Inqilab Logo

সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

কামরাঙ্গীরচর, হাজারীবাগ ও রায়ের বাজারের খালগুলো এখন মশার দখলে

কচুরিপানা ময়লা-আবর্জনা আর দখলের কবলে ঢাকার জলাশয় ১০

সায়ীদ আবদুল মালিক | প্রকাশের সময় : ২ এপ্রিল, ২০১৮, ১২:০০ এএম

কামরাঙ্গীরচর সেকশন বেড়িবাধ থেকে লালবাগ, হাজারীবাগ হয়ে গাবতলী পর্যন্ত বেড়িবাধের দুই পাশ দিয়ে যতদূর চোখ যায় শুধু দখল আর দুষণের চিত্র। বুড়িগঙ্গার আদি চ্যানেল, হাজারীবাগ খাল, রায়েরবাগ খাল ও কালুনগর ময়লার পুকুরসহ যেদিকেই তাকাই শুধু ময়লা-আবর্জনা, কচুরিপানা আর পচা দুর্গন্ধময় পানি চাড়া কিছুই চোখে পড়ে না। বেড়িবাধের দুই পাশ দিয়ে দখল হতে হতে সরকারি জমিনের অবশিষ্টাং বাকি আছে বলে কেউ বলতে পারেনি। এ এলাকার খালগুলো আগেই দখলের কবলে পড়ে অস্তিত্ব হারিয়েছে। এ খালগুলো এখন কোথাও ৫ থেকে ১০ ফুট আবার কোথাও ১৫ থেকে ২০ ফুটের সরুড্রেন হয়ে আছে। এ সমস্ত খাল, ড্রেন ও ময়লার পুকুরগুলোর একেকটি এখন মশার গোডাউন হয়ে গেছে। এই ময়লা-আবর্জনায় জন্ম নেয়া মশার যন্ত্রণায় ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটির বেড়িবাধের আশেপাশের বিশাল এলাকাবাসী অতিষ্ঠ।
সরেজমিনে গতকাল রোববার রাজধানীর কামরাঙ্গীরচর সেকশন বেড়িবাধ থেকে গাবতলী পর্যন্ত এলাকা ঘুরে বেড়িবাধের দুই পাশের খাল, বিল ও জলাশয়গুলোর এমন চিত্র দেখা গেছে। লালবাগ-হাজারীবাগ আর কামরাঙ্গীরচরের মাঝখানে বিভাজক হচ্ছে বুড়িগঙ্গা খাল। ময়লা-আবর্জনা ফেলতে ফেলতে পুরো খালই এখন ময়লার ভাগাড় হয়ে আছে। এ খালের ওপর গড়ে উঠেছে লোহার ব্রিজ। ব্রিজের রেলিং ঘেঁষেও ময়লা-আবর্জনার স্তূপ। এখানে ময়লার এতটাই দুর্গন্ধ যে পথচারীদের নাক চেপে খালপাড়ের সড়ক পার হতে হয়।
এখান থেকে হাফ কিলোমিটার গাবতলীর দিকে এগুলেই রাস্তার পশ্চিম পাশে কালুনগর বর্তমান নাম মাহাদিনগর ময়লার পুকুর। এটি পুকুর নাকি ময়লা-আবর্জনার ডিবি বুঝাই মশকিল। টেনারির ময়লা, গৃহস্থালী ময়লা, বাড়ি-ঘর ও রাস্তা-ঘাট নির্মাণের উচ্ছিষ্ট ময়লা-আবর্জনা ফেলে এটিকে পরিত্যাক্ত বদ্ধ জলাশয় করে ফেলা হয়েছে। ময়লা-আবর্জনা আর পচা পানির দুর্গন্ধে এ পুকুরের আশেপাশে কারো পক্ষে দুই মিনিট স্থির হয়ে দাড়াঁনো অসম্ভব। স্থানীয়দের অভিযোগ এটি এখন মশা উৎপাদনের কারখানা হয়েগেছে। মশার যন্ত্রণায় এই এলাকায় মানুষ অতিষ্ঠ। এই ময়লার পুকুরটি কখনো পরিষ্কার করা হয়েছে বলে কেউ বলতে পারেনি। অথচ এই খাতে সিটি কর্পোরেশনের রয়েছে বিশাল বাজেট।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ৫৫নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোহাম্মদ নূরে-আলম গতকাল রোববার ইনকিলাবকে বলেন, পুরাতন কালুনগর নতুন নাম মাহাদিনগর, ঝাউচর ও জাউলাহাটি এলাকার এই ময়লার পুকুরটি একসময় বুড়িগঙ্গা নদীর অংশছিল। দখলদারদের কবলে পড়ে এটি বুড়িগঙ্গা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে এখন একটি বদ্ধ পুকুর হয়ে গেছে। দখলদারদের উচ্ছেদের জন্য আমরা গত বৃহস্পতিবার কয়েক হাজার মানুষ জড়ো হয়ে বিশাল মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছি।
পুকুর থেকে ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কারের কোন পদক্ষেপ আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, অর্থনৈতিক সাপোর্টের অভাবে এ ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার করা যাচ্ছে না। ঢাকার খাল, লেক ও জলাশয়ের ময়লা-আবর্জনা ও কচুরিপানা পরিষ্কারসহ এর রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সিটি কর্পোরেশনের সুনির্দিষ্ট বাজেট রয়েছে তাকি আপনার জানা আছে? জানতে চাইলে ডিএসসিসি’র কামরাঙ্গীরচর এলাকার এই কাউন্সিলর বলেন, আসলে এই বিষয়টি আমার জানা ছিল না। আমি দ্রুত এই ময়লার পুকুরটি পরিষ্কারের পদক্ষেপ নিব।
