Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

গণতন্ত্র, মার্কিন অবস্থান ও বাংলাদেশ

প্রকাশের সময় : ৮ এপ্রিল, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১২:০৯ এএম, ৮ এপ্রিল, ২০১৬

হোসেন মাহমুদ
বাংলাদেশে যখন গণতন্ত্র, মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও ভোট দেয়ার অধিকার বিষয়ে আলাপ-আলোচনা বন্ধ হয়ে গেছে, কেউই যখন আর জোর গলায় এসব বিষয়ে কথা বলতে চান না, সরকার নিজেও যেখানে এসব বিষয় যতটা সম্ভব চেপেচুপে রাখতে সচেষ্ট, তখনি এ বিষয়গুলো যেন আবার একটু মনে করিয়ে দিল যুক্তরাষ্ট্র। বিশ্বে গণতন্ত্রের বলিষ্ঠ প্রবক্তার নিজ দেশে গণতন্ত্রের কোনো বিচ্যুতি নেই, তা তারা বরদাশতও করে না। অর্থনৈতিক ও সামরিক শক্তিতে বিশ্বে এখনো শীর্ষস্থানে থাকা দেশটি আগে নিজ স্বার্থে নানা দেশে গণতন্ত্রকে হত্যা বা হত্যায় সহায়তা করেছে। এখন তার বা তাদের সে প্রয়োজন পড়ে না, বরং দেশটি এখন বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্রের নজরদারি করে। তারই অংশ হিসেবে বাংলাদেশও তাদের নজরদারিতে আছে। আর সে সুবাদেই ‘বাংলাদেশে গণতন্ত্র, মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও নির্বাচনে প্রত্যেক নাগরিকের ভোট দেয়ার অধিকার নিশ্চিত করার প্রতি জোর দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।’
সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে ২৯ মার্চ ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাস আয়োজিত আলোচনা সভায় দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেশাই বিসওয়াল বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন, ‘সুষ্ঠু ও প্রতিশ্রুতিশীল নির্বাচনে বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিকের ভোট দেয়ার অধিকারকে সমর্থন করে যুক্তরাষ্ট্র। পাশাপাশি মুক্তভাবে কথা বলা, মুক্তভাবে ধর্মচর্চা, শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের নাগরিকদের অধিকারের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন রয়েছে।’
সবারই জানা যে, বিশ্ব পরিস্থিতি এখন যথেষ্টই পাল্টে গেছে। গত শতকের পঞ্চাশ থেকে আশির দশক পর্যন্ত সোভিয়েত বলয়ের বাইরে দোর্দ- প্রতাপ যুক্তরাষ্ট্রকে সবাই সমীহ করে চলত। তারপর আসে সোভিয়েত ইউনিয়নের ভাঙন। তার ফলে বিশ্বের একমাত্র পরাশক্তির আসনে অধিষ্ঠিত হয় দেশটি। তবে একুশ শতকের প্রথম দশকের শেষে বিশ্ব শক্তির কাতারে নিজেকে দাঁড় করানোর লক্ষ্যে চীনের ধীর আত্মপ্রকাশ, সোভিয়েত ইউনিয়নের ধ্বংসস্তুপের ওপর রাশিয়ার পুনরুজ্জীবন এবং চীন-রাশিয়ার মৈত্রী জোট ও মার্কিনবিরোধী অবস্থান বিশ্বব্যবস্থার বিদ্যমান চেহারা পাল্টে দিতে থাকে। একটু লক্ষ করলেই দেখা যায়, বিশ্ব আজ বড় শক্তিগুলোর বিভিন্নমুখী স্বার্থের কারণে পক্ষ-বিপক্ষের জটিল বিন্যাসে আটকা পড়েছে। যুক্তরাষ্ট্র চীনকে ঠেকাতে মিত্র হিসেবে