নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
এইতো গত বছরের ঘটনা। উপলক্ষ্যও একই, এই চ্যাম্পিয়ন্স লিগ। সেদিনও মাঠের লড়াইয়ে আজকের বার্সেলোনাই। চিত্রপটটা খালি ভিন্ন। শেষ ষোল’র দ্বিতীয় লেগ। প্রথম লেগে এগিয়ে থাকা প্যারিস সেন্ট জার্মেইয়ের বিপক্ষে অসম্ভব এক জয়ে কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করেছিল স্প্যানিশ জায়ান্টরা। ৩ মিনিটে লুই সুয়ারেজের গোলে বার্সার এগিয়ে যাওয়া। ৪০ মিনিটে ইনিয়েস্তার ব্যাক হিল থেকে কুরজাওয়ার আত্মঘাতী গোলে সেটি হয়ে গেল ২-০। ৫০ মিনিটে লিওনেল মেসি স্কোরলাইন ৩-০ করলেন নেইমারের আদায় করা পেনাল্টি থেকে। ৬১ মিনিট পর্যন্ত ৩-০ গোলে এগিয়ে থাকার পরও ম্যাচের ‘ক্লাইম্যাক্স’ ৬২ মিনিটে- পিএসজি ম্যাচে ফেরে এডিসন কাভানির গোলে। কিন্তু ‘অ্যান্টিক্লাইম্যাক্স’ তখনো বাকি। বাকি চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ইতিহাসে ঘুরে দাঁড়ানোর দুর্দান্ত গল্পটা রচিত হওয়ার।
৮৭ মিনিট পর্যন্ত বার্সার তিন গোলের ঘাটতি। ঠিক এরপরই ন্যু ক্যাম্পের সব আলো নিজের দিকে টেনে নিলেন নেইমার। ৮৮ মিনিটে ফ্রি কিক থেকে গোল করলেন। যোগ করা সময়ের শুরুতে পেনাল্টি থেকে আবার গোল! ৯৫ মিনিটে নেইমারেরই দুর্দান্ত ফ্রি কিকে নিখুঁত ফ্লিক করলেন সার্জি রবার্তো! দুই লেগ মিলিয়ে ৬-৫ ব্যবধানে পিএসজিকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের কোয়ার্টার ফাইনালে বার্সা। অবিশ্বাস্য! অবিশ্বাস্য!
গতবছরের ন্যু ক্যাম্পের সেই চিত্রনাট্যই যেন ফিরে এল রোমার স্টেডিও অলিম্পিয়াকোয়। তবে এবার সেই দুর্ভাগ্যের ‘শিকার’ বার্সা। প্রথম লেগে ৩-০ গোলে পিছিয়ে থাকায় এদিন শক্তিশালী বার্সেলোনার বিপক্ষে শুধু জিতলেই হতো না, মেলাতে হতো কঠিন সমীকরণও। পুরো ম্যাচে দুর্দান্ত খেলে সেই অসাধ্যই সাধন করলো রোমা। গড়লো ইতিহাস। মৌসুমজুড়ে দারুণ ছন্দে থাকা এরনেস্তো ভালভর্দের দলকে ছিটকে দিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমি-ফাইনালে উঠে গেল ইতালিয়ান ক্লাবটি। গেলপরশু রাতের ফিরতি লেগে ৩-০ গোলে জিতে ইউসেবিও দি ফ্রান্সেসকোর দল। গত সপ্তাহে ক্যাম্প ন্যু’য়ে ৪-১ ব্যবধানে জিতেছিল বার্সেলোনা। দুই লেগ মিলিয়ে স্কোরাইন ৪-৪ হলেও অ্যাওয়ে গোলের সুবিধা নিয়ে শেষ চারে নাম লিখিয়েছে ইতালির ক্লাবটি। প্রথমবারের মতো প্রথম লেগে তিন গোলের ব্যবধানে হারের ধাক্কা কাটিয়ে প্রতিযোগিতার শেষ চারে ওঠার কীর্তি গড়লো রোমা। একই সঙ্গে প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমি-ফাইনালে উঠলো ১৯৮৩-৮৪ মৌসুমে ইউরোপিয়ান কাপের ফাইনাল খেলা দলটি।
স্কোরলাইনই বলে দিচ্ছে, একতরফা হয়েছে ম্যাচ। কিন্তু মেসি, সুয়ারেজ, ইনিয়েস্তাদের বিপক্ষে জেকো-ডি রসিদের একতরফা খেলাটা কেমন যেন খাপছাড়া শোনায়। কিন্তু বাস্তবে ঘটেছে সেটিই। গ্যালারির পূর্ণ সমর্থন নিয়ে শুরু থেকেই ধারালো রোমার আক্রমণ। পুরো ম্যাচে দারুণ খেলাএডেন জেকো গোল পান ৬ মিনিটেই। ডি রসির ক্রস ধরে টের স্টেগেনকে পরাস্ত করে উল্লাসে মাতেন। প্রথমার্ধ গোল ওই একটিই। বার্সেলোনা মাঝ মাঠে বল দখলে রাখলেও শানাতে পারেনি ধারালো আক্রমণ। তাদের সেরা তারকা লিওনেল মেসিও ছিলেন বিবর্ণ। এলোমেলো ছুটেছেন লুইস সুয়ারেস।
