পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
পুুলিশের ক্ষমতার অব্যবহার এবং নির্দোষ মানুষের মর্যাদাহানির এক মর্মান্তিক ও উদ্বেগজনক ঘটনার বিবরণ প্রকাশিত হয়েছে একটি ইংরেজি দৈনিকে। সুদীর্ঘ এই প্রতিবেদন পাঠের পর যে কোনো মানুষই প্রশ্ন তুলবেন, আমরা কোন্ দেশে বসবাস করছি? এখানে কি ন্যুনতম নিরাপত্তা কারো নেই? নিরিহ-নিরপরাধ মানুষ কি মর্যাদার সঙ্গে বসবাস করতে পারবে না? ঘটনা অনেক লম্বা। সংক্ষেপ করলে দাঁড়ায় : রহিম (আসল নাম নয়)। মিরপুরের মনিপুর এলাকায় তার মোটর সাইকেল মেরামতের একটি ছোট্ট দোকান আছে। একদিন (৯ মার্চ) হঠাৎ পুলিশের একটি ভ্যান তার দোকানের সামনে এসে দাঁড়ায়। পুলিশের একজন কর্মকর্তা দোকানের মালিক কে জানতে চান। রহিম তার পরিচয় দিলে পুলিশ কর্মকর্তা থানায় গিয়ে ওসি’র সঙ্গে কথা বলার জন্য তাকে ভ্যানে উঠতে বলেন। রহিম ভ্যানে উঠে দেখতে পান তার মতো আরও ১৩ জন মোটর সাইকেল মেরামতের সঙ্গে যুক্ত দোকানের মালিক সেখানে আছেন। তাদের মিরপুর মডেল থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। তাদের সঙ্গে পুলিশ কর্মকর্তা ও ওসির কথা হয়। একটি চুরি যাওয়া মোটর সাইকেল সম্পর্কে তাদের কাছে জানতে চাওয়া হয়। তারা এব্যাপারে তাদের অজ্ঞতা জানান। তা সত্তে¡ও তাদের ছেড়ে না দিয়ে লকআপে ভরা হয়। পরদিন রহিমের স্ত্রী, কন্যা, ভাই এবং অন্যদের আত্মীয়-স্বজনরা থানায় এসে ভীড় জমান। ৩৬ ঘণ্টা পর তাদের হ্যান্ডকাপ পরিয়ে ১৫১ ধারায় মামলা দিয়ে কোর্টে চালান করা হয়। তাদের যখন কোর্টে নিয়ে যাওয়া হয়, তখন তাদের আত্মীয়-স্বজনেরা সবাই সেখানে উপস্থিত ছিলেন। ওই ১৪ জন দোকান মালিকের কেউই কোনো অপরাধের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। অথচ অপরাধী হিসাবে হ্যান্ডকাপ পরিয়ে তাদের কোর্টে নেয়া হয়। এতে তারা যেমন তেমনি তাদের আত্মীয়-স্বজনরাও অপমানিত, বিস্মিত ও হতবাক হন। তারা কোর্ট থেকে জামিন পান এবং শেষ পর্যন্ত ১ এপ্রিল তাদের মামলা খারিজ হয়ে যায় এবং তারা মুক্তিলাভ করেন। উল্লেখ করা যেতে পারে, যে মোটর সাইকেল চুরির ঘটনা নিয়ে তাদের ওই হয়রানি ও অপমানজনক পরিস্থিতির শিকার হতে হয়, সেটি চুরি হয় একজন উর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তার বাসার সামনে থেকে। আরো উল্লেখ করা যেতে পারে, যে অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয় তা মোটর সাইকেল চুরিবিষয়ক ছিলনা। এলাকায় উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি ও দুই গ্রুপের হানাহানির আশংকার অভিযোগে মামলাটি দায়ের করা হয়। ওই অভিযোগটি ছিল ত্রুটিযুক্ত। অভিযোগপত্রে সে সময়ে ওই হানাহানির আশংকার কথা বলা হয়, সে সময় অভিযুক্তরা থানাতেই আটক ছিলেন। অর্থাৎ অভিযোগ ও মামলা দুই-ই ছিল মিথ্যা।