ভারতকে পাশে পেতে মরিয়া, রাশিয়ার সাথে ঘনিষ্ঠতা সত্ত্বেও প্রতিদ্বন্দ্বী চীনের কারণে মার্কিন মৈত্রীর প্রত্যাশী ভারত, আবার রাশিয়া যুক্তরাষ্ট্রের মোকাবেলায় ভারত ছাড়াও বন্ধু হিসেবে কাছে পেতে চায় চীনকে ইত্যাদি। পরিস্থিতি যে কতটা পাল্টে গেছে তার প্রমাণ হচ্ছে রাশিয়ার ক্রিমিয়া দখল ও পূর্ব ইউক্রেনের রুশ বিদ্রোহীদের সক্রিয় সমর্থন প্রদানে এবং সর্বশেষ সিরিয়ায় নিজ সামরিক শক্তির সফল প্রদর্শন। তার বিপরীতে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দুনিয়া নিজেদের শক্তিসামর্থ্যকে এখন পর্যন্ত রাশিয়ার বিপরীতে সমীহ আদায় করার পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারেনি। মোদ্দা কথা হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র এখন আর বিশ্বে কাঁপন তোলা অবস্থানে নেই।
বিশ্ব বেশ কিছুদিন থেকেই আর যুক্তরাষ্ট্রের কথায় ওঠে বসে না। আর এর সুযোগ নিয়েছে ভারত, চীন প্রভৃতি দেশ। আঞ্চলিক পর্যায়ে আর যুক্তরাষ্ট্রকে মোটেই পাত্তা দেয় না তারা। তাদের স্বার্থ ক্ষুণœ করে যুক্তরাষ্ট্র এ অঞ্চলে হাত বাড়াবে সেদিন বাসি হয়ে গেছে। চীনের বেলায় তার দৃষ্টান্ত হলো উত্তর কোরিয়া। এ উন্মাদ পারমাণবিক শক্তির দাবিদারকে কিছুতেই দু’চারটে থাবড়া দিতে পারেনি যুক্তরাষ্ট্র শুধু চীনের কারণে। একইভাবে ভারতও তার স্বার্থের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রকে কোনো হস্তক্ষেপ করতে দিতে মোটেই রাজি নয়। তার সর্ব সাম্প্রতিক প্রমাণ, বাংলাদেশে একতরফা নির্বাচন অনুষ্ঠান ও গণতন্ত্রকে শিকেয় ঝুলিয়ে রাখাÑযা কিনা বিশ্ব গণতন্ত্রের প্রবক্তা যুক্তরাষ্ট্রের পর্যবেক্ষণের প্রতি তাচ্ছিল্য প্রদর্শন ছাড়া কিছু নয়। একাধিক ঘটনায় দেখা গেছে যে, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বন্ধুর পাশে দাঁড়িয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে তোয়াজ করে চলার কোনো কারণ বাংলাদেশের নেই। অবাক ব্যাপার যে যুক্তরাষ্ট্র তা মেনেও নিয়েছে।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি ও তার নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের নির্বাচন বর্জনের প্রেক্ষাপটে সর্বশক্তি প্রয়োগ করে কার্যত ভোটারবিহীন নির্বাচন অনুষ্ঠান করে যথারীতি সরকার গঠন করে দিন পার করছে আওয়ামী লীগ। দু’ বছর পেরিয়ে গেছে, ঘরে বাইরে সব সমস্যা সামাল দিয়ে এবং কাদা থেকে উঠে শক্ত মাটিতে দাঁড়িয়ে সরকার। তিনবারের দেশ শাসনকারী দল বিএনপি এখন সরকারের জন্য কোনো রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ নয়। বিএনপি জোটকে ঘায়েল করে দিয়ে দুর্বল করে ফেলতে সক্ষম হয়েছে সরকার। তাদের সবচেয়ে বড় সাফল্য জোটের প্রধান শরিক জামায়াতের সাথে বিএনপির রাজনৈতিক দূরত্ব সৃষ্টি করতে পারা। অন্যদিকে আইনি ছত্রছায়ায় মানবতাবিরোধী অপরাধের ফাঁসজালে বিএনপি-জামায়াতের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের আটকে ফেলে বিচার প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে ও কতিপয় দ-িতের রায় কার্যকর করতে আওয়ামী লীগ সরকার সফল হয়েছে। এর পরিণতিতে রাজনৈতিক অবস্থান দুর্বল হয়েছে বিএনপি-জামায়াত উভয়েরই, আর বিরাটভাবে লাভবান হয়েছে সরকার। তবে এ পন্থায় জাতীয় ঐক্য প্রকৃতপক্ষে কতটা সুদৃঢ় হয়েছে তা পরিষ্কার নয়।
যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি সম্পর্কে ওয়াকেবহাল। কিন্তু তারা সে বিষয় নিয়েই কথা বলে যে বিষয়ে তাদের নিজস্ব স্বার্থ জড়িত অথবা যে বিষয়ে কথা বলা তাদের ঘোষিত নীতির আওতায় পড়ে। তারা বিভিন্ন দেশে গণতন্ত্র, মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও ভোটদানের অধিকার রক্ষার পক্ষে কথা বলে। কিন্তু এগুলো নিশ্চিত করার জন্য নিঃর্শত ভূমিকা নিতে চায় না। অথচ যেসব দেশ কর্তৃত্ববাদী শাসনের শিকার হয়ে পড়ে সেসব দেশের নিপীড়িত-লাঞ্ছিত জনগোষ্ঠী এসব অধিকার হারিয়ে বিশ্বের প্রধান শক্তি হিসেবে তার কাছ থেকে এ ক্ষেত্রে দৃঢ় ভূমিকা গ্রহণের প্রত্যাশা করে। বাংলাদেশের বেলায়ও তাই হয়েছে। কিন্তু এ নিয়ে বাংলাদেশের জনগোষ্ঠীর বৃহৎ একটি অংশকে হতাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এটা ঠিক যে, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের পর সে নির্বাচনকে স্বীকৃতি দেয়নি তারা। সকল দলের অংশগ্রহণভিত্তিক একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে অবস্থান নেয় দেশটি। তার সে অবস্থানের কোনো পরিবর্তন হয়নি বলেও গত দু’বছরে বারবার বলেছে। তার সাথে সুর মেলায় ইউরোপীয় ইউনিয়নও। কিন্তু যে নির্বাচনকে তারা স্বীকৃতি দেয়নি সে নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত সরকারের সাথে কাজ করা ও সম্পর্ক অধিকতর ঘনিষ্ঠ করার প্রক্রিয়া তারা অব্যাহত রেখেছে। এ দ্বিমুখী আচরণ থেকে এটাই স্পষ্ট যে যুক্তরাষ্ট্র বরাবর যতই নীতিনিষ্ঠতা প্রদর্শন করুক, নিজের স্বার্থের বাইরে কোনো পদক্ষেপ তারা গ্রহণ করে না। তাই বাংলাদেশ সরকার যাই করুক না কেন, গণতন্ত্রকে যতই শিকেয় ঝুঁলিয়ে রাখুক না কেন, সরকার নাখোশ হয় এমন পথে তারা হাঁটবে না। লক্ষণীয়, যুক্তরাষ্ট্র যখন বাংলাদেশে গণতন্ত্রকে হিমঘরে পাঠানোর ঘটনায় নীরবতা পালন করছে তখন আগামীর পরাশক্তি ভারত তার স্বার্থে এ সরকারের সমর্থনে বলিষ্ঠ অবস্থান গ্রহণ করেছে। তাই বাংলাদেশে আজ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও ২০১৯-এর আগে পুনঃনির্বাচন উভয়ই ‘দিল্লী হনুজ দূর অস্ত’-এর মতো ব্যাপারে পরিণত হয়েছে।
