পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রফিকুল ইসলাম সেলিম/আবু হেনা মুক্তি : জঙ্গি দমনের নামে শুরু হওয়া সাঁড়াশি অভিযানে হাজারো বিরোধী নেতাকর্মী প্রতিদিন গ্রেফতার হচ্ছেন। চট্টগ্রাম এবং খুলনায় উল্লেখযোগ্য কোন জঙ্গি ধরা না পড়লেও বিএনপি-জামায়াত নেতাকর্মীরা এই রমজান মাসে ঘরছাড়া হয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।
চট্টগ্রামে ঘরছাড়া বিরোধী দলের নেতাকর্মীরা
বৃহত্তর চট্টগ্রামে ‘জঙ্গিবিরোধী’ সাঁড়াশি অভিযানে কোন জঙ্গি ধরা পড়ছে না। গতকাল (বৃহস্পতিবার) পর্যন্ত চট্টগ্রাম মহানগরী ও জেলার বত্রিশটি থানা এলাকায় ১৮৭৯ জন গ্রেফতার হয়েছে। তাদের মধ্যে জঙ্গি সংগঠনের কেউ নেই। প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, জঙ্গিবিরোধী অভিযানে জঙ্গি কই? জঙ্গি ধরতে না পারলেও অভিযানে পুলিশের প্রধান টার্গেটে পরিণত হয়েছে মাঠের বিরোধী দল বিএনপি ও বিশ দলীয় জোটের নেতাকর্মীরা।
পুলিশের সাঁড়াশি অভিযানে এসব দলের নেতাকর্মীরা এখন বাড়িঘর ছাড়া। মাহে রমজানেও তারা বাড়িঘরে থাকতে পারছেন না। অভিযোগ উঠেছে, পুলিশ তালিকা করে বিএনপি ও জামায়াত নেতাকর্মীদের বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হানা দিচ্ছে। ইফতারি ও সেহেরীর সময়কে অভিযানের জন্য বেছে নিয়েছে পুলিশ। এতে করে নেতাকর্মীদের পরিবারের সদস্যরাও স্বস্তিতে ইফতার সেহেরী সারতে পারছেন না।
টানা ৬ দিনের অভিযানে যারা গ্রেফতার হয়েছেন তাদের মধ্যে অর্ধেকের বেশি বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মী। পুলিশের হিসাবে এই পর্যন্ত গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে প্রায় আড়াইশ’ জামায়াত-শিবির নেতাকর্মী রয়েছেন। তবে গ্রেফতারকৃত বিএনপি কর্মীদের হিসাব পুলিশের কাছে নেই। দলের নেতারা অভিযোগ করেছেন চলমান অভিযানে বিএনপি ও ছাত্রদলের অন্তত ৫০০ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
গত ৫ জুন চট্টগ্রাম নগরীর জিইসি মোড়ের অদূরে ও আর নিজাম রোডে নির্মম হত্যাকা-ের শিকার হন পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদ খানম মিতু। হত্যাকা-ের সাথে জঙ্গিরা জড়িত থাকতে পারে বলে সন্দেহ পুলিশের। ওই হত্যাকা-ের আগেপরে একই কায়দায় একাধিক হত্যাকা-ের প্রেক্ষিতে দেশব্যাপী জঙ্গিবিরোধী সাঁড়াশি অভিযানের সিদ্ধান্ত নেয় পুলিশ। শুক্রবার রাত থেকে দেশের অন্যসব এলাকার মতো বৃহত্তর চট্টগ্রামেও শুরু হয় সাঁড়াশি অভিযান। তবে এই অভিযানের প্রধান টার্গেটে পরিণত হয়েছে বিরোধী দল বিএনপি এবং জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা।
পুলিশি অভিযানে নেতাকর্মীরা বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। এতে করে মহাবিপাকে পড়েছে বিএনপি। পবিত্র রমজান মাসে ইফতার মাহফিল ও সাংগঠনিক কর্মসূচির মধ্যদিয়ে কিছুটা সংগঠিত হওয়ার যে পরিকল্পনা ছিল তা ধূলিসাৎ হয়ে গেছে। সাংগঠনিকভাবেও বেশ ক্ষতির মুখে পড়েছে দলটি। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, রমজান মাসে দল গুছিয়ে ঈদের পর রাজপথে কোন কর্মসূচি আসতে পারে, এমন আশঙ্কা থেকে সরকার এই সাঁড়াশি অভিযান বিএনপি ও তাদের শরীক দলের নেতাকর্মীদের দিকে ঘুরিয়ে দিয়েছে। সরকারের টার্গেট বিরোধী দলকে কোনভাবে ঘুরে দাঁড়াবার ফুরসৎ না দেওয়া। আর তাই জঙ্গি ইস্যুকে বিরোধী দল দমনের হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
