পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রফিকুল ইসলাম সেলিম : চট্টগ্রাম নগরীতে যুবলীগ নেতা ফরিদুল ইসলামের খুনিদের কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। হত্যাকাÐে ব্যবহৃত কোন অস্ত্রও উদ্ধার হয়নি। পুলিশ বলছে খুনিরা চিহ্নিত, তবে তারা পালিয়ে গেছে। আলোচিত এই হত্যাকাÐের তিনদিন পরও কোন আসামি গ্রেফতার না হওয়ায় হতাশ নিহতের স্বজনেরা। তাদের আশঙ্কা নগরীতে সংগঠিত আরও কয়েকটি হত্যাকাÐের মতোই এই ঘটনায় জড়িতরাও ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাবে। অন্য মামলার মতো এ মামলার তদন্তও থেমে যাবে। এর আগে নগরীতে সরকারি দলের অঙ্গ সংগঠনের বিরোধে নির্মম খুনের শিকার হয়েছেন যুবলীগ কর্মী মহিউদ্দিন, ছাত্রলীগ নেতা সুদীপ্ত বিশ্বাস, দিয়াজ ইরফান চৌধুরী, ইয়াছিন আরাফাত, নাছিম আহমেদ সোহেল, তাপস, যুবলীগ নেতা মেহেদী হাসান বাদল, টেম্পু শরিফ, সোহেল রানা, ইমরানুল করিম ইমুসহ আরও অনেকে। এসব খুনের ঘটনায় জড়িতদের কেউ কেউ ধরা পড়লেও মূলহোতারা এখনও ধরা পড়েনি। অভিযোগ রয়েছে তারা সরকারি দলের লোক হওয়ায় পুলিশ তাদের ধরার সাহস পায় না। একই কারণে এসব খুনের মামলার তদন্তেও গতি আসছে না।
তবে এমন অভিযোগ অস্বীকার করেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) আমেনা বেগম। তিনি গতকাল ইনকিলাবকে বলেন, ফরিদ হত্যার ঘটনায় জড়িতদের কাউকে এখনও গ্রেফতার করা যায়নি, তবে আমাদের চেষ্টার কোন কমতি নেই। খুনিদের চিহ্নিত করে তাদের ধরতে পুলিশের একাধিক টিম মাঠে রয়েছে। তিনি আশাবাদি ফরিদ হত্যায় জড়িতদের সবাইকে গ্রেফতার করা যাবে। নগরীতে এর আগে যেসব খুনের ঘটনা ঘটেছে সেসব মামলার তদন্তও অব্যাহত আছে জানিয়ে তিনি বলেন, খুনিদের সবাইকে ধরা হবে।
গত শুক্রবার নগরীর চকবাজার থানার ডিসি রোডের চাঁনমিয়া মুন্সি লেইনে ডিস ব্যবসার বিরোধে বন্দুকযুদ্ধে লিপ্ত হন সরকারি দলের দুই পক্ষ। এসময় খুব কাছে থেকে ফরিদকে গুলি করা হয়। বুকে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান তিনি। এই ঘটনায় গুলিতে দাদীর কোলে থাকা ১১ মাসের দুগ্ধপোষ্য এক শিশুসহ আহত হন আরও কয়েকজন। ওইদিন সকাল থেকে এলাকায় প্রকাশ্যে ভারী অস্ত্র নিয়ে মহড়া দেওয়ার পর বিকেলে দুই পক্ষ বন্দুকযুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। এসময় হেলমেট পরা বেশ কয়েকজন যুবককে অস্ত্র উঁচিয়ে গুলি ছুঁড়তে দেখা গেছে। এমন দৃশ্য অনেকে মোবাইল ফোনেও ধারণ করেছেন। তবে তাদের কাউকেই পুলিশ তখন গ্রেফতার করার চেষ্টা করেনি।
চকবাজার থানা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ফরিদুল ইসলাম খুনের ঘটনায় শুক্রবার রাতে নগরীর চকবাজার থানায় ফরিদের স্ত্রী মনোয়ারা বেগম বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। মামলায় আওয়ামী লীগ নেতা এম এ মুছা, ফয়সাল, রাসেল, মাসুদ ও মুরাদসহ নয়জনের নাম উল্লেখ করা হয়। অজ্ঞাত আরও ১৫ থেকে ২০ জনকে আসামি করা হয়েছে। মামলাটি তদন্ত করছেন চকবাজার থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আরিফ হোসাইন। তিনি ইনকিলাবকে বলেন, এজাহারে আওয়ামী লীগের এক নেতাসহ নয়জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে নিশ্চিত হওয়া গেছে তারা সবাই ঘটনায় জড়িত। ঘটনার পর পর তারা পালিয়েছেন এবং মোবাইল ফোন বন্ধ করে রেখেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, এই কারণে তাদের গ্রেফতার করা যাচ্ছে না। তিনি বলেন, আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত আছে। ঘটনার কিছু ভিডিও ফুটেজও পাওয়া গেছে। ওই ঘটনায় একাধিক অস্ত্র ব্যবহার হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এসব অস্ত্রধারীদেরও পাকড়াও করা হবে।
