Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ছুটি শেষে শহরজীবনে ফিরেছে মানুষ

প্রকাশের সময় : ৭ মে, ২০১৮, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১২:০৯ এএম, ৭ মে, ২০১৮

রেজাউল করিম রাজু : ছুটির আমেজ কাটিয়ে শহুরে দুষনে দুষিত ফুসফুসটাকে গ্রামের নির্মল বাতাসে বুকভরে শ্বাস নিয়ে রিচার্জ করে ফিরেছেন নিজ নিজ গন্তব্যে। যন্ত্রদানবের পেটে ঠাসাঠাসি করে যাত্রা। আবার হারিয়ে যাওয়া ছক বাঁধা যান্ত্রিক জীবনে। দম বন্ধ অবস্থাকে মানিয়ে জীবণ জীবিকার টানে অবিরাম ছুটে চলা। কটাদিনের লম্বা ছুটিতে নগর, শহর, যেন ছুটে এসেছিল গ্রামে। একেবারে শেকড়ের কাছাকাছি। গাঁও গেরামে মাতোয়ারা হয়েছিল আনন্দে। স্বজনদের সান্নিধ্য পেয়ে একাবারে বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরা। কিযে অনাবিল অনুভূতি। আবেগে আপ্লুত হওয়া। সামনা সামনি পেয়ে সবার মুখে কথার ফুল ঝুড়ি ছুটে ছিল। শহুরে ইট পাথরের পাষানে বন্দি হয়ে বেড়ে ওঠা ছকে বাধা জীবণ। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কোচিং সেন্টার আর কম্পিউটারের পর্দায় চোখ রাখতে রাখতে হাঁপিয়ে ওঠার বালাই ছিলনা কটা দিনের জন্য। মুক্ত বিহঙ্গের মত ছুটে বেড়ানো কাঁচা পাকা বোরোর বিস্তৃর্ন ক্ষেতের আল ধরে। পটল লাউ শশা করোল্লার মাচার নিচ দিয়ে ছুটতে গিয়ে শিহরীত হওয়া। কর্দমাক্ত মেঠো পথে পা পিছলে পড়ার দৃশ্য ক্যামেরা বন্দি করেছিল। এসব স্মৃতিকে ধরে রাখার জন্য মোবাইলে ছবির উপর ছবি তোলা ভিডিও করা। এখনতো সেলফি আর ফেসবুকের সময়। কত ভঙ্গিতে যে সেলফি তুলছে তার ইয়ত্তা নেই। সাথে সাথে পোষ্ট দেওয়া কমেন্ট পাওয়া কি যে আনন্দের ব্যাপার। এ’কটা দিনের মধ্যে হয়েছে বৃষ্টিও। টিনের চালায় বৃষ্টির রিমঝিম শব্দে শিহরিত যেমন হয়েছে। তেমনি ঝড়ের শোঁ শোঁ আওয়াজ আর বর্জ্রপাতের কড়কড়েশব্দে ভয়ও কম লাগেনি।
ঝড়ের সময় আমগাছ তলায় ভীড় জমিয়েছিল তরুণ তরুনীরা। মজা করে আম কুড়িয়েছে। কে কটা আম কুড়াতে পারে তার প্রতিযোগিতাও কম ছিল না। কেউ কেউ গুনগুনিয়েছে” ঝড় এলো ঝড়। আম পড় আম পড়। ডাঁশা কাঁচা আম টকঝাল মিষ্টি। কিংবা মনে পড়ে যায় সেই ঝড়ের দিনে মামার বাড়িতে আম কুড়ানো সুখের কথা। এবার সেই সুখানুভূতি ভালোভাবেই অনুভব করেছে। শহুরে কাক নয়, গ্রামের কোকিল, ঘুঘু, দোয়েলের ডাক নষ্টালোজিয়ায় ফেলেছে। শুরু হয়েছে বোরো ধান কাটা। নতুন ধানের সোঁদা গন্ধে অন্য রকম অনুভূতি। ব্যস্ততা চারিদিকে। ঝোড়ো হাওয়া আর বর্ষনে খানিকটা ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যেই এসেছিল পবিত্র রজনী শবে বরাত। এদিন গ্রামে গ্রামে ছিল অন্য রকম আবহ। দীর্ঘদিনের প্রথা অনুযায়ী বাড়িতে বাড়িতে হালুয়া রুটি তৈরী। দুস্থ স্বজন আর প্রতিবেশীদের মাঝে বিতরণ। ছিলো এবাদত বন্দেগী। রসালো শাঁসালো আম লিচু আসতে আরো মাস খানিক বাকী। গাছে গাছে ঝুলছে লক্ষ কোটি আম। ধীরে ধীরে বাড়ছে। এখন রসনা মেটাচ্ছে কাঁচা আম।
প্রতিদিন স্বাভাবিক ভাবে ঝড়ে পড়ছে আমের গুটি। আর খাওয়া চলছে লবণ মরিচের ঝাল মিশিয়ে। অসাধারণ স্বাদ। এসব আম ডাল কিংবা ছোট মাচের চচ্চড়িতে ভালোই সঙ্গ দিচ্ছে। কাঁচা আমের চাটনিও রান্না হচ্ছে। সকাল দুপুর বিকেল রাতের খাবারেও এসেছে পরিবর্তন। অভ্যাস্ত হওয়া স্যান্ডউইয়িচ, পিৎজা নূডুলস, সিংগাড়া, সামুচা কিংবা ফাস্ট ফুড নয়। এক্কেবাওে গ্রামিন খাবারের মেন্যু। খিচুরি, আলুভর্তা, পিঠা, পাটিসাপটা, পান্তা পায়েশ নারিকেল মুড়ি মাখাসহ আরো কত কি। ফরমালিন দেওয়া শাকসবজি বা মাছ নয় এক্কেবারে সব টাটকা। এসবের স্বাদও ভিন্ন। দিনভর দস্যিপনা করে সময় পার করলেও রাতটা অন্য রকম। বাইরে ঝিঝি পোকার ডাক। টিনের ঘরে ফোমের বিছানা নয় মেঝেতেই পাটির উপর কাথা বিছিয়ে শয্যা পেতেছে। এসি নয় ফ্যান কিংবা হাত পাখাই ভরসা। ঘরে থাকা স্বজনদের সাথে গল্পে গল্পে অর্ধেক রাত পার। শহুরে জীবণের কথা গ্রামের কথা সব মিলে একাকার হয়েছে। এমনি নানা ভাবেই ছুটির দিনগুলো কেটেছে। এখন ফেরার সময় সেথা বিষাদের সুর। ছলো ছলো চোখে ফিরে যাওয়া। মনের অজান্তে বেজে উঠছে-আবার হবেগো দেখা। এদেখাই শেষ দেখা নয়গো। স্বজনরা বলছেন সাবধানে যাস। ভালো থাকিস।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মানুষ

২৭ অক্টোবর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