Inqilab Logo

শুক্রবার ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

বদলে যাচ্ছে নিউরোসার্জারি বিভাগ, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল

| প্রকাশের সময় : ১০ মে, ২০১৮, ১২:০০ এএম

রফিকুল ইসলাম সেলিম : যে কোনো মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জন্যই অত্যন্ত সংবেদনশীল ও গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ নিউরোসার্জারি। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগে চালু হয়েছে রাত্রীকালীন ও জরুরি অস্ত্রোপচার (অপারেশন)। বেড়েছে জটিল অস্ত্রোপচারের হার। চিকিৎসাবিজ্ঞান শিক্ষার্থীদের উন্নত শিক্ষা, গবেষণা ও প্রশিক্ষণও চলছে সমানতালে। বদলে যাচ্ছে নিউরোসার্জারি বিভাগটি। শয্যার পাঁচগুণ বেশি রোগীর চাপ, অপারেশন থিয়েটার, চিকিৎসা সরঞ্জাম আর আধুনিক যন্ত্রপাতির অপ্রতুলতাসহ রয়েছে নানা সমস্যা-সংকট। এর মধ্যেও নিউরোসার্জারি বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর ডা. এস এম নোমান খালেদ চৌধুরীর নেতৃত্বে চিকিৎসক ও সেবক-সেবিকাদের সম্মিলিত নিরলস প্রচেষ্টায় এখন দারুণ প্রাণচঞ্চল এ বিভাগ। এরফলে সাধারণ মানুষ কম খরচে ব্যয়বহুল চিকিৎসা সেবা পাচ্ছেন। রোগীরা দ্রæত সেরে উঠছেন। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরছেন। যা অন্য মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসমূহের জন্যও দৃষ্টান্ত।
দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের সর্ববৃহৎ চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। চট্টগ্রাম অঞ্চলের ১০ জেলার প্রায় পাঁচ কোটি মানুষের নিউরোসার্জারি চিকিৎসা ও অস্ত্রোপচারের জন্য একমাত্র বিভাগ এটি। সড়ক দুর্ঘটনাসহ মাথায় আঘাতজনিত কারণ বা হেড ইনজুরি, ব্রেন টিউমারসহ নিউরোসার্জারি চিকিৎসা বিশেষ করে অস্ত্রোপচার অত্যন্ত ব্যয়বহুল। দেশের বেসরকারি ক্লিনিক ও হাসপতালে এ ধরনের এক একটি অস্ত্রোপচারে ব্যয় হয় আড়াই থেকে তিন লাখ টাকা। অথচ একই অস্ত্রোপচার করতে এই বিভাগে খরচ মাত্র দশ থেকে বার হাজার টাকা। আর এই কারণে এই বিভাগে রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। ১৯৭৮ সালে প্রতিষ্ঠিত এই বিভাগে সরকারিভাবে শয্যা সংখ্যা মাত্র ৪৫টি। কিন্তু এখানে প্রতিদিন গড়ে ২শ’ থেকে ২৫০ রোগী ভর্তি থাকছেন। প্রতিদিন নতুন করে ভর্তি হন ৫০ থেকে ৬০ জন।
এত বিপুল সংখ্যক রোগীর চাপ সামলাতে এখানে-সেখানে শয্যা বসিয়ে ১২১টিতে উন্নীত করা হয়েছে। বারান্দায় ও ফ্লোরে থাকছেন রোগীরা। আউটডোরে মাসে দুই থেকে আড়াই হাজার রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। শয্যা সংখ্যা প্রায় চারগুণ বাড়লেও সরকারি বরাদ্দ এখনো ৪৫ শয্যারই রয়ে গেছে। একটি মাত্র অপারেশন থিয়েটার তাও আবার দীর্ঘদিনের পুরানো। একটি অপারেশন শুরু হলে সেটি শেষ না হওয়া পর্যন্ত যতই জরুরি হোক অন্যকোন অপারেশনের সুযোগ থাকে না। এ জন্য বিভাগের পক্ষ থেকে জরুরি ভিত্তিতে আরও একটি ওটি স্থাপনের পাশাপাশি বিদ্যমান ওটি সংস্কার ও আধুনিকায়নের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে। গত সোমবার এ বিভাগটি ঘুরে দেখা যায়, সিটি স্ক্যান মেশিনটি দীর্ঘদিন ধরে বিকল। ওটির যে টেবিলটি রয়েছে তাও ভাঙ্গা। নেই কোন আধুনিক যন্ত্রপাতি। জটিল ও সেনসেটিভ এইসব অস্ত্রোপচার হয় মান্ধাতা আমলের যন্ত্রপাতি দিয়ে। এ কারণে সদিচ্ছা সত্তে¡ও জটিল অপারেশন সবসময় পুরোপুরি সফল করা সম্ভব হয় না। যতটুকু সীমিত সক্ষমতা আছে তাকে এখন কাজে লাগানো হচ্ছে। পুরো ওয়ার্ড পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। রোগীদের শ্রেণি বিন্যাস করে দেওয়া হচ্ছে নিবিড় চিকিৎসা সেবা।
