রামগতিতে আ.লীগ নেতাকে বহিষ্কার
লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চরআলগী ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় ইউনিয়ন আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক সাহেদ আলী মনুকে দলীয় পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। গত
ফারাক্কার বিরূপ প্রতিক্রিয়ায় ও বাংলাদেশের সাথে ভারতের কথিত পানি চুক্তি অসার ও অকার্যকর হওয়ায় নড়াইল জেলা ও আশপাশের কয়েকটি জেলা এক সময়ের স্রোতস্বীনী নদ-নদী, খাল-বিল, এখন পানি শূন্য হয়ে পড়েছে।
চিত্রা, নবগঙ্গা, কাজলা, আফরা, নলিয়া, কালিগঙ্গা, মধুমতি ও নবগঙ্গার লোহাগড়া অংশে সংযুক্ত ছাতড়া বড় খাল স্রোতহীন কচুরিপানায় আচ্ছাদিত হয়ে পড়েছে। নৌ চলাচলা বন্ধ। জেলেদের মাছ ধরা বাঁধাগ্রস্থ। এ সব নদী আশে পাশে অসংখ্য বিলাঞ্চলের লাখ লাখ একর জমির চাষাবাদে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। বিশুদ্ধ পানি ও মৎস্য সম্পদ সংকট এখন প্রকট। বিগত চার দশকে ভারতের ফারাক্কার বিরূপ প্রভাবে এ সব নদ-নদীতে পানি প্রবাহ নেই বলেলই চলে।
যে কোন অঞ্চলের কৃষি উন্নয়নে পানি সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার একটি অন্যতম পূর্ব শর্ত। তাই প্রাচীন সভ্যতা মূলত গড়ে উঠেছিলো নদ-নদীর তীরবর্তী অঞ্চল সমূহে। ভারত কর্তৃক গঙ্গা, তিস্তার পানি একতরফা ব্যবহারের কারণে সৃষ্ট ভয়াবহ পরিনতি মোকাবেলার জন্য গঙ্গার পানির হিস্যা ও রাজনৈতিক সমাধানের উদ্যোগের পাশাপাশি বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণের পদক্ষেপ নেওয় জরুরি। এ দিকে নাব্যতা হ্রাস রোধ ও ড্রেজিং পরিকল্পনার উদ্যোগ নেই। তাই নিরব মরু প্রক্রিয়া দ্রুত ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। অপর দিকে বিষাক্ত কীটনাশক আরসেনিক কর্তৃক ভূগর্ভের সকল উপাদান, উপাত্ত ও শক্তিার ধ্বংসযজ্ঞ চলছে। মানুষের শ্বাস-প্রশ্বাসের অক্সিজেনকেও আক্রান্ত ও বিষাক্ত হওয়ার পরিবেশ সৃষ্টি হচ্ছে। এ অঞ্চলের নদী, খাল এখন মৃত প্রায়। ন্যব্যতা হ্রাস ও সৃষ্ট চরের সংখ্যাধিক্য ছাড়াও পানিবদ্বতা এবং প্রতিকারবিহিন ভাবে ফলসহানী, উচ্ছাভিলাসী পরিকল্পনার নামে রাশি রাশি সরকারি অর্থ অপচয় করে ভেড়িবাঁধ অন্যান্য প্রকল্পের মাধ্যমে জেলার কৃষকদের ভাগ্য উন্নয়নের বাহানা সৃষ্টি করে প্রকৃত পক্ষে জেলার কৃষি ও কৃষকদের অন্তহীন সমস্যার উল্লেখযোগ্য কোন কিনারা হয়নি। নদ-নদীগুলোর গতিপথ পরিবর্তনের ধারায় সৃষ্ট ছোট বড় হাওয়ড় বাওয়ড় নদী শিখস্তি এখন কৃষি জীবিদের অন্তহীন স্থায়ী ভোগান্তির কারণ।
১৯৭১ সালে ইতনা এলাকায় সৃষ্টি হয় বিশাল বাওড়। বড়দিয়া থেকে লাহুড়িয়া পর্যন্ত ওয়াফদার নির্মিত ভেড়ি বাঁধের কারণে ৩০ বছর ধরে এ বৃহৎ জনপদ পানিবদ্ধতার শিকার হয়ে কয়েক হাজার একর জমির ফসল বিনষ্ট হচ্ছে। কালিয়া উপজেলার বড় বিলা খালের পাশ্ববর্তী সহস্রাধিক একর, দিঘলিয়া বাঁশগ্রাম, মাউলি চাচুড়ি অঞ্চলের বিশ হাজার একর জমির পানিবদ্ধতা দূরিকরণে কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি। ৫০ বছর আগে