Inqilab Logo

শুক্রবার ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

ভারতে ধর্মীয় বিভেদ বাড়ছে

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৪ এপ্রিল, ২০১৮, ১২:০০ এএম

জম্মুতে ইন্টারনেট সংযোগ বিছিন্ন রাখা হয়েছে। কাশ্মীরের শীতকালীন রাজধানীতে আট বছর বয়সী এক বালিকাকে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় যে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে, সেটাকে সামাল দিতেই ইন্টারনেট সংযোগ বিছিন্ন রাখা হয়েছে। একই সাথে এই ঘটনা ভারতে হিন্দু-মুসলিম বিভেদও বাড়িয়ে দিয়েছে। নৃশংস ওই হত্যাকান্ড নিয়ে সারা দেশে প্রতিদিনই বিক্ষোভ হছে। জম্মু পুলিশ বলেছে উত্তেজনা বাড়ানোর জন্য যে সব ‘গুজব’ ছড়ানো হছে, সেগুলো দমনের জন্যই ইন্টারনেট বিছিন্ন রাখা হয়েছে। নগরীতে এরইমধ্যে যথেষ্ট ক্ষতি হয়ে গেছে।
আট বছর বয়সী মুসলিম বালিকাকে ধর্ষণ ও হত্যার অপরাধে অথবা ঘটনার নিদর্শন নষ্ট করার অপচেষ্টার দায়ে আটজন হিন্দুকে বিচারের মুখোমুখি করা হয়েছে।
সড়কে মুসলিম বিক্ষোভকারীরা ন্যায় বিচারের দাবি করছেন। অন্যদিকে হিন্দু মৌলবাদীরা বলছে তদন্তে পক্ষপাতিত্ব রয়েছে। হুমকি দেয়া হছে এবং রাজ্যের রাজনীতিবিদদের পদত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে।
গত শুক্রবার (২০ এপ্রিল) প্রায় শ’খানেক বিক্ষোভকারী – যাদের অধিকাংশই হিন্দু – তারা জম্মুতে বিক্ষোভ করে। তাদের ব্যানারে লেখা ছিল “আসল দোষীদের ফাঁসি দাও”। এই গ্রুপটি কাঠুয়ার ঘটনার নতুন করে তদন্তের দাবি করছে। জম্মু থেকে ৬০ কিলোমিটার দূরে ওই কাঠুয়ার অবস্থান।
পুলিশের তথ্য মতে, ওই বালিকাকে মাদক দেয়া হয়েছিল। একটা হিন্দু মন্দিরে পাঁচদিন আটকে রেখে ধর্ষণ করে এরপর হত্যা করা হয়। তারা বলেছে, জানুয়ারিতে ওই হত্যা ছিল একটা ষড়যন্ত্রের অংশ। ওই বালিকার মুসলিম সমপ্রদায়- বাকারওয়ালদের ওই এলাকা থেকে বের করে দেয়ার উদ্দেশ্যেই এই অপকর্ম করা হয়েছে।
হিন্দুদের জম্মু বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন আইনজীবী রাজিমদার আবরোল। তিনি বললেন, “মেয়েটির পক্ষে যারা বিক্ষোভ করছে তারা অতিরিক্তি হৈ চৈ করছে, যাতে নিরপরাধীদেরও কারাগারে পাঠানো যায়”।
ওই এলাকায় জাতিগত অবিশ্বাস কতটা বেড়েছে, সেটা বোঝা গেলো আরেকজনের কথায়। ইন্সুরেন্স কোম্পানির চাকুরে দীপক কামোরাও হিন্দুদের ওই বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন। তিনি অভিযোগ করলেন, মুসলিমরা সেখানে মাদক পাচার এবং ‘সন্ত্রাসী’ কর্মকান্ডে জড়িত।
হিন্দু মৌলবাদীরা হত্যাকান্ডের অভিযোগকে তাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে দেখছেন। মুসলিম সমাজকর্মীরা বলছেন, হিন্দু-প্রধান এলাকায় মুসলিমদের বিরুদ্ধে যে কি ধরনের নির্যাতন চলছে, এই হত্যাকান্ড তার প্রমাণ। শিখ ও মুসলিম সংগঠনের সদস্যরা ধর্ষণের শিকার আট বছর বয়সী আসিফার জন্য প্রার্থনার অনুষ্ঠানে অংশ নেয়। ২১ এপ্রিল অমৃতসরে বিক্ষোভ করার সময় তারা ওই প্রার্থনায় অংশ নেয়। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি লন্ডনে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে’র সাথে সাক্ষাত করতে গেলে ডাউনিং স্ট্রিটের বাইরে বিক্ষোভ করেন অনেকে। জম্মু ও কাশ্মীর সার্বিকভাবে মুসলিম প্রধান হলেও জম্মুর দক্ষিণাংশে হিন্দুদের প্রাধান্য রয়েছে।
কামোরা বলেন, “জম্মুকে তারা ‘মন্দিরের শহর’ বলেন কিন্তু এটাকে তারা বদলে দিছে। মন্দিরের জায়গায় তারা মসজিদ বসিয়ে দিছে।”
ওই আটজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপনের আগে, ওই ধর্ষণ মামলায় অভিযোগ করতে গেলে কাঠুয়ার একটি আদালতের বাইরে একদল হিন্দু আইনজীবী পুলিশকে বাধা দেয়। জেলার আইনজীবী গ্রুপের প্রধান কীর্তি ভূষণ মহাজন বলেন, ওই ঘটনাকে বিকৃত করা হয়েছে।
ওই বিক্ষোভ নিয়ে যে বিতর্ক সৃষ্টি করা হয়েছে, সেটা ‘এ অঞ্চলের সামপ্রদায়িক সমপ্রীতি নষ্ট করার ষড়যন্ত্রের অংশ।”
পুলিশি তদন্তের সমালোচনা করে তিনি আরও বলেন, “আমরা কোন ধর্ষকদের সমর্থন করি না। আমরা জানি না কারা দোষি।”
কাশ্মীর রাজ্য সরকারের বিজেপি’র দুই মন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন। অভিযুক্ত ধর্ষকদের পক্ষে বিক্ষোভে অংশ নেয়ায় চাপের মুখে তারা পদত্যাগ করেন। জম্মুর মুসলিমরা বলছেন, জাতীয় সরকারকে বিশ্বাস করার কোন কারণ নেই তাদের। একজন বললেন, “হিন্দু মৌলবাদীরা সাধারণ মানুষকে মুসলিমদের বিরুদ্ধে লাগিয়ে দিছে।” সূত্র : এএফপি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভারতে

১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