পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রাজধানীর গুলিস্তান-যাত্রাবাড়ী মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারে যাত্রী পারাপারের জন্য আছে অর্ধশতাধিক মিনিবাস। রুটপারমিটবিহীন বাসগুলো সারাদিনই ট্রিপ মারার প্রতিযোগিতায় ব্যস্ত থাকে। কারন ফ্লাইওভারের ভাড়া নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি। শুধু হানিফ ফ্লাইওভার নয়, রাজধানীর প্রতিটি রুটের বাসের চালকরা বেশি যাত্রী নিয়ে কার আগে কে যাবে- সেই অসুস্থ প্রতিযোগিতা লিপ্ত থাকে। এতে প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা। ঝরছে প্রাণ। গত সপ্তাহে মাত্র তিনদিনের ব্যবধানে এ অসুস্থ প্রতিযোগিতার শিকার হয়েছে সরকারি তিতুমীর কলেজের ছাত্র রাজীব হোসেন এবং গৃহবধূ আয়েশা। ইতোমধ্যে রাজীবের একটি হাত কেটে ফেলতে হয়েছে। তার জীবন সঙ্কটাপন্ন। আয়েশাও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। রাজীব কলেজের ক্লাসে যাওয়ার পথে বাংলামোটরে স্বজন পরিবহন ও বিআরটিসির বাস চাপায় এবং আয়েশা ছয় বছর বয়সী মেয়ে আহনাবিকে নিয়ে রিকশায় লালবাগের বাসায় ফেরার পথে ঢাকা কলেজের সামনে বিকাশ পরিবহনের চাপায় মারাত্মক আহত হন।
রাজধানীর গুলিস্তান এলাকায় হানিফ ফ্লাইওভারের নিচে দিনে রাতে মিনিবাসের যাত্রীবোঝাই করে ওপাড়ে যাওয়ার জন্য ব্যস্ত থাকে। ফ্লাইওভার থেকে নিচে নামতে কি না নামতে যাত্রীরা দৌড়ে গিয়ে বাসে ওঠার চেষ্টা করে। একই সময়ে বাসের যাত্রীরা নামতে গিয়ে বাঁধে ঠেলাঠেলি-ধাক্কাধাক্কি। পুলিশের সামনেই বাসগুলো ঘুরিয়ে দিয়ে চালকরা বাসের সম্মুখভাগ আরেক বাসের সামনে দিয়ে দাঁড়ায়। একটার সাথে আরেকটার ধাক্কা লাগে। যাত্রীরা ব্যাথা পায়, আহত হয়। কিন্তু তাতে চালক বা বাসের কন্ডাক্টর হেলপারের কিচ্ছু আসে যায় না। তাদের লক্ষ্য থাকে কে কতো বেশি যাত্রী তুলতে পারে। পথিমধ্যেই কে কার আগে যাবে- সে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়ে দুই বাসই গতি বাড়িয়ে দেয়। তাতে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কায় যাত্রীরা ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে। অথচ কেউ প্রতিবাদ করে না। ভুক্তভোগিদের মতে, প্রতিবাদ করে কোনো লাভ নেই। কে শুনবে কার কথা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে হানিফ ফ্লাইওভারে যাত্রী পারাপারের জন্য অর্ধশতাধিক মিনিবাসের কোনো রুটপারমিট নেই। ট্রাফিক পুলিশকে মাসোহারা দিয়ে চলে এসব বাস। এ কারনে বাসগুলোতে কয়েকগুণ বেশি ভাড়া আদায় করা হয়। গুলিস্তান থেকে শনিরআখড়ার ভাড়া ৫টাকা হওয়ার কথা। সেখানে আদায় করা হয় ১৫ টাকা।
একই চিত্র রাজধানীর বিভিন্ন এলাকারও। বিশেষ করে সকালে অফিস সময়ে যাত্রীরা তখন সময় বাঁচাতে বাস ধরতে ব্যস্ত তখন বেশি ট্রিপের আশায় বাসগুলো লিপ্ত হয় আগে যাওয়ার অসুস্থ প্রতিযোগিতায়। সে সময় যাত্রীরাও হুড়োহুড়ি করে বলে প্রতিনিয়ত ঘটে দুর্ঘটনা। এরকম দুর্ঘটনায় প্রতিদিনই কমবেশি আহত হচ্ছে যাত্রীরা। কোনো কোনো সময় প্রাণহানীর ঘটনাও ঘটছে। যাত্রী কল্যাণ সমিতির তথ্য মতে, ২০১৭ সালে রাজধানীসহ সারা দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছে ৭ হাজার ৩৯৭ জন। পঙ্গু হয়েছে ১ হাজার ৭২২ জন। এ ছাড়া আহতের সংখ্যা ১৬ হাজার ১৯৩। মোট দুর্ঘটনার সংখ্যা ৪ হাজার ৯৭৯। যাত্রী কল্যাণ সমিতির পরিসংখ্যান বলছে, দুর্ঘটনায় ২০১৬ সালের তুলনায় ২০১৭ সালে সড়কে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েছে ১ হাজার ৩৪২। ব২০১৬ সালে এ সংখ্যা ছিল ৬ হাজার ৫৫। দুর্ঘটনা ঘটে ৪ হাজার ৩১২টি।