স্থানীয় বাসিন্দা রুবেল আহমেদ বলেন, অবিবেচক মানুষ খাল, বিল ও নদীসহ যত্রতত্র আবর্জনা ফেলে। ময়লার দুর্গন্ধে এ রাস্তা দিয়ে হাঁটা-চলা করা যায় না। এই ময়লার পুকুরটি কখনও পরিষ্কার করা হয় না। এই পুকুরের ময়লা-আবর্জনায় জন্ম নেয়া মশার যন্ত্রণায় আমরা দিনের বেলাতেও একটু স্থির হয়ে বসতে পারি না।
কামরাঙ্গীরচর, হাজারীবাগ, রায়ের বাজারসহ বেড়িবাধের আশেপাশে রয়েছে নদী, খাল, ডোবা। ওই এলাকাবাসীর সবচেয়ে বড় অভিশাপ হয় এই নদী, খাল ও ডোবার পচা পানি। এক সময় এসব নদী, খালের পানি দিয়ে গোসল, কাপড় ধোয়াসহ নানা সাংসারিক কাজ করা যেত। কিন্তু বর্তমানে এ পানি ব্যবহার তো দূরের থাক উৎকট পচা গন্ধে কাছে যাওয়া যায় না। ময়লা পানি ও বর্জ্যরে মধ্যে জন্মাচ্ছে মশা। স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছেন এখানকার অধিবাসীরা।
সিকশন বেড়িবাধ এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ মোকাররাম হোসেন বলেন, মশার জ্বালায় বিকালেই ঘরের সব দরজা-জানালা আটকে রাখতে হয়। আর অন্ধকার নামার সঙ্গে সঙ্গেই ঝাঁকে ঝাঁকে মশার উৎপাত শুরু হয়ে যায়। এখানে কখনও মশার ওষুধ দিতে দেখা যায়নি।
ময়লার পুকুর থেকে আরেকটু এগুলেই চোখে পড়ে রায়ের বাজার খালের স্লুইচগেট। স্লুইচগেটে সংযুক্ত খালটির দিকে তাকালেই চোখে পড়ে একদিকে ধানমন্ডি ও মোহাম্মদপুর এলাকারবাসীর ব্যবহৃত গৃহস্থালী সাদা ও কালছে পানি অন্যদিকে হাজারীবাগ ট্যানারি শিল্পের বর্জ্য কুচকুচে কালো পানি খালে পড়ছে। এই গৃহস্থালী বর্জ্য ও টেনারীর শিল্প বর্জ্য কামালবাগ ও ইসলামবাগ হয়ে বুড়িগঙ্গা নদীতে গিয়ে পড়ছে।
ওয়াসা ও সিটি কর্পোরেশন কালে-ভাদ্রে নামে মাত্র এ খালটি পরিষ্কার করে। এরবাইরে বছরের পর বছর কেটে গেলেও আর কোন খোঁজ রাখার দরকার হয় না তাদের। খালে আবর্জনায় দুর্গন্ধে মশা জন্মায়। এসব মশা ছড়িয়ে পড়ে হাজারীবাগ, রায়েরবাগ, কামরাঙ্গীর চর এলাকায়।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে স্থানীয় ওই এলাকার এক বাসিন্দ বলেন, বেড়িবাধের বিশাল এলাকজুড়ে জায়গা দখল করে নিয়েছে পান্না ব্যাটারি কম্পনির মালিক। এ জায়গা আবার অন্যেদের কাছে লিজ দিয়ে রেখেছে তারা। এভাবেই স্থানীয় প্রভাবশালীরা বেড়িবাধের জায়গা দখল করে কোটি কোটি টাকার কামিয়ে নিচ্ছে। এদিকে সরকারের কোন সংস্থারই ভ্রক্ষেপ নেই। এভাবে ইচ্ছামত বেড়িবাধ দখল করে মাটি দিয়ে ভরাট করায় বুড়িগঙ্গার গতিপথ বিলুপ্ত হয়ে গেছে।
বেড়িবাধ এলাকা ব্যবসায়ী মাহমুদুল হাসান এন্টারপ্রাইজের মালিক আলতাফ মাহমুদ বলেন, কালুনগর বেড়িবাধ পুরোটাই অবৈধ দখলে চলে গেছে। অপরিচিত কোন ব্যক্তি এসে বুঝতেই পারবেন না যে একসময় বেড়িবাধের এখান দিয়ে বুড়িগঙ্গা নদীর স্রোত প্রবাহিত হয়েছিল।
বিএনপি সরকার আমলে বেড়িবাধ থেকে খালের উপর দিয়ে খোলামোড়া পর্যন্ত যাতায়াতের জন্য ১২০ ফিটের একটি রাস্তার কাজ শুরু হয়েছিল। এজন্য খালের উপর ৩টি ব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছিল। ক্ষমতার পরিবর্তনে এ কাজ বন্ধ হয়ে যায়। ফলে খালের উপর নির্মিত এ ৩টি ব্রিজ এখন কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়েছে।



 

Show all comments
  • মো. সাজ্জাদ হোসেন ২ এপ্রিল, ২০১৮, ৮:৪৭ পিএম says : 0
    অত্যন্ত তথ্যবহুল একটি রিপোর্ট। এটি নদী রক্ষায় কর্তৃপক্ষকে আরো বেশি যত্নবান হতে সহায়ক হবে বলে আমার বিশ্বাস। আমরা আশাবাদী এই মরা নদীতে একদিন পানির স্রোত প্রবাহিত হবে। যে জাতি নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতুর মতো বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে পারে, সে জাতির দ্বারা অসম্ভব বলে কিছু নেই।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জলাশয়

২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৬
১ সেপ্টেম্বর, ২০১৬

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