Inqilab Logo

সোমবার ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮ আশ্বিন ১৪৩১, ১৯ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

চট্টগ্রামে প্রকৌশলী রেডক্রস কর্মকর্তাসহ গ্রেফতার ৭

ইন্টারনেটভিত্তিক জঙ্গি সংগঠনের সদস্য সন্দেহে

| প্রকাশের সময় : ১৬ এপ্রিল, ২০১৮, ১২:০০ এএম

চট্টগ্রাম ব্যুরো : চট্টগ্রামে জঙ্গি সংগঠনের সদস্য সন্দেহে সাত যুবককে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। তাদের মধ্যে একজন কক্সবাজারে কর্মরত ইন্টারন্যাশনাল কমিটি অব দি রেড ক্রসের (আইসিআরসি) মাঠ কর্মকর্তা। র‌্যাব-৭ চট্টগ্রামের কর্মকর্তারা বলছেন, তারা ইন্টারনেটভিত্তিক ‘দ্বীন ফোর্স এক্সট্রিম’ ও ‘ইখোয়ান’ নামে দুইটি গ্রæপের সদস্য। তারা আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আইএসকেও অনুসরণ করেন। গতকাল (রোববার) তাদের আদালতে হাজির করে রিমান্ডের আবেদন করেছে কোতোয়ালী থানা পুলিশ। তাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস বিরোধী আইনে মামলা হয়েছে। শুক্রবার সন্ধ্যায় নগরীর আসকারদীঘির পাড় এলাকার একটি মসজিদ থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। পরে তাদের দু’জনের বাসায় অভিযান চালিয়ে বেশকিছু ইসলামি বই ও মোবাইল উদ্ধার করা হয়।
আটক সাত যুবক হলেন- মোঃ মহিউদ্দিন তামিম (২৯), মোঃ আজফার হোসেন (২১), মোঃ ইমরান খান (২৭), মোঃ দাউদ নবী পলাশ (২৮), চৌধুরী মোঃ রিদওয়ান (২৭), এস এম জাওয়াদ জাফর (২৬) এবং মোঃ মুনতাসিরুল মেহের (২৬)। তাদের মধ্যে মহিউদ্দিন তামিম নগরীর পুরাতন বিমান অফিস এলাকার ১৪৪ আনন্দবাগের মোঃ নাছির উদ্দিনের পুত্র। তিনি নগরীর বেসরকারি প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গেল বছর ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন।
আজফার হোসেন চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার চাতুরী চৌমুহনীর মোঃ নূর হোসেনের পুত্র। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। ইরমান খান নগরীর জামাল খান বাই লেইনের আজাদ নিজামুল হকের পুত্র। তিনি উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন বিবিএস কোর্সে অধ্যয়নরত। দাউদ নবী পলাশ কুমিল্লার নাঙ্গলকোটের দেওভান্ডার গ্রামের মোঃ আলী হায়দারের পুত্র। তাদের বাসা নগরীর পাহাড়তলীর সরাইপাড়া লোহারপুল এলাকায়। তিনি প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গত বছর ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। বর্তমানে তিনি নগরীর কর্ণফুলী থানার ইছানগরে প্রিমিয়ার সিমেন্ট কারখানায় ইলেকট্রিক বিভাগের সহকারী প্রকৌশলী হিসাবে কর্মরত।
রিদওয়ান নগরীর কাজির দেউড়ির আনন্দবাগ লেইনের বাসিন্দা শাহ মোহাম্মদ জিয়া উদ্দিন চৌধুরীর পুত্র। বিগত ২০১১ সালে তিনি ঢাকার নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হন এবং ২০১৩ সালে সেখান থেকে বহিষ্কৃত হন। জাওয়াদ জাফর চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার পোপাদিয়া গ্রামের এসএম জাফর উদ্দিনের পুত্র। তিনি গত বছর আন্তর্জাতিক ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম-আইআইইউসি থেকে এমবি পাশ করেন। বর্তমানে তিনি ইয়ংওয়ানের একটি প্রতিষ্ঠানের সহকারি ম্যানেজার। মুনতাসিরুল মেহের নগরীর রাবেয়া রহমান লেইনের মোঃ ছাদতুল মেহেরের পুত্র। তিনি অ্যামেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ থেকে ২০১৫ সালে ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। বর্তমানে তিনি আইসিআরসির ফিল্ড অফিসার হিসেবে কক্সবাজারে কর্মরত আছেন।
