Inqilab Logo

শুক্রবার, ০৭ জুন ২০২৪, ২৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ২৯ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

নানা কারণে বাড়ছে না সয়াবিন-সূর্যমুখী আবাদ

ভোজ্যতেলের তিন চতুর্থাংশই আমদানিনির্ভর

| প্রকাশের সময় : ৬ মে, ২০১৮, ১২:০০ এএম

নাছিম উল আলম : বিপনন ব্যবস্থা সহ উন্নত প্রযুক্তি জ্ঞানের অভাবের পাশাপাশি উচ্চ ফলনশীল বীজ কৃষক পর্যায়ে না পৌছায় দেশে বিপুল সম্ভবনাময় সয়াবিন ও সূর্যমুখী তেল বীজের আবাদ ও উৎপাদেনের কাঙ্খিত স¤প্রসারন ঘটছেনা। কালবৈশাখীর মত বিরূপ প্রাকৃাতিক প্রভাব, পরিবেশগত আরো কিছু সমস্যার কারনেও সূর্যমূখী আবাদে কৃষকের আগ্রহ ধরে রাখা যাচ্ছে না। অথচ এ দুটি তেলবীজেরই যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে দেশে। সয়াবিন ও সূর্যমূখী তেল জনস্বাস্থ্যের জন্যও যথেষ্ট উপকারী। কৃষি বিজ্ঞানীদের মতে সয়াবিনে ৪০-৪৫% আমিষ এবং ১৯-২২% পর্যন্ত তেল থাকে। যেকোন ডাল বা শুটি জাতীয় শস্যের তুলনায় সয়াবিনে আমিষের পরিমাণ বেশী, অথচ দাম কম। অপরদিকে সূর্যমুখী একটি অত্যন্ত উৎকৃষ্ট তেল ফসল। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এর বাণিজ্যিক আবাদ হচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে। সূর্যমুখী বীজে ৪০-৪৫% পর্যন্ত লিনোলিক এসিড রয়েছে, এ তেলে কোন ক্ষতিকারক ইরোসিক এসিড নেই। হেক্টর প্রতি ফলন ১.৭ থেকে ১.৯ টন পর্যন্ত হয়ে থাকে।
দেশে বর্তমানে প্রায় ৫ লাখ হেক্টর জমিতে আবাদের মাধ্যমে প্রায় ৭ লাখ টনের মত বিভিন্ন ধরনের তেল বীজ উৎপাদন হলেও তা চাহিদার এক-তৃতীয়াংশের বেশী নয়। ফলে প্রতি বছর বিপুল পরিমান ভোজ্যতেল ও তেলবীজ বিদেশ থেকে আমদানী করতে গিয়ে প্রচুর বৈদেশিক মূদ্রা দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে। এসব বিবেচনায় সয়াবিন-এর আবাদ স¤প্রসারনের সুযোগ রয়েছে। এখনো দেশে যে পরিমান ভোজ্য তেলের চাহিদা রয়েছে, তার প্রায় ৮০ ভাগেরও বেশী সয়াবিন তেলের। যার প্রায় পুরোটাই আমদানী নির্ভর। কারণ দেশে আবাদ ৭৫ থেকে ৮০ হাজার হেক্টর জমিতে যে দেড় লাখ টনের মত সয়াবিন তেল বীজ উৎপাদন হচ্ছে, তার পুরোটাই চলে যাচ্ছে পোল্ট্রি ফিডের কারখানায়। কৃষি মন্ত্রণালয় চলতি মৌসুমে দেশে প্রায় ৮১ হাজার হেক্টর জমিতে সয়াবিন আবাদ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করলেও তা অর্জিত হয়নি। ডিএই’র দায়িত্বশীল সূত্রমতে চলতি মৌসুমে দেশে ৭৬ হাজার হেক্টরের মত জমিতে সয়াবিন তেল বীজের আবাদ হয়েছে। ফলে দেড় লাখ টন সয়াবিন তেল বীজ উৎপাদন লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না।
‘বাংলাদেশ কৃষি গবেষনা ইনস্টিটিউট-বারি’ ইতোমধ্যে উন্নত প্রযুক্তির ও উচ্চ ফলনশীল প্রায় ৪০ জাতের বিভিন্ন তেল বীজ উদ্ভাবন করেছে। যার মধ্যে সয়াবিনের ৬টি এবং সূর্যমুখীর দুটি জাত রয়েছে। বারি ইতোমধ্যে ‘সোহাগ-পিবি-১’, ‘বাংলাদেশ সয়াবিন-৪ বা জি-২’, ‘বারি সয়াবিন-৫’ ও ‘বারি সয়াবিন-৬’ নামের একাধিক উন্নতজাত উদ্ভাবন করেছে। এসব উন্নতজাতের সয়াবিনের ফলন হেক্টর প্রতি ১.৮০ টন থেকে সোয়া দুই টন পর্যন্ত হয়ে থাকে। দোআঁশ, বেলে দোআঁশ ও এটেল দোআঁশ মাটি সয়াবিন চাষের উপযোগী।
