Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আজ প্রশাসনিক উন্নয়ন সংক্রান্ত সচিব কমিটিতে অনুমোদনের সম্ভাবনা

সরকারি কর্মচারী আইন ও দুদক চাকুরি বিধিমালা

| প্রকাশের সময় : ২৩ এপ্রিল, ২০১৮, ১২:০০ এএম

পঞ্চায়েত হাবিব : অনুমোদন ছাড়া সরকারি কর্মচারীদের গ্রেফতার করতে পারবে না এমন প্রস্তাব রেখেই সরকারী কর্মচারী আইন-২০১৭ প্রশাসনিক উন্নয়ন সংক্রান্ত সচিব কমিটিতে চুড়ান্ত অনুমোদন হচ্ছে। এই সঙ্গে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) কর্মচারী চাকুরি বিধিমালা ২০০৮ সংশোধনের প্রস্তাব সচিব কমিটিতে উপস্থাপন হচ্ছে। আজ সোমবার মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলমের সভাপতিত্বে মন্ত্রিপরিষদ সভাকক্ষে অনুষ্ঠিক বৈঠকে ১০টি প্রস্তাবের উপর আলোচনা হবে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের প্রশাসনিক উন্নয়ন ও সমন্বয়-১ অধিশাখা থেকে এ সংক্রান্ত চিঠি দেয়া হয়েছে।
বর্তমানে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. সোহরাব হোসাইনের নেতৃত্বে গঠিত আহŸায়ক কমিটি পূর্বানুমতি বতীত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীকে গ্রেফতারের ক্ষেত্রে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) ক্ষমতা সম্পর্কিত বিধানটি আইনের ৪৬ ধারা থেকে বাদ দেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। খসড়া প্রস্তাবনাটি সচিব কমিটির সভায় উপস্থাপন করা হবে।এতে মূলত প্রস্তাবিত আইন থেকে ৩টি ধারা এবং অনেকগুলো উপধারা বাদ দিতে বলা হয়েছে। সংশোধন প্রস্তাবের মধ্যে আইনটির দ্বাদশ অধ্যায়ে ফৌজদারি অপরাধে অভিযুক্ত কর্মচারীর ক্ষেত্রে ব্যবস্থাদি সংক্রান্ত ৪৬ ধারায় বর্ণিত দুদক আইনের ক্ষমতাবলে কর্মচারীকে গ্রেফতারের আগে অনুমতি নেয়ার বিষয়টি আইন থেকে বাদ দিতে সুপারিশ করা হয়েছে। আইনটির এ ধারার উপধারা (১)-এ বলা আছে, কোনো সরকারি কর্মচারীর দায়িত্ব পালনের সঙ্গে সম্পর্কিত অভিযোগে দায়েরকৃত ফৌজদারি মামলায় আদালত কর্তৃক অভিযোগপত্র হওয়ার আগে তাকে গ্রেফতার করতে হলে সরকার বা নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমতি গ্রহণ করতে হবে।তবে যে, দুর্নীতি দমন কমিশন আইন-২০০৪ এর ৫ ধারার অধীন গ্রেফতারের ক্ষেত্রে অনুরূপ পূর্বানুমতি গ্রহণের প্রয়োজন হবে না। ফৌজদারি মামলায় দন্ডিত কর্মচারীর ক্ষেত্রে ব্যবস্থা সংক্রান্ত ৪৭ ধারার উপধারা (১)-এ আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ সংশোধনীর প্রস্তাব দিয়েছে উপকমিটি। প্রস্তাবিত আইনে বলা আছে, কোনো সরকারি কর্মচারী ফৌজদারি মামলায় আদালত কর্তৃক ১ বছরের অধিক মেয়াদের কোনো কারাদন্ড, যাবজ্জীবন কারাদন্ড বা মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত হলে অনুরূপ দন্ড আরোপের রায় বা আদেশ প্রদানের তারিখ থেকে চাকরি থেকে তাৎক্ষণিকভাবে বরখাস্ত হবেন। সংশোধন প্রস্তাবে আইন থেকে তাৎক্ষণিকভাবে বরখাস্তত’ শব্দটি বাদ দিতে বলা হয়েছে। প্রেসিডেন্টের বিশেষ এখতিয়ার শিরোনামে প্রস্তাবিত খসড়া আইনের ১৭ ধারায় বলা হয়েছে, এই আইনের অন্যান্য বিধান, আপাতত বলবত অন্য কোন আইন বা আইনের ক্ষমতাসম্পন্ন দলিলে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, প্রেসিডেন্ট,জনস্বার্থে, বিশেষ মেধা, দক্ষতা, যোগ্যতা ও অপরিহার্যতা বিবেচনা করিয়া, সরকারের সচিব, অতিরিক্ত সচিব, যুগ্ম সচিব ও উপসচিব পদসংখ্যার অনধিক ১০ শতাংশ পদে, উক্তপদে নিয়মিতভাবে নিয়োগযোগ্য কর্মচারীগণের বাহির হইতে, কোন ব্যক্তিকে প্রেষণ বা চুক্তিভিত্তিতে নিয়োগ করিতে পারিবেন। এছাড়া অবসরে যাওয়া সরকারী কর্মচারীদের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ প্রসঙ্গে প্রস্তাবিত আইনের ৫৪ ধারায় বলা হয়েছে, প্রেসিডেন্ট জনস্বার্থে, যে কোন কর্মচারীকে, চাকরি হইতে অবসর গ্রহণের পর, প্রজাতন্ত্রের কর্মে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ করিতে পারিবেন।
