Inqilab Logo

শুক্রবার, ০৫ জুলাই ২০২৪, ২১ আষাঢ় ১৪৩১, ২৮ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

আউশের আবাদ ও উৎপাদন কমছে

প্রকাশের সময় : ২১ জুলাই, ২০১৬, ১২:০০ এএম

দর পতনসহ আফ্রিকান নেরিকো জাতের ধান আবাদে প্রণোদনার নেতিবাচক প্রভা
নাছিম উল আলম : ধানের দর পতনসহ ভিনদেশী বীজ কৃষকদের ওপর চাপিয়ে দেয়ায় দেশে চলতি খরিপ-২ মৌসুমে আউশ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। ফলে আউশ ধান থেকে যে প্রায় ২৫ লাখ টন চাল পাবার লক্ষ্য স্থির করেছিল কৃষি মন্ত্রণালয়ে তাও অর্জিত হচ্ছে না। গত কয়েকটি বছরই ধান আবাদে উৎপাদন ব্যয় না ওঠায় দেশের প্রধান এ খাদ্য ফসল আবাদের নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। ধানের উৎপাদন ব্যয় না ওঠার কারণেই কৃষকরা ক্রমশ পাট ও গম আবাদে ঝুঁকছে বলেও স্বীকার করেছেন নাম প্রকাশ অনিচ্ছুক কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফরের দায়িত্বশীল মহল। এমনকি চলতি বছর দেশে রেকর্ড পরিমাণ জমিতে আবাদের ফলে সর্বকালের সর্বোচ্চ পরিমাণ পাট উৎপাদনের সম্ভাবনার কথাও জানিয়েছে ঐ মহলটি।
গত কয়েক বছর ধরে দেশীয় আউশ ও বোরা’র পরিবর্তে আফ্রিকান ‘নেরিকো জাতের আউশ ধান আবাদে কৃষকদের বীজ ও সারসহ নানা ধরনের প্রণোদনা দেয়া হচ্ছে। অপরদিকে বোরো আবাদে ব্যবহৃত ডিজেলে ভর্তুকি প্রদানের বিষয়টি সরকার আজো বিবেচনায় নেয়নি। অথচ বোরা ইতোমধ্যে দেশের প্রধান খাদ্য ফসলের স্থান দখল করেছে। কিন্তু এসব প্রণোদনাতে আউশের আবাদ বাড়ছে না। এর মূল কারণ হিসেবে মাঠ পর্যায়ের কৃষিবীদগণ ধানের দরপতনকেই অন্যতম কারণ হিসেবে মনে করছেন। পাশাপাশি দেশীয় উচ্চ ফলনশীল আউশ জাতের পরিবর্তে অধিক উৎপাদন ব্যায়ের আফ্রিকান নেরিকো জাতের বীজ চাপিয়ে দেয়ার ফলেও নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে বলে মনে করছেন অনেকে।
দায়িত্বশীল কৃষিবীদদের মতে, কোন অবস্থাতেই আউশ আবাদে বিদেশী জাতের বীজে উৎসাহ দেয়ার বিপরীতে বোরো আবাদে প্রত্যক্ষ ও পরক্ষোভাবে নিরুৎসাহিত করা ঠিক হবে না। আমাদের ধান গবেষণা প্রতিষ্ঠান, ব্রি ইতোমধ্যে রোপা ও বোনা আউশ-এর ২৩টি উচ্চ ফলনশীল জাত উদ্ভাবন করলেও কৃষি মন্ত্রণালয় কি কারণে আফ্রিকান প্রজাতির নেরিকা নামের বীজ কৃষকদের মাঝে সরবরাহ করছে, তার সঠিক কারণও কেউ বলছেন না। তবে বোরো’র পরিবর্তে আউশ চাষ উপযোগী অঞ্চলেও ঐ জাতের বীজ আবাদ সম্প্রসারণসহ স্থলাভিষিক্ত করতে ন্যূনতম ১০-১৫বছর সময় লাগতে পারে বলে মনে করছেন দায়িত্বশীল মহল।
এমনকি গত কয়েক বছর ধরে কৃষি মন্ত্রণালয় বোরো’র পরিবর্তে ভিন দেশী আউশ আবাদে কৃষকদের উৎসাহিত করার যে প্রচেষ্টা শুরু করেছে তার সুফল এখনো দেশ পায়নি। বরং গত কয়েক বছর ধরে দেশে আউশের আবাদ বৃদ্ধির পরিবর্তে ক্রমশ কমছে। এক হিসেব জানা গেছে, ২০১১-১২ সালে দেশে ১১ লাখ ৩৮ হাজার হেক্টর জমিতে আউশের আবাদ হলেও ২০১২-১৩ সালে তা ১০.৫৩ লাখ হেক্টরে হ্রাস পায়। ২০১৪-১৫ মৌসুমে তা ১০.৫১ লাখ হেক্টরে হ্রাস পায়। চলতি বছর দেশে ১০ লাখ ৮০ হাজার হেক্টর জমিতে আউশ আবাদের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হলেও বাস্তবে তা সাড়ে ৯ লাখ হেক্টরের বেশী হয়নি বলে দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে। যা সম্প্রতিককালের সর্বনিম্ন আউশের আবাদ বলে জানা গেছে।
এমনকি চলতি খরিপ-২ মৌসুমে বরিশাল অঞ্চলে ২ লাখ ২২ হাজার ৭২ হেক্টর জমিতে আউশ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও বাস্তবে আবাদ হয়েছে প্রায় ৫০ হাজার হেক্টর কম, ১ লাখ ৬৯ হাজার ৪৭০ হেক্টরে। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ৪৫% কম বলে জানা গেছে। আউশের পাশাপাশি দক্ষিণাঞ্চলে বোনা আমানের আবাদও হ্রাস পেয়েছে। চলতি মৌসুমে এ অঞ্চলে ৪ হাজার ৩১১ হেক্টরে বোনা আমন আবাদের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হলেও বাস্তবে আবাদ হয়েছে সাড়ে ৩ হাজার হেক্টরে।
এমনকি দক্ষিণাঞ্চলের ১১টি জেলায় ২০১১-১২ মৌসুমে ২.৯৪ লাখ হেক্টর জমিতে আউশ আবাদের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ২.৭৩ লাখ হেক্টরে আবাদ হয়। ২০১২-১৩ মৌসুমেও ৩ লাখ ৭ হাজার হেক্টর লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আবাদ ২.৫৪ লাখ হেক্টরে হৃাস পায়। যা ছিল এর আগের মৌসুমের চেয়ে প্রায় ১৯ হাজার হেক্টর কম।
অনাদীকাল থেকে দেশে আমনের আউশ ধানের পাশাপাশি আউশ ধানের আবাদ হয়ে আসছে। অমাদের ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট-ব্রি ইতোমধ্যে উচ্চ ফলনশীল ২৩টি অফশ ধানের বীজ উদ্ভাবন করেছে। যার বেশিরভাগই কৃষকদের কাছে গ্রহণযোগ্যতাও লাভ করেছে। আমনের আগে খরিপ-২ মৌসুমে দেশের ১০-১২ লাখ হেক্টর জমিতে এ ধানের আবাদ হত। তবে পরিবশগত কারণেই দেশের অর্ধেকেরও বেশী এলাকা আউশ আবাদের উপযোগী নয়।
কিন্তু এরই মধ্যে নিজ দেশীয় উচ্চ ফলনশীল বীজের পরিবর্তে রোগ বালাইয়ের প্রবণতা সম্পন্ন আফ্রিকান ‘নেরিকা’ নামের আউশ উৎপাদনে কৃষকদের প্রণোদনা প্রদান শুরু করে কৃষি মন্ত্রণালয়। এমনকি এ ভিনদেশী বীজ প্রচলনে কৃষি বিজ্ঞানীদের মতামতকেও উপেক্ষা করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। গত কয়েক বছর ধরে আফ্রিকান ‘নেরিকো’ জাতের আউশ ধান আবাদে কৃষকদের বীজ, সার ও বালাই নাশক বিনামূল্যে প্রদানের মত প্রণোদনা দিয়েও আউশের আবাদ বৃদ্ধি করা যায়নি। প্রণোদনা সত্ত্বেও আফ্রিকান নেরিকো জাতের আউশ আবাদে ঝুঁকছে না কৃষকগণ। এমনকি চলতি মৌসুমে দেশে আউশের আবাদ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় সোয়া লাখ হেক্টর পেছনে রয়েছে। ফলে ২৫ লাখ টন আউশ চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছতে পারছে না দেশ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আউশের আবাদ ও উৎপাদন কমছে
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