পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ফোনটা এলো রংপুর থেকে। ভাই, সাংবাদিকরা কি এটা ঠিক করলেন? কি করেছেন জানতে চাইতেই ফোনের অপর প্রান্ত থেকে বলতে শুরু করলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়ার অসুস্থতা, তাঁর মুক্তির দাবি এবং চিকিৎসা নিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সংবাদ সম্মেলনে যে টোনে কথা বলেছেন, বেগম জিয়ার দেশে-বিদেশে চিকিৎসা নিয়ে যে দাবি জানিয়েছেন, সেটা কি সঠিক ভাবে প্রচার করা হয়েছে? নাকি চালাকির আশ্রয় নিয়ে বিকৃতভাবে প্রচার করা হলো? সাংবাদিকদের দায়িত্ব পাঠক-দর্শকের জন্য খবর প্রচার করা; খবরকে চালাকি করে শব্দমালা গেঁথে প্রচার করা নয়। বোঝা গেল দর্শকটি ‘খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে মির্জা ফখরুলের দাবীর’ খবর প্রচারে মিডিয়ার নিরপেক্ষা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। শুধু ওই দর্শক নয় আরো অনেকেই একই ধরণের প্রশ্ন করেছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুক, টুইটার, ব্লগ, পাঠক মতামতে এ নিয়ে বিস্তর লেখালেখি মন্তব্য, প্রতিবাদ, নিন্দাবাদ চলছে। নারায়ণগঞ্জ টু গুলিস্তানের বাসে এ নিয়ে রীতিমতো তর্ক-বিতর্ক দেখলাম যাত্রীদের মধ্যে।
বিএনপি বিট (ওই দলের সংবাদ লেখেন) করেন এমন সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, শুক্রবারের সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মূলত: বেগম খালেদা জিয়া মুক্তি দাবি করেছেন। তার বক্তব্যের সারমর্ম হলো, বেগম জিয়া অসুস্থ তাঁর সুচিকিৎসার প্রয়োজন। কারাগার থেকে মুক্তি ছাড়া তাঁর সুচিকিৎসা সম্ভব নয়। মুক্তি পেলে ব্যাক্তিগত ডাক্তাররা চিকিৎসা করবেন, প্রয়োজনে বিদেশ গিয়ে চিকিৎসা করনো হবে। সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুলের কথা বলার স্বভাব হলো তিনি প্রথমে একটি বাক্য উচ্চারণ করেন। অতপর সেই বাক্যের ব্যাখ্যা তুলে ধরেন। কাজেই শব্দের ম্যারপ্যাচে তাঁর ‘¯িøপ অব টাং’ করার কথা নয়। অথচ মিডিয়াগুলোতে প্রচার করা হলো মির্জা ফখরুল সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়ার অসুস্থতার তথ্য তুলে ধরে প্রয়োজনে তাকে বন্দী অবস্থায় বিদেশে নিয়ে চিকিৎসা করানোর দাবি করেছেন। মিডিয়ায় বিশেষ করে বেসরকারি টিভিগুলোতে এই খবর প্রচার হওয়ার পর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সংবাদ সম্মেলন করে বলেন, এই সরকার মানবিক। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বললে প্রয়োজনে বেগম জিয়াকে বিদেশে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করানো হবে। যদিও শুক্রবার বিকেলে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী গণমাধ্যমে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে মির্জা ফখরুলের বক্তব্যের ব্যাখ্যা তুলে ধরেছেন। তারপরও অধিকাংশ মিডিয়া বিশেষ করে টিভিগুলো মির্জা ফখরুলের বক্তব্য বিকৃত করে এবং ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্য পাশাপাশি প্রচার করে। রাতে টিভির টকশোগুলোতেও দেখা গেল মুখচেনা বিশিষ্টজনেরা আলোচনা করতে গিয়ে মির্জা ফখরুলের ‘খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেয়ার দাবি’র প্রেক্ষিত তুলে ধরছেন এবং ওবায়দুল কাদেরের প্রয়োজনে বিদেশ নিয়ে চিকিৎসা করা হবে বক্তব্যের প্রশংসা করছেন। প্রশ্ন হলো কেন এমন গোয়েবলসীয় প্রচারণা? খবর প্রচারে সংবাদকর্মীদের কেন এতো চালাকি? সংবাদকর্মীর কাজ সংবাদ তুলে ধরা; প্রয়োজনে খবরের পিছনের খবর অনুসন্ধান করে তা দর্শক, পাঠকদের সামনে হাজির করা। কিন্তু টিভির খবরগুলো দেখে মনে হলো যে, ইলেক্ট্রনিক্স মিডিয়ার সংবাদ কর্মী বন্ধুরা সিন্ডিকেট করে প্রচার করছেন যে মির্জা ফখরুল সরকারের প্রতি ‘বন্দী খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করানোর’ দাবি করছেন। হলুদ সাংবাদিকতা ভিন্ন কথা। মূল শ্রোতের সাংবাদিকতায় কি খবর প্রচারে এমন চালাকি সাজে? যারা ওই খবরটি প্রচারে চালাকি করেছেন তারা বিবেকের কাছে প্রশ্ন করুন। সঠিক কাজ করেছেন কি?