রোগীদের মাথা কাটা হয় কাঠ ছিদ্র করার কাজে ব্যবহৃত ড্রিল মেশিনের মতো হাডসন ব্রেস দিয়ে। ওই মেশিন দিয়ে ছিদ্র করে ধারালো তার দিয়ে কাটা হয় মাথা। নেই কোন অপারেটিং মাইক্রোস্কোপ, নিউরো-এন্ডোস্কোপ, নিউমেটিক ড্রিল মেশিন। একটি নতুন অপারেশন থিয়েটারসহ এসব আধুনিক যন্ত্রপাতি সংগ্রহে সর্বোচ্চ পাঁচ কোটি টাকা লাগতে পারে। এব্যাপারে বিভাগের পক্ষ থেকে একটি প্রকল্প তৈরী করে সরকারের কাছে প্রেরণ করা হয়েছে। জানা যায়, অপারেশন থিয়েটারসহ যন্ত্রপাতির অপ্রতুলতার কারণে অস্ত্রপচারের জন্য কোন কোন রোগিকে দুই থেকে আড়াই মাস পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। জরুরি অস্ত্রপচার করতেই একটি অপারেশন থিয়েটার সারাদিন ব্যস্ত থাকে।
তবে এতসব সমস্যার মধ্যে নতুন বিভাগীয় প্রধান গুরুত্বপূর্ণ এই বিভাগকে বদলে দিচ্ছেন। দেশের প্রখ্যাত নিউরোসার্জন প্রফেসর ডা. এসএম নোমান খালেদ চৌধুরী গত ১৮ জানুয়ারি এই বিভাগে যোগ দেন। দীর্ঘ দশ বছর এই পদটি শূণ্য ছিলো। তিনি দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে এ বিভাগের দৃশ্যমান উন্নয়ন, রোগী সেবা বৃদ্ধি, চিকিৎসা বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের উন্নত শিক্ষা, গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইত্যাদি বিষয়ে মনোযোগী হয়েছেন এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে তিনি ইতোমধ্যে সফল হয়েছেন। চট্টগ্রামের সন্তান নোমান চৌধুরীর বেড়ে উঠা এই নগরীতে। আর তাই এই অঞ্চলের মানুষের জন্য কিছু একটা করার তাগিদ থেকেই তিনি নতুন করে এ বিভাগটি সাজিয়েছেন। তার সাথে একাত্ম হয়েছেন বিভাগের অন্য চিকিৎসকসহ সকলে।
আগে এই বিভাগে সন্ধ্যার পর কোন অপারেশন হতো না। এখন তিনি সেটি চালু করেছেন। এর সাথে জরুরি অস্ত্রোপচারও চালু হয়েছে। যখনই প্রয়োজন অস্ত্রোপচার করতে চিকিৎসকদের দিয়ে টিম গঠন করে দেওয়া হয়েছে। সার্বক্ষণিক চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করা হচ্ছে। এরফলে এখানে অস্ত্রোপচারের হারও বেড়েছে। গত একমাসে ১৬২টি জটিল অস্ত্রোপচারসহ মোট ৩১৫টি অস্ত্রোপচার হয়েছে। প্রফেসর ডা. এস এম নোমান খালেদ চৌধুরী দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, এই বিভাগে অনেক সংকট থাকলেও আমাদের আন্তরিকতায় কোন ঘাটতি নেই। সম্ভাবনার সবটুকু কাজে লাগিয়ে চিকিৎসার মান বাড়ানোর চেষ্টা করছি। আধুনিক যন্ত্রপাতি সমৃদ্ধ আরও একটি ওটি সংযুক্ত হলে অস্ত্রোপচারের হার আরও বাড়বে।
ব্যয়বহুল এই চিকিৎসার জন্য রোগীদের বিদেশে অথবা বেসরকারি ক্লিনিকে ছুটতে হবে না। এই বিভাগে যত রোগী আসছেন তাদের এক চতুর্থাংশ শিশু। এজন্য একটি পেডিয়াট্রিক নিউরোসার্জারি বিভাগ চালুর প্রস্তাবও করেছেন তিনি। তিনি বলেন, শিশু রোগীদের চিকিৎসার জন্য নতুন এই বিভাগ চালু করা অত্যন্ত জরুরি। এটি চালু হলে একদিকে শিশুদের নিউরোসার্জিক্যাল চিকিৎসা নিশ্চিত করা যাবে আর এ মাধ্যমে শিশু মৃত্যুর হারও কমিয়ে আনা যাবে। এখানে চিকিৎসা নিতে আসা সিনিয়র সিটিজেন এবং মুক্তিযোদ্ধাদের বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে চিকিৎসা সেবা দেয়া হয়।