র‌্যাব শনিবার দুপুরে তাদের আটকের বিষয়টি সাংবাদিকদের জানায়। গ্রেফতার ইমরানের বড় ভাই মোঃ বেলাল সাংবাদিকদের বলেন, ইমরান প্রিমিয়ার সিমেন্টের লজিস্টিক বিভাগে চাকরি করে। তার কয়েকজন বন্ধু আছে, তারা সালাফি মতবাদে বিশ্বাস করে। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে। তবে জঙ্গিবাদি কোন কাজে তাদের আমরা দেখিনি। বেলাল বলেন, শনিবার সন্ধ্যায় হঠাৎ পুরাতন বিমান অফিসের পেছনে মসজিদের সামনে থেকে তাদের র‌্যাবের টিম তুলে নিয়ে যায়। তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছিল বলে র‌্যাব কর্মকর্তারা জানিয়েছিলেন।
র‌্যাব-৭ চট্টগ্রামের পরিচালক লে. কর্ণেল মিফতাহ উদ্দিন আহমেদ জানান, আটক সাতজনের সবাই উচ্চ শিক্ষিত। কয়েকজন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। তারা উগ্র মতাদর্শে বিশ্বাসী। তিনি বলেন, প্রত্যেকের ফেসবুক আইডি, হোয়াটস অ্যাপে দ্বীন ফোর্স এক্সট্রিম গ্রæপে তাদের কথোপকথন সবকিছুই আমাদের হাতে এসেছে। তারা জঙ্গি মতাদর্শ প্রচারে সক্রিয় আছে। নিশ্চিত হয়েই আমরা তাদের আটক করেছি।
র‌্যাবের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আটককৃতদের দেহ তল্লাশী করে জঙ্গি উস্কানিমূলক বই ও জঙ্গি কাজে ব্যবহৃত মোবাইল উদ্ধার করা হয়। গ্রেফতারকৃত মহিউদ্দিন, তামিম এবং মোঃ আজফার হোসেনের দেয়া তথ্য মতে তাদের বাসা থেকে বিপুল সংখ্যক উস্কানিমূলক বই ও ল্যাপটপ উদ্ধার করা হয়। তাদের ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তারা হোয়াটস অ্যাপে দ্বীন ফোর্স এক্সট্রিম ও ইখোয়ান নামক দুইটি গ্রæপে সক্রিয় থেকে জিহাদী ভিডিও ও বিভিন্ন দেশের মুসলিম নর-নারীদের উপর নির্যাতনের চিত্র প্রচার করছে এবং নিজেদেরকে জিহাদের জন্য প্রস্তুত করছে। এছাড়াও তারা আইএসকে অনুসরণের চেষ্টা করে। জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানা যায়, ২০১৩ সালে আসকার দিঘীর পশ্চিম পাড়ের আতরজান জামে মসজিদে ইবনে মোস্তাকের সাথে তাদের পরিচয় হয় এবং তার মাধ্যমে জঙ্গি তৎপরতায় উৎসাহী হয়ে উঠেন তারা।
তারা তথাকথিত জিহাদের মাধ্যমে খিলাফত প্রতিষ্ঠার জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন জঙ্গিগোষ্ঠীর সাথে যোগাযোগ ও এ দেশীয় সমমনা জঙ্গিদের একত্র করে নাশকতামূলক কর্মকাÐ করার কাজে লিপ্ত ছিল। এদিকে তাদের বিরুদ্ধে কোতোয়ালী থানায় সন্ত্রাস বিরোধী আইনে মামলা হয়েছে। মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা (আইও) থানার পরিদর্শক (তদন্ত) জাহিদুল করিম বলেন, তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চট্টগ্রাম

৩০ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