পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
দেশের অর্থনৈতিক আকার বিশাল হয়েছে। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা সক্ষমতা, ২০১৭-১৮ অর্থবছর অনুযায়ী, ১৩৭টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ৯৯তম। আর জিডিপির পরিমাণ ২২৭.৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। দেশের এই অর্থনীতির প্রধান খাত কৃষি, গার্মেন্ট ও রেমিটেন্স। গার্মেন্ট ও রেমিটেন্সের উন্নতি টেকসই নয়। যেমন: গার্মেন্ট দেশের মোট রফতানির ৮২% অর্জন করেছে গত অর্থবছরে। অংকে যার পরিমাণ ২,৮১৫ কোটি ডলার। কিন্তু এর বিপরীতে আমদানীর পরিমাণও বিশাল- মোট রফতানির ৬০% এর মতো। উপরন্তু এই খাতে কয়েক লাখ বিদেশী কর্মরত আছে উচ্চ বেতনে। যারা বছরে হাজার হাজার কোটি টাকা নিয়ে যায় নিজ নিজ দেশে। তাই গার্মেন্টের নিট লাভ আহামরি নয়। সর্বপরি এই খাত প্রচন্ড প্রতিযোগিতায় পড়েছে ভারত, ভিয়েতনামসহ কয়েকটি দেশের উত্থানে। ইউরোপে জিএসপি সুবিধা থাকতেই এই অবস্থা। দেশ উন্নয়নশীল দেশ হওয়ার পর জিএসপিমুক্ত হলে আরো প্রচন্ড প্রতিযোগিতায় পড়ে বিশ্বের দ্বিতীয় রফতানিকারক দেশের অবস্থান ধরে রাখা সম্ভব হবে কিনা সন্দেহ আছে। একই অবস্থা হতে পারে ওষুধ রফতানির ক্ষেত্রেও। কারণ, এলডিসি দেশভুক্ত হওয়ায় বাংলাদেশ প্যাটেন্ট আইনের সুবিধা পাচ্ছে, যা ২০৩৩ সাল পর্যন্ত বহাল থাকবে। উন্নয়নশীল হওয়ার পর এই সুবিধা থাকবে বলে মনে হয় না। আর সেটা হলে ওষুধের উৎপাদন ব্যয় অনেক বৃদ্ধি পাবে। ফলে রফতানি আয় কমে যাবে। এই খাতের উন্নতি অব্যাহত থাকতে পারবে না। এ ব্যাপারে স¤প্রতি এক দৈনিকে প্রকাশ, ‘ওষুধ শিল্পে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার মেধাস্বত্ব-সম্পর্কিত চুক্তির বর্ধিত মেয়াদ নির্ধারিত সময়ের আগেই অকার্যকর হচ্ছে। ফলে উন্নত বিশ্ব থেকে ওষুধ শিল্পে বাংলাদেশের পাওয়া সুযোগ-সুবিধাও আর থাকবে না।’ একই অবস্থা রেমিটেন্সেরও। কারণ, প্রায় পৌনে এক কোটি বাংলাদেশি রয়েছে বিভিন্ন দেশে। যাদের প্রেরিত অর্থের পরিমাণ ছিল ১৩.৫২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার গত অর্থবছরে। তাই বিশ্ব অভিবাসী প্রতিবেদন-২০১৮ মতে, ‘বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান অভিবাসীর ক্ষেত্রে পঞ্চম আর রেমিটেন্সের ক্ষেত্রে নবম। অভিবাসীর তুলনায় রেমিটেন্স কম হওয়ার কারণ, বাংলাদেশি শ্রমিকের বেশিরভাগই কর্মে ও ভাষায় অদক্ষ। তাদের বেতন কম-অন্য দেশের শ্রমিকের তুলনায়! যা হোক, দেশে যে রেমিটেন্স আসে তাতেই দেশের অর্থনীতি স্ফীত হয়েছে। এই বিপুল আয় বেশিদিন থাকবে না। ইউরোপ ও পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে মানুষের বিকল্প রোবট ও