এদিকে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া সংঘাত ছেড়ে সংলাপের পথে আসার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। দেশে সকল দলের অংশগ্রহণভিত্তিক একটি সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের আশা যখন সর্বাংশে তিরোহিত সে অবস্থায় গত ১৯ মার্চ অনুষ্ঠিত বিএনপির কাউন্সিলে তিনি বলেন, ‘দেশের প্রায় সবাই একটি জনপ্রতিনিধিত্বশীল, গণতান্ত্রিক সরকার চায়। এ জন্য যত দ্রুত সম্ভব সবার অংশগ্রহণে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচন প্রয়োজন। কীভাবে এটি হতে পারে সে ব্যাপারে সবার সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে একটি সমাধানে পৌঁছতে চাই।’ তাঁর এ বক্তব্যের সুর নমনীয় ও আবেদন পূর্ণ। তবে প্রায় তিন সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও এ বিষয়ে অপর পক্ষ থেকে কোনো সাড়াশব্দ পাওয়া যায়নি। ৩১ মার্চ ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে ২০ দলীয় জোটের শরিক বাংলাদেশ ইসলামী ঐক্যজোটের (একাংশ) জাতীয় সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় বেগম খালেদা জিয়া জাতীয় জীবনে কঠিন দুঃসময় চলছে মন্তব্য করে বলেন, ‘দেশের এই সঙ্কট নিরসনে এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের প্রতিনিধিত্বশীল সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য আমরা সবার সঙ্গে আলাপ-আলোচনার আহ্বান জানিয়েছি। বল এখন শাসকের কোর্টে। তিনি আরো বলেন, দেশে গণতন্ত্র নেই। জনগণের সরকার নেই। সুশাসন নেই। সব প্রতিষ্ঠান ভেঙে পড়েছে। সবখানে নৈরাজ্য। আইন-শৃঙ্খলার সীমাহীন অবনতি ঘটেছে। কারো কোনো নিরাপত্তা নেই। ... তারা সংঘাতের পথ ছেড়ে সংলাপের পথে সমস্যার সমাধান করবে বলে আমি আশা করি।’
বিএনপি চেয়ারপারসন যে আহ্বান জানিয়েছেন তাকে সবলের প্রতি দুর্বলের আহ্বান বলে আখ্যায়িত করলেই ভালো হয়। আর চিরাচরিত নিয়ম হচ্ছে সবল কখনোই দুর্বলের আবেদনে সাড়া দেয় না। সরকার এখন প্রচ- সবল অবস্থানে রয়েছে এবং সে কারণে তারা বিএনপির আহ্বানে কোনো সাড়া দেয়ার প্রয়োজন মনে করে না। বিএনপি ক্ষমতায় থাকলেও হয়তো এই একই কাজ করত। যাহোক, দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে সরকার বিএনপির সাথে কোনো সংলাপে বসতে চাইবে নাÑএটাই স্বাভাবিক। সে রকম কোনো সঙ্কটও নেই যে তারা বসতে বাধ্য হবে। এদিকে কাউন্সিল শেষ করার পর বিএনপির তৃণমূল পর্যায়ে অনেকটাই চাঙ্গা ভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। তবে তা সরকারকে রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ জানানোর মতো নয়। আর সরকারের বিরুদ্ধে কোনো ইস্যুকে কেন্দ্র করে দুর্বার গণআন্দোলন গড়ে তোলার মতো দল বিএনপি নয় বলেই মনে করা যেতে পারে। কুমিল্লায় কলেজ ছাত্রী তনু হত্যা এবং হত্যাকারীদের সনাক্ত ও গ্রেফতার করায় দীর্ঘসূত্রতাকে নিয়ে পথে নামতে পারত দলটি। হয়তো ঘটনার প্রেক্ষাপট ও কৌশলগত দিক বিবেচনা করে তারা এটিকে আন্দোলনের বিষয় হিসেবে গ্রহণের উপযুক্ত মনে করেনি। যাই হোক, জনস্বার্থ সংক্রান্ত কোনো বিষয় নিয়েই এগিয়ে আসতে দলটিকে সাম্প্রতিককালে দেখা যায়নি। জনগণের সমর্থন পেতে হলে তাদের সমস্যা সমূহের সাথে একাত্ম হতে ও সেগুলোকে ইস্যু করে এগোতে হবেÑএ সাধারণ বিষয়টিও যেন বিএনপি ভুলে গেছে।