কথায় বলে, পুলিশ কী না করতে পারে। এ ঘটনায় সেটা বিশেষভাবে দৃশ্যমান হয়েছে। পুলিশের কাজ সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে অভিযুক্ত বা আসামীকে গ্রেফতার করা। সন্দেহবশত কাউকে জিজ্ঞাসাবাদও পুলিশ করতে পারে। কিন্তু কথা বলার নাম করে থানায় ডেকে নিয়ে এভাবে আটক করে মিথ্যা অভিযোগে মামলা দিয়ে হ্যান্ডকাপ পরিয়ে আদালতে পাঠানো ক্ষমতার চরম অপব্যবহারের নামান্তর। হয়রানিই যে এর মূল উদ্দেশ্য, তা অবিদিত থাকেনি। অপরাধ সংঘটনের পরিকল্পনা করছে, এমন সন্দেহে পুলিশ ৫৪ ধারায় যে কাউকে গ্রেফতার করতে পারে। কিন্তু ব্যাপক অপব্যবহারের প্রেক্ষিতে এই ধারায় গ্রেফতারের ক্ষেত্রে সুপ্রিমকোর্ট ২০১৬ সালে একটি নির্দেশিকা প্রদান করেন। এর পর ৫৪ ধারায় মামলার সংখ্যা কিছুটা কমলেও বেড়েছে ১৫১ ধারায় মামলার সংখ্যা। এই ধারাটিও ৫৪ ধারার মতোই সন্দেহবশত গ্রেফতারের অধিকার দিয়েছে পুলিশকে। ধারাটি কীভাবে অপব্যবহৃত হয়েছে, এ ঘটনায় তার প্রমাণ রয়েছে। রহিম ও অন্যদের সঙ্গে পুলিশ যে অসদাচরণ করেছে, তার কোনো তুলনা হয় না। হ্যান্ডকাপ পরিয়ে আত্মীয়-স্বজন ও লোকজনের সামনে দিয়ে তাদের নিয়ে যাওয়ার ঘটনায় তারা সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন ও অপমানিত হয়েছেন। এতে তাদের মাথা হেট হয়েছে। মামলায় তারা নির্দোষ প্রমাণিত হয়েছেন বটে, তবে অপমানের এই দাগ তাদের জীবন থেকে মুছবে না। এভাবে নির্দোষ-নিরপরাধ মানুষকে হয়রানি ও মর্যাদাহানি করার অধিকার পুলিশের থাকতে পারে না।
আইন-শৃংখলা সুরক্ষা করা পুলিশের দায়িত্ব। পুলিশ নির্দোষ-নিরিহ মানুষের জন্য বন্ধু, কিন্তু অপরাধীদের জন্য ত্রাস এটাই মনে করা হয়। অথচ বিভিন্ন ঘটনায় দেখা গেছে সম্পূর্ণ উল্টোটি। সেখানে পুলিশকে অপরাধীদের বন্ধু ও সহায়তাকারীর ভূমিকায় দেখা গেছে। পক্ষান্তরে দেখা গেছে নিরিহ-নির্দোষ মানুষের ওপর জুলুম করতে। পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগের অন্ত নেই। পুলিশ এখন সাধারণ মানুষের কাছে আতংকে পরিণত হয়েছে। এমন কোনো অপরাধ নেই যার সঙ্গে পুলিশের একশ্রেণীর কর্মকর্তা ও সদস্যের সংশ্লিষ্টতা নেই। আইন-শৃংখলা পরিস্থিতির শোচনীয় অবনতির মূলে রয়েছে পুলিশের দায়িত্বহীনতা এবং অপরাধপ্রবনতা। বলতে গেলে এই অপরিহার্য রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানটি এখন চরম ইমেজসংকটের সম্মুখীন। বিষয়টি সরকার ও ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের আমলে নেয়া প্রয়োজন। পুলিশের জনবান্ধব ইমেজ গড়ে তোলা জরুরী। পুলিশের আইজি একজন উচ্চ শিক্ষিত, সজ্জন, সহৃদয় এবং উন্নত পেশাগত মানসম্পন্ন ব্যক্তি। ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনারসহ পুলিশের উপর পর্যায়ের অন্যান্য কর্মকর্তারও যথেষ্ট সুনাম ও সুখ্যাতি রয়েছে। তাদের বিষয়টি বিশেষভাবে নজরে আনতে হবে। পুলিশের দ্বারা যাতে নিরপরাধ মানুষ হয়রানি ও অপমানের শিকার না হয়, কোথাও আইনের ও ক্ষমতার অপব্যবহার না হয়, তা নিশ্চিত করার ব্যাপারে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ ও পদক্ষেপ তারা নেবেন, এটাই আমরা আশা করি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।