Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

লাশ দেখে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন নেতাকর্মীরা

হান্নান শাহ’র বাসায় খালেদা জিয়া

প্রকাশের সময় : ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : সিঙ্গাপুর থেকে মহাখালীর বাসায় হান্নান শাহ’র লাশ আসার পর ছুটে যান বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া। দলের এই নীতি-নির্ধারকের লাশের পাশে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকেন তিনি। পরীক্ষিত নেতা হান্নান শাহকে শেষবারের মতো দেখার সময় বেগম খালেদা জিয়ার অঝরে কেঁদেছেন। পরে তিনি হান্নান শাহ’র স্ত্রী-পুত্রসহ পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানান, সান্ত¦না দেন। এ সময় পরিবারের সদস্যরাও কান্নায়
ভেঙ্গে পড়েন। পুরো বাসায় এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়।
এর আগে সিঙ্গাপুর থেকে বিকেল ৬টা ১০ মিনিটে বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইটে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আসম হান্নান শাহ’র লাশ ঢাকায় পৌঁছে। হয়রত শাহ জালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে আসে। কফিনের সাথে এসেছেন আসম হান্নান শাহ’র ছোট ছেলে শাহ রিয়াজুল হান্নান।
দলে কয়েকশ’ নেতাকর্মী তাদের প্রিয় নেতার লাশ গ্রহণ করেন। এ সময় নেতাকর্মীসহ হান্নান শাহ’র সুহৃদয়গণ ডুকরে কাঁদছিলেন।
বিমানবন্দরের আনুষ্ঠানিকতা শেষে অ্যাম্বুলেন্সে করে তার কফিন নিয়ে যাওয়া হচ্ছে মহাখালীর ডিওএইচএস‘র বাসায়। খবর পেয়ে রাতেই নিজের বাসা থেকে হান্নান শাহ বাসায় ছুটে যান খালেদা জিয়া।
এ সময় তার সাথে দলের নেতাদের মধ্যে ছিলেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান ও মরহুম নেতার বড় ছেলে শাহ রেজাউল হান্নান, কেন্দ্রীয় নেতা আফজাল এইচ খান, খায়রুল কবির খোকন, শাহজাদা মিয়া, ফজলুল হক মিলন, নাজিম উদ্দিন আলম, সায়েদুল আলম বাবুল, শামীমুর রহমান শামীম, শরীফুল আলম, আনোয়ার হোসেইন, নুরুল ইসলাম খান নাসিম ও শায়রুল কবির খানসহ নেতা-কর্মীরা ছিলেন।
গত মঙ্গলবার সিঙ্গাপুরের র‌্যাফেলস সেন্টারে চিকিৎসাধীন অবস্থায় হান্নান শাহ ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ৭৪ বছর।
বিএনপি নেতারা জানান, গত ৬ সেপ্টেম্বর মহাখালী ডিওএইচএস-এর বাসা থেকে আদালতে হাজিরা দিতে বের হওয়ার সময় হান্নান শাহ হৃদরোগে আক্রান্ত হলে তাকে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) ভর্তি করা হয়। পরে চিকিৎসকদের পরামর্শে ১১ সেপ্টেম্বর এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে তাকে সিঙ্গাপুরে নেয়া হয়। সেখানে তার হৃদযন্ত্রে অস্ত্রোপচার (এনজিওপ্লাস্টি) করা হয়েছিল।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা হান্নান শাহ ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হিসেবে অবসরে যাওয়ার পর বিএনপিতে সক্রিয় হন। ১৯৯১ সালে খালেদা জিয়ার মন্ত্রিসভার সদস্য ছিলেন তিনি।
সিঙ্গাপুরে প্রথম জানাজা
গত মঙ্গলবার বাদ এশা সেরাঙ্গুনের আঙ্গ্গুুলিয়া জামে মসজিদে মরহুমের প্রথম নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, সিঙ্গাপুর বিএনপি শাখার সভাপতি আব্দুুল কাদের, যুবদল সভাপতি মোস্তফা কামালসহ কয়েকশ’ প্রবাসী বাংলাদেশীরা এই জানাজায় অংশ নেন।
আজ জানাজা ও কাল দাফন
আজ সকাল ১০টায় মহাখালী ডিওএইচএস জামে মসজিদ, সাড়ে ১১টায় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় এবং বাদ জোহর নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে তার জানাজা হবে। হান্নান শাহের লাশ সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল-সিএমএইচের হিমঘরে রেখে কাল সকালে সড়ক পথে গাজীপুরে নিয়ে যাওয়া হবে। সকাল ৯টায় জয়দেবপুর রাজবাড়ী মাঠে, সাড়ে ১০টায় কাপাসিয়া পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে এবং বাদ জুমা মরহুমের নিজ গ্রাম চালা বাজার উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে জানাজা শেষে বাবার করবের পাশেই তাকে দাফন করা হবে।
শোক প্রকাশ অব্যাহত
হান্নান শাহ’র ইন্তেকালে গতকাল বুধবারও বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, ব্যক্তি ও সংগঠন শোক জানিয়েছে। বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন এক শোকবাণীতে বলেন, হান্নান শাহ্ প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনে একজন সাহসী সৈনিকের ভূমিকা পালন করেছেন। অগণতান্ত্রিক সরকারের রক্তচক্ষুর কাছে কখনো মাথানত করেননি। তার সামরিক ও রাজনৈতিক জীনের মূল লক্ষ্যই ছিল গভীর দেশপ্রেম। তার মৃত্যুতে বিএনপি’র রাজনীতির অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে যা সহজে পূরণ হবার নয়। শোক জানিয়েছেন, বাংলাদেশ মুসলিম লীগের (বিএমএল) সভাপতি এএইচএম কামরুজ্জামান খান, ইসলামী ঐক্যজোটের সভাপতি মাওলানা আব্দুর রকিব এডভোকেট, ইসলামী শ্রমিক সমাজের চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা মাওলানা শওকত আমীন প্রমুখ।
এদিকে হান্নান শাহ’র ইন্তেকালে বিএনপির কেন্দ্রীয় কর্মসূচি হিসেবে চারদিনের শোক ঘোষণা করেছে। গতকাল শোকের দ্বিতীয় দিনে নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সারাদেশের অফিসে দলীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা ও কালো পতাকা উত্তোলন করা হয়। কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে খোলা শোক বইতে বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা স্বাক্ষর করেন। ২৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তা উন্মুক্ত থাকবে। হান্নান শাহ’র নিজ এলাকা গাজীপুরেও পালন করা হচ্ছে শোক। বিভিন্ন মসজিদ মরহুমের রুহের মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: লাশ দেখে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন নেতাকর্মীরা
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