Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সাইক্লোন সেন্টারে চলছে পাঠদান

উত্তর কাশিমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন দুই যুগ ধরে পরিত্যক্ত

| প্রকাশের সময় : ৪ মে, ২০১৮, ১২:০০ এএম

ফেনী থেকে মো. ওমর ফারুক : দীর্ঘ দুই যুগ ধরে অযতেœ আর অবহেলায় পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে ফেনী সদর উপজেলার উত্তর কাশিমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন। এতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের চরম ভোগান্তি পোহানো ছাড়াও বিদ্যালয়টিতে স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় দীর্ঘ দিনেও এখানে লাগেনি উন্নয়নের ছোঁয়া। নেওয়া হয়নি নতুন ভবনের তৈরীর কোনো উদ্যোগ। তাই বাধ্য হয়ে পার্শ্ববর্তী সাইক্লোন সেন্টারে চলছে পাঠদানসহ বিদ্যালয়ের সকল কার্যক্রম।
এদিকে, দীর্ঘদিন পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকার কারণে বিদ্যালয়ের টিন-কাঠসহ সকল সরঞ্জাম নষ্ট হয়ে গেছে। ভেঙে পড়েছে টিনশেড ভবনের নানা অংশ। অন্যদিকে, শিক্ষাঙ্গনে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশের অভাবে কমে যাচ্ছে বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা।
এলাকাবাসী জানায়, ১৯৭২ সালে বাঁশের বেড়ায় নির্মিত বিদ্যালয় ভবনে প্রথম পাঠদান শুরু হয়। ১৯৯৩ সালে বিদ্যালয়টি বেড়ার ঘর থেকে আধা-পাকা টিনশেড ঘরে রূপান্তরিত হয়। পাঁচ বছর না যেতেই ১৯৯৭ সালে বিদ্যালয়ের ওপরের টিনগুলো ফুটো হয়ে যায়। এরপর জোড়াতালি দিয়ে চলে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত। বর্ষাকালে বৃষ্টির পানি আর রোধের খরতাপ থেকে বাঁচতে তাৎক্ষণিক বিদ্যালয়ের সকল কিছু স্থানান্তর করা হয় পাশের সাইক্লোন সেন্টারে। সেই থেকে অদ্যাবধি পাঠদান চলছে সাইক্লোন সেন্টারে। বিদ্যালয়ের পুরাতন জরাজীর্ণ টিন ও কাঠ ভেঙে পড়ছে কক্ষগুলোতে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্কুলের পাশের স্থানীয় লোকজন জানায় পরিত্যক্ত স্কুল ভবনটি খোলামেলা পড়ে থাকায় সেখানে রাতে কিছু বহিরাগত যুবকের আনাগোনা দেখা যায় প্রায়। সেখানে অবাধে মাদক সেবন ছাড়াও নানা অসামাজিক কার্যকলাপের ঘটনা ঘটতে দেখা যায়। এসব থেকে মুক্তির উপায় পরিত্যক্ত ঘরটি পূর্ণস্থাপন করে স্কুলের ভাবমূর্তি উজ্জল রাখার জন্য তারা জোর দাবি জানান।
বিদ্যালয় সূত্র জানায়, বর্তমানে এ বিদ্যালয়ে ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা ১৫১ জন। প্রতিনিয়ত কমছে ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা। শ্রেণি কার্যক্রম চলছে পাশের সাইক্লোন সেন্টারে। তবে সাইক্লোন সেন্টারটি বিদ্যালয়ের সমতুল্য না হওয়ায় ক্লাস নিয়ে শিক্ষকরা যেমন তৃপ্তি পান না, তেমনি মানসিকভাবে উৎসাহ পায় না শিক্ষার্থীরাও। ফলে সবার জন্য শিক্ষা কার্যক্রম সরকারের এই প্রশংসনীয় উদ্যোগ এখানে থমকে গেছে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা ফেরদৌস আরা জানান, এ বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী বর্তমানে ১৫১ জন, এর আগে ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা আরো বেশি ছিল। কারন বর্তমানে পাঠদান চলছে সাইক্লোন সেন্টারে ৩ তলা ভবনে, এই সাইক্লোন সেন্টারের দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় ছাত্র-ছাত্রীরা উঠতে ভয় পায়। এর আগে অনেক ছাত্র-ছাত্রী সিড়ি দিয়ে ওপরে উঠতে গিয়ে আহত হয়েছেন। এ জন্য আমাদের স্কুলের ছাত্র-ছাত্রী অনেক কমে গেছে। তাদের অভিভাবকেরা অনেকে এসব ব্যাপারে অভিযোগ করেছেন। তাই আমাদের স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের একটি ভালো পরিবেশে পাঠদানে মনোনিবেশ করার জন্য আমরা স্কুলের নতুন ভবন নির্মানের জন্য জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস, উপজেলা শিক্ষা অফিসসহ তৎকালিন ফেনী পৌরসভার মেয়র নিজাম উদ্দিন হাজারীসহ উদ্ধতন মহলেও চিঠি পাঠিয়েছি। কিন্তু তারা এ ভাঙ্গা বিদ্যালয়টি উন্নয়নের ব্যাপারে প্রতিশ্রæতি দিলেও এখনো পর্যন্ত কাজের কাজ কিছুই হয়নি। ফলে ১৯৯৮ সাল থেকে বিদ্যালয়টি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে।
বিদ্যালয়ের সভাপতি খোরশেদ আলম মজুমদার জানান, ঐতিহ্যগতভাবে এ স্কুলের সুনাম আছে। এখান থেকে অনেক গুণী ছাত্র-ছাত্রী পড়ালেখা করে বের হয়েছেন। স্কুলটিতে অনেক বছর ধরে পাঠদান চলছে তিন তলা বিশিষ্ট সাইক্লোন সেন্টারে। কিন্তু স্কুলের নিজস্ব জায়গায় পরিত্যাক্ত টিনশেডের ঘর পড়ে আছে অযন্তে অবহেলায়। বিদ্যালয়ে কোশলমতি শিশুদের পড়ালেখার যথাযথমান উন্নয়নে বর্তমান সরকার ব্যাপক ভূমিকা রেখে চলেছেন। যেখানে স্কুল নেই সেখানে ভবন নির্মান করে দিচ্ছেন। এ সরকারের আমলে আমাদের ফেনীতে অনেক স্কুল কলেজের ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। যেখানে সংকট দেখা দিয়েছে তা সমাধান হচ্ছে। তাই এলাকাবাসীর দাবি এই পরিত্যক্ত ভবনটি পূর্ন নির্মাণ করা হোক।
এ বিষয়ে ফেনী সদর উপজেলা শিক্ষা অফিসার সাইফুর রহমান জানান, এক সপ্তাহ আগে এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলীর কার্যালয় থেকে বিদ্যালয়টির বিষয়ে ফেনী এলজিইডিতে একটি চিঠি এসেছে। তিনি নিজেও চিঠির অনুলিপি হাতে পেয়েছেন। পর্যবেক্ষক দল কিছুদিনের মধ্যে বিদ্যালয়টিতে সরেজমিন পরিদর্শনে আসবেন বলে তিনি জানান।

 



 

Show all comments
  • rakib ৪ মে, ২০১৮, ৫:০৪ এএম says : 0
    amon e howa wchth, desher protita school ke school come cyclone centre kora wchith !! ground floor ke aktu wcha kore, cyclone er shomoy jeno gram bashi thade life stock rate pare amon bebostha kora wchith
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সাইক্লোন


আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