প্রশাসন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমানে প্রেসিডেন্টের কোটায় সরকারী কর্মচারীদের মধ্য থেকে সচিবসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। কিছু পদে রাজনৈতিক ব্যক্তিকেও নিয়োগের নজির রয়েছে। যে কোন ব্যক্তিকে নিয়োগের বিধান প্রশাসনে দলীয়করণ আরও বৃদ্ধি পাবে। এটি কার্যকর হলে প্রশাসনের সর্বত্রই রাজনৈতিক ও পছন্দের ব্যক্তিকে নিয়োগ দেয়ার প্রতিযোগিতা আরো বাড়বে। প্রশাসনে দলীয় প্রভাব আরও বৃদ্ধি হবে। বাড়বে দলীয়করণ। এ ধারার ক্ষমতাবলে চাকরির বয়স ২৫ বছর পূর্ণ হওয়ার পর যে কোনো সময় সরকার জনস্বার্থে প্রয়োজন মনে করলে কোনোরূপ কারণ দর্শানো ছাড়াই তাকে চাকরি থেকে অবসর দিতে পারবে।
জানা গেছে, বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৯ সালে সরকার গঠন করে এ আইনটির ওপর গুরুত্বারোপ করে। কেননা সংবিধানের বাধ্যবাধকতার কথা উল্লেখ করে গণকর্মচারীদের জন্য আইনটি করার ব্যাপারে আওয়ামী লীগ নির্বাচনী ইশতেহারে প্রশাসন সংস্কারের অন্যতম প্রতিশ্রæত দিয়েছিল। প্রথমে সিভিল সার্ভিস অ্যাক্ট নামে আইন করার কথা বলা হলেও পরে কর্মকর্তা-কর্মচারী নির্বিশেষে সবার জন্য সরকার কর্মচারী আইন প্রণয়নে ঐকমত্য হয়। শুরু হয় সব পর্যায়ের স্টেকহোল্ডারদের মতামত গ্রহণ। এতেই পার হয়ে যায় ৫ বছর। ২০১৫ সালের ১৩ জুলাই আইনটির খসড়া মন্ত্রিসভায় উপস্থাপন করা হলে নীতিগত অনুমোদন দিয়ে ভেটিংয়ের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। এরপর শুরু হয় নানাভাবে ঘষামাজা শুরু করে সরকারি কর্মচারী আইন-২০১৫।এর পরিবর্তন হলে এখন নামকরণ করা হয়েছে সরকারি কর্মচারী আইন-২০১৮। সর্বশেষ আইনের খসড়া নিয়ে গত বছর ৫ ডিসেম্বর প্রশাসনিক উন্নয়ন সংক্রান্ত সচিব কমিটিতে আলোচনা হয়। সচিব কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিবকে প্রধান করে অধিকতর পরীক্ষা-নিরীক্ষা সংক্রান্ত এই উপকমিটি গঠন করা হয়।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মোজাম্মেল হক খান বলেন, সংবিধানে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ আইন প্রণয়নের কথা বলা হলেও এতদিন তা করা হয়নি। বর্তমান সরকার একটি পূর্ণাঙ্গ আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে। প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের বিদ্যমান আইন, বিধি ও নির্বাহী আদেশের প্রয়োজনীয় ধারা প্রস্তাবিত আইনের খসড়ায় অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। এদিকে দুর্নীতি দমন কমিশন (কর্মচারী) ২০০৮ নিয়োগ বিধিমালা সংশোধন করা হচ্ছে। প্রশাসনিক উন্নয়ন সচিব কমিটিতে পাঠানো প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, দুর্নীতি দমন কমিশন (কর্মচারী) নিয়োগবিধি বিধিমালা ২০০৮ এর তফসিল -১এ ক্রমিক নং ১০.১২.১৩. ১৪ ও ১৮ সংক্রান্ত প্রস্তাব। চাকরি বিধিমালা-২০০৮ সংশোধন করতে দুদকের কাছে ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর চিঠি পাঠায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
এছাড়া ইনভেন্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ কর্মচারী প্রবিধিমালা -২০১৮, পররাস্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি পরিকল্পনা সেল গঠনের রাজস্ব খাতে ৬টি পদ সৃজন, ইউনিয়ন ভুমি সহকারী কর্মকর্তা ও ইউনিয়ন ভুমি সহকারী র্কমকর্তা নিয়োগ পদোন্নতির জটিলতার কারণে জনবল নিয়োগ করণয়ি নির্ধারণের নিমিত্ত সুপারিশের প্রস্তাবসহ বেশ কয়েটি প্রস্তাব উঠছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রশাসনিক


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