Inqilab Logo

শনিবার ০২ নভেম্বর ২০২৪, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ২৯ রবিউস সানী ১৪৪৬ হিজরি

মহাসড়ক হবে ১০ লেনের

সড়ক নেটওয়ার্ক ডিজাইন স্ট্যান্ডার্ডের চূড়ান্ত খসড়া

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১১ এপ্রিল, ২০১৮, ১২:০০ এএম

 দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কে হবে ১০ লেনের। সব জাতীয় মহাসড়ক হবে চার লেনের এবং গুরুত্ব অনুযায়ী এসব সড়কের প্রশস্ততা বাড়বে। মহাসড়ককে ধীরগতির যানবাহনের জন্য পৃথক লেন থাকবে। এছাড়া শহর এলাকায় কোনো মহাসড়কের অংশ থাকলে সেখানে মানুষের হাঁটার জন্য ফুটপাত থাকবে। জনবহুল এলাকায় পৃথক বাইসাইকেল লেনও থাকবে। সড়ক বিভাজক (মিডিয়ান) হবে কমপক্ষে চার ফুট। এসব শর্ত রেখেই সড়ক নেটওয়ার্কের ডিজাইন স্ট্যান্ডার্ডের খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ) সূত্র জানায়, খসড়াটি অনুমোদনের জন্য সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়া হয়েছে।
খসড়া প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশের জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়ক এবং জেলা সড়কের দায়িত্বে রয়েছে সওজ। এগুলোর ডিজাইন স্ট্যান্ডার্ড ১৯৮৪, ১৯৯৬ ও ২০০৫ সালে উন্নয়ন করা হয়। তবে এগুলোয় চলাচলের জন্য নির্ধারিত গাড়ির সংখ্যার কোনো আদর্শ মান নেই। পিক সময়ে সর্বোচ্চ কত গাড়ি চলতে পারে, তার ভিত্তিতে এগুলোর ডিজাইনের ধরন চূড়ান্ত করা হয়েছে। এক্ষেত্রে সব সড়ক-মহাসড়কই দুই লেনের ধরা ছিল। তবে সড়কের এ স্ট্যান্ডার্ড ২০২১ ও ২০৪১ সালের ভিশন অনুযায়ী অর্থনৈতিক উন্নয়নের লক্ষ্য অর্জনে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করবে। তাই সড়ক-মহাসড়কের গুণগত উন্নয়ন দরকার।
প্রতিবেদনে বলা হয়, আমেরিকার হাইওয়ে ক্যাপাসিটি বিবেচনায় বর্তমানে বাংলাদেশের মহাসড়কগুলো ‘ই’ ক্যাটাগরি লেভেলের। অর্থাৎ বিদ্যমান মহাসড়ক খুবই সংকীর্ণ ও এতে ওভারটেকিং অসম্ভব। এছাড়া কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে এসব মহাসড়কে নিরাপত্তা, নির্ভরশীলতা ও গতিময় চলাচল ব্যাহত হয়। তাই বাংলাদেশের মহাসড়কগুলো কমপক্ষে ‘সি’ ক্যাটাগরিতে উন্নীত করা দরকার। এতে সড়কগুলোতে দ্রæতগতিতে চলাচল নিশ্চিত করা যাবে। এছাড়া সওজের বিভিন্ন সড়ক এশিয়ান হাইওয়ে, সাসেক, সার্ক, বিমসটেক ও বিসিআইএম করিডরভুক্ত। তাই এগুলোর আদর্শ অর্জনেও নতুন ডিজাইন স্ট্যান্ডার্ড দরকার।
২০০৫ সালের স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় মহাসড়কে পিক আওয়ারে ঘণ্টায় সাড়ে চার থেকে সাড়ে আট হাজার গাড়ি চলাচল করবে। এজন্য ছয় লেনের মহাসড়ক নির্মাণ করতে হবে। এর মূল ক্যারেজওয়ে প্রস্থ ধরা হয়েছিল ২২ মিটার। পাশাপাশি সড়কের দুই দিকে মোট দেড় মিটার হার্ড সোল্ডার ও অযান্ত্রিক বাহনের জন্য তিন মিটার অংশ থাকবে। আর সড়কের পাশে ঢালু পথ থাকবে এক মিটার। গাড়ির সংখ্যা কম হলে মূল ক্যারেজওয়ে ও অন্যান্য অংশের প্রস্থ কম হবে। পাশাপাশি সড়কে লেনের সংখ্যাও কমবে।
