পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় ৮ ফেব্রæয়ারি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে সাজা দিয়ে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত। ওই দিনই তাকে পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডের পরিত্যাক্ত কারাগারে পাঠানো হয়। এখন পর্যন্ত তিনি সেখানেই রয়েছেন।
আজ তার কারাবাসের তিন মাস পূর্ণ হলো। খালেদা জিয়াকে কারাগারে পাঠানোর পর থেকেই তার মুক্তির দাবিতে মানববন্ধন, অনশন কর্মসূচি, বিক্ষোভ, স্মারকলিপি প্রদান, গণস্বাক্ষর অভিযান, বিভাগীয় সমাবেশ, দোয়া মাহফিলসহ নানা কর্মসূচি পালন করেছে বিএনপি। এর মধ্যে চলছে আইনি লড়াইও। কিন্তু কারাগারে নেয়ার পর খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় রয়েছেন দলের নেতাকর্মীরা। বিভিন্ন সময় বিএনপির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে পরিত্যাক্ত কারাগারের সেঁতসেঁতে একটি কক্ষে একা ৭৩ বছর বয়সী একজন বয়স্ক মহিলাকে রাখা হয়েছে। সেখানে প্রতিদিনই তার স্বাস্থ্যের অবনতি হয়েছে। খালেদা জিয়া নিজেও তার অসুস্থতার কথা উল্লেখ করে তা কোর্টকে জানানোর জন্য তার ব্যক্তিগত আইনজীবীদের বলেছেন। গত শনিবার তার আইনজীবীরা কারাগারে দেখা করতে গেলে কারাগারে গুরুতর অসুস্থতার কথা জানিয়ে তা কোর্টকে বলার পরামর্শ দিয়েছেন আইনজীবীদের।
তিনি আইনজীবীদের বলেছেন, আমি কারাগারে অত্যন্ত গুরুতর অসুস্থ- এটা কোর্টকে জানাবেন। আমি তো কোন অন্যায় করিনি। তাহলে আমাকে কেন এতো দিন জেল খাটতে হচ্ছে। কারাগার থেকে বেরিয়ে খালেদা জিয়ার অন্যতম আইনজীবী ব্যারিস্টার রেজ্জাক খান বলেন, ম্যাডাম বলেছেন, আমি অত্যন্ত গুরুতর অসুস্থ- এটা কোর্টকে জানাবেন’। জেলে স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশে থাকার কারণে দিন দিন তার স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটছে। মেডিকেল গ্রাউন্ডে জামিন দিয়েছে হাইকোর্ট- এটা সর্বোচ্চ আদালতে উপস্থাপনের জন্য আমাদের তিনি বলেছেন।
আরেক আইনজীবী জয়নাল আবেদীন বলেন, ম্যাডাম খুবই অসুস্থ। তার যে বাম হাত তিনি নাড়াতে পারেন না, তা শক্ত হয়ে গেছে এবং ঘাড়েও তার সমস্যা আছে। অর্থাৎ এই রকম একটি স্যাঁতস্যাঁতে জায়গায় বন্দি থাকা অবস্থায় যেরকম অবস্থা হয় তাই ম্যাডামের হয়েছে। তিনি বলেন, এখনও বলছি ম্যাডামের যে চিকিৎসা দরকার তা জেলখানায় সম্ভব নয়। ম্যাডামের চিকিৎসা ইউনাইটেড হাসপাতালে হওয়া দরকার।
বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়, তাঁর হাত-পা ও কোমরের ব্যথা আরও বেড়েছে। নির্জন, পরিত্যক্ত ও স্যাঁতসেতে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তাঁকে রাখা হয়েছে। তাঁকে দেওয়া বিছানা বালিশ অর্থপেডিকের একজন রোগীর জন্য অনুপযোগী। সরকারি মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকরাও অর্থপেডিক বেড দেয়ার সুপারিশ করলেও এখনও তাঁকে সেই বেড দেয়া হয়নি। জরুরী ভিত্তিতে তাঁর এমআরআইসহ উন্নত চিকিৎসার দরকার। কিন্তু বারবার বলার পরেও কারাকর্তৃপক্ষ বিষয়টিকে উপেক্ষা করছে।
এদিকে খালেদা জিয়ার অসুস্থ্যতা এবং জামিন না পাওয়ায় উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠায় রয়েছে বিএনপি নেতাকর্মীরা। নেতাকর্মীরা বলেন, ‘বিএনপি’ শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দল হলেও দলটির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া শুধু একজন রাজনীতিক নন; তিনি একটি আদর্শ-দর্শন একটি প্রতিষ্ঠান। তিনি হাসলে আলোকিত হয় হাজারো মুখ; মুখ ফেরালে লাখো মানুষের জীবনে নামে গভীর অন্ধকার। কর্মময় জীবনে তিনি হয়ে উঠেছেন দেশের কোটি কোটি মানুষের আশা-আকাক্সক্ষার বিমূর্ত প্রতীক। গৃহবধূ থেকে রাজনীতিতে এসে ৯ বছর এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে দেশবাসীর কাছে তিনি ‘আপোষহীন নেত্রী’র খেতাব অর্জন করেছেন। জনগণের ভোটে তিন বারের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী বেগম জিয়ার কোটি কোটি অনুসারী সারাদেশে ছড়িয়ে রয়েছে। মা, মাটি ও মানুষের এই নেত্রী দেশের নারীদের কাছে ‘আইডল’। দেশের জাতীয়তাবাদী ও ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী তরুণ-তরুণীরা তাঁকে নিয়ে আগামীর স্বপ্ন বোনেন। নতুন প্রজন্ম দেখেন জেগে ওঠার স্বপ্ন। রাজধানী ঢাকার অভিজাত এলাকা থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত গ্রামগঞ্জ এবং সমাজের প্রতিটি স্তরে ছড়িয়ে রয়েছে বেগম জিয়ার অনুসারী। শিশু, যুবা, বয়স্ক, বৃদ্ধা সব স্তরের মানুষ খালেদা জিয়ার প্রতি সহানুভূতিশীল; তাঁকে চেনেন, জানেন, মানেন। তিনি (বেগম জিয়া) কি রোগে ভুগছেন তা জানতে না পারলেও প্রিয় নেত্রীর রোগমুক্তির জন্য মানত করছেন, আল্লাহর কাছে রোগমুক্তির প্রার্থনা করছেন, রোযাও রাখছেন অনেকেই।