 

Show all comments
  • Hasib Hasssn Khan ১০ মে, ২০১৮, ১:০৪ এএম says : 0
    Congratulations Prof Dr Noman Khaled Chy and your whole the team. Pls keep it up. The under privileged peoples are with you and their Dua, good wishes.
    Total Reply(0) Reply
  • ML Gani ১০ মে, ২০১৮, ১:২৮ এএম says : 0
    প্রফেসর ডা. এস এম নোমান খালেদ চৌধুরীকে আমি ব্যক্তিগতভাবে জানি। তিনি সৃজনশীল, কর্মনিষ্ঠ এবং একই সাথে সাহসী। সহায়তা পেলে বর্তমান পরিবেশ বদলে দেয়ার ক্ষমতা তাঁর আছে। অনেক অনেক শুভকামনা।
    Total Reply(0) Reply
  • Abu soyod md. Obaidullah ২৩ মে, ২০২১, ৫:৫২ পিএম says : 0
    স্যার অনেক বড় মানের মানুষ যা ওনার সাথে আমি খুব সহজে বুঝতে পারছি, গত সপ্তাহে আমার ফুফাত ভাই কে নিউরোসার্জারি বিভাগে ভর্তি হওয়া তে ওনার সাথে কথা সৌজন্যে সাক্ষাৎ করার সুযোগ হয়েছে আমার, ওনার সাথে কথা বলে জানতে ওনি এই বিভাগের ব্যাপারে খুবই আন্তরিক এবং প্রত্যেক রোগী প্রতি ওনি এবং ওনার টিমের সাপোর্টে দিন রাত মানুষের জন্য অনেক অনেক কাজ করে যাচ্ছেন বিপদগ্রস্ত মানুষরা পাচ্ছে সঠিক এবং উন্নত মানের সেবা পাচ্ছেন, আমি স্যারের এই মহান কৃত কর্মের জন্য আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাই, পরিশেষে স্যারে সহ সকলের সু-সাস্হত কামনা করছি।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: হাসপাতাল


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