পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
চীনের সহায়তায় নির্মাণাধীন কর্ণফুলী টানেলের সুবাদে বিনিয়োগ শিল্পায়ন কর্মসংস্থানের দুয়ার খুলছে : এলএনজি টার্মিনালের সরবরাহ দিয়ে গ্যাস বিদ্যুৎ ঘাটতি নিরসন হবে : শিল্প প্লট সঙ্কট সমাধানের উদ্যোগ
শফিউল আলম : রফতানিমুখী শিল্প, কল-কারখানার সমৃদ্ধশালী ঐতিহ্যের পথে ঘুরে দাঁড়াতে যাচ্ছে বন্দরনগরীসহ বৃহত্তর চট্টগ্রাম। চীনের অর্থায়নে ও কারিগরি সহযোগিতায় বহুল প্রত্যাশিত কর্ণফুলী টানেল নির্মাণের বাস্তব কাজ শুরু হয়ে গেছে। এরফলে সমগ্র দক্ষিণ চট্টগ্রাম, কক্সবাজার জুড়ে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ, শিল্পায়ন ও কর্মসংস্থানের দুয়ার খুলে যাবে। মহেশখালীর মাতারবাড়ীতে জাইকার মহাপরিকল্পনা অনুসারে এলএনজি টার্মিনাল থেকে পাইপলাইনে গ্যাস সরবরাহ শুরু হতে যাচ্ছে জুন মাসের মধ্যেই। এই সরবরাহ দিয়ে গ্যাস-বিদ্যুৎ ঘাটতি নিরসনের আশা করছেন শিল্পোদ্যোক্তারা। তাছাড়া শিল্পের প্লট অর্থাৎ স্থান সঙ্কট সমাধানের জন্যও সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে প্রচেষ্টা চলছে। সেই প্রচেষ্টার সাথে সম্প্রতি যুক্ত হয়েছে চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাষ্ট্রিজ। কেননা চেম্বার নেতৃবৃন্দ জোরালো আশাবাদী, আগ্রাবাদে দেশের প্রথম বিশ্ব বাণিজ্যকেন্দ্র (ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার) চেম্বারের একক প্রচেষ্টায় নির্মাণ সম্ভব হয়েছে। শিল্প স্থাপনের জন্য অর্থনৈতিক জোন স্থাপনেও চেম্বার সফল হবে। বর্তমানে শিল্প স্থাপনের উপযোগী প্লট বা স্থান সঙ্কটের কারণে আসছে না বিনিয়োগ। থমকে আছে শিল্পায়নের গতি। তাছাড়া দক্ষিণ চট্টগ্রামের আনোয়ারায় চীনা বিনিয়োগে বিশেষ অর্থনৈতিক জোন এবং উত্তর চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে অর্থনৈতিক জোনে অবকাঠামো স্থাপনের কাজ শুরু হয়েছে। যদিও কাজের গতি এখনও ধীর।
বৃহদায়তন, মৌলিক ও মাঝারি শিল্প, কল-কারখানার আদিস্থান বন্দরনগরী চট্টগ্রাম। দেশের প্রথম ইপিজেডসহ বেশক’টি শিল্পাঞ্চল রয়েছে এখানে। যার অবস্থান উত্তরে মিরসরাই থেকে দক্ষিণে আনোয়ারা-পটিয়া, পূর্বে চন্দ্রঘোনা ও রাঙ্গুনিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত। শিল্প-কারখানার মধ্যে রয়েছে- কাগজকল, রেয়ন শিল্প, সারসহ বিভিন্ন রাসায়নিক কারখানা, গার্মেন্টস শিল্প, পাটকল, বস্ত্রকল, সূতা কল, কার্পেট কারখানা, কম্পোজিট টেক্সটাইল মিল, সিমেন্ট শিল্প, চা শিল্প, চামড়া, স্টিল ও আয়রন শিল্প, জাহাজ-নির্মাণ ও মেরামত শিল্প, শিপব্রেকিং ইয়ার্ড-ভিত্তিক শিল্প-কারখানা, খাদ্য শিল্প, ভেজিটেবল অয়েল, পাহাড়তলী রেলওয়ে কারখানা, দেশের একমাত্র জ্বালানি তেল পরিশোধন কারখানা ‘ইস্টার্ন রিফাইনারি লিঃ (ইআরএল) এবং হিমায়িত খাদ্যসহ শতাধিক রকমের শিল্প কারখানা। এরমধ্যে পাট, বস্ত্রসহ বিভিন্ন খাতের শতবর্ষ পুরনো অনেকগুলো কারখানা জোড়াতালি মেরামত-সংস্কার করা হয় বছর বছর। অবশেষে বিকল, রুগ্ন ও বন্ধ হয়ে পড়ছে। নগরীর কালুরঘাট, নাসিরাবাদ, পাহাড়তলী হয়ে সীতাকুÐ পর্যন্ত বিশাল শিল্প এলাকায় ২০টির মতো পাটকল, বস্ত্রকল, কার্পেট মিলসহ ভারী কল-কারখানা সম্পূর্ণ অচল ও বন্ধ হয়ে গেছে। এখন সেখানে বেশিরভাগই নিত্য ও ভোগ্যপণ্যের গুদাম ও