সদ্য সমাপ্ত ইউপি নির্বাচনে অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে বিএনপি ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে। তবে ওই নির্বাচনেও আওয়ামী লীগের বেপরোয়া দাপটের কাছে তারা দাঁড়াতেই পারেনি। একরতফা নির্বাচনে মাঠ দখল করে নিয়েছে সরকারি দল আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা। ফলে তৃণমূলেও এখন কোণঠাসা বিএনপি। বিগত ২০১৩ সাল থেকে শুরু করে টানা দুই বছর সরকার বিরোধী আন্দোলন করতে গিয়ে এই অঞ্চলের হাজার হাজার নেতাকর্মী গ্রেফতার হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে শত শত রাজনৈতিক মামলা হয়। এসব মামলার হুলিয়া নিয়ে তারা এখন পালিয়ে বেড়াচ্ছে। চলমান অভিযানে ওইসব রাজনৈতিক মামলার তালিকা নিয়ে পুলিশ বাড়িঘরে হানা দিচ্ছে। মামলা নেই, এমন নেতাকর্মীদেরও পুলিশ ধরে নিয়ে যাচ্ছে। তাদের রাজনৈতিক মামলায় আসামি দেখিয়ে আদালতে চালান দেওয়া হচ্ছে। যারা উচ্চ আদালত থেকে জামিনে ছিলেন তাদেরকে নতুন নতুন মামলায় আসামি দেখিয়ে কারাগারে প্রেরণ করা হচ্ছে। শুরু থেকেই পুলিশের বিরুদ্ধে গ্রেফতার বাণিজ্যের অভিযোগ উঠে।
তবে জঙ্গিবিরোধী সাঁড়াশি অভিযানে কাউকে হয়রানি করার অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করে আসছেন এখানকার পুলিশ কর্মকর্তারা। পুলিশ কমিশনার মো. ইকবাল বাহার বলেন, যাদের বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট আছে কিংবা সুস্পষ্ট অভিযোগ আছে তাদের ধরা হচ্ছে। পুলিশ কাউকে হয়রানি করছে না।
বৃহত্তর খুলনাঞ্চলে বিএনপি-জামায়াতে আতঙ্ক
জঙ্গি দমনের নামে বৃহত্তর খুলনায় যৌথবাহিনী ও পুলিশের অব্যাহত কম্বিং অপারেশনে শহর থেকে গ্রামের তৃণমূল পর্যন্ত ১৮ দলীয় জোটের নেতৃবৃন্দ এখন গৃহহীন। সন্ত্রাসী গ্রেপ্তার ও অস্ত্র উদ্ধার অভিযান শুরু হলেও এখন চলছে বিরোধী দল দমন অভিযান। খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাটের ১৮ দলীয় জোটের নেতাকর্মীরা রাতে কেউ বাড়ী থাকতে পারছেনা পুলিশের তল্লাশী অভিযানের কারণে। অথচ বৃহত্তর খুলনাঞ্চলের আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসীদের দখলে থাকা অস্ত্রের ভা-ার এখনও উদ্ধার হয়নি। ঘের দখল, ডাকাতি, ছিনতাই ও হত্যাকা-ের ক্ষেত্রে এসব অস্ত্র ভাড়াও দেয়া হচ্ছে। এমনকি সুন্দরবনে অপহরণ, মুক্তিপণ আদায়, বাঘ, হরিণ শিকারের ক্ষেত্রেও শীর্ষ চরমপন্থীদের অস্ত্র ব্যবহার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। সন্ত্রাসীদের হাতে অস্ত্র থাকায় বৃহত্তর খুলনাঞ্চলের রাজনীতি ও ব্যবসা-বাণিজ্যে ঝুঁকি দিন দিন প্রকট রূপ নিচ্ছে। আর প্রকৃত জঙ্গি কানেকটেড সন্ত্রাসীরা থেকে যাচ্ছে অধরা। এ ব্যাপারে নাম প্রকাশ না করার শর্তে রেঞ্জ পুলিশের এক কর্মকর্তা সন্ত্রাসীদের অস্ত্রভা-ার অক্ষত থাকার কথা স্বীকার করে বলেন, এসব অস্ত্র উদ্ধারের জন্য পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। তবে নিয়মিত ডিউটি এবং রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অধিকাংশ সময় ব্যয় হওয়ায় অভিযান ব্যাহত হয়। তাছাড়া জঙ্গি দমন এখন মূল লক্ষ্য। রাষ্ট্রের নিরাপত্তায় জঙ্গি নির্মূলে আমরা বদ্ধপরিকর। এক্ষেত্রে কোন দল বেদল দেখার কোন সুযোগ নেই।