স্থানীয়রা জানায়, এমদাদুল হক বাদশাসহ তিনজন চকবাজার ও বাকলিয়া এলাকায় কেসিটিএন নামে একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে প্রায় দুই দশক ধরে ক্যাবল ব্যবসা পরিচালনা করে আসছেন। এই প্রতিষ্ঠান থেকে ক্যাবল ব্যবসার দখল নিতে মুছার লোকজন ওইদিন সকাল থেকে ক্যাবল লাইন টাঙাতে থাকেন। ফরিদ এর প্রতিবাদ করায় তাকে গুলি করা হয়। যুবলীগ নেতা ফরিদ ছিলেন ক্যাবল ব্যবসায়ী বাদশার বন্ধু। এই ঘটনার প্রধান আসামি মুছা ১৭ নম্বর পশ্চিম বাকলিয়া ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।
এদিকে চাঞ্চল্যকর এই খুনের তিনদিনেও খুনিরা ধরা না পড়ায় নিহতের স্বজনেরা হতাশ। তাদের আশঙ্কা অন্য হত্যাকাÐের মতো ফরিদ হত্যা মামলাও চাপা পড়ে যাবে। গত ২৬ মার্চ নগরীর দক্ষিণ হালিশহরে একটি স্কুলের সভায় প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করা হয় যুবলীগ কর্মী মহিউদ্দিনকে। এই ঘটনায় আওয়ামী লীগ নেতা হাজি ইকবালসহ ১৭জনকে আসামি করা হয়। আলোচিত এই খুনের একমাস পার হলেও হাজি ইকবালসহ বেশিরভাগ আসামি ধরা পড়েনি। মহিউদ্দিনের পরিবারের অভিযোগ পুলিশ আসামিদের ধরছে না। তবে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বন্দর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) বিকাশ সরকার বলছেন, ইকবালসহ কয়েকজন আসামি পালিয়েছে, তাদের ধরতে অভিযান চলছে।
এর আগে নগরীর সদরঘাটে পিটিয়ে হত্যা করা নগর ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক সুদীপ্ত বিশ্বাসকে। এই খুনের নেপথ্যে রয়েছেন এক আওয়ামী লীগ নেতা। তাকে এখনও গ্রেফতার করেনি পুলিশ। পুত্রের খুনিদের গ্রেফতার না করায় ক্ষোভে হতাশায় ত্রিশ বছর পর চট্টগ্রাম ছেড়ে যান সুদীপ্তের অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক পিতা। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সম্পাদক দিয়াজ ইফরান চৌধুরীর খুনিরাও ধরা পড়েনি। ছেলের খুনিদের বিচারের দাবিতে অনশনসহ নানা কর্মসূচি পালন করে এখন হতাশ পুত্রহারা মা জাহেদা আমিন চৌধুরী। নগর ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নাছিম আহমেদ সোহেল হত্যার তদন্তও এখন হিমাগারে। নিহতের পিতার অভিযোগ পুলিশ আসামিদের গ্রেফতার না করে উল্টো আসামিরা কোথায় আছে তার কাছে জানতে চাইছেন।
সিটি কলেজের রাজনীতি বিজ্ঞানের অর্নাস তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ইয়াছিন আরাফাত, গত বছরের ১২ ফেব্রæয়ারি নগরীর আমতল এলাকায় খুন হন। তার খুনিরাও ধরা পড়েনি। একই বছরের ১৮ এপ্রিল নগরীর লালখানবাজারে ছাত্রলীগের কর্মীদের হাতে খুন হন যুবলীগ কর্মী মোহাম্মদ শরীফ ওরফে টেম্পু শরীফ, এই মামলাও এখন হিমাগারে। ১৮ মে হাটহাজারীতে খুন হন ফতেপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ লোকমান। একই দিনে স›দ্বীপে গুলিতে খুন হন যুবলীগ নেতা সোহেল রানা। ৯ আগস্ট নগরীর নন্দনকানন এলাকায় খুন হন ইমরানুল করিম ইমন নামের আরেক যুবলীগ নেতা। খুন করার পর তার লাশ ড্রামভর্তি করে পুকুরে ফেলে দেওয়া হয়। ১৩ আগস্ট কোতোয়ালি থানা এলাকার রানীর দিঘি থেকে ইমনের লাশ ভর্তি ড্রাম উদ্ধার করে পুলিশ। যুবলীগ ক্যাডার অমিত মুহুরী তার অনুসারী ছাত্রলীগ-যুবলীগ কর্মীদের নিয়ে ইমনকে খুন করে। এক সহযোগীসহ পুলিশ অমিতকে গ্রেফতার করলেও বাকিরা এখন পলাতক।
খুনিদের ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধন
খুনিদের গ্রেফতার ও ফাঁসির দাবিতে গতকাল বিকেলে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করেছে স্থানীয়রা। মানববন্ধনে নিহত ফরিদের মা সালেহা খাতুন, স্ত্রী মনোয়ারা বেগম, মেয়ে ফারহানা আকতার জারা অংশ নেন। এসময় তারা সেখানে কান্নায় ভেঙে পড়েন। মানববন্ধনে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা আবু তালেব, মনোয়ার হোসেন বক্তব্য রাখেন। তারা অবিলম্বে ফরিদ হত্যায় জড়িতদের গ্রেফতার করার দাবি জানান।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।