গোচারণভূমি হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। নামিদামি অনেক শিল্প-কারখানার জায়গায় নির্মিত হয়েছে এমএস রড তৈরির (স্টিলস রি-রোলিং) মিলস। শিল্প কল কারখানার সূতিকাগার বৃহত্তর চট্টগ্রাম অনেকাংশেই হারিয়েছে ঐতিহ্য। একের পর এক শিল্প-কারখানা রুগ্নœ অসাড় হয়ে পড়েছে। ধীরে ধীরে ছোট হয়ে এসেছে শিল্প-কল-কারখানার বৃহৎ জগত। সমগ্র শিল্প খাতেই বিরাজ করছে চরম বেহালদশা আর হতাশা। অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠান, কল-কারখানা রুগ্ন হয়ে পড়েছে। অথবা উৎপাদন চালু আছে আংশিক। চাপা কান্নায় গুমড়ে মরছে হাজার হাজার বেকার শ্রমিক।
বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের শিল্পখাতে চরম প্রধান কারণ চাহিদার বিপরীতে গ্যাস, বিদ্যুতের মারাত্মক ঘাটতি। আরও রয়েছে শিল্প-কারখানা স্থাপনের উপযোগী প্লট বা স্থান সঙ্কট। সর্বগ্রাসী চোরাচালানের কাছেও মার খাচ্ছে দেশীয় শিল্পের উৎপাদন। উৎপাদন খরচ বেড়েই চলেছে। চট্টগ্রামকে বিনিয়োগের ‘আদর্শ স্থান’ বলা হলেও বাস্তবে তেমন আসছে না বড় আকারে বিনিয়োগ। গ্যাস বিদ্যুৎ সঙ্কটে অনেক শিল্প-প্রতিষ্ঠান নিরবচ্ছিন্ন সচল রাখা যাচ্ছে না। উৎপাদন থমকে গেছে। গুরুতর স্থবিরতা নেমে এসেছে কর্মসংস্থানে।
অন্যদিকে চীনের অর্থায়ন উন্মুক্ত হওয়ায় কর্ণফুলী টানেল নির্মাণের পথ সুগম হয়েছে। যা চট্টগ্রামে বিনিয়োগ ও শিল্পায়নের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় ধরনের অবকাঠামো খাতের উন্নয়ন তথা মেগাপ্রকল্প। চীন সরকারের প্রত্যাশিত সবুজ সঙ্কেত পেয়ে কর্ণফুলী টানেল নির্মাণের মেগাপ্রকল্পে চায়না এক্সিম ব্যাংক ইতোমধ্যে প্রায় ১১শ’ কোটি টাকা ঋণের অর্থ ছাড় করেছে। খুব শিগগিরই আরও প্রায় ৭শ’ থেকে ৯শ’ কোটি টাকা ছাড় করার সম্ভাবনা রয়েছে। কর্ণফুলী টানেল নির্মাণে মোট ব্যয় হবে ৮ হাজার ৪৪৬ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। এরমধ্যে চীন দিচ্ছে এককভাবেই ৪ হাজার ৮শ’ কোটি টাকা। অর্থাৎ চীন এই মেগাপ্রকল্পের মূল অর্থ ও কারিগরি সহায়তাকারী।
তাছাড়া সম্প্রতি জ্বালানি উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী চট্টগ্রাম সফরকালে মাতারবাড়ী এলএনজি টার্মিনাল থেকে প্রাথমিকভাবে আগামী মে মাস নাগাদ গ্যাস সরবরাহ শুরুর সম্ভাবনার কথা জানিয়ে গেছেন। এরফলে চট্টগ্রামে গ্যাস এবং গ্যাস-চালিত বিদ্যুৎ প্রকল্পগুলোতে ঘাটতি অনেকাংশে লাঘব হবে। চট্টগ্রামের শিল্প, কল-কারখানা ফিরে পাবে প্রাণ।
এদিকে চট্টগ্রামে বিগত প্রায় দেড় দশক ধরে গ্যাস-বিদ্যুতের তীব্র সঙ্কটসহ বিভিন্ন কারণে বিনিয়োগ ও শিল্পায়ন মুখ থুবড়ে পড়ে। অনেকেই তল্পিতল্পা গুটিয়ে ট্রেডিং ব্যবসার জন্য রাজধানী ঢাকায় পাড়ি জমান। এ অবস্থায় গত কয়েক দশকে এ কে খান শিল্পগোষ্ঠি, ইস্পাহানি শিল্পগোষ্ঠি, মীর্জ্জাবু এন্ড কোং, ইব্রাহিম মিঞার মতো বনেদী শিল্পপতি পরিবারের উত্থান আর চট্টগ্রামে হয়নি। বরং বিলুপ্তির পথে। এবার চীনা সহায়তায় কর্ণফুলী টানেল নির্মাণ, এলএনজি টার্মিনালসহ জাপানি বিনিয়োগ ও পরিকল্পনায় মাতারবাড়ীতে এক গুচ্ছ জ্বালানি খাতের প্রকল্পসহ বহুমুখী সমুদ্র বন্দর স্থাপন করা হলে শিল্প-কারখানা ও ব্যবসা-বাণিজ্য নতুন প্রাণ ফিরে পাবে এমনটি আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।