ দশমিক ১ পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অরবিটাল ¯øটের জন্য আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারস্পুটনিক ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন অব স্পেস কমিউনিকেশনসকে ১৫ বছরের জন্য দুই কোটি ৮০ লাখ ডলার দিতে হবে। বিটিআরসি সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে বিদেশী স্যাটেলাইটের ফ্রিকোয়েন্সি ভাড়া নিয়ে টেলিভিশন চ্যানেল, টেলিফোন, রেডিওসহ অন্যান্য যোগাযোগ রক্ষা করা হচ্ছে। এতে প্রতি বছর ভাড়া বাবদ বাংলাদেশকে ১৪ মিলিয়ন ডলার গুণতে হয়। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের কার্যক্রম শুরু হলে দেশে শুধু বৈদেশিক মুদ্রারই সাশ্রয়ই হবে না, স্যাটেলাইটের অব্যবহৃত অংশ নেপাল, ভুটান ও মিয়ানমারের মতো দেশে ভাড়া দিয়ে প্রতি বছর ৫০ মিলিয়ন ডলার অর্থ আয় করা যাবে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্টরা। এছাড়া দুর্যোগপ্রবণ বাংলাদেশে নিরবচ্ছিন্ন টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে ভূমিকা রাখবে এ স্যাটেলাইট। স্যাটেলাইট পাঠানোর কাজটি বিদেশে হলেও এটি নিয়ন্ত্রণ করা হবে বাংলাদেশ থেকেই। এজন্য গাজীপুরের জয়দেবপুর ও রাঙ্গামাটির বেতবুনিয়ায় দুটি গ্রাউন্ড স্টেশন নির্মাণ করা হয়েছে।
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটটি ৪০টি ট্রান্সপন্ডার ক্যাপাসিটি সম্পন্ন হবে। এই ৪০টি ট্রান্সপন্ডারের মধ্যে বাংলাদেশের জন্য ২০টি রাখা হবে। স্যাটেলাইট ডিজাইন লাইফ ১৫ বছরের মধ্যে বাংলাদেশের জনগণের প্রয়োজনীয় চাহিদা পূরণে এই ২০টি ট্রান্সপন্ডার যথেষ্ট হবে বলে মনে করছে ডাক ও টেলিযোগযোগ মন্ত্রণালয়। আর বিদেশে ব্যাপক চাহিদা থাকায় অবশিষ্ট ২০টি ট্রান্সপন্ডার বিক্রি বা ভাড়া দিয়ে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব হবে। বর্তমানে বিশ্বে ৫৬টি দেশের নিজস্ব উপগ্রহ রয়েছে। আর দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোর মধ্যে ভারত (১৯৭৫), পাকিস্তান (১৯৯০) ও শ্রীলঙ্কার (২০১২) নিজস্ব স্যাটেলাইট রয়েছে। ২০১৫ সালের ২১ অক্টোবর সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট’ উৎক্ষেপণে ‘স্যাটেলাইট সিস্টেম’ কেনার প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়। এরপর ১১ নভেম্বর ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট’ উৎক্ষেপণের জন্য প্রায় ২ হাজার কোটি টাকার ‘স্যাটেলাইট সিস্টেম’ কিনতে থালিসের সঙ্গে চুক্তি করে বিটিআরসি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।