দ্বিতীয়ার্ধে ফিরে গোল পেতে আরও মরিয়া হয়ে উঠে রোমা। বারবার বার্সার রক্ষণ ভেদ করে বিপদজনক আক্রমণ তৈরি করছিলেন ডি রসি, এডেন জেকোরা। ৫৭ মিনিটে জেকোর সেরকম একটি প্রচেষ্টা ঠেকাতে গিয়ে ভুল করে বসেন জেরার্ড পিকে। জেকোকে বক্সের মধ্যে ফেলে খান হলুদ কার্ড, দলের বিপক্ষে যায় পেনাল্টি। পেনাল্টি থেকে প্রথম লেগে আত্মঘাতী গোল করার ভুলের প্রায়শ্চিত্ত করে রোমাকে ২-০ গোলে এগিয়ে নেন ডি রসি। ডি রসিকে প্রায়শ্চিত্ত করতে দেখেই যেন জেগে উঠেন মনোলাস। ম্যাচের সবচেয়ে রোমাঞ্চকর গোলটি তিনিই করেছেন। ৮২ মিনিটে কর্নার থেকে বল পেয়ে হেডে বল জালে ঢুকিয়ে মেসিদের স্তব্ধ করে দেন তিনি। ক্যাম্প ন্যু’য়ে আত্মঘাতী গোল করে খলনায়ক হয়েছিলেন ডি রসি ও মানোলাস। ঘরের মাঠে গোল করে তারাই এখন নায়ক। শেষ বাঁশি বাজার সঙ্গে সঙ্গে রোমার বেঞ্চের সব খেলোয়াড়-কোচরা মাঠে ছুটে যান উৎসবে যোগ দিতে। গ্যালারিতে সমর্থকদের চোখে ছিল অশ্রু, নিজেদের অবিশ্বাস্য অর্জনটাকে যেন বিশ্বাসই হচ্ছিল না!
পাঁচবারের ইউরোপ চ্যাম্পিয়ন বার্সেলোনা এই নিয়ে টানা তিন মৌসুমে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের কোয়ার্টার-ফাইনাল থেকে ছিটকে পড়লো। গতবারও ২০১৪-১৫ আসরের চ্যাম্পিয়নদের বিদায়ের চিত্রনাট্য লিখেছিলো আরেক ইতালিয়ান ক্লাব, জুভেন্টাস। সেদিন ভেন্যু ছিল অবশ্য তুরিন। যত যাই হোক, এবারের বিদায়টা কারও কল্পনাতেও ছিল না। প্রথম লেগে তিন গোল ব্যবধানে এগিয়ে থেকেও হার- এ যেন বিনা মেঘে বজ্রপাত! স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম ‘মুন্দো দেপোর্তিভো’র কাছে তাই বার্সার এই হার ‘ঐতিহাসিক পতন’। ‘মার্কা’র ঘোষণা ‘বার্সা সাম্রাজ্যের পতন’। অথচ এই কালরাতের ম্যাচের আগে ইতালিয়ান সংবাদমাধ্যম ‘গাজেত্তা দেল্লো স্পোর্ত’-এর শিরোনাম ছিল ‘মিশন ইমপসিবল’। রোমা তা ‘পসিবল’ করায় লিওনেল মেসি-আন্দ্রেস ইনিয়েস্তাদের নিশ্চয়ই হৃদয় ভেঙেছে? বার্সায় ১৩ বছর ধরে খেলা সার্জিও বুসকেটস যেমন বলেই দিয়েছেন, ‘যেভাবে সবকিছু ঘটছে, তা আমার বার্সা ক্যারিয়ারে সবচেয়ে বড় ধাক্কা।’
ধাক্কা আন্দ্রেস ইনিয়েস্তার জন্যও। বার্সার ৩৩ বছর বয়সী এই তারকা মিডফিল্ডার জানিয়ে দেন, ‘চ্যাম্পিয়ন্স লিগে এটাই আমার শেষ ম্যাচ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এবং সে জন্য আরও বেশি খারাপ লাগছে। এটা খুব কষ্টের বিদায়, কারণ এগিয়ে থাকায় কেউ তা আশা করেনি।’ মেসির কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। এমন হারের পর আর কীই-বা বলা যায়! কোয়ার্টার ফাইনালের দুই লেগ মিলিয়ে যে তার পায়ে গোল নেই।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।