খুলনা মহানগর বিএনপি’র সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু এমপি ইনকিলাবকে বলেন, পুলিশ এখন সরকারের ক্যাডার বাহিনীতে পরিণত হয়েছে। আর যৌথ বাহিনীর অভিযানের নামে বৃহত্তর খুলনায় যে তা-ব হচ্ছে তা ইতিহাসের সব রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। পাশাপাশি বাগেরহাটে শেখ পরিবারের ছত্রছায়ায় বিএনপি তথা ১৮ দলীয় জোটের নেতৃবৃন্দ এখন ঘরছাড়া। গোটা বৃহত্তর খুলনাঞ্চলের হাজার হাজার নেতাকর্মীর মাথার ওপর ঝুলছে মিথ্যা মামলা। খুলনার মেয়রও রক্ষা পায়নি মিথ্যা মামলার হাত থেকে। এ অবস্থায় দেশ চলতে পারেনা। তিনি বলেন, সরকারের বিরুদ্ধে যখন গণরোষ দানা বেঁধে উঠছে, ঠিক তখনই তাদের রুখতে পুলিশ, বিজিবি, র্যাবসহ আওয়ামীলীগ, যুবলীগের চিহ্নিত ক্যাডাররা রাজপথে সাঁড়াশি অভিযান চালাচ্ছে। ১৮ দলীয় নেতাকর্মী-সমর্থকদের ওপর দফায় দফায় চলছে হামলা, নির্যাতন। দিচ্ছে মিথ্যা মামলা।
সূত্রমতে, ক্ষমতাসীন দলের ছত্রছায়ায় পুলিশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার নামে সৃষ্ট তা-বে রাজনীতির পরিবেশ নষ্ট হয়ে হঠকারিতা ও সংঘর্ষে রূপ নিচ্ছে। সুশীল সমাজের নিরপেক্ষ মানুষগুলো অতি উৎসাহী ঐ পোষাকী দাঙ্গাবাজদের কারণে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েছে। প্রবীণ আইনজীবী এড. সাইদুর রহমানসহ বিশিষ্টজনেরা বলছেন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে দিয়ে যে তা-ব চালানো হচ্ছে তার পরিণতিতে এই বাহিনীর ভাবমর্যাদা চরমভাবে কলঙ্কিত হচ্ছে। জনগণের ট্যাক্সের টাকায় পোষা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীরা প্রজাতন্ত্রের জনগণের সাথে যে বিমাতাসুলভ আচরণ করছে তাকে কোনভাবেই গণতন্ত্র বলা যায় না।
এদিকে, বৃহত্তর খুলনায় গত পাঁচ দিনে বিশেষ অভিযান চালিয়ে প্রায় সহস্রাধিক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে বিএনপি ও জামায়াতের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে এই গ্রেফতারের সংখ্যা আরো বেশি ছিল। বেশ কয়েকজন নেতাকর্মীকে অর্থ বাণিজ্যের মাধ্যমে ছাড়িয়ে নিয়ে গেছে তাদের পরিবার। হঠাৎ করে কিছুদিন থেমে থাকার পর বৃহত্তর খুলনাঞ্চলে বিশেষ অভিযানের নামে চলছে বিরোধী দল দমন নিপীড়ন। এতে গত পাঁচ দিনে বিরোধী দলের নেতাকর্মীরা ঘর ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছে। বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের পরিবারে এখন পুরুষশূন্য অবস্থা বিরাজ করছে। পাশাপাশি পুলিশ কর্মকর্তারা গ্রেফতার আতংক দেখিয়ে দু’হাতে ঈদ সামনে রেখে টাকা কামিয়ে নিচ্ছেন। অনেক সাধারণ নেতাকর্মীকে টাকা না দিলে গ্রেফতার করে নিয়ে আসা হবে বলে ভয় দেখিয়ে অর্থ বাণিজ্য করা হচ্ছে।
অপরদিকে, জঙ্গি ও সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানের অংশ হিসেবে পুলিশ ১১ জন জামায়াত-শিবিরের কর্মীসহ ৫৪ জনকে আটক করেছে। গত বুধবার সন্ধ্যা থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার ভোর পর্যন্ত সাতক্ষীরা জেলার সাতটি উপজেলায় এ অভিযান চালানো হয়। জেলা পুলিশের তথ্য ও গণসংযোগ কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক কামাল হোসেন জানান, মহাপুলিশ পরিদর্শকের নির্দেশে সাত দিনব্যাপী অভিযানের ষষ্ঠ দিনে ৫৪ জনকে আটক করা হয়েছে। আটকদের বিরুদ্ধে নাশকতা সৃষ্টির অভিযোগ ছাড়াও কয়েকজন নিয়মিত মামলার আসামি রয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।