গণমাধ্যমকে বলা হয় রাষ্ট্রের ৪র্থ স্তম্ভ। বিশ্বায়নের এই যুগে গণমাধ্যম-প্রিন্ট মিডিয়া, ইলেকট্রনিক মিডিয়া, অলনাইন মিডিয়া, বেতারযন্ত্রে বিন্যস্ত। এর বাইরেও রয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। এসব মিডিয়ায় যারা কাজ করেন তারা সবাই সাংবাদিক। সাংবাদিকতা পেশাজীবীদের উদার মনের, আত্মত্যাগী ও দেশপ্রেমিক হওয়া বাধ্যতামূলক। জীবনের ঝুঁকি থাকবে কিন্তু খবর প্রচারে পক্ষপাতিত্ব থাকবে না। কিন্তু কর্পোরেট সাংবাদিকতার যুগে দেখছি সিন্ডিকেট সাংবাদিকতা। একজন ক্ষুদ্র সংবাদকর্মী হিসেবে সংবাদ প্রচারে এ ধরণের সিন্ডিকেট চালাকি বিবেককে দংশন করে। আসুন না সবাই গণতন্ত্রের প্রয়োজনে রাষ্ট্রের ৪র্থ স্তম্ভের সদস্য হিসেবে সংবাদ প্রচারে নিষ্ঠাবান হই।
বেগম খালেদা জিয়ার কারাগারে যাওয়ার পর কিছু মিডিয়ায় এমন ভাবে লেখালেখি প্রচারণা শুরু হলো যে বিএনপির অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাওয়া সময়ের ব্যাপার মাত্র। নয়তো দলটি ভেঙ্গে যাবে। প্রবাসী নেতাকে কেউ মানবেন না। এমনকি দলের অভ্যন্তীরণ কোন্দল, নেতৃত্ব কর্র্তৃত্ব নিয়ে দলটি খন্ডবিখন্ড হয়ে যাবে। দলটির সিনিয়র নেতারা ‘আমরা সবাই রাজা’ প্রবাদের মতো ‘সবাই নিজেদের নেতা’ ঘোষণা দিয়ে কেউ কাউকে মানবেন না। কোন দল ভাঙবে, কোন দলের নেতৃত্ব নিয়ে বিরোধ হবে, নেতায় নেতায় ঝগড়া করে দলকে চূর্ণবিচূর্ণ করবে সেটা নিয়ে আগাম প্রচারণা তো মিডিয়ার কাজ নয়। হঠাৎ করেই খবর প্রচার করা হলো বেগম জিয়া ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদকে নিজের আইনজীবীর তালিকা থেকে বাদ দিয়েছেন। পরবর্তীতে আবার তারাই এই সংবাদটি মিথ্যা বলে প্রচার করে। এর আগে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনের চেম্বারে যান খালেদা জিয়ার মামলার বিষয়ে পরামর্শ করতে। কিন্তু ওই সাক্ষাতকে প্রচার করা হলো মির্জা ফখরুল খালেদা জিয়ার আইনজীবী হওয়ার জন্য কামাল হোসেনকে প্রস্তাব দিয়েছেন আর তিনি তা ফিরিয়ে দিয়েছেন। যদিও পরবর্তীতে কামাল হোসেন নিজেই জানিয়ে দেন তার কাছে আইনজীবী হওয়ার কোন প্রস্তাব দেওয়া হয়নি। সম্প্রতি বিবিসি’র সাবেক সাংবাদিক সুবির ভৌমিকের সম্পাদনায় প্রকাশিত কোলকাতার একটি মিডিয়ার খবরের বরাত দিয়ে দেশের একটি মিডিয়া প্রচার করে বিএনপির এক নেতার স্ত্রী ও কন্যা আমেরিকার নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করেছেন। পরবর্তীতে দেখা গেল ওই মিডিয়ার সম্পাদক নিজের ভুল স্বীকার করে খবর প্রচারের জন্য নিঃশর্ত ক্ষমা পার্থনা করেছেন। তাহলে কি আমরাও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতো ‘ফেইক’ নিউজ এবং ফেইক সাংবাদিকতায় দিকে ঝুঁকে পড়ছি?
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।