কিন্তু কোন ভোজ্য তেল কল প্রতিষ্ঠান দেশে উৎপাদিত সয়াবিন তেল বীজ কৃষক বা পাইকারী পর্যায়ে না কেনায় দেশে উৎপাদিত প্রায় দেড় লাখ টন সয়াবিন তেল বীজের পুরোটাই চলে যাচ্ছে পোল্ট্রি ফিডের কারখানায়। বিভিন্ন পোল্ট্রি ফিড কারখানার নিয়োজিত ফরিয়ারারা উপক‚লীয় এলাকার মাঠ পর্যায়ে সয়াবীন তেল বীজ কিনে নিচ্ছে অনেকটা পানির দরে।
অপরদিকে ১৯৭৫ সাল থেকে দেশের উপক‚লীয় এলাকার বরিশাল, পটুয়াখালী ছাড়াও রাজশাহী, যশোর, কুষ্টিয়া, পাবনা, নাটোর, দিনাজপুর, গাজীপুর ও টাঙ্গাইলের বিভিন্ন এলাকায় সূর্যমূখীর পরীক্ষামূলক আবাদ হলেও দীর্ঘ চার দশকেও তার কোন স¤প্রসারন ঘটেনি। বাস্তবে এখনো দেশে সূর্যমুখী তেল-এর তেমন কোন বাণিজ্যিক উৎপাদনই হচ্ছে না। ফলে অত্যন্ত সম্ভবনাময় এ তেল বীজের আবাদ ও উৎপাদনও বাড়ছে না। সূর্যমুখীর বীজ-এর বিপনন সুবিধা না থাকায় কৃষকের আগ্রহের অভাবে মাঠ পর্যায়ে এ তেলবীজ আবাদ ও উৎপাদনে ডিএই’র তেমন কোন স¤প্রসারন কার্যক্রমও নেই। বছর কয়েক আগে কয়েকটি এনজিও সূর্যমূখী আবাদে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে কৃষকদের মাঝে বীজ সরবরাহ করলেও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ফলন সংকট ও বিপনন ব্যবস্থার অভাবে পরবর্তিতে তার কোন স¤প্রসারন ঘটেনি। গত বছর অতিবর্ষনে দক্ষিণাঞ্চলে আবাদ প্রায় ষোল আনা সূর্যমূখীর উৎপাদনই বিপর্যয়ের কবলে পড়ে। এছাড়া প্রতি বছরই সূর্যমুখী ফুলের ক্ষেতে টিয়া পাখির আক্রমনে এ তেলবীজ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ফলে কৃষক টিয়ার আক্রমন বাঁচিয়ে বীজ ঘরে তুলতে পারছে না। এ বিষয়টিও সূর্যমুখী আবাদে কৃষকের আগ্রহ হ্রাস পাচ্ছে।
চলতি মৌসুমে সারাদেশে মাত্র ৫ হাজার হেক্টর জমিতে সূর্যমূখীর আবাদ লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা হলেও বাস্তবে মাত্র ২ হাজার ৪৯ হেক্টরে এ তেলবীজের আবাদ হয়েছে। ফলে মাত্র ৯ হাজার টন সূর্যমুখী তেল বীজ উৎপদন লক্ষেও প্ৗেছান সম্ভব হচ্ছে না। ‘বারি’ এ পর্যন্ত ‘কেরানী-ডিএস-১’ ও ‘বারি সূর্যমুখী-২’ নামের দুটি উন্নত জাতের সূর্যমুখী তেল বীজ-এর জাত উদ্ভাবন করলেও কৃষক পর্যায়ে তার তেমন কোন স¤প্রসারন ঘটেনি।



 

Show all comments
  • SHAUKAUT ৬ মে, ২০১৮, ৭:২৭ এএম says : 0
    jomir divider gulu tule niee shorkar nuton meshinariger maddhome venezuelar moto bipul porimaner shosho vhandar desh ghore tulte paren er jonno ei shorkarkei sthitishil jote jobe tobei desh egiee jabe dhonnobad
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আবাদ

২৫ জানুয়ারি, ২০১৯

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