অটোমেশন ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে ক্রমশঃ। ফলে মানুষের কর্মসংস্থান হ্রাস পাচ্ছে। বাংলাদেশ প্রবাসীদের অর্ধেকের বেশি আছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে। যাদের আয় জ্বালানি তেল রফতানিনির্ভর। সারা বিশ্বে জ্বালানি তেলের ব্যবহার হ্রাস পেয়ে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বৃদ্ধি হচ্ছে দ্রæত গতিতে। জ্বালানি তেলের চাহিদা হ্রাস পেয়ে মূল্য সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছেছে। তাই মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর আর্থিক দুর্দিন শুরু হয়েছে। ফলে অনেক কর্মসংস্থান বন্ধ হয়েছে, বিদেশি শ্রমিকরা দেশে ফেরৎ যাচ্ছে। বাংলাদেশিদেরও একই অবস্থা। কিছুদিন আগে এক খবরে আশংকা প্রকাশ করা হয়েছে, ‘স্বল্প সময়ের মধ্যে ১০ লাখ প্রবাসীকে দেশে ফেরত আসতে হবে।’
বিবিএস’র জরিপ মতে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে দেশে মোট শ্রমশক্তি ছিল ৬.৩৫ কোটি। এর মধ্যে পুরুষ ৪.৩৫ কোটি ও নারী ২ কোটি। মোট শ্রমশক্তির ২.৪৭ কোটি কৃষিতে, ২.৩৭ কোটি সেবা খাতে ও ১.২৪ কোটিশিল্প খাতে। আর জিডিপি’র ৩২% অবদান কৃষি খাতের। স্মরণীয় যে, দেশে বর্তমানে ৫ কোটি মে.টনের অধিক কৃষি পণ্য উৎপাদন হয়। তন্মেধ্যে শুধুমাত্র ধান প্রায় ৪ কোটি মে.টন। আর প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে দেশে গরু, মহিষ, ছাগল ও ভেড়ার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫ কোটি ৪৭ লাখ ৪৫ হাজারে, আর মাংস উৎপাদন হয়েছে ৭১ লাখ ৫৪ হাজার টন এবং মাছ উৎপাদন হয়েছে ৪১ লাখ ৩৪ হাজার টন। এছাড়া, শাক-সবজি, পাট ইত্যাদি উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছে। তাই বিশ্ব পর্যায়ে খাদ্য উৎপাদনে বাংলাদেশের অবস্থান-খাদ্য শস্যে দশম, শাক-সবজিতে তৃতীয়, আলুতে সপ্তম, ফলমুলে ২৮তম, মাছ মিঠা পানিতে চতুর্থ, সমুদ্রে ২৪তম। যা’হোক, দেশ খাদ্য উৎপাদনে প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ায় দেশ দুর্ভিক্ষ-মঙ্গামুক্ত হয়েছে। উপরন্তু বিপুল পরিমাণে মৎস্য পণ্য ও সবজি রফতানি হচ্ছে। দেশে ক্রমশঃ মানুষ বৃদ্ধি পাচ্ছে। মানুষের আয় বাড়ছে। ফলে খাদ্যের চাহিদা বাড়ছে। এসডিজিও বাস্তবায়ন করতে হবে। সবমিলে দেশে খাদ্যের চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে অনেক যা উৎপাদন বৃদ্ধি করে পূরণ করা আবশ্যক। নতুবা বিপুল পরিমাণে খাদ্য আমদানি করতে হবে।তাতে দেশের উন্নয়ন ব্যয়ের অধিকাংশই শেষ হয়ে কাক্সিক্ষত উন্নতি ব্যাহত হবে। তাই খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি করা ছাড়া গত্যন্তর নেই। এক্ষেত্রে প্রধান অন্তরায় হচ্ছে, কৃষি জমির পরিমাণ প্রতিবছরই হ্রাস পাচ্ছে। উপরন্তু প্রাকৃতিক দুর্যোগ তো আছেই। এই অবস্থায় স্বল্প জমিতে অধিক খাদ্য উৎপাদন করা আবশ্যক। এ জন্য সর্বত্রই অধিক ফলনশীল বীজ ব্যবহার করা প্রয়োজন। দেশের কৃষি বিজ্ঞাণীরা এ পর্যন্ত ২০৮টিরও বেশি ফসলের ৫১২টি উচ্চ ফলনশীল, রোগ প্রতিরোধক্ষম ও প্রতিকূল পরিবেশ প্রতিরোধী জাত এবং ৪৮২টি প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছেন। এছাড়া বিভিন্ন মসল্লারও উন্নত জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে। এসব উন্নত বীজ এবং এর চেয়ে অধিক ফলনশীল বীজ বিদেশে থাকলে তা এনে দেশের সর্বত্রই ব্যবহার করা দরকার। অপরদিকে, মাছের ও গোশতের উৎপাদন অনেক বৃদ্ধি করার পন্থা উদ্ভাবন হয়েছে। নদী, খাল-বিল, হাওর ও উপকূলে ভাসমান খাঁচায় মাছের চাষ হচ্ছে। ‘ইনডোর ফিশফার্মিং’ শুরু হয়েছে। লাল পাঙ্গাসকে সাদা পাঙ্গাসে রূপান্তর করার পদ্ধতি আবিষ্কার করেছেন দেশের সৎস্য বিজ্ঞাণীরা, যার উৎপাদন অনেক বেশি এবং বিপুল চাহিদা আছে বিদেশে। মূল্যও বেশি। এসবের পূর্ণ সদ্ব্যবহার করা দরকার সারাদেশেই। সর্বপরি ইলিশ মাছের সুপ ও ন্যুডলস উদ্ভাবন করা হয়েছে স¤প্রতি। ফলে এই মাছের নবযাত্রা শুরু হয়েছে। অন্যদিকে, পাটের জিন, পাট পাতা থেকে চা ও পাট থেকে পচনশীল পলিব্যাগ উদ্ভাবন করেছেন দেশের কৃষি বিজ্ঞাণীরা। ফলে পাটের নবদিগন্ত শুরু হয়েছে। এসবও সদ্ব্যবহার করতে পারলে পাটের অতীত ফিরে আসবে। পরিবেশেরও ব্যাপক উন্নতি ঘটবে। সর্বপরি টার্কি মুরগির মাংস ফার্মের মুরগীর চেয়ে ৫-৬ গুণ বেশি। খেতে স্বাদও বেশি। উৎপাদন ব্যয়ও কম। তাই সারাদেশে ফার্মের মুরগির স্থলে টার্কি মুরগির চাষ করতে পারলে মাংসের উৎপাদন অনেক বৃদ্ধি পাবে।
বর্তমানে বিশ্বায়নের যুগ। তাই এক দেশের পণ্য অন্য দেশে অবাধে যাতায়াত করছে। এতে যে দেশের পণ্য দামে কম ও মানে ভালো সেটা টিকে থাকছে। তাই আমাদের কৃষি পণ্যকে প্রতিযোগিতা করেই টিকে থাকতে হবে। আর সে জন্য মূল্য কম ও মানে ভালো হওয়া দরকার। সে লক্ষ্যে সমস্ত কৃষি জমিকে সেচের আওতায় আনতে হবে। উপরন্তু সেচ ব্যবস্থাকে ‘ড্রাই ডিরেক্ট সিডেড টেকনোলজির আওতায় আনা প্রয়োজন। অপরদিকে, সব সেচ মেশিনকে সৌর বিদ্যুৎ চালিত করা দরকার এবং তা দেশে নতুন আবিষ্কৃত দ্বিতীয় প্রজন্মের সোলার দিয়ে। কারণ, এর এফিসিয়েন্সি বর্তমানের ব্যবহৃত সোলারের চেয়ে ২২ গুণ বেশি। এভাবে সেচ ব্যয় প্রায় অর্ধেক হ্রাস পেয়ে কৃষির উৎপাদন ব্যয় কমে যাবে। সমগ্র চাষ ব্যবস্থায় পাওয়ার টিলার, রাইস ট্রান্সপ্লান্টার ও কম্বাইন হারেভেস্টার মেশিন ব্যবহার করা প্রয়োজন। কারণ, পাওয়ার টিলার ব্যবহারের কারণে পশু ছাড়া স্বল্প সময়েই অধিক জমি চাষ করা সম্ভব। রাইস ট্রান্সপ্লান্টার ব্যবহারের ফলে স্বল্প