রামগতিতে আ.লীগ নেতাকে বহিষ্কার
লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চরআলগী ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় ইউনিয়ন আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক সাহেদ আলী মনুকে দলীয় পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। গত
পঞ্চগড়ে কৃষিতে সবুজ বিপ্লবের পর এবারে পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে পরীক্ষামূলক বিদেশি জাতের বিভিন্ন প্রজাতির ফুলচাষ করে সাফল্য পেয়েছে মেটাল এগ্রো লিমিটেড নামে দেশীয় একটি বীজ উৎপাদনকারি প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটি মঙ্গলবার বিদেশি ফুলচাষে দেশের বিভিন্ন এলাকার নার্সারি মালিকদের নিয়ে এক মতবিনিময় সভার আয়োজন করে। গৃষ্মকালীন সময়ে দেশে ফুলের চাহিদা বিবেচনায় বিদেশি জাতের ফুলচাষ নিয়ে দেবীগঞ্জ উপজেলার চেংটিহাজরা ডাংগা ইউনিয়নের কাউয়াপুকুর গ্রামে ফুলচাষের মাঠ প্রদর্শনী ও মতবিনিময় সভাটি অনুষ্ঠিত হয়। বীজ উৎপাদনকারি প্রতিষ্ঠানটি জাপানের বিখ্যাত ‘টাকি সিড’ কম্পানি থেকে বিভিন্ন প্রজাতির ফুলের বীজ ও চারা এনে ওই এলাকার প্রায় ৫০ শতাংশ জমিতে বিদেশি ফুলচাষ করে সফলতা অর্জন করেছে।
জেলার বিভিন্ন এলাকার নার্সারি মালিক ও ফুল চাষিদের সাথে মতবিনিময় সভার আয়োজকরা জানায়, দেশে প্রতিনিয়ত ফুলের চাহিদা বাড়ছে। এখানে মূলত শীতকালে কিছু প্রজাতির মৌসুমী ফুল পাওয়া যায়। গ্রীষ্মকালীন ফুলের চাহিদা মেটাতে বৈদেশিক মুদ্রা খরচ করে চীন, জাপান, মালোশিয়া, থাইল্যান্ডের মতো দেশ থেকে ফুল আমদানি করতে হয়। কিন্তু আমাদের দেশেও গৃষ্মকালে বিদেশি বিভিন্ন প্রজাতির ফুলচাষ করে স্থানীয় চাহিদা মেটানো সম্ভব। পাশাপাশি বাণিজ্যিকভাবে বৃহৎ আকারে এই ফুলচাষ করা গেলে বিদেশেও ফুল রফতানির সুযোগ সৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া আমাদের এখানে দেশীয় ফুলের খুব বেশি জাত নেই। দেশীয় বাজারে কয়েক প্রজাতির গোলাপ, গাদা, জবা, গøাডিওলাস ও রজনীগন্ধাই আমাদের ভরসা। অথচ বিশ্ব বাজারে বছরজুড়েই নানান প্রজাতির ফুল বাজারজাত দেখা যায়।
পঞ্চগড়সহ বিভিন্ন জেলার ফুলচাষী এবং নার্সারি মালিকদের বিদেশি প্রজাতির ফুলচাষে আগ্রহ সৃষ্টি করতে এই মতবিনিময় সভার আয়োজন করে প্রতিষ্ঠানটি। ইতোমধ্যে তারা জাপানের বিখ্যাত ‘টাকি সিড’ থেকে উন্নত প্রজাতির ফুলবীজ আমদানি করে তা থেকে ফুল উৎপাদন ও বাজারজাত শুরু করেছে। তাদের প্রদর্শনী প্লটে শোভা পাচ্ছে বিদেশি প্রজাতির রঙবেরঙের রকমারি ফুল। ভিনদেশী এসব ফুলের দিকে তাকালেই চোখ জুড়িয়ে যায়। প্রায় ৫০ শতাংশ জমিতে পরীক্ষামূলক জাপানি ডাইয়েনতাস, এস্টার, মেথিউলা, এন্টিরিনাম, কেবেজকাট ফ্লাওয়ার, স্যালভিয়া, ভিইওলাসহ ১২০ প্রজাতির ফুল চাষ করে সফল হয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। পাশপাশি অতিথি অভ্যর্থনার জন্য ব্যবহৃত জাপানি জাতের বিভিন্ন স্টিকের চাষও করা হচ্ছে। তবে এসব ফুলের বিদেশি নামের পরিবর্তে নন্দিনী, মিথিলাসহ দেশীয় সহজে উচ্চারণযোগ্য নাম দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানানো হয়। আগামী শীত মৌসুমে পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুরসহ দেশের ১০ জেলায় ফুল চাষিদের মাঝে এই ফুলের বীজ ও চারা সরবরাহ করা হবে। ফুল উৎপাদনসহ বাজারজাতকরণেও সহযোগিতার কথা জানায় মেটাল এগ্রো। তারা আশা প্রকাশ করেন, এই ফুলের চাষ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে দ্রæত ছড়িয়ে দেয়া হবে। এ জন্য পর্যায়ক্রমে দেশের বিভিন্ন জেলার ফুলচাষী ও নার্সারি মালিকদের সাথে মতবিনিময় করা হচ্ছে।
বিদেশি ফুল চাষ প্রকল্পটির কর্মকর্তারা জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক ড. হেইদি ওয়ারনেট এই ফুলচাষ প্রকল্পটি দেখভাল করছেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক হলেও এশিয়া মহাদেশে ৩০ বছর ধরে ফুল বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করছেন। তিনি চীনে ২২ বছর ধরে ফুল চাষের ওপর কাজ করেছেন। বর্তমানে ইউএসএআইডির হয়ে মেটাল এগ্রো লিমিটেড এর কনসালটেন্ট হিসেবে কাজ করছেন। যুক্তরাষ্ট্রের ফুল বিশেষজ্ঞ ড. হেইদি ওয়ারনেট বলেন, ‘বাংলাদেশের এ অঞ্চল ফুল চাষে বেশ উপযোগী। ভবিষ্যতে বাংলাদেশ ফুল চাষে অগ্রণী ভ‚মিকা পালন করবে এবং দেশীয় চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রফতানি করতে সক্ষম হবে। চীনে এই ফুল চাষে সময় লেগেছে প্রায় ২০ বছর। তবে বাংলাদেশে ঠিকমত এই ফুলচাষ করা গেলে পাঁচ বছরে মধ্যেই সাড়া ফেলবে আশা করি’।
মতবিনিময় সভায় যশোর, বরিশাল, নাটোর, রাজশাহী এবং দিনাজপুর জেলার বিভিন্ন এলাকার ফুলচাষি ও নার্সারি মালিক ছাড়াও ইউএসএআইডি’র অনিরুদ্ধ হোম রায়, জাপানের টাকি সিডের প্রতিনিধি নোরিকাজু সাতোইওসি অংশ নেন। এ সময় জাপানি ফুল উৎপাদন এবং বাজারজাতকরণ পর্যন্ত ফুলচাষী ও নার্সারি মালিকদের সহায়তার আশ্বাষ দেন মেটাল এগ্রো লিমিটেড।
মেটাল এগ্রো লিমিটেডের সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার আফজাল হুসাইন বলেন, বাংলাদেশে ফুলের সম্ভাবনাময় একটি বাজার রয়েছে। এখানে শুধুই শীতকালে কিছু ফুল পাওয়া যায়। গ্রীষ্মকালে বিদেশ থেকে ফুল আমদানি করতে হয়। দেশে গ্রীষ্মকালে ফুলের চাহিদা মেটাতে আমাদের এই উদ্যোগ। বর্তমানে যশোর, চট্টগ্রাম ও সাভারে ছোট পরিসরে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে দেশীয় ফুল চাষ করা হচ্ছে। যা দেশের চাহিদা অনুযায়ী যথেষ্ট নয়। তবে দীর্ঘদিন শীত থাকায় উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকা ফুল চাষের জন্য উপযোগী। আমরা বছরজুড়ে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে এই ফুলের চাষ ছড়িয়ে দিতে চাই’।
ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাদিদ জামিল বলেন, ‘কৃষকরা ধান পাটসহ বিভিন্ন ফসল আবাদ করেও অনেক সময় লোকসানে পড়েন। আমরা জাপানের টাকি সিড থেকে ফুলের বীজ আমদানি করছি। এই ফুল উৎপাদন ও বাজারজাতকরণে নার্সারি মালিক ও ফুল চাষিদের আমরা বিভিন্নভাবে সহায়তার চেষ্টা করছি। আশা করি কয়েক বছরের মধ্যে বাংলাদেশে উৎপাদিত ফুল নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে বিশ্ব বাজার রফতানি করা যাবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।