Inqilab Logo

মঙ্গলবার ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

৪ বছর মর্গে থাকা ধর্মান্তরিত লাইজুর লাশ ইসলামী শরিয়ত অনুযায়ী দাফন

নীলফামারী জেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ৪ মে, ২০১৮, ৭:৩৩ পিএম

আইনী জটিলতায় চার বছরের বেশি সময় হাসপাতালের হিমঘরে থাকা ধর্মান্তরিত হোসনে আরার (নীপা রানী) লাশ শুক্রবার ইসলাম ধর্মের নিয়ম অনুযায়ী দাফন করা হয়েছে। উচ্চ আদালতের নির্দেশে ইসলামী শরিয়াহমোতবেক গতকাল শুক্রবার বিকাল ৩ ঘটিকায় নীলফামারীর ডোমার উপজেলার বোড়াগাড়ী ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ড কাজীপাড়া কবরস্থানে জানাযার নামাজ শেষে স্বামীর কবরের পার্শ্বে তার লাশ দাফন করা হয়। জানাযার নামাজ পরান ইমাম মোঃ রবিউল ইসলাম। ১২ এপ্রিল হাইকোর্টের বিচারপতি মোঃ মিফতাহ উদ্দিন চৌধুরীর একক বেঞ্চ ধর্মান্তরিত নিপার মৃতদেহ মুসলিম শরীয়ত মোতাবেক দাফনের নির্দেশ দেন। আদালত নীলফামারী জেলা প্রশাসককে আদেশ বাস্তবায়নের নির্দেশ প্রদান করেন। গত বৃহস্পতিবার আদালতের আদেশের কপি জেলা প্রশাসকের হাতে পৌছলে শুক্রবার লাশ দাফন করা হয়।
এর আগে শুক্রবার রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হিমঘর থেকে পুলিশি পাহরায় দুপুরে নিপা রাণীর মৃতদেহ উপজেলারবোড়াগাড়ী ইউনিয়নের র্প্বূ-বোড়াগাড়ী কাজীপাড়া গ্রামে তার শশুর সাবেক ইউপি সদস্য জহুরুল ইসলামের বাড়ীতে আনা হয়। এসময় সেখানে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেটমোছাঃ উম্মে ফাতিমা, থানা অফিসার ইনচার্জ মোকছেদ আলী,ওসি(তদন্ত) ইব্রাহীম খলিল সহ সঙ্গীয় ফোর্স উপস্থিত থেকে লাশ তার স্বামী হুমায়ুন কবির লাজুর কবরের পাশে দাফন করা হয়। এর আগে নিপা রাণীর মৃতদেহ সেখানে পৌছলে তার মৃতদেহ এক নজর দেখার জন্য হাজারো উৎসুক জনতা সেখানে ভীড় জমায়। বিশেষ করে মহিলাদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। তবে কেউকে লাশ দেখতে না দেয়ায় তারা হতাশ হয়ে ফিরে যান। এদিকে লাশ দাফনের পুর্বে হোসনে আরার পরিবারকে লাশ দেখানোর আদালতের নির্দেশ থাকলেও তারা সে সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন না।
মামলার বিবরণে যানা যায়, নীলফামারী জেলার ডোমার উপজেলার বামুনিয়া ইউনিয়নের অক্ষয় কুমার রায়ের মেয়ে নিপা রাণী রায়ের সাথে পার্শ্ববর্তী বোড়াগাড়ী ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য জহুরুল ইসলামের ছেলে হুমায়ুন কবির লাজুর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। ২০১৩ সালের ২৫ অক্টোবর তারা দু’জন নীলফামারী নোটারী পাবলিকে এফিডেভিটের মাধ্যমে ২লক্ষ ১ হাজার ৫শত ১টাকা দেন মোহরে বিয়ের করেন। এর আগে নিপারানী ধর্মান্তরিত হয়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহন করে । সেখানে নিপা রানীর নতুন নাম দেয়া হয় হোসনে আরা বেগম (লাইজু)। এদিকে ২০১৩ সালে ২৮ অক্টোবর নিপার বাবা অক্ষয় কুমার বাদী হয়ে আদালতে হুমায়ুন কবির লাইজু ও তার পবিারের বিরুদ্ধে অপহরণ মামলা দায়ের করেন। সে মামলায় লাইজুকে গ্রেফতার করে জেলহাজতে প্রেরন করা হয়েছিল। সে সময় বিয়ের স্বপক্ষে কাগজপত্রসহ আদালতে হাজির হয়ে জবানবন্দিদেয় নিপা। ফলে আদালত অপহরণ মামলাটি খারিজ করেদেয়। এরপরমেয়ের বাবামেয়েকে অ-প্রাপ্ত বয়স দাবি করে আপিল করে। তখন আদালত আবেদন আমলে নিয়েমেয়েটিকে শারীরিক পরীক্ষার জন্য রাজশাহীসেফহোমে পাঠিয়েদেয়। নিপাকে সেফ হোমে রেখে ২০১৪ সালের ১৪ই জানুয়ারী হুমায়ুন কবির লাজু রাজশাহী থেকে নিপার বাবার সাথে ট্রেনে বাড়ী ফেরার সময় অজ্ঞাত কারনে অসুস্থ হয়ে পরে। অসুস্থ অবস্থায় তাকে রংপুর মেডিক্যেল হাসপাতালে নেওয়া হলে ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষনা করেন। লাশ নিয়ে আসা হয় ডোমার থানায়। ময়না তদন্তের জন্য লাশ নিয়ে যাওয়ার সময় জেগে উঠে লাজু। তড়িঘড়ি করে তাকে স্থানীয় বোড়াগাড়ী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়ার পথে তার মৃত্যু ঘটে। স্বামীর মৃত্যুর খবর পেয়ে তাকে দেখতে আশার পথে নিপাকে তার বাবা চালাকি করে নিজ বাড়ীতে নিয়ে গিয়ে আটকে রাখেন। অবশেষে স্বামীর মৃত্যু মেনে নিতে না পেরে ২০১৪ সালের ১০ই মার্চ নিপা বিষপানে আত্মহত্যা করে। এর পর লাশের সৎকারের দাবীতে নিজ নিজ ধর্ম অনুযায়ী আদালতে আবেদন করেন শশুর জহুরুল ইসলাম ও অপরদিকে মেয়ের বাবা অক্ষয় কুমার। এ অবস্থায় ৪ বছরেরবেশি সময় রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হিমঘরে পড়ে থাকে নিপা রাণীর লাশ। দীর্ঘদিন আইনী লড়াই শেষে ২০১৮ সালের ১২ এপ্রিল নিপার লাশ ইসলামী শরিয়া মতে দাফনের নির্দেশদেয় উচ্চ আদালত।



 

Show all comments
  • সাঈদ ৪ মে, ২০১৮, ১০:০৫ পিএম says : 1
    ধর্মীয় বিধানমতে কারও লাশ কি চার বছর মর্গে রাখা যায়? যারা এই কাজ করেছেন তারা আল্লাহর কাছে কি জবাব দিবেন? জানতে চেষ্টা করুন মৃত ব্যক্তির লাশ নিয়ে কি বিধান।
    Total Reply(0) Reply
  • Mohammed Kowaj Ali khan ৯ মে, ২০১৮, ৮:৩৯ এএম says : 0
    আত্বহত্যা মহাপাপ, ওদের জানাযার নামাজ নিষেধ। ওদের জন্য জাহান্নাম নির্ধারিত।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: দাফন


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