Inqilab Logo

শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

বেল ফলের গুণাগুণ

| প্রকাশের সময় : ২০ এপ্রিল, ২০১৮, ১২:০০ এএম

পাকযন্ত্রের পীড়ায় বেলের তুল্য দ্বিতীয় কোনো ওষুধ নেই। বিশেষ করে আমাশয় নিবারণে, অ¤øনাশে রক্তার্শ নিরাময়ে, পরিপাক যন্ত্রের গোলযোগ উপশমে, গাত্র দুর্গন্ধ দূরীকরণে, মদির প্রবণতা রোধে, শুক্রতারল্য স্বাভাবিকীকরণে বেল একটি শ্রেষ্ঠ ওষুধ।
বেল কাঁচা অবস্থায় খেতে হয়। পাকা অবস্থায় নয়। পাকা বেল স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর। সব ফল পাকলেই তার গুণের উৎকর্ষ ঘটে , বেলের ক্ষেত্রে সেটি উল্টো। বেল কাঁচাই উপকারী। বলা হয়, পাকা বেল বিষবৎ, শরীরের পক্ষে ক্ষতিকর। আর কাঁচা বেল অমৃতের সমান গুণকর। এটি এই জন্য যে,পাকা বেল হজম হয় খুব কষ্টে। এটি বহু দোষের আকর। যার জন্য পাকা বেল ভক্ষণের ফলে পেটে দূর্গন্ধ বায়ুর সৃষ্টি হয় এবং কখনো কখনো এটি এমন বিপরীত গুণ নিয়ে আত্মপ্রকাশ করে যা অতীব ভয়াবহ। আমাশয় আক্রান্ত ব্যক্তি এবং অ¤ø রোগীরা পাকা বেল খেলে সঙ্গে সঙ্গেই তা টের পেয়ে যাবেন। পক্ষান্তরে স্বভাবে ও গুণে কাঁচা বেল সংগ্রাহী। অর্থাৎ কচি বা কাঁচা অবস্থায় বেল ব্যবহার করলে তখন এটি হয় স্নিগ্ধ উষ্ণবীর্য অথচ তীক্ষè এবং অগ্নির উদ্দীপক। কাঁচা বেল কফ ও বায়ুর জয়কারক। তবে এখানে একটি প্রশ্ন আসা স্বাভাবিক। অনেকে বলবেন, পাকা বেল খেলে কোষ্ঠ বেশ পরিস্কার হয়। পরিস্কার হয় বটে, তবে তা ইচ্ছা করে নয়। পাকা অবস্থায় বেল খেলে অস্ত্র বা মলভান্ডের দোষকে সংশোধন না করে মল জোরপূর্বক বের করে আনে। কিন্তু কাঁচা বেল পাচড়ক ও অগ্নিবল বাড়িয়ে দিয়ে আ¤øদোষ পরিপাকান্তে মল সরল করে বের করে আনে। কাঁচা বেল অগ্ন্যাধিষ্ঠান নাড়িকে অত্যন্ত শক্তিশালী করে। কাঁচা বেল আগুনে পুড়িয়ে বা সিদ্ধ করে মোরব্বা বা হালুয়া করে খেতে হয়।
যাঁরা মেদস্বী, শরীর হতে ঘামের দুর্গন্ধে বেরোয়, তাঁরা বেল পাতার রস পানিতে মিশিয়ে এতে শরীর মুছে নিলে দোষটি মরে যায়। বেল পাতা আগুনে সেঁকে নিয়ে ঢেকে রেখে অতৎপর থেঁতো করলেই রস পাওয়া যায়।
সর্দির প্রবণতায় বেলপাতার রস ১ চামচ (৬০ ফোঁটা) আন্দাজ খেলে কাঁচা সর্দি বা তার সাথে জ্বর জ্বর ভাব-এই দোষটি সেরে যায়।
শোথে হাত ফুলে উঠেছে, এক্ষেত্রে বেল পাতার রস সমপরিমাণ মধুসহ খেতে থাকলে শোথ অচিরাৎ কমে যায়। কচি বেল টুকরো টুকরো করে কেটে রোদে শুকিয়ে নিলে ওটাকে বেলশুট বলে। বেলশুট শহরে-গঞ্জের পশারি দোকানেও কিনতে পাওয়া যায়। বেলশুট অথবা অপক্ক কচিবেল ছয় ঘণ্টা ধরে পানিসহ আগুনে জ্বাল করে হালুয়া আকারে খেলে অতি অল্প দিনেই অ¤øরোগ নিবারিত হয়।
যে ছেলেমেয়েরা পড়াশুনা করেও মনে রাখতে পারে না, তিন থেকে সাতটি বেল পাতা ছিরে মুড়মুড়ে করে ভেজে অল্প মিছরির গুঁড়ো মিশিয়ে প্রত্যহ একবার করে খেতে দিলে অল্প দিনেই তাদের স্মরণ শক্তি বেড়ে যায় এবং মেধাশক্তি প্রবল হয়।
যাঁরা দীর্ঘদিন ধরে আন্ত্রিক ক্ষতে ভুগছেন, তাঁরা কচি বেলের শুকনো টুকরো অর্থাৎ বেলশুট পরিমাণ মতো বার্লির সাথে একত্রে পাক করে পরে সেটি ছেঁকে নিয়ে খেয়ে নিলে অল্প দিনেই আলসার সেরে যায়। এক টুকরো বেলশুট পাউরুটির মতো সেঁকে গুঁড়ো করে টাটকা ঘোলের সঙ্গে মিলিয়ে প্রত্যহ প্রাতে একবার করে খেলে অতি অল্প দিনেই পুরাতন আমাশয় রোগ চমৎকারভাবে সেরে যায়।
আধা চা-চামচ বেলমূলের ছাল চূর্ণ দুধের সঙ্গে মিশিয়ে খেতে থাকলে অল্প কয়েক দিনের মধ্যে হৃদদৌর্বল্য সেরে যায়। অধিকন্তু এভাবে খেলে অনিদ্রা ও ঔদাসীন্য ভাবটাও কেটে যায়।
গাত্রবর্ণ উজ্জ্বল করার জন্য যতগুলো উপদান আছে বেলফুল তন্মধ্যে শ্রেষ্ঠ। পরিমাণ মতো বেল গাছের ফুল মসূর ডাল ধোয়া পানির সাথে উত্তমরূপে পোষণ করে মুখমন্ডলে ব্যবহার করলে অতি অল্প দিনেই চেহারা গোলাপের ন্যায় কমনীয়, পদ্মের ন্যায় উজ্জ্বল ও পূর্ণচন্দ্রের ন্যায় বিকশিত হয়ে ওঠে।

আফতাব চৌধুরী
সাংবাদিক-কলামিস্ট।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ফল

২৮ জানুয়ারি, ২০২৩
২৬ নভেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন