Inqilab Logo

রোববার ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭ আশ্বিন ১৪৩১, ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

৪ লেনের কাজ হয়েছে মাত্র ৬০ শতাংশ

ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে যানজটের ভোগান্তি আরও দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে : বাড়ছে প্রকল্পের মেয়াদ : ব্যয় বাড়ছে ৭৮ শতাংশ

| প্রকাশের সময় : ৩ এপ্রিল, ২০১৮, ১২:০০ এএম

বিশেষ সংবাদদাতা : ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে যানজটের ভোগান্তিও এখন নিত্যদিনের ঘটনা। এ মহাসড়কে ৩০ থেকে ৭০ কিলোমিটার যানজট যেন সহনীয় হয়ে গেছে। বছরের পর বছর ধরে চলছে যানজটের ভোগান্তি। ২০১৩ সালে জয়দেবপুর থেকে চন্দ্রা হয়ে টাঙ্গাইল-এলেঙ্গা পর্যন্ত ৭০ কিলোমিটার মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণের উদ্যোগ নেয়া হয়। গত মাসে এর কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কাজ হয়েছে মাত্র ৬০ শতাংশ। যদিও এরই মধ্যে দুই দফা বাড়ানো হয়েছে প্রকল্পের ব্যয়। শুধু তাই নয়, তৃতীয় দফা ব্যয় বাড়ানোর পাশাপাশি প্রকল্পের মেয়াদও বাড়ানো হচ্ছে। ইতোমধ্যে এ সংক্রান্ত সংশোধিত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে। জানা গেছে, গত দুই বছর ধরে এই মহাসড়কটি যান চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। গত বছর বর্ষা ও অতিবৃষ্টির অজুহাতে কাজের উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি হয়নি। ঈদ এলে দেশের প্রতিটি সড়ক-মহাসড়কের মতো এ মহাসড়কেও জরুরী সংস্কারের নামে জোড়াতালি দিয়ে কিছু কাজ করা হয়। তবে কয়েকদিনের মধ্যে সেই কাজের কোনো চিহ্নও থাকে না। ভুক্তভোগিদের মতে, চার লেনে উন্নীতকরণের কাজ চলছে প্রায় ৫ বছর ধরে। নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ না হওয়া মানেই হলো ভোগান্তি আরও দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে। গতকাল রোববার সড়কপথে ঢাকায় আসা এক যাত্রী জানান, বেলা সোয়া ২টায় রংপুর থেকে রওনা করে ঢাকায় পৌঁছেছেন রাত দেড় টায়। অর্থাৎ ৫ ঘণ্টার পথ পাড়ি দিতে তার সাড়ে ১১ ঘণ্টা লেগেছে। এর মধ্যে বগুড়া থেকে সিরাজগঞ্জ বঙ্গবন্ধু সেতু পর্যন্ত আসতে সময় লেগেছে প্রায় ৫ ঘণ্টা। বাকী সময়ের বেশিরভাগই গেছে টাঙ্গাইল থেকে জয়দেবপুর অংশে।
ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক দিয়ে দেশের উত্তরাঞ্চলের ১৬টি জেলাসহ পশ্চিমাঞ্চল এবং ময়মনসিংহ অঞ্চলের বেশ কয়েকটি জেলার হাজার হাজার যানবাহন চলাচল করে। সড়ক ও জনপথ সূত্র জানায়, উপ-আঞ্চলিক সড়ক যোগাযোগ উন্নয়নের মাধ্যমে স্থানীয় ও আন্ত:দেশীয় বাণিজ্যিক কার্যক্রম জোরদার করে এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য জয়দেবপুর থেকে চন্দ্রা হয়ে টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা পর্যন্ত ৭০ কিলোমিটার মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এতে মূল মহাসড়ক চার লেন ছাড়াও ধীরগতির যানবাহনের জন্য ৯০ কিলোমিটার পৃথক সড়ক, দুটি রেল ওভারপাস, তিনটি ফ্লাইওভার, ২৬টি ছোট ও মাঝারি সেতু ও ৬০টি কালভার্ট নির্মাণ করা হবে। একইসাথে মহাসড়কের উভয় পাশে সার্ভিস সড়ক নির্মাণের সাথে দুই পাশে যাতায়াতের জন্য কালিয়াকৈর, মির্জাপুর, পাকুল্যা বাজারের কাছে সাঁথিয়াচারা, বাওইখোলা, করটিয়া হাটবাইপাস, বাসাইল টিজংশন ও টাঙ্গাইল বাইপাস এলাকায় সাতটি আন্ডারপাস নির্মাণ করা হবে। এ ছাড়া সুষ্ঠু পানি নিষ্কাশন ও পথচারীদের নিরাপত্তার স্বার্থে সড়কের উভয়পাশে ৬৫ কিলোমিটার ড্রেন ও ফুটপাত নির্মাণ করা হবে। আবার ধীরগতির যানবাহনের জন্য পৃথক সেতুও নির্মাণ করা হবে। এর বাইরে ১৮টি কালভার্ট নির্মাণ করা হবে। সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের মধ্যে জয়দেবপুর থেকে এলেঙ্গা পর্যন্ত ৭০ কিলোমিটার চার লেন মহাসড়কের কাজ চলতি বছরের মার্চ মাসে (গত মাসে) শেষ করার কথা ছিল। কিন্তু মার্চের মধ্যে কাজ হয়েছে মাত্র ৬০ শতাংশ। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রকল্প এলাকায় ৭০ কিলোমিটারের বেশিরভাগ জায়গায় মাটির কাজ চলছে। কোথাও মূল চার লেনের মাটির কাজ শেষে উপরিভাগের কাজ শুরু করা হয়েছে। তবে বেশিরভাগ অংশে এখনও মাটির কাজ শেষ হয়নি। মূল চার লেনের পাশে সার্ভিস লেনের জন্য কোথাও কোথাও মাটি ফেলা হচ্ছে।
সওজ সূত্র জানায়, ২৬টি ছোট-বড় সেতুর মধ্যে ২৪টি সম্পন্ন হয়েছে। আর ৬০টি কালভার্টের মধ্যে ৫২টি নির্মাণ হয়ে গেছে। তবে এগুলোর সংযোগ সড়ক নির্মাণ এখনও বাকি। এছাড়া ফ্লাইওভার ও রেলওয়ে ওভারব্রিজের নির্মাণকাজ এখনও চলমান রয়েছে। আগামী অক্টোবরে এগুলোর কাজ শেষ হওয়ার কথা। সব মিলিয়ে ৬০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
সূত্র জানায়, প্রাথমিকভাবে জয়দেবপুর-টাঙ্গাইল চার লেন প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয় দুই হাজার ৭৮৮ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। এর মধ্যে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) দেওয়ার কথা ছিল এক হাজার ৮৩৪ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। আর সরকারি তহবিল থেকে দেওয়ার কথা ছিল ৯৪৭ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। তবে ছয় মাসের মধ্যে প্রকল্পটি সংশোধন করা হয়। সংশোধিত প্রকল্পেরর মোট ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় তিন হাজার ৬৬ কোটি ৮০ লাখ টাকা। জমি অধিগ্রহণের পরিমাণ বৃদ্ধির যুক্তিতে সেবার প্রকল্প ব্যয় ২৭৮ কোটি ৩৪ লাখ টাকা বাড়ানো হয়েছিল।
সূত্র জানায়, গত বছর আবারও জমির দাম বৃদ্ধির যুক্তিতে প্রকল্পটি সংশোধন করা হয়। এতে ব্যয় বাড়ানো হয় ২৯৭ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। এতে করে প্রকল্প ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় তিন হাজার ৩৬৪ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। দুই দফায়ই সরকারি খাতের ব্যয় বাড়ানো হয়েছে। তবে এবার নির্মাণসামগ্রীর দাম বৃদ্ধি, প্রতিটি প্যাকেজের চুক্তি মূল্য বৃদ্ধি ও সড়কের দুই পাশে পৃথক সার্ভিস লেন নির্মাণের কারণে ব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। সর্বশেষ প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছে পাঁচ হাজার ৯৯৮ কোটি ৭২ লাখ টাকা। অর্থাৎ তৃতীয় দফায় ব্যয় বাড়ছে দুই হাজার ৬৩৪ কোটি সাত লাখ টাকা বা ৭৮ দশমিক ২৮ শতাংশ। আর ব্যয়ের বড় অংশই যাচ্ছে মহাসড়কটির উভয় পাশে সার্ভিস লেন নির্মাণে। এক্ষেত্রে সরকারি তহবিল থেকে দেওয়া হবে দুই হাজার ১৯৭ কোটি ১৩ লাখ টাকা। আর এডিবি ঋণ হিসেবে দিবে তিন হাজার ৮০১ কোটি ৬৯ লাখ টাকা।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মহাসড়ক

২৮ ডিসেম্বর, ২০২২
২১ ডিসেম্বর, ২০২২
২০ সেপ্টেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