Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আগাম বন্যার আশঙ্কা

| প্রকাশের সময় : ৫ মে, ২০১৮, ১২:০০ এএম

উত্তর-পূর্বাঞ্চলের নদ-নদীতে বাড়ছে পানি : এ মাসেই ঘূর্ণিঝড়, প্রবল কালবৈশাখী, বজ্রপাত, শিলাবৃষ্টি ও তাপদাহের শঙ্কা
শফিউল আলম : গত বছরের মতো এবারো চলতি মে মাসের মাঝামাঝি আগাম বন্যার আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞগণ। উজান ভাগে উত্তর-পূর্ব ভারতে আগাম টানা ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এ কারণে বর্তমানে ভাটিতে বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রধান নদ-নদীর পানির সমতল ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং এর সংলগ্ন ভারতের আসাম, মেঘালয় (বরাক) অঞ্চলে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে চলতি মে মাসের প্রথমার্ধে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে, অর্থাৎ বৃহত্তর সিলেট, ময়মনসিংহের বিভিন্ন স্থানে স্বল্প থেকে মধ্যমেয়াদি আকস্মিক বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। দেশের অন্যান্য স্থানে নদ-নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ বিরাজমান থাকতে পারে। সাধারণত ভরা বর্ষা মৌসুমে মধ্য জুনের পর থেকে জুলাই-আগস্ট মাসের বন্যাকে এ দেশে স্বাভাবিক বন্যা হিসেবে ধরা হয়। তবে প্রাক-বর্ষায় এপ্রিল-মে ও মধ্য-জুনের আগে বন্যা সংঘটিত হলে তা আগাম এবং আকস্মিক বন্যা হিসেবে বিবেচিত হয়।
চলতি মে মাসের (বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ) দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাস প্রদানের লক্ষ্যে বিশেষজ্ঞ কমিটির সভায় উপরোক্ত সতর্কতার কথা জানানো হয়েছে। গত ৩ মে (বৃহস্পতিবার) আবহাওয়া অধিদফতরের ঝড় সতর্কীকরণ কেন্দ্র ঢাকায় অনুষ্ঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটির সভায় সভাপতিত্ব করেন আবহাওয়া অধিদফতরের পরিচালক ও বিশেষজ্ঞ কমিটির চেয়ারম্যান সামছুদ্দিন আহমেদ। বিভিন্ন পর্যায়ের বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে গঠিত কমিটির ওই সভায় আবহাওয়া-জলবায়ুর সর্বশেষ তথ্য-উপাত্ত, ঊর্ধ্বাকাশের আবহাওয়া বিন্যাস, বায়ুমÐলের বিভিন্ন স্তরের বিশ্লেষিত আবহাওয়ার মানচিত্র, জলবায়ু মডেল, বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার তথ্য-উপাত্ত, এল-নিনো/লা-নিনার সর্বশেষ অবস্থা, স্পারসো’র উপাত্তসমূহ ইত্যাদি পর্যালোচনা ও বিশ্লেষণ করা হয়।
অন্যদিকে গতকাল (শুক্রবার) পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, গত দু’দিনে বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও এর সংলগ্ন ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশ আসাম, মেঘালয় ও ত্রিপুরায় বিভিন্ন স্থানে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাত হয়েছে। অতিবৃষ্টির কারণে বিভিন্ন পর্যবেক্ষণ স্টেশনে নদ-নদীর পানির সমতল বৃদ্ধি পেয়েছে। এর মধ্যে সুতং নদী সুতং রেলওয়ে ব্রিজ পয়েন্টে বিপদসীমার ২৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। পানিবৃদ্ধির ফলে খোয়াই, কংস ও কালনী নদী বিভিন্ন পয়েন্টে এখনো বিপদসীমার নিচে থাকলেও ‘সতর্কসীমায়’ প্রবাহিত হচ্ছে। বাংলাদেশ এবং ভারতের আবহাওয়া অধিদফতরের তথ্য ও পূর্বাভাস অনুযায়ী, বর্তমানে বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশসমূহে আবহাওয়া একটি অস্থিতিশীল পরিস্থিতি বিরাজ করছে। উভয় দেশের আবহাওয়ার গাণিতিক মডেলে দেখা যাচ্ছে, আগামী কয়েক দিনে বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে মাঝারি বর্ষণ এবং ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশ আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরায় মাঝারি থেকে ভারী বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে।
এদিকে দেশে চলতি মে মাসের দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাসে আরো জানানো হয়েছে, এ মাসে বঙ্গোপসাগরে দু’টি নিম্নচাপ সৃষ্টি হতে পারে। এর মধ্যে ঘনীভ‚ত হয়ে শক্তি সঞ্চয় করে একটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। এ মাসে দেশের উত্তর থেকে মধ্যাঞ্চল পর্যন্ত দুই থেকে তিন দিন মাঝারি থেকে প্রবল আকারে বজ্রপাত-বজ্রঝড়, কালবৈশাখী ঝড়, দেশের অন্যত্র তিন থেকে চার দিন হালকা থেকে মাঝারি আকারে বজ্রপাত-বজ্রঝড় ও কালবৈশাখী ঝড় সংঘটিত হতে পারে। সেই সাথে দেশের কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলাবৃষ্টি হতে পারে। মে মাসে দেশের উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে একটি তীব্র ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। এ সময় তাপমাত্রার পারদ ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস অতিক্রম করতে পারে। তা ছাড়া দেশের অন্যত্র এক থেকে দু’টি মৃদু (৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সে.) মাঝারি ধরনের (৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রি সে.) তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে।