আলাপকালে কয়েকজন বাসের চালক ও হেলপার জানান, রাজধানীতে চলাচলকারী বেশিরভাগ বাস মিনিবাস চলে চুক্তিতে। সারাদিন শেষে তেল-মবিলের টাকা বাদে মালিককে দিতে হবে সাড়ে তিন হাজার টাকা। বড় বাসের ক্ষেত্রে টাকার পরিমাণ আরও বেশি। এ কারনে বাসের চালক, হেলপার ও কন্ডাক্টারের াায় নির্ভর করে দিনে তারা কতোগুলো ট্রিপ মারলো তার উপর। নিজেদের আয় বাড়াতেই তাই তারা ট্রিপ বেশি মারার জন্য অসুস্থ প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়। এর সাথে একেক ট্রিপে যতো বেশি যাত্রী তুরতে পারে ততোই বেশি আয়।
বিহঙ্গ পরিবহন বাসের এক চালক বলেন, সকাল থেকে ট্রিপ মারলে সারাদিনে মালিকের টাকা দিয়েও দুই হাজার টাকার মতো থাকে। কন্ডাক্টার এর চেয় কিছু বেশি পায়। আর হেলপার পায় এক হাজার টাকার মতো। ওই চালক বলেন, প্রতিযোগিতায় লিপ্ত না হলে সময়মতো একটা ট্রিপ মিস করলে টাকার পরিমান অনেক কমে যাবে। তখন স্ত্রী-সন্তান নিয়ে চলবো কিভাবে?
মিরপুর রুটের আরেক চালক বলেন, রাইড শিয়ারিং নীতিমালা অনুমোদন হওয়ায় স্মার্টফোনের অ্যাপসের মাধ্যমে বাড়ছে ছোট যানবাহন চলাচল। প্রাইভেটকার ও ছোট যানবাহনের কারণে দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে যানজট। এজন্য বাসের ট্রিপও কমছে, আমাদের ইনকামও কমছে। ইনকাম বাড়াতেই আমরা একটু তাড়াহুড়া করি। আগে যাওয়ার চেষ্টা করি। এতে দুর্ঘটনা ঘটছে এ কথা স্বীকার করে ওই চালক বলেন, রাস্তায় চললে দুর্ঘটনা ঘটবেই। রাজধানীসহ সারাদেশেই গণপরিবহন ব্যবস্থা চলছে বিশৃঙ্খল অবস্থায়। বাস-মিনিবাসের নেই কোন নির্দিষ্ট নিয়ম ও নীতিমালা। জানা গেছে, সারাদেশের গণপরিবহন ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা আনতে বিশ^ব্যাংকের পরামর্শে ২০১১ সালে প্রণয়ন করা সড়ক পরিবহন আইনের খসড়া। সর্বশেষ তিন দফা পরিবর্তন করে সড়ক পরিবহনে শৃঙ্খলা, সড়ক নিরাপত্তার উন্নয়নে ও দুর্ঘটনা কমানো লক্ষ্যে থ্রি-ই অর্থাৎ ইঞ্জিনিয়ারিং, এডুকেশন এবং ইনফোর্সমেন্টকে গুরুত্ব দিয়ে ১৭৭টি ধারা ও ১২টি তফসিল সম্বলিত দ্য মোটর ভেহিকল অধ্যাদেশ-১৯৮৩’র স্থলে মৌলিক বিষয় অপরিবর্তিত রেখে ৭২টি ধারা ও ১টি তফসিল সম্বলিত সড়ক পরিবহন আইন-২০১৭ এর খসড়া বাংলায় প্রণয়ন করা হয়। গত বছর মার্চে সড়ক পরিবহন আইন-২০১৭ খসড়া মন্ত্রিপরিষদে অনুমোদনের পর আইন মন্ত্রণালয়ে ভেটিংয়ে পাঠানো হয়। বর্তমানে তা আইন মন্ত্রণালয়ে ভেটিং অবস্থায় পড়ে আছে। তাই ৬ বছরে চূড়ান্ত হয়নি সড়ক পরিবহন আইন।
এ ব্যাপারে যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, রাজধানীতে সমন্বিত গণপরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তোলার বিকল্প নেই। ঢাকাসহ আশপাশের জেলাসমূহকে এই পরিকল্পনার আওতায় আনতে হবে। যানজট নিরসন, অবৈধ দখল উচ্ছেদে নিতে হবে কার্যকর ব্যবস্থা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।