খসড়া স্ট্যান্ডার্ডে জাতীয় মহাসড়কের গতিসীমা ধরা হয়েছে ঘণ্টায় ৮০-১০০ কিলোমিটার। আঞ্চলিক মহাসড়কে এ গতিসীমা হবে ৬৫-৮০ কিলোমিটার ও জেলা সড়কে ৫০-৬৫ কিলোমিটার। তবে আঁকাবাঁকা সড়ক ও পার্বত্য জেলায় এ গতি কিছুটা কম হবে। এ অনুপাতে ডিজাইন স্ট্যান্ডার্ড চূড়ান্ত করা হয়েছে। এতে প্রতিটি লেনের প্রস্থ হবে ৯ থেকে ১২ ফুট আর সোল্ডার হবে তিন ফুটের। সড়ক বিভাজক হবে কমপক্ষে চার ফুটের। তবে স্বাভাবিকভাবে এটি ১০ থেকে ১৭ ফুট করা হবে। আর শহর অঞ্চলে সড়ক বিভাজক হবে কমপক্ষে দুই ফুট উঁচু।
বৃষ্টিতে যাতে সড়ক-মহাসড়ক নষ্ট না হয়, সেজন্য পানি নিষ্কাশন (ড্রেনেজ) ব্যবস্থা রাখতে হবে। আর মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে বাস থাকার জন্য বাস-বে নির্মাণ করতে হবে। শহুরে এলাকায় জনগণের হাঁটার জন্য মহাসড়কে পাশে ফুটপাত ও জনবহুল এলাকায় দুই মিটার (সাড়ে ছয় ফুট) প্রস্থের সাইকেল লেন নির্মাণ করতে হবে। মহাসড়ককে এক্সপ্রেসওয়ের মতো গতিতে গাড়ি চলাচলের জন্য ধীরগতির যানবাহনের পৃথক লেন থাকবে। এছাড়া সড়কের পাশে বিভিন্ন পরিষেবা সংযোগ লাইন নেওয়ার জন্য নির্দিষ্ট চিহ্নিত স্থান থাকতে হবে।
নতুন স্ট্যান্ডার্ডে জাতীয় মহাসড়কে দৈনিক ভিত্তিতে গাড়ি চলাচলের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এতে বলা হয়, সবচেয়ে ব্যস্ত ও গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কে দৈনিক ৮৫ হাজার থেকে এক লাখ ৩০ হাজার যানবাহন চলাচল করবে। এক্ষেত্রে মহাসড়কটি হতে হবে ১০ লেনের। এজন্য মূল সড়কের প্রস্থ প্রস্তাব করা হয়েছে ৩৬ দশমিক ৪০ মিটার। পাশাপাশি সড়কের দুই দিকে মোট তিন মিটার হার্ড সোল্ডার ও ধীরগতির যানবাহনের জন্য সাড়ে পাঁচ মিটার অংশ থাকবে। আর সড়কের পাশে ঢালু পথ থাকবে এক মিটার। আর গ্রামাঞ্চলে সড়ক বিভাজক হবে তিন মিটার। তবে শহর এলাকায় ঢালাই দুই ফুটের উঁচু সড়ক বিভাজক দিতে হবে।
অন্যদিকে, দৈনিক ৬৫ থেকে ৮৫ হাজার যান চলাচলের জন্য আট লেনের মহাসড়ক নির্মাণের সুপারিশ করেছে সওজ। এতে হার্ড সোল্ডার হবে তিন মিটারের। আর বাকি সব বৈশিষ্ট্য একই হবে। এছাড়া ৪০ থেকে ৬৫ হাজার যান চলাচল করলে মহাসড়ক হতে হবে ছয় লেনের। আর ১৫ থেকে ৪০ হাজার যান চলাচলে লাগবে চার লেনের মহাসড়ক। এগুলোর হার্ড সোল্ডার হবে ১ দশমিক ৮ মিটারের। অন্যান্য বৈশিষ্ট্য অপরিবর্তিত থাকবে।১৫ থেকে ৪০ হাজার যান চলাচলের জন্য প্রস্তাবিত আঞ্চলিক মহাসড়কও হবে চার লেনের। তবে এগুলোর হার্ড সোল্ডার হবে ১ দশমিক ৫ মিটারের। অন্যান্য বৈশিষ্ট্য অপরিবর্তিত থাকবে। অন্যান্য আঞ্চলিক মহাসড়ক ও জেলা সড়ক যান চলাচল অনুপাতে প্রশস্ত কম হবে।
উল্লেখ্য, ২০০৫ সালে সর্বশেষ সড়কের ডিজাইন স্ট্যান্ডার্ড চূড়ান্ত করা হয়। এতে সর্বোচ্চ ছয় লেনের মহাসড়কের সুপারিশ করা হয়। এরপর এক যুগ পেরিয়ে গেলেও তা পরিবর্তন হয়নি। অথচ এ সময়ে বিভিন্ন সড়কে গাড়ির সংখ্যা কয়েক গুণ বেড়ে গেছে। এ কারনেই দেশের সড়ক-মহাসড়কের সক্ষমতা বৃদ্ধির উদ্যোগ নিয়েছে সওজ।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মহাসড়ক

২৮ ডিসেম্বর, ২০২২
২১ ডিসেম্বর, ২০২২
২০ সেপ্টেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