রামগতিতে আ.লীগ নেতাকে বহিষ্কার
লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চরআলগী ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় ইউনিয়ন আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক সাহেদ আলী মনুকে দলীয় পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। গত
হাতিয়া থেকে ফিরে বিশেষ সংবাদদাতা : হাতিয়া মূল ভূখন্ড ছাড়াও ছোটবড় ২০টি চর নিয়ে গঠিত নোয়াখালী-৬ (হাতিয়া) নির্বাচনী আসন। ঐতিহ্যবাহী স্বর্ণদ্বীপ, নিঝুমদ্বীপ ও ভাষানচর ও সম্ভাবনাময় অঞ্চলসহ ৫ হাজার বর্গকিলোমিটার আয়তনের নির্বাচনী আসন এটি। অর্থাৎ ২টি জেলার আয়তনের সমান। ১টি পৌরসভা ও ১১টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত হাতিয়ায় জনসংখ্যা প্রায় ৬ লাখ। ১১টি ইউনিয়নের মধ্যে নদীভাঙন কবলিত নলচিরা ও সুখচর ইউনিয়ন মাত্র দুইটি গ্রাম নিয়ে অস্তিত্ব টিকে আছে। এখানকার ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৪৭ হাজার ৯৩৬। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ ফাঁকা মাঠে তাদের ঘর গুছিয়ে নিচ্ছে। সে সুবাদে হাতিয়া নির্বাচনী আসনেও আওয়ামীলীগ নিজেদের অবস্থান মজবুত করছে। জাতীয় নির্বাচনে দলীয় প্রতীক (মার্কা)র উপর জয় পরাজয় নির্ভর করলেও হাতিয়া আসনের প্রেক্ষাপট অনেকটা ভিন্ন। এখানকার ভোটের রাজনীতিতে দলের চাইতে ব্যক্তি ইমেজ বেশী কাজ করে। দেশের অন্য কোথাও ব্যক্তি বিশেষের রিজার্ভ ভোট না থাকলেও হাতিয়া আসনে রয়েছে প্রচুর রিজার্ভ ভোট। অর্থাৎ দলীয় ও রিজার্ভ ভোটের উপর নির্ভর করে এখানে প্রার্থীর জয়লাভ নিশ্চিত হয়। আবার মাত্র সাপ্তাহের ব্যবধানে দল পরিবর্তনের অসংখ্য নজীর রয়েছে।
কৃষি ও মৎসসম্পদ নির্ভর হাতিয়া আসনের অধিকাংশ মানুষ দেশ বিদেশে কর্মরত। পাশাপাশি নদী ভাঙ্গন কবলিত হাজার হাজার ভূমিহীন পবিবারের সীমাহীন দূর্ভোগ লক্ষনীয়। হাতিয়া আসনে নদী ভাঙ্গনরোধ এবং নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত হলে হাতিয়াবাসীকে আর পিছনে তাকাতে হবেনা। হাতিয়ার পূর্বদিকে অবস্থিত সন্ধীপ উপজেলায় সাব মেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের কাজ চলছে। অপরদিকে হাতিয়া উপজেলার পশ্চিম পার্শ্বে মনপুরা উপজেলায় নদী ভাঙ্গনরোধকল্পে অচিরেই বøক সিসি বাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু হবে। এক্ষেত্রে হাতিয়া এখনো পিছিয়ে রয়েছে। হাতিয়া আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি মাঝেমধ্যে জলোচ্ছাসের ন্যায় ভয়ঙ্কর হয়ে উঠে। বিশেষ করে বিগত ইউপি নির্বাচনে চরকিং ইউনিয়নের সংঘটিত কর্মকান্ড ১৯৭১ সালের তান্ডবকে হার মানিয়েছে। হত্যা, ঘরবাড়ী ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অগ্নিসংযোগের এক পর্যায়ে জেলা সদর থেকে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করতে হয়েছে। হামলা ও অগ্নিসংযোগে ৮/১০ কোটি টাকার সম্পদহানি ঘটে। হামলা ও অগ্নিসংযোগে মূলতঃ স্থানীয় আওয়ামীলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে হাতিয়া আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী বর্তমান এমপি আয়েশা ফেরদৌস, সাবেক তিন বারের এমপি মোহাম্মদ আলী এবং মাহমুদ আলী রাতুল। অপরদিকে বিএনপি’র প্রার্থী হিসেবে সাবেক এমপি প্রকৌশলী ফজলুল আজিমের নাম আলোচিত হচ্ছে।
আয়েশা ফেরদৌস এমপি ঃ বিগত ২০১৪ সালের নির্বাচনে ভোটারদের প্রত্যক্ষ ভোটে নৌকা মার্কা প্রতীকে বিপূল ভোটের ব্যবধানে জয়ী হন আয়েশা ফেরদৌস। নির্বাচিত হবার পর থেকে তিনি এলাকায় কাজ করছেন। স্থানীয় আওয়ামী লীগের কয়েকজন জানান, হাতিয়া প্রতিটি জনপদে উন্নয়নমূলক কাজ চলছে এবং স্থানীয় এমপি মানুষের সুখে দূ:খে পাশে রয়েছে। নদী ভাঙ্গনরোধ কল্পে বøক সিসি ও সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে হাতিয়ায় বিদ্যুৎ সরবরাহ লক্ষে এমপি আয়েশা ফেরদৌস কাজ করছেন বলে জানান তারা। আগামী কয়েক মাসের মধ্যে এদু’টি প্রকল্প একনেকে অনুমেদিত হবে বলে দলীয় নেতা কর্মীদের বিশ্বাস। এছাড়া অতীতে আধা মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ হলেও স্থানীয় এমপি’র প্রচেষ্টায় এখন ৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। এমপি আয়েশা ফেরদৌসের স্বামী ও তিনবারের সাবেক এমপি মোহাম্মদ আলী’র রয়েছে প্রচুর রিজার্ভ ভোট। স্থানীয় কয়েকজন সমর্থক জানান, ১৫ বছর পূর্বে মোহাম্মদ আলী’র রিজার্ভ ভোট ছিল প্রায় ৪০/৪৫ হাজার এখন সেটা বৃদ্বি পেয়ে দ্বিগুন হয়েছে। মূলতঃ হাতিয়ার জনগনের সাথে সম্পৃক্ততা, সার্বক্ষনিক অবস্থান তৎসহ ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে সকলের জন্য তার দরজা খোলা থাকার সুবাদে হাতিয়া আসনে ব্যক্তি মোহাম্মদ আলী ফ্যাক্টর। ফলে আগামী নির্বাচনে স্থানীয় আওয়ামীলীগের ভোট এবং মোহাম্মদ আলী’র রিজার্ভ ভোটে নৌকা মার্কা প্রার্থীর বিপূল ভোটে জয়লাভ করা সময়ের ব্যাপার বলে তারা জানান ।
মাহমুদ আলী রাতুল ঃ বিএনপি’র সাবেক এমপি প্রকৌশলী ফজলুল আজিমের ফুফাতো ভাই মাহমুদ আলী রাতুল। আজিম গ্রæপে কর্মজীবন শুরু করেন। হাতিয়ার রাজনীতিতে অনভিজ্ঞ মাহমুদ আলী রাতুল বিগত চার দশকে ১৯৯৬, ২০০১ ও ২০০৮ সালের নির্বাচনে তার মামাতো ভাই ও বিএনপি প্রার্থী প্রকৌশলী ফজলুল আজিমের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারে অংশ নেয়ার জন্য হাতিয়া গমন করেন। এরপর ২০১৭ সালের জুলাই মাসে তিনি পূণঃরায় হাতিয়া গমন করেন। হাতিয়ায় মাহমুদ আলী রাতুলকে সমর্থন দিচ্ছে আওয়ামীলীগের সাবেক এমপি অধ্যাপক ওয়ালী উল্লা ও তার কিছু আতœীয়স্বজন। উল্লেখ্য, ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামীলীগ সমর্থিত প্রার্থী আয়েশা ফেরদৌসের বিপক্ষে অবস্থান নেন আওয়ামীলীগের সাবেক এমপি অধ্যাপক ওয়ালী উল্লাসহ স্থানীয় আওয়ামীলীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারন সম্পাদক । এরসাথে স্থানীয় বিএনপি ও জামায়াতে ইসলাম যুক্ত হয়ে এক মঞ্চ থেকে প্রকৌশলী ফজলুল আজিমের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারনা চালায়। উক্ত নির্বাচনে প্রশাসন আয়েশা ফেরদৌসকে মাত্র ৪৯০০ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করে । পরবর্তীতে আয়েশা ফেরদৌসের পক্ষে মহামান্য হাইকোর্ট ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের করেন । পরে বিজ্ঞ আদালত উক্ত নির্বাচনী ফলাফল অবৈধ ঘোষনা করেন।
প্রকৌশলী ফজলুল আজিম ঃ হাতিয়া আসনে তিনবার নির্বাচিত প্রকৌশলী ফজলুল আজিম দীর্ঘদিন যাবত এলাকায় অনুপুস্থিত থাকায় তার অধিকাংশ কর্মী সমর্থক আওয়ামীগের যোগদান করে। সংস্কারপন্থী হিসেবে বিএনপি থেকে বহিস্কৃত হলেও হাতিয়া বিএনপিতে তার প্রভাব রয়েছে । এখানে বিএনপি’র যোগ্য নেতৃত্ব না থাকায় প্রকৌশলী ফজলুল আজিমকে বিএনপির কান্ডারী মনে করে অনেকে । জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচনে এখানে বিএনপি’র অবস্থান প্রায় শুন্যের কোঠায় । ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী মাত্র ৬৮০ ভোট পান। তেমনিভাবে উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী ৭১৫ ভোট এবং পৌরসভা নির্বাচনে বিএনপি’র মেয়র প্রার্থী মাত্র ৩৭৫ ভোট পান । ইতিমধ্যে বিএনপির অনেক নেতাকর্মী স্থানীয় এমপি আয়েশা ফেরদৌসের উপস্থিতিতে আওয়ামীলীগে যোগদান করেন । এক কথায় ভগ্নদশা থেকে বেরুতে পারছেনা বিএনপি । বর্তমানে হাতিয়া বিএনপি নেতৃত্বের সাথে স্থানীয় অধিকাংশ নেতা কর্মীর সম্পৃক্ততা নেই। স্থানীয় বিএনপি’র একটি অংশ প্রকৌশলী ফজলুল আজিমের পক্ষে রয়েছে । এসব বিষয় হিসেব নিকেশ করে আগামী নির্বাচনে প্রকৌশলী ফজলুল আজিমকে বিএনপি থেকে মনোনয়ন দেয়া হবে বলে এলাকায় জোর গুঞ্জন চলছে ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।