বিএনপির দলীয় নেতা-কর্মীসহ অগণিত সমর্থকদের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে যে, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে যে হারে দমন-নির্যাতন-নিপীড়ন চালাচ্ছে তার প্রেক্ষাপটে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব তেমন কোনো সাহায্য-সহায়তার হাত প্রসারিত করেনি। এ ক্ষোভ ভিত্তিহীন নয়। এটা ঠিক যে আওয়ামী লীগ সরকার বিএনপির ওপর থেকে নিচ পর্যন্ত কাউকেই স্থির থাকতে দিচ্ছে না। তার মধ্যেও এ ব্যাপারে কেন্দ্রে আপৎকালীন একটি সহায়তা সেল প্রতিষ্ঠার কথা বিবেচনা করা যেতে পারত। তাহলে আখেরে লাভবান হতো দলই। নেতা-কর্মীদের দলের ওপর ভক্তি-ভালোবাসা বাড়ত। সময় এখনো পেরোয়নি। বিএনপির সামনে এখনো অনেক দুর্যোগ অপেক্ষা করছে। সুতরাং বিষয়টি গুরুত্বের সাথে ভাবা যেতে পারে।
বাংলাদেশে এখন গণতন্ত্র উধাও। আর তা সবাই মেনেও নিয়েছে। নিয়ন্ত্রিত গণতন্ত্র বা সীমিত গণতন্ত্র গ্রহণযোগ্য নয়, কিন্তু সে জন্য সরকারের প্রতি অসন্তোষ সৃষ্টি না করার নীতি অবলম্বন করেছে আন্তর্জাতিক বিশ্ব, অন্তত বাংলাদেশের ক্ষেত্রে তারই প্রমাণ মেলে। আর কেনা জানে, বাইরের যুৎসই চাপ ছাড়া সরকার তার পরিকল্পনা মাফিক মেয়াদের দিনগুলোকে এভাবেই ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে নিয়ে ঠেকাবে। মনে থাকার কথা যে, কিছুদিন আগে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ সফরে এসেছিল এবং ২০১৯ সালের নির্বাচনের জন্য তারা কী করতে পারে সে বিষয়ে চিন্তাভাবনা করার কথা বলে গিয়েছিল। তার সরলার্থ ছিল এই যে, তারা ২০১৯-এর আগে এদেশে কোনো নির্বাচনের কথা ভাবছে না। জানা গেছে, একই উদ্দেশ্যে তারা আবারো বাংলাদেশে আসছে। এ থেকে আর বুঝতে বাকি থাকে না যে সকল দলের অংশগ্রহণভিত্তিক নির্বাচন না হলেও ইউরোপীয় পার্লামেন্ট প্রতিনিধিদলের কিছু আসে যায় না। একইভাবে ১৫৩ জন সম্পূর্ণ অনির্বাচিত ও বাকি অধিকাংশই নামকা ওয়াস্তে নির্বাচিতদের নিয়ে সরকার রাষ্ট্র পরিচালনা করলেও সেটাই এখন বৈধতা পাচ্ছে। এভাবে দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল ও জোটের অনুসারী বিপুলসংখ্যক মানুষের নির্বাচন বর্জন ‘যে নদী মরুপথে হারালো ধারার মতোই মূল্যহীন হয়ে পড়েছে। বিএনপি গণতান্ত্রিক পন্থায় আন্দোলন করে ২০১৯-এর আগে সকল দলের অংশগ্রহণভিত্তিক সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি আদায় করতে পারবে এ রকম বিষয় এখন আকাশকুসুম কল্পনা প্রায়। কিন্তু দলটির ক্রমঃক্ষীয়মান মর্যাদা পুনরুদ্ধার ও সর্বস্তরের নেতা-কর্মীদের আত্মবিশ্বাসে বলীয়ান করে তুলতে আর কোনো পথ আছে বলেও মনে হয় না।  
য় লেখক : সাংবাদিক
[email protected]



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: গণতন্ত্র

২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