পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রফিকুল ইসলাম সেলিম : চট্টগ্রামে অভিজাত ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্রী তাসফিয়া আমিনের মৃত্যু রহস্যের কোন কিনারা হয়নি। তবে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে কিশোর প্রেমের নির্মম শিকার হয়েছে সে। তার খুনি কারা তাদের চিহ্নিত করা যায়নি এখনও। নিহতের পরিবারের দাবি তাসফিয়ার খুনি তার বন্ধু আদনান মির্জা। সেই প্রধান সন্দেহভাজন আদনান মির্জাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাকে প্রধান আসামি করে গতকাল (বৃহস্পতিবার) তাসফিয়ার বাবা মোঃ আমিন পতেঙ্গা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। বিকেলেই আদনানকে আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করে পুলিশ। প্রাথমিক শুনানি শেষে আদালত এ বিষয়ে আগামী রোববার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেছেন। আদনানকে পাঠানো হয়েছে কারাগারে। আদনান নগরীর বাদশা মিয়া সড়কের ইংলিশ মিডিয়াম এলিমেন্টারি স্কুলের ১০ম শ্রেণির ছাত্র। তাদের বাসা নগরীর খুলশী থানার জালালাবাদ হাউজিং সোসাইটিতে। আদনান ব্যবসায়ী ইস্কান্দার মির্জার ছেলে। তাসফিয়া হত্যার প্রতিবাদে গতকাল রাস্তায় নামেন তার শিক্ষক ও সহপাঠীরা। শোকের মাতম চলছে তাসফিয়ার বাড়িতে। গতকাল ময়না তদন্ত শেষে লাশ বাসায় নেওয়া হলে বাবা-মায়ের আহাজারিতে সেখানে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। সিঅ্যান্ডএফ ব্যবসায়ী মোঃ আমিনের ৩ কন্যা ও ১ পুত্রের মধ্যে সবার বড় তাসফিয়া। বড় মেয়েকে হারিয়ে শোকে কাঁদছে বাবা-মা ও তাদের স্বজনেরা।
মঙ্গলবার বিকেলে আদনানের সাথে বেড়াতে বের হয় তাসফিয়া। পরদিন সকালে নগরীর পতেঙ্গা থানার ১৮ নম্বর নেভাল বিচ এলাকায় তাসফিয়ার লাশ পাওয়া যায়। লাশ উদ্ধারের পর পুলিশ প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হয় নির্যাতনের পর তাসফিয়াকে হত্যা করে মূল সড়ক থেকে ১০ ফুট নিচে পাথরের উপর ছুঁড়ে মারা হয়। এতে তার নাক-মুখ থেঁতলে যায়। তার নাকে-মুখে ফেনা বের হওয়ার নমুনাও মিলেছে। এতে পুলিশের ধারণা, খুনের আগে তাকে বিষ বা নেশাজাতীয় পানীয় খাওয়ানো হয়েছে। আলোচিত এ ঘটনার ২৪ ঘণ্টা পরও তাসফিয়ার মৃত্যু রহস্যের কোন কিনারা করতে পারেনি পুলিশ। তার পরিবারের অভিযোগ, আদনানের সাথে ফেইসবুকের মাধ্যমে তাসফিয়ার পরিচয় হয়। এ পরিচয়ের সূত্র ধরে ওইদিন তাসফিয়াকে বেড়াতে নিয়ে যায় আদনান। বন্ধুদের সাথে নিয়ে তাকে খুন করা হয়েছে বলে অভিযোগ পরিবারের। তবে আদনান বলছে, নগরীর গোলপাহাড় মোড়ে রেস্টুরেন্ট থেকে তাসফিয়াকে একটি অটোরিকশায় তুলে দিয়েছে সে। এরপর কি হয়েছে তা সে জানে না।
গোলপাহাড়ের রেস্টুরেন্ট থেকে অটোরিকশায় বের হয়ে আর নিজাম রোড হাউজিং সোসাইটির বাসায় না গিয়ে তাসফিয়া কেন পতেঙ্গা সৈকতে গেল কিংবা কারা তাকে সেখানে নিয়ে গেল-এসব প্রশ্নের কোন উত্তর মিলছে না। এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) আমেনা বেগম ইনকিলাবকে বলেন, এখনও ঘটনার রহস্য উদঘাটন করা যায়নি। তবে পুলিশ বেশকিছু আলামত সংগ্রহ করেছে। কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে, পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে প্রধান সন্দেহভাজন আদনানকেও পাকড়াও করা হয়েছে। তিনি আশাবাদী খুব শিগগির এ ঘটনার রহস্য উদঘাটন হবে।
মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট নগর পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, আদনানকে ঘিরে পরিবারের সন্দেহকে গুরুত্ব দিয়েই মামলার তদন্ত চলছে। ইতোমধ্যে আদনানের ল্যাপটপ, মোবাইল জব্দ করা হয়েছে। একইভাবে তাসফিয়ার ব্যবহৃত মোবাইল ও ল্যাপটপও জব্দ করা হয়েছে। তাদের দু’জনের মোবাইল কললিস্ট এবং ফেইসবুকে যোগাযোগের বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পাশাপাশি তাসফিয়ার সাথে অন্য কারও কোন সম্পর্ক ছিল কিনা অথবা তৃতীয় কোন পক্ষ এ ঘটনায় জড়িত কিনা তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তাসফিয়ার বাবার সাথে কারও কোন ব্যবসায়িক বিরোধ ছিল না সেটাও বিবেচনায় আনা হচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তা জানান, ইতোমধ্যে আদনানের বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু হয়েছে। কিছু অপরাধীর সাথে তার যোগাযোগ রয়েছে। সে নিজেও একটি কিশোর গ্রæপের নেতা। তাসফিয়ার সাথে সম্পর্কের বিষয়টি জানতে পেরে তার পরিবার আদনানকে ডেকে এনে শাসিয়ে দেয়। এর প্রতিবাদে আদনান কয়েকজন ক্যাডারকে সাথে নিয়ে তাসফিয়াদের বাসায় গিয়ে তার বাবা-মাকে হুমকি-ধমকি দেয়। মা-বাবার নিষেধ সত্তে¡ও তাসফিয়া আদনানের সাথে মিশতো। মামলা তদন্তে এসব বিষয়ে খোঁজ-খবর নেয়া হচ্ছে বলে জানান ওই পুলিশ কর্মকর্তা।
আদনানকে জিজ্ঞাসাবাদ
নগরীর নাসিরাবাদ থেকে বুধবার রাতে আদনানকে আটক করে পুলিশ। এরপর তার বাসায় তল্লাশি চালিয়ে মোবাইল, ল্যাপটপসহ বেশকিছু জিসিনপত্র জব্দ করে পুলিশ। নগর পুলিশের কর্ণফুলী জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) মোঃ জাহেদুল ইসলাম বলেন, স্কুলছাত্রী তাসফিয়া হত্যাকাÐের ঘটনায় আদনানকে রাতভর জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে তাসফিয়ার সাথে আদনানের বন্ধুত্বের নানা বিষয় ও সম্পর্কে নিয়ে আমরা বিস্তারিত জেনেছি। মধ্যরাতে আদনানকে নিয়ে তার বাসা থেকে মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়েছে। তার মোবাইলের কললিস্ট ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুক, হোয়াইটসঅ্যাপসহ অন্যান্য অ্যাপসের মাধ্যমে তথ্য আদান-প্রদানের তথ্য সংগ্রহ করছি। এসি জাহেদুল ইসলাম জানান, আদনানের তথ্যমতে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় চায়না গ্রিল রেস্টুরেন্ট থেকে তাসফিয়ার মায়ের ফোন পেয়ে আদনান ১০০ টাকা ভাড়া দিয়ে তাসফিয়াকে বাসার উদ্দেশে সিএনজি অটোরিকশায় তুলে দেয়। তখন তাসফিয়া বাসায় না গিয়ে পতেঙ্গার ১৮ নম্বর ঘাটে চলে যায়। বিষয়টি রহস্যজনক মনে হচ্ছে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই আনোয়ার হোসেন জানান, ওই রেস্টুরেন্টের কয়েকজন ওয়েটারের সঙ্গে কথা হয়। তারা জানায়, ২ পিস কেক ও ২টি আইসক্রিম অর্ডার করে সামনে আনেন আদনান। এসময় তাদের মধ্যে তেমন হাসি-খুশির ভাব ছিল না। আইসক্রিম খেলেও কেক না খেয়ে বের হয়ে যান তারা। আদনান আগে বের হয়ে যান। এর কয়েক মিনিট পর বের হন তাসফিয়া। ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, আলাদা সিএনজি অটোরিকশা করে জিইসি মোড়ের দিকে রওনা হয় তারা। অন্ধকার হওয়ায় ওই দুটির অটোরিকশার নাম্বার বোঝা যাচ্ছে না।
স্কুলে মানববন্ধন
তাসফিয়ার খুনিদের গ্রেফতারের দাবিতে গতকাল সানশাইন গ্রামার স্কুলের শিক্ষার্থীরা স্কুল প্রাঙ্গণে মানববন্ধন করেছে। মানববন্ধনে অংশ নিয়ে সানশাইন স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্রী তাসফিয়ার আমিনের খুনিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান অধ্যক্ষ সাফিয়া গাজী রহমান। সাফিয়া গাজী রহমান বলেন, আমরা শোকাহত। সন্তান হারানোর বেদনা আমরা উপলব্ধি করছি। তাসফিয়ার এ ঘটনা থেকে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে। মা-বাবা, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সচেতন হতে হবে। একজন শিক্ষার্থী মাত্র পাঁচ-ছয় ঘণ্টা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে থাকে। এর বাইরে বড় একটি সময় শিক্ষার্থীরা বাসা-বাড়িতে থাকে। তাই মা-বাবা বা অভিভাবকদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকতে হবে। তাদের কাউন্সেলিং করতে হবে। তিনি বলেন, তাসফিয়ার খুনিদের যদি ফাঁসি হয় তবে এ ধরনের ঘটনা বাংলাদেশে আর ঘটবে না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।