খালেদা জিয়ার অসুস্থতায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, তার যে অসুস্থ দিনকে দিন বাড়ছে। কারাগারে তার কোনো চিকিৎসাই হচ্ছে না। মনে হচ্ছে এতে গভীর চক্রান্ত রয়েছে। চিকিৎসা নিয়ে সরকার ও কারা কর্তৃপক্ষে টালবাহানায় দেশনেত্রীর জীবন নিয়ে আমরা গভীর শঙ্কা প্রকাশ করছি। দলের প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানী বলেন, ৭৩ বছর বয়সী একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে নির্জন, পরিত্যাক্ত একটি কারাগারে রাখা হয়েছে। সেখানে তাকে চিকিৎসাও দেয়া হচ্ছে না। একটি মিথ্যা ও সাজানো মামলায় দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রীর সাথে এধরণের আচরণ শুধু বিএনপি নেতাকর্মী নয়, সাধারণ মানুষকেও বিস্মিত করেছে। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, আমরা আশা করি আগামীকাল (আজ) দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া জামিন পাবেন। সর্বোচ্চ আদালত তার বিরুদ্ধে দেয়া মিথ্যা অভিযোগ, অসুস্থতা বিবেচনায় তাকে জামিন দেবে।
বিএনপি চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইংয়ের সদস্য ও জাসাসের সহ-সভাপতি শায়রুল কবির বলেন, আমাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও হয়রানিমূলক মামলায় জেলে রাখা হয়েছে। আমরা প্রতিটা মূহুর্তে তার শূন্যতা অনুভব করছি। আমরা আশা করি আগামীকাল (আজ) তিনি জামিন পাবেন।
এর আগে ঢাকা মহানগর জজ আদালতের দেওয়া দÐের বিরুদ্ধে খালেদা জিয়া আপিল করলে হাইকোর্ট গত ১২ মার্চ তাকে জামিন দিয়েছিল। কিন্তু সেই আদেশের বিরুদ্ধে দুদক আপিল বিভাগে গেলে তা স্থগিতাদেশ দেয়া হয়। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে চার সদস্যের আপিল বেঞ্চ ১৯ মার্চ দেওয়া এক আদেশে জামিন প্রশ্নে আপিল শুনানির জন্য রাষ্ট্রপক্ষ ও দুদক এবং আসামি পক্ষকে সার সংক্ষেপ জমা দিতে বলে। সেই সঙ্গে ৮ মে পর্যন্ত স্থগিত রাখা হয় হাইকোর্টের জামিন আদেশ। আপিল বিভাগের আজকের কার্যতালিকায় খালেদা জিয়ার মামলাটি তালিকার নয় নম্বরে রয়েছে। আজই তার জামিনের বিষয়ে আশা প্রকাশ করেছেন বিএনপির নেতারা।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ বলেন, এ মামলার সমস্ত তথ্য-উপাত্ত পর্যালোচনা করে এবং বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি আগামীকাল (আজ) বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া মুক্তির আদেশ পাবেন।
অন্যদিকে খালেদা জিয়াকে নানা কৌশলে আটকে রাখার চেষ্টা করবে বলে মনে করছেন দলের অপর স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। তিনি বলেন, সরকার নানা কৌশলে দেশনেত্রীকে জেলে আটকিয়ে রাখার চেষ্টা করতে পারে। একটা শোন অ্যারেস্টে আমরা জামিন করালাম, আরেকটা শোন অ্যারেস্ট দেখায়া দিল। আরেকটাতে জামিন করালাম, আরেকটাতে দেখায় দিল। এভাবে তারা নানা কৌশলে বেগম খালেদা জিয়াকে আটকে রাখতে চাইবে।
বন্দিজীবন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটিয়েছে অভিযোগ করে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি জয়নুল আবেদীন বলেন, বেগম খালেদা জিয়া সুস্থ অবস্থায় জেলে গেছেন। এখন তিনি জেলে থেকে থেকে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। ওইদিন (গত ১৯ মার্চ) আপিল বিভাগ যদি তাকে জামিন দিতেন, তাহলে তিনি আজ অসুস্থ হতেন না। তিনি বলেন, আগামীকাল (আজ) বেগম জিয়াকে জামিন দিয়ে প্রমাণ করে দেবেন আদালত স্বাধীন। অন্যত্থায় আমরা বুঝব, সিনহা বাবুকে (সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা) সরকার যেভাবে বিদায় করেছে আপনারা (আপিল বিভাগের বিচারপতিরা) তাতে ভীত-সন্ত্রস্ত।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।