Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

চট্টগ্রামে পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসতি উচ্ছেদে বাধা

১৫ এপ্রিলের মধ্যে সরে যেতে সময় বেঁধে দিলো প্রশাসন

| প্রকাশের সময় : ১২ এপ্রিল, ২০১৮, ১২:০০ এএম

চট্টগ্রাম ব্যুরো : বাধার মুখে নগরীতে পাহাড়ে অবৈধ বসতি উচ্ছেদে অভিযান শেষ না করেই ফিরে গেছে জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত। পাহাড়ে মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে বসবাসকারীদের ১৫ এপ্রিলের মধ্যে সরে যাওয়ার সময় বেঁধে দিয়ে গতকাল (বুধবার) সকালে উচ্ছেদ অভিযান শুরু করে জেলা প্রশাসন। কয়েকটি ঘর উচ্ছেদ করতেই বাসিন্দারা সংঘবদ্ধ হয়ে ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু করেন। উচ্ছেদ অভিযানে অংশগ্রহণকারী কর্মকর্তাদের ঘিরে বিক্ষোভ আর হুমকি-ধমকি দিতে থাকে পাহাড়ের বাসিন্দারা। প্রতিকূল পরিস্থিতি এড়াতে অভিযান স্থগিত করে সেখান থেকে ফিরে যান ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাকারী কর্মকর্তারা। 

চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ২৮টি পাহাড়ে কয়েক হাজার পরিবার ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে। পাহাড় ধসে প্রাণহানি এড়াতে বর্ষার আগেই এসব বসতি উচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেয় প্রশাসন। পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় আগামী ১৫ এপ্রিলের মধ্যে এসব বসতি সরিয়ে নেয়ার সময়সীমা বেঁধে দেয়া হয়। একইসাথে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের এলাকা ছেড়ে যেতে গত কয়েকদিন ধরে প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং করা হয়। এ ধারাবাহিকতায় গতকাল বেলা ১১টায় নগরীর লালখান বাজারের জিলাপির পাহাড়ের পাদদেশে মতিঝর্ণায় অভিযান শুরু হয়।
প্রথমে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা হ্যান্ডমাইকে উচ্ছেদের ঘোষণা দিয়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসরতদের বসতি ছেড়ে যাবার নির্দেশ দেন। পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণভাবে গড়ে তোলা ১০টিরও বেশি কলোনিতে প্রায় ৫০টি এক কক্ষবিশিষ্ট ঘরের উপরে টিন এবং ত্রিপল কেটে দেয়া হয়। চারটি বৈদ্যুতিক মিটারের তার কেটে সেগুলো অকেজো করে দেয়া হয়। প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা ধরে এই অভিযান চলার পর এক পর্যায়ে বাসিন্দারা বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন। বিভিন্ন বাসা থেকে নারী-পুরুষেরা একযোগে বের হয়ে আসতে থাকেন। তারা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে অভিযানে অংশ নেয়া কর্মকর্তাদের ঘেরাও করে ফেলেন। এ অবস্থায় পুলিশ নিরাপত্তা দিয়ে অভিযানে থাকা জেলা প্রশাসনের ছয় জন সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) পাহাড়ের ভেতর থেকে বের করে আনেন। বেলা ১২টায় বাটালি পাহাড়ের প্রবেশমুখে জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের ঘিরে ধরে শ্লোগান দিতে থাকেন কয়েকশ নারী-পুরুষ। এসময় তাদের উদ্দেশ্য করে গালিগালাজও করতে দেখা গেছে।
অভিযান পরিচালনাকারী জেলা প্রশাসনের সদর সার্কেলের সহকারী কমিশনার আবদুল্লাহ আল মনসুর বলেন, আমরা কয়েকদিন ধরে এলাকায় মাইকিং করে ঝুঁকিতে বসবাসরতদের সরে যেতে বলেছিলাম। এ কারণে তারা সংগঠিত হওয়ার সুযোগ পেয়েছে এবং পরিকল্পিতভাবে তারা কাজে বাধা দিয়েছে। মনে হচ্ছে, অবৈধভাবে বসবাসরতদের কেউ কেউ পৃষ্ঠপোষকতা এবং উস্কানি দিয়েছেন। তিনি বলেন, যেহেতু বিক্ষোভ হচ্ছে, সামগ্রিক পরিস্থিতিতে আমরা অভিযান স্থগিত করেছি। বিষয়টি আমরা জেলা প্রশাসক মহোদয়কে জানাব। আমরা মিটিং করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেব। আবদুল্লাহ আল মনসুর বলেন, আমরা পাহাড় থেকে উচ্ছেদ করি মানুষের জীবন বাঁচাতে। কারো জীবনকে শঙ্কায় ফেলতে নয়। তাই অভিযান অসম্পূর্ণ রেখেই ফিরে এসেছি।
বিক্ষোভকারীদের কয়েকজন জানান, তারা এসব ঘরে কম ভাড়া দিয়ে বসবাস করেন। উচ্ছেদ করা হলে তারা বিপদে পড়বেন। উচ্ছেদের সময় তাদের বাসার আসবাবপত্র ভাঙচুর করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তারা। কয়েকজন অধিবাসী জানান, বর্ষা শুরু হলে তারা এসব ঘরে থাকেন না। এ অবস্থায় এখন তাদের উচ্ছেদ করা জুলুম বলেও দাবি করেন কেউ কেউ।
অভিযানে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন এবং সহকারী কমিশনার (ভূমি), সদর সার্কেল আব্দুল্লাহ আল মনসুর নেতৃত্ব দেন। সঙ্গে ছিল নগর পুলিশ, আনসার, ফায়ার সার্ভিস, চট্টগ্রাম ওয়াসা, কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড এবং বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা। অভিযানের শুরুতে ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য সচিব অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, নগরীর ২৮টি ঝুকিপুর্ণ পাহাড়ে কয়েক হাজার অবৈধ বসতি স্থাপনাকারী আছে। পর্যায়ক্রমে সব পাহাড় থেকে বসতিস্থাপনাকারীদের উচ্ছেদ করা হবে।
পাহাড়ের ব্যবস্থাপনার কমিটির অনুসন্ধানে চট্টগ্রাম নগরীতে ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড় রয়েছে ৩১টি। ২০০৭ সালের ১১ জুন নগরীর পাহাড়তলী, লালখান বাজার, আমবাগান, কুসুমবাগ ও টাংকির পাহাড় এলাকায় পাহাড় ধ্বসে ১২৭ জন নিহত হয়। এরপর থেকে প্রায় প্রতি বছরই নগরীতে পাহাড় ধসে প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। বর্ষা মৌসুম আসার আগে প্রতিবার নগরীর ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়গুলো থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে অভিযান চালায় জেলা প্রশাসন।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চট্টগ্রাম

৩০ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