ব্যয়ে খুব দ্রæত বীজ রোপন করা যায়। আর কম্বাইন হারেভেস্টার মেশিন ব্যবহারের ফলে স্বল্প সময়ে ও কম শ্রমিকেই ধান, গম ইত্যাদি একই সঙ্গে কাটা, মাড়াই, পরিষ্কার ও প্যাকেটজাত করা যায়। কৃষি শ্রমিকের সংকট দূর হবে এবং উৎপাদন ব্যয় ব্যাপক হ্রাস পাবে। রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহারের পরিবর্তে অরগ্যান ফুড উৎপাদন করতে হবে। প্রাকৃতিক বা জৈব সার ও প্রাকৃতিক বালাইনাশক ব্যবহার করে যে খাদ্য উৎপাদন করা হয় সেটাই অরগ্যান ফুড। এই খাদ্য খুবই স্বাস্থ্যসন্মত এবং স্বল্পব্যয়ী। সর্বপরি জমির উর্বরতা শক্তি বহাল থাকে। সব ‘রাইস ব্রান’ থেকে রাইস ওয়েল এবং ভুট্টা ও গমের বাই প্রডাক্ট দিয়ে পোল্ট্রি ও ফিস ফিড তৈরি করতে পারলেও নানাবিধ কল্যাণ হবে। দেশে ছাদ বাগান ও ঘরের মধ্যে এলইডি বাতিতে সবজি চাষ করা আবিষ্কার হয়েছে। এসব সারা দেশে ছড়িয়ে দিতে হবে। এইসঙ্গে প্রয়োজনীয় বনাঞ্চল সৃষ্টি করা দরকার। কারণ, পরিবেশ রক্ষার জন্য ২৫% বনাঞ্চল থাকা দরকার। আমাদের আছে তার প্রায় অর্ধেক। এতে পরিবেশ মারাত্মকভাবে দূষিত হয়ে নানা সংকট সৃষ্টি হয়েছে। তাই পর্যাপ্ত পরিমাণে বৃক্ষ রোপণ করা জরুরী। এতে ফলদ ও ভেষজ গাছকে অগ্রাধিকার দেওয়া দরকার। তাহলে সুফল বেশি হবে। সর্বপরি প্রতিটি জমিতেই শস্য বহুমুখীকরণ করা দরকার। এমনকি একই জমিতে কয়েকতালা করে একাধিক ফসল ফলানোও সম্ভব। যেমন: কৃষি বিজ্ঞানী মোসাদ্দেক স্বল্প জমিতে অধিক ফসল ফলানোর জন্য বহুতল বিশিষ্ট ভবনের মতো আকৃতিতে তৈরিকৃত স্তরে স্তরে বিন্যস্ত কাঠামোতে উদ্ভিদ রোপণের ব্যবস্থা উদ্ভাবন করেছেন। তাতে উদ্ভিদের সালোকসংশ্লেষণে প্রয়োজনীয় আলোক তরঙ্গের জন্য সমতল দর্পণ ব্যবহারকরে বায়ুর মাধ্যমে আলোর পথ ঘুরিয়ে দিয়ে আলোকে সমানভাবে সঞ্চালিত করে স্তরগুলোতে আলোরব্যবহার করা হয়েছে। ফলে একাধিক স্তরে একই সময়ে কয়েকগুণ বেশি ফসল ফলানো যাবে। বাঁশ-বেত, কাঠ দিয়েও তৈরি করা যাবে বিভিন্ন স্তর। এতে ৮-১০ বছর পর্যন্ত চাষাবাদ করা যাবে। মূলত নিম্ন স্তরে ধান, গম, ভূট্টা ইত্যাদি এবং উপরের স্তরগুলোতে করলা, শশা, লাউ, ঝিঙ্গা, পটল ইত্যাদি চাষ করা যাবে। এ পদ্ধিতিতে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সেচের ব্যবস্থা করা যাবে। মোবাইল অ্যাপস ব্যবহার করে সোলার পাম্পের সাহায্যে স্বয়ংক্রিয় সেচ প্রদানও করা যায়। তাই এই পদ্ধতি সারাদেশে ছড়িয়ে দেয়া দরকার অবিলম্বে। ইটালিরএক প্রকৌশলী পানির নীচে গ্রিনহাউস তৈরি করে লেটুস পাতা, পুদিনা পাতা, স্ট্রবেরি ইত্যাদির চাষ করতে সমর্থ হয়েছেন। এটা আমাদের দেশেও করা দরকার। সাগরে মৎস্য আহরণ বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। তাহলে মাছের চাহিদা পূরণ হয়ে রফতানি বৃদ্ধি