Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য তাকিদ

| প্রকাশের সময় : ২৮ এপ্রিল, ২০১৮, ১২:০০ এএম

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচন বিতর্কিত ও অগ্রহণযোগ্য হওয়ার পর থেকে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন সংস্থা একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের তাকিদ দিয়ে আসছেন। কিছুদিন পর পরই ধারাবাহিকভাবে তারা বক্তব্য-বিবৃতি ও সভা-সেমিনার করে এ তাকিদ দিচ্ছেন। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার ঢাকায় ইইউ-বাংলাদেশ সহযোগিতা চুক্তি (সিএ) কাঠামোর আওতায় সুশাসন ও মানবাধিকারবিষয়ক সাবগ্রুপের দ্বিবার্ষিক বৈঠকে ইইউ-এর প্রতিনিধিরা বাংলাদেশে গ্রহণযোগ্য, স্বচ্ছ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানে সরকারকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। এর আগে গত ১৯ এপ্রিল ঢাকাস্থ চীনের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য কাউন্সিলর লি গুয়ংজুন জানিয়েছেন, বাংলাদেশে আগামী নির্বাচন নির্বিঘ্ন এবং শান্তিপূর্ণ ও মসৃনভাবে সরকারের পালাবদল হোক তাই চাচ্ছে চীন। প্রতিবেশি ভারতও জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হবে বলে আশা প্রকাশ করছে। সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে নয়, বেশ কয়েক বছর ধরেই জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রভাবশালী দেশ ও সংস্থা তাদের অবস্থান তুলে ধরেছে। প্রত্যেকেই আগামী জাতীয় নির্বাচন সর্বজন গ্রহণযোগ্য করার জন্য বারবার আহ্বান জানিয়েছেন এবং জানাচ্ছেন। দেশের প্রধান রাজনৈতিক বিরোধীদলসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দল এবং নাগরিক সমাজ দীর্ঘদিন ধরে একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের কথা বলে আসছে।
৫ জানুয়ারির নির্বাচনটি যে দেশে-বিদেশে গ্রহণযোগ্য হয়নি, তা নতুন করে বলার কিছু নেই। সরকারের তরফ থেকে ঐ নির্বাচনের পরপরই বলা হয়েছিল সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষার্থে এ নির্বাচনের প্রয়োজনীয়তা ছিল এবং স্বল্প সময়ে আরেকটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করা হবে। পরবর্তীতে সরকার তার এ অবস্থান পরিবর্তন এবং তার মতো করে দেশ পরিচালনা শুরু করে। এ নিয়ে প্রধান রাজনৈতিক বিরোধী দল আন্দোলন করলেও তাতে সাড়া দেয়নি। উল্টো তাদের ওপর দমন-পীড়ন চালিয়ে কোনঠাসা করে রাখা হয়। সরকারের এ ধরনের আচরণ দেশে-বিদেশে সমালোচিত হলেও তাতে সে ভ্রুক্ষেপ করেনি। প্রধান রাজনৈতিক বিরোধী দল একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবীতে তাদের আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি অন্যান্য বিরোধী দল এবং নাগরিক সমাজও তাদের বক্তব্য-বিবৃতিতে সব দলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা বলে আসছে। আগামী একাদশ জাতীয় নির্বাচন অতি সন্নিকটে। ইতোমধ্যে সরকারের তরফ থেকে বলা হয়েছে, ডিসেম্বরে এ নির্বাচন হবে। নির্বাচন কমিশনও প্রস্তুতি শুরু করেছে। নির্বাচন কীভাবে হবে এ নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বর্তমান সংসদ বহাল রেখে তার অধীনেই নির্বাচন অনুষ্ঠানে অনড় অবস্থান নিয়েছে। অন্যদিকে প্রধান রাজনৈতিক বিরোধী দল বিএনপিসহ অন্যান্য দল এবং নাগরিক সমাজ বলছে সংসদ ভেঙ্গে দিয়ে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন করতে হবে। দেখা যাচ্ছে, একটি সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে মাঠের বিরোধী দল ও নাগরিক সমাজের এ দাবীর সাথে জাতিসংঘসহ বিশ্বের প্রভাবশালী দেশ ও সংস্থাগুলো একমত পোষণ করছে। বলা যায়, আগামী জাতীয় নির্বাচন যাতে সব দলের অংশগ্রহণে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয় এ নিয়ে দেশে-বিদেশে একটি সার্বজনীন জনমত গড়ে উঠেছে। দেশের সাধারণ মানুষ এবং ভোটাররাও চায়, এমন একটি নির্বাচন হোক যাতে তারা নির্বিঘ্নে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে ১৫৩টি আসন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার ফলে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেনি। আগামী জাতীয় নির্বাচনে তারা এ অধিকার থেকে বঞ্চিত হতে চায় না। ভোটারদের এ অধিকার ফিরিয়ে দেয়ার দায়িত্ব সরকারের।
সব দলের অংশগ্রহণে আগামী একাদশ জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করে তোলা ক্ষমতাসীন দলের জন্য চ্যালেঞ্জে পরিণত হয়েছে। এ নির্বাচনও যদি ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের মতো হয়, তবে তা দেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে উঠার আশঙ্কা রয়েছে। এ কারণেই দেশি-বিদেশি প্রত্যেকেই একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য সরকারকে বিভিন্নভাবে তাকিদ দিচ্ছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, ৫ জানুয়ারির বিতর্কিত ও অগ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ফলে দেশের অর্থনীতিতে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগে অত্যন্ত মন্দাবস্থা বিরাজ করছে। আইনের শাসন, সুশাসন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির মধ্যে ঘটতি দেখা দিয়েছে। গুম, খুন, অপহরণ, বিচারবর্হিভূত হত্যাকান্ড অতীতের রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। গণতন্ত্র সংকুচিত, মানবাধিকার হ্রাস, কর্তৃত্বপরায়ণ সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বলে বিশ্বের বিভিন্ন সংস্থা তাদের প্রতিবেদনে প্রকাশ করছে। এ ধরনের প্রতিবেদন দেশের ভাবমর্যাদার জন্য কোনোভাবেই কাম্য নয়। আমরা আশা করব, সরকার সার্বিক দিক বিবেচনা করে সব দলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করবে। সরকারকে উপলব্ধি করতে হবে, প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন দেশের জন্য কল্যাণ বয়ে আনে না। এতে কেবল রাজনৈতিক বিভাজন, হানাহানি ও বিশঙ্খলা সৃষ্টি হয়, যা দেশের উন্নতি ও অগ্রগতিতে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়।



 

Show all comments
  • নূরনবী ২৮ এপ্রিল, ২০১৮, ৫:৫২ পিএম says : 0
    সুষ্ঠু নির্বাচন হবে তা মানুষের মধ্যে গ্রহণযোগ্য হবে এমন নির্বাচন 2014 সালের নির্বাচন চাই না এবারের নির্বাচন সুষ্ঠু
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য
আরও পড়ুন