শালনগর ইউনিয়নে সৃষ্টি হয় আরেকটি বৃহদাকার বাওড়। এ ছাড়া টোনার গোদা, ধৌলইতলা, কোটাকোলের বাওড়, তুসখালির দোয়া, নৌও খালির বাওড় ও ইছামতির বাওড় ইত্যাদি পানিবদ্ধ বাওড়ে মাছের উৎপাদন হলেও ফসলি জমির অবস্থা পোয়াবারো। বড়দিয়া থেকে লাহুড়িয়া পর্যন্ত ভেড়িবাধের কারণে দীর্ঘকাল ধরে ২৫টি গ্রাম ও ওই অঞ্চলের কয়েক হাজার একর জমির ফসল বিনষ্ট হয়। ৮০ বছর আগে ডুমদি মৌজা হতে চাচুড়ি পর্যন্ত ৮ কিঃ মিঃ খাল খনন করা হয়েছিলো। কিন্তু তা পূনঃখননের অভাবে পাশ্ববর্তী বিলাঞ্চলে ফসল উৎপাদনের সম্ভাবনা রহিত হয়েছে। পাশ্ববর্তী বুড়ি খালি খালে পানি নাই। নলীয়া নদীটি ভরাট হয়ে যাওয়ায় এর তীরবর্তী কয়েক লাখ মানুষের জীবন যাত্রা পরিবেশ গত ভোগান্তির শিকার হয়েছে। ৪০ কি.মি. দীর্ঘ নদীটি ৬০ শতাংশ এলাকা ভরাট হয়ে গেছে। নড়াগাতি থানার মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত এই নলীয়া নদী। এটি মধুমতির একটি শাখা। খুলনার ভৈরব নদীতে গিয়ে মিশেছে। নড়াগাতি থানার মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত এই নলীয়া নদী। এটি মধুমতি নদীর একটি শাখা। এটি খুলনার ভৈরবে গিয়ে মিশেছে। স্বাধীনতা পূর্ব কালে প্রথমবার নলীয়া নদীর সংস্কার হয়। এই নদীর তীরে গড়ে ওঠে পাটনা বাজার ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়। ভাওড়ির চরের হাট, কালী নগরের হাট, কলা বাড়িয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়, বিলধুপিয়ার বিশাল হাট, পাবখালি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, তেরখাদা উপজেলা কাটেঙ্গা হাট বাজার ও এখানকার মাধ্যমিক বিদ্যালয়, তেরখাদা নর্থ ডিগ্রী মহাবিদ্যালয়, পালের হাট, শেখ পুরা বাজার ও ব্যবসা কেন্দ্র গুলো এই নদীর দুই তীরে গড়ে উঠেছে। এই নদী পথে খুলনার সাথে লোহাগড়ার বড়দিয়া নৌবন্দরের ব্যবসায়িক যোগাযোগ এক সময় সহজ ছিলো। নদীটি মরণাপন্ন হওয়ায় এই বৃহৎ অঞ্চলের ব্যবসায়িক যোগাযোগ বন্ধ হতে চলেছে। এর কিছু কিছু স্থানে লোনা পানি এসে জীবন যাপনে বিপর্যয় সৃষ্টি করেছে।
২০১০ সালে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির আর্থিক সহযোগিতায় লোহাগড়ার তেলকাড়া থেকে দিঘলিয়া পর্যন্ত নবগঙ্গা নদীর ৮ দশমিক ৬৮কিঃ মিঃ অংশে খনন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। প্রায় আড়াই কোটি টাকা বাজেটের মধ্যে কাজ হয় সামান্য। তেলকাড়া, কলাগাছি, মাইগ্রাম, চরদিঘলিয়া, চরকোটাকোল, ভাটপাড়া ও দিঘলিয়া এলাকায় একটি কোদালের কোপও পড়েনি। ভুয়া শ্রমিক নিয়োগ ভুয়া হিসাব দাখিল করে নাম মাত্র খনন কাজের মাধ্যমে কোটি টাকা আত্মসাত করা হয়। এ নিয়ে ওই সময় পত্র পত্রিকা সরব ছিলো।
কোন অঞ্চলের সার্বিক উন্নয়ন বিশেষ করে কৃষি নির্ভর আর্থ সামাজিক ব্যবস্থার উন্নয়নে নদ-নদীর খালের পানি প্রবাহ সৃষ্টি ও এর সদব্যবহার নিশ্চিত করাই প্রধান শর্ত। তাই ফারাক্কার বিরূপ প্রভাব ও করাল গ্রাসে দক্ষিণাঞ্চলে পানি ব্যবস্থাপনা বিনষ্ট হচ্ছে। এর আশু প্রতিকারের উদ্যোগ নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।