পাবে। ২০১৭ সালে প্রকাশিত জাতিসংঘের গবেষণা তথ্য মতে, বাংলাদেশের আড়াই কোটিরও বেশি মানুষ অপুষ্টিতে ভুগছে। এর মধ্যে ৬০% নারী। শিশু মৃত্যুর প্রধানকারণও অপুষ্টি। তাই বাংলাদেশের দারিদ্র্য দূরীকরণ এবং খাদ্যনিরাপত্তায় বেশ অগ্রগতি হলেও সার্বিক পুষ্টিচিত্র সন্তোষজনক নয়। ফলে আগামী ২০২৫ সালের মধ্যে খর্বতা ২৭% কমিয়ে আনার যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, তা অর্জন নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। বেশি পুষ্টিযুক্ত খাদ্য উৎপাদনের দিকে অধিক গুরুত্ব দেওয়া দরকার।সব ফসল, মৎস্য, প্রাণী ও বৃক্ষকে ব্যাধিমুক্ত করার ব্যবস্থা করা জরুরী। প্রতিবছর দেশের বিপুল পরিমান শস্য পচে,অপচয় হয়ে ও সংরক্ষণের অভাবে নষ্ট হয়ে যায়। শুধু সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাবে দেশে বছরেছয় লাখ মেট্রিক টন মাছ নষ্ট হয়। এতে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হয়। মাছের সঠিক ব্যবস্থাপনা গ্রহণ করা গেলে এই ক্ষতি কমানো সম্ভব বলে মৎস্য বিজ্ঞানীদের অভিমত। এরূপ অবস্থা প্রায় সব কৃষি পণের ক্ষেত্রেই। উপরন্তু সময় ভেদে ফসলের মূল্যের অনেক তারতম্য হয়। এতে কৃষক ও ভোক্তরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।এটা নিরসন কল্পে প্রতিটি শস্য, ফল, সব্জী,মাছ ইত্যাদির প্রয়োজনমত সংরক্ষণ, প্রক্রিয়াজাতকরণ (যেগুলো হয়) ও বাজারজাত করার ব্যবস্থা দরকার। তথা কৃষিভিত্তিক শিল্প গড়ে তোলা আবশ্যক এবং তা প্রয়োজন মোতাবেক। তাহলে সারা বছরই পর্যাপ্ত পরিমাণে খাদ্য দ্রব্য পাওয়া যাবে, মূল্যের কোন তারতম্য হবে না। বিপুল পরিমাণে রফতানিও হবে। এসব শিল্পে অসংখ্য প্রান্তিক মানুষের কর্মসংস্থান হবে। কৃষক ও ক্রেতারা লাভবান হবে। তাই কৃষিভিত্তিক শিল্প গড়ার জন্য চাহিদা মোতাবেক ঋণ প্রদান করতে সব ব্যাংক ও এনজিওকে বাধ্য করা আবশ্যক এবং তা স্বল্প সুদে। সব শেষে আর একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে; প্রতিবছরই দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বন্যার সময় বাধ ভেঙ্গে ব্যাপক ফসলহানি ও বাড়ীঘর ধংস হয়ে যায়। তাই সব বাধগুলো খুবই শক্তিশালী করা এবং কৃষি জমিতে কোন স্থাপনা না করার আইন কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করা দরকার। এই সঙ্গে নদী, খাল বিলসহ সব পানিস্থল প্রতিনিয়তই সংস্কার করা দরকার। তাহলে সেচের জন্য সব সময় পানি পাওয়া যাবে। উপরন্তু মাছ চাষও বৃদ্ধি পাবে ও পরিবেশের কল্যাণ হবে। মোটকথা, কৃষির উন্নতি মানেই দেশের প্রকৃত উন্নতি। তাই এদিকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া আবশ্যক।
লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।