মে মাসে (বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ) দেশে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। গত এপ্রিল (চৈত্র-বৈশাখ) মাসে সারাদেশে সার্বিকভাবে স্বাভাবিকের চেয়ে ৩৬.৭ শতাংশ বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। তবে শুধুমাত্র বরিশাল বিভাগে স্বাভাবিক অপেক্ষা ৬.১ শতাংশ কম বৃষ্টিপাত হয়েছে। বিভাগওয়ারি হিসাবে এপ্রিলে রাজশাহী বিভাগে স্বাভাবিকের চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি (১০৯.৪ ভাগ, ১৭১.৪ মিলিমিটার) বৃষ্টি ঝরেছে। ঢাকা বিভাগের স্বাভাবিকের চেয়ে ৫৭.৫ ভাগ বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। তবে এর আগে গত মার্চ মাসে (ফাল্গুন-চৈত্র) সারাদেশে স্বাভাবিকের চেয়ে ৫৮.২ শতাংশ কম বৃষ্টিপাত হয়।
গত এপ্রিল মাসে দেশের আবহাওয়া পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে বিশেষজ্ঞ কমিটির সভায় জানানো হয়, পশ্চিমা লঘুচাপের সাথে পূবালী বায়ুপ্রবাহের সংযোগ এবং বায়ুমÐলের নিম্নস্তরে জলীয় বাষ্পের যোগান বৃদ্ধি পাওয়ায় বিগত ৫ থেকে ১২, ১৭ থেকে ২২, ২৪ থেকে ২৬ এবং ২৮ থেকে ৩০ এপ্রিল দমকা থেকে ঝড়ো হাওয়া এবং বজ্রপাতের সঙ্গে সারাদেশে বৃষ্টি-বজ্রবৃষ্টি হয়। এ সময় দেশের বিভিন্ন স্থানে ভারী বর্ষণ ও শিলাবৃষ্টি হয়। গত ২৭ এপ্রিল দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ফেনীতে ৩৭.৭ ডিগ্রি সে.। বজ্রঝড় ও কালবৈশাখী, শিলাবৃষ্টি, কৃষি আবহাওয়া এবং দেশের নদ-নদীর অবস্থা এপ্রিল মাসের পূর্বাভাসের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ ছিল বলে জানায় আবহাওয়া বিভাগ।
চলতি মে মাসের কৃষি আবহাওয়া পূর্বাভাসে জানা গেছে, এ মাসে দেশের দৈনিক গড় বাষ্পীভবন চার থেকে পাঁচ মিলিমিটার এবং গড় উজ্জ্বল সূর্য কিরণকাল সাড়ে ছয় থেকে সাত ঘণ্টা পর্যন্ত স্থায়ী থাকতে পারে।
কালবৈশাখী ও নৌ-হুঁশিয়ারি
দেশের অভ্যন্তরীণ নদী বন্দরসমূহের জন্য আবহাওয়ার পূর্বাভাসে জানা গেছে, পাবনা, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, ঢাকা, ফরিদপুর, মাদারীপুর, যশোর, কুষ্টিয়া, কুমিল্লা এবং সিলেট অঞ্চলসমূহের উপর দিয়ে পশ্চিম, উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৬০ থেকে ৮০ কিলোমিটার বেগে বৃষ্টি, বজ্রবৃষ্টিসহ অস্থায়ীভাবে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। এসব এলাকার নদী বন্দরসমূহকে ২ নং নৌ-হুঁশিয়ারি সঙ্কেত দেখাতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া দেশের অন্যত্র পশ্চিম, উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৪৫ থেকে ৬০ কি.মি. বেগে বৃষ্টি, বজ্রবৃষ্টিসহ অস্থায়ীভাবে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। এসব এলাকার নদী বন্দরসমূহকে ১ নং সতর্ক সঙ্কেত দেখাতে বলা হয়েছে।
আবহাওয়া বিভাগ জানায়, লঘুচাপের একটি বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ এবং এর সংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। পূর্বাভাসে জানা গেছে, ঢাকা, ময়মনসিংহ, রাজশাহী, রংপুর ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় এবং চট্টগ্রাম, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ী দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া এবং বিজলী চমকানোসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্র বৃষ্টিপাত হতে পারে। সেই সাথে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে ভারী বর্ষণ ও বিক্ষিপ্তভাবে শিলাবৃষ্টি হতে পারে। সারাদেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। পরবর্তী ৭২ ঘণ্টায় আবহাওয়ার সামান্য পরিবর্তন হতে পারে।
সর্বশেষ আবহাওয়া
বর্ষারোহী মৌসুমি বায়ুমালার আগমন এখনও অনেক দেরি। তবে পূবালী বায়ুর সাথে পশ্চিমা বায়ুর মিলনের ফলে বাংলাদেশ ও আশপাশে উত্তর-পূর্ব ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে অতিবৃষ্টি হচ্ছে বর্ষার আগেই। গতকাল (শুক্রবার) সন্ধ্যা পর্যন্ত পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় দেশের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয়েছে রংপুরে ৯৫ মিলিমিটার। এ সময় ঢাকায় ১৮, চট্টগ্রামে ৩২, ময়মনসিংহে ৩১, সিলেটে ২৪, বরিশালে ৫ মিমিসহ দেশের অধিকাংশ স্থানে বৃষ্টিপাত হয়েছে। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল খুলনায় ৩৫.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আজ (শনিবার) সন্ধ্যা পর্যন্ত আবহাওয়া পূর্বাভাসে জানা গেছে, ময়মনসিংহ, সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগের অনেক জায়গায় এবং রাজশাহী, রংপুর, ঢাকা, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ী দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া এবং বিজলী চমকানোসহ হালকা থেকে মাঝারী ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রবৃষ্টি হতে পারে। সেই সাথে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারী ধরনের ভারী থেকে ভারী বর্ষণ ও বিক্ষিপ্তভাবে শিলাবৃষ্টি হতে পারে। সারাদেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে। পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাতের প্রবণতা হ্রাস পেতে পারে। এর পরের ৫ দিনে বৃষ্টি অথবা বজ্রবৃষ্টির প্রবণতা বৃদ্ধি পেতে পারে।



 

Show all comments
  • Mansur ul Haque ৫ মে, ২০১৮, ১:৫৩ এএম says : 0
    আগাম বন্যার আশংকার খবরটি পড়ে মনে হলো, সরকারেরও উচিৎ এখনই আগাম প্রস্তুতি গ্রহণ করা। মনে রাখতে হবে গত বছরের বন্যার ভয়াবহ ক্ষত আজো শুকায় নাই।
    Total Reply(0) Reply
  • ইমরান হোসেন ৫ মে, ২০১৮, ২:২৯ এএম says : 0
    বন্যার দুর্যোগ সম্পর্কে জনস্বার্থে আগভাগে সতর্ক করার জন্য দৈনিক ইনকিলাবকে ধন্যবাদ জানাই। এখন সরকারকর্তৃক সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। যাতে বন্যা পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যায়।
    Total Reply(0) Reply
  • আসলাম ৫ মে, ২০১৮, ২:৩৯ এএম says : 0
    আগাম বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকার কি প্রস্তুত??
    Total Reply(0) Reply
  • Badal Rahman ৫ মে, ২০১৮, ৯:২৪ এএম says : 0
    Govt must & immediately has to take properly flood preparedness.
    Total Reply(0) Reply
  • Giasuddin Sardar ৫ মে, ২০১৮, ১০:০২ এএম says : 0
    Need flood control and preparations by the Govt.
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বন্যা

১৫ অক্টোবর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